আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
মানুষ মূল জেনেটিক এজেন্ডা হলো তার জিন ছড়িয়ে দেয়া এবং সেটি যাতে টিকে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা। এটা করতে গিয়ে মানুষ পুনরোৎপাদন করে, এবং তার সন্তানেরা যেন ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারে এজন্য নানাবিদ কাজকর্ম করে। মানুষের এই চিরায়ত প্রবণতাটি বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী উদ্ধৃতিতে খুব সার্থক ভাবে উঠে এসেছে।
হরি হোড়ের বাড়িতে লক্ষ্মী থাকতেন। একবার দেখা গেল হরি হোড় ঝগড়া বিবাদ শুরু করেছে, লক্ষ্মীর শান্তি বিনষ্ট হলো। তিনি ঠিক করলেন তার ভক্ত ভবানন্দ মজুমদারের বাড়িতে চলে যাবেন।
সেই যাত্রাপথে লক্ষ্মী একজন সুন্দর নারীর রূপ ধরে তার আরেক ভক্ত ঈশ্বরী পাটনীর কাছে গেলেন। তাকে বর প্রদান করা ছিল লক্ষ্মীর উদ্দেশ্য।
ঈশ্বরী পাটনী লক্ষ্মীকে চিনতে পারলেন। নৌকার জলসেচনীতে পা রাখলে তা সোনায় রূপান্তরিত হলো।
রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় এর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রং (১৮০৫) এর বর্ননা মতে ঈশ্বরী পাটনীর মনোভাবনা, “ইনি সামান্যা নন, জগৎজননী, ছল করিয়া আমার নিকট আসিয়াছেন।”
লক্ষ্মী ঈশ্বরী পাটনীকে পরিচয় দিলেন, আর তাকে বর দিতে চাইলেন, জিজ্ঞেস করলেন সে কী চায়।
ঈশ্বরী পাটনী বললেন, “মা গো, তোমার কৃপায় আমার সকল পূর্ণ হইল। যদি বর দিবেন, তবে এই বর দেওন যে, আমার সন্তান যাবৎ থাকিবেক, কেহ দুঃখ না পায় এবং দুগ্ধ ভাত খাউক।”
বিবর্তনের কোন এন্ড গোল নাই
বিবর্তন হচ্ছে পরবর্তন। এর কোন এন্ড গোল নাই মানে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে এটি চালিত হচ্ছে না। এটা নিছকই একটা সিস্টেম যার কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নাই।
উইল ডুরান্ট ও এরিয়েল ডুরান্টের লেসনস অব হিস্টরী বই থেকে,
“বায়োলজিক্যাল ইতিহাসের তৃতীয় শিক্ষা হলো জীবন অবশ্যই পুনরোৎপাদন করবে। যেসব প্রানী, গ্রুপ বা প্রজাতি প্রচুরভাবে পুনরোৎপাদন করতে পারে না, প্রকৃতির দরকার নেই তাদের। প্রকৃতির কোয়ালিটি নির্বাচনের জন্য দরকার কোয়ান্টিটি অর্থাৎ প্রচুর পুনরোৎপাদন, প্রচুর বাচ্চা কাচ্চা সে পছন্দ করে এবং সেখান থেকে সংগ্রাম করে যে অল্প ক’টি টিকে থাকতে পারে তাদেরকেই সে নির্বাচন করে। প্রকৃতি ব্যক্তির চাইতে প্রজাতিতে বেশী আগ্রহী, এবং সভ্যতা ও বর্বরতার মধ্যে সে কোন পার্থক্য করে না।”
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সবচাইতে যোগ্য প্রানীটি বা সন্তানটি টিকে থাকে। এজন্য প্রানী সব সময় ভালো জিনের সন্তান তৈরী করতে চায়। খারাপ জিনের সন্তান তৈরী হলে তারা ঝরে পড়ে। সুতরাং, নিজের জিন টিকিয়ে রাখতে হলে ভালো জিনের সঙ্গীর সাথে মিলিত হয়ে ভালো জিনের সন্তান তৈরী করতে হবে।
