প্রতি বিপ্লবী ট্রটস্কিয়ান কর্মকান্ডে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে লেখক ভারলাম শালামভকে গুলাগে পাঠিয়েছিলেন স্ট্যালিন। পনের বছরের জন্য। তিনি এর মধ্যে ছয় বছর কোলাইমার স্বর্ণ খনিতে পৃথিবীর সবচাইতে শীতলতম এবং জঘন্যতম জায়গায় শ্রম দিতে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৫১ সালে তিনি মুক্ত হন।
১৯৫৪ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি কোলাইমা স্টোরি লিখেন। সোভিয়েত নাগরিকদের লেখা মাস্টারপিসদের একটি, যা সম্প্রতি অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে, এবং প্রকাশিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকসের মাধ্যমে, এই সপ্তাহে।
শালামভ বলতেন কোলাইমায় তার চরম দুর্দশাগ্রস্থ দিনগুলিতে তিনি কিছু শিখেন নি। কিন্তু ১৯৬১ সালে তার একটি লেখায় পাওয়া যায় সেখানকার ভয়ংকরতম পরিবেশে, ভয়াবহ সব নির্যাতনের মুখে তিনি জীবন ও জগত সম্পর্কে কী বুঝতে পেরেছিলেন তার কিছু তালিকা।
ফোরটি ফাইভ থিংস আই লার্নড ইন গুলাগ নামে লেখাটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে প্যারিস রিভিউতে ১২ জুন, ২০১৮ সালে। এটি মারাত্মক ইনসাইটফুল একটি লেখা। এখানে শালাভবের কষ্টকর জীবন অভিজ্ঞতালব্ধ অন্তর্দৃষ্টির যে নির্যাস পাওয়া যায় তা মানুষ, জীবন ও মানুষের সভ্যতাকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
আমি আমার কাছে মনে হওয়া গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি ইনসাইট বাংলায় অনুবাদ করলাম এখানে। মূল ছিল রাশান ভাষায়। এরপর ইংলিশ। ইংলিশ থেকে এখানে বাংলায়।
#
আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে পৃথিবীর মানুষকে ভালো মানুষ ও খারাপ মানুষে ভাগ করা উচিত না, বরং কাপুরুষ এবং কাপুরুষ-না এমন ভাগে ভাগ করা উচিত। ৯৫ ভাগ কাপুরুষই সামান্য হুমকির মুখে পড়লে জগতের হিংস্রতম কাজটি করে ফেলতে পারে, জঘন্যতম নির্মম কাজটি করতে পারে।
#
আমি বুঝতে পেরেছিলাম যুবকের আত্মসম্মানের চাইতে মারাত্মক আর কিছু নেইঃ চাওয়ার চাইতে চুরি করে নেয়া ভালো। আত্মসম্মান ও অহংকার কোন যুবককে ধ্বংসই করে, নিচে নিয়ে ফেলে।
(এখানে তিনি তার দেখা অভিজ্ঞতায় বুঝাতে চাইছেন, ঐ ভয়ংকর সময়ে চুরি করব না চেয়ে খাবো এই ধরণের অহংকার অনেকের জন্য আরো দূর্ভোগ বয়ে এনেছিল।)
#
মানুষকে জানা অকাজের, কারণ আমি তো কোন চুদির ভাইয়ের জন্য নিজের আচরণ বদলাব না।
#
যেসব লোককে সবাই- গার্ডেরা, সাথের বন্দিরা ঘৃনা করে তারা হলো র্যাংকের নিচের লোকেরা, পিছনে থাকা লোকেরা, অসুস্থরা, যারা তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকলে দৌড়াতে পারে না।
#
আমি বুঝতে পেরেছিলাম ক্ষমতা কি, এবং রাইফেল হাতে একজন মানুষ কি।
#
আমি বুঝতে পেরেছিলাম একজন লেখককে তিনি যেসব প্রশ্ন নিয়ে কাজ করছেন সেগুলি সম্পর্কে হতে হবে কম জানা বিদেশীর মত, তিনি যদি যা নিয়ে লিখছেন তা বেশী জানেন তাহলে এমনভাবে লিখবেন যে, কেউ তা বুঝবে না।
#
মানুষের সংস্কৃতির সবচাইতে ভঙ্গুর হলো সভ্যতা। একজন মানুষ তিন সপ্তাহের কঠিন শ্রম, ঠান্ডা, ক্ষুধা আর নির্যাতনের পরে পশু হয়ে ওঠে।
#
আমি বুঝতে পেরেছিলাম বন্ধুত্ব, কমরেডশীপ চরম কঠিন মুহুর্তে, জীবন সংশয়কর পরিস্থিতিতে দেখা দেয় না। বন্ধুত্ব কঠিন কিন্তু সহনীয় পরিস্থিতিতে বজায় থাকে। (হাসপাতালে মিলে, কিন্তু খনির মুখের কঠিন জায়গায় নয়।)
#
আমি বুঝতে পারি একজন মানুষ সবচেয়ে দীর্ঘসময় যে অনুভূতি ধরে রাখতে পারে তা হলো ক্রোধ। একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে অন্যসব অনুভূতি নিরাবেগ করতে পারলে তার মাংসে রাগ ধরে রাখার যথেষ্ট জায়গা থাকে।
#
আমি বুঝতে পারি মানুষ মানুষ হয়েছে কারণ তারা শারিরীক ভাবে শক্তিশালী এবং জীবনের সাথে লেগে থাকতে পারে অন্য প্রাণীর চাইতে বেশীঃ কোন ঘোড়া ফার নর্থে কাজ করে টিকে থাকতে পারবে না।
#
পার্টির লোকেরা আর সেনাবাহিনীর লোকেরা দেখলাম সহজে ও আগেই পড়ে যায়।
(নির্যাতনে, ক্ষুধায় সবার আগেই পড়ে যায় বুঝাচ্ছেন।)
#
আমি দেখলাম মারাত্মক ক্ষুধা এবং নির্যাতনের মুখেও যেসব লোক সামান্যতম মানবিকতা ধরে রাখতে পেরেছে তারা হলো ধর্মে বিশ্বাসী লোকেরা, সেকটারিয়ানরা প্রায় সবাই (যারা কোন সেক্ট/ধর্ম এর নীতি কঠোরভাবে মেনে চলে), এবং প্রায় সব ধর্মযাজকেরা।
কোলাইমা স্টোরিজ থেকে। লেখা ভারলাম শালামভ। ইংরেজি অনুবাদ ডোনাল্ড রেফিল্ড। প্যারিস রিভিউতে মূল লেখার লিংক এখানে।