মিন জিনসঃ ফ্রম সেক্স টু মানি টু ফুড, টেইমিং আওয়ার প্রাইমাল ইন্সটিংকটস
টেরি বার্নহাম ও জে পেলাম দুজন অধ্যাপক বইটি লিখেছেন। আমাদের আচরণ তৈরী হয়েছে শিকার-সংগ্রহ সমাজে বসবাস করার জন্য। কিন্তু কৃষিভিত্তিক সমাজ তৈরী হবার পর খুব দ্রুত আমরা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার স্তরে পৌছে গেছি। জঙ্গলের শিকার-সংগ্রহ সমাজ ফেলে এসে তৈরী করেছি আধুনিক নগর সমাজ। এতে তৈরী হয়েছে নতুন ধরণের সামাজিক ব্যবস্থা ও সম্পর্ক বাস্তবতা। কিন্তু যেহেতু আমাদের আচরণ শিকার-সংগ্রহ সমাজের জন্যই তৈরি তাই এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
যেমন, মোটা হবার সমস্যাটির কথা বলা যায়। শিকার-সংগ্রহ সমাজে তৈরী হওয়া আমাদের শরীরের জিনে এই মেসেজ আছে যে ফ্যাট জমাতে হবে শরীরে। তা না হলে আগামীতে খাদ্যাভাব হলে টিকে থাকা যাবে না। এই কারণেই শরীর ফ্যাট জমায়।
অধ্যাপকদ্বয় এই বইতে কিভাবে আমাদের আচরনের জন্য, বিশেষত কিছু বাজে আচরনের জন্য আমাদের জিন দায়ী তা বিবর্তনের প্রেক্ষাপট থেকে দেখেছেন।
জীবনের জন্য গাইড বই
আপনি যদি কোন কার বা মাইক্রোওয়েভ কিনেন এবং এর সাথে কীভাবে এটি চালনা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে এ সংস্লিষ্ট কোন ইনস্ট্রাকশন তথ্য আপনাকে না দেয়া হয় তাহলে এটি নিশ্চয়ই ভালো হবে না, আপনার মনে হতে পারে বিক্রেতা আপনাকে ধোঁকা দিল। নিজেকে বোকা মনে হবে যে কেন আপনি দেখে আনেন নি ইন্সট্রাকশন বই আছে কি না। আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিস- শরীর এবং মাইন্ড বা ব্রেইন এর সাথে সাথে কিন্তু এমন কোন ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয় নি। তাই নানাদিকে আমরা আনন্দের জন্য, সুস্থতার জন্য কোনটা ভালো হবে ইত্যাদি খুঁজে ফিরছি। মিন জিনস সেইসব মিসিং ইনফরমেশনের মধ্যে যোগসূত্রের জন্য এবং এই বইটি আপনার আমার নিজের উপর আরো বেশী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে, বলে মনে করেন লেখকদ্বয়।
এমনিতে কোন ডিভাইস যেমন উপরে উল্লিখিত মাইক্রোওয়েভ বা কার আপনার নির্দেশমতই কাজ করবে। কিন্তু ব্রেইনের ক্ষেত্রে এমন নয়। নতুন বছরে আপনি অনেক জিনিস করবেন বলে ঠিক করেন। বা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জিনিস করতে চান, কিন্তু ব্রেইন করতে সায় দেয় না, করে তার থেকে ভিন্ন কিছু।
এই ব্রেইন যেন আপনার ভেতরে থাকা আরেক মেশিন, যে নিজেই নিজে চিন্তা করতে পারে। এমন একটা গল্প আছে, এক মেয়ে নির্জন একটি বাড়িতে এক শিশুকে দেখাশোনা করছিল। সে কিছু ভয়ংকর ফোন কল পেল। এক লোক খসখসে গলায় বলছে, সে আসছে, অচিরেই আসছে।
ভয়ে মেয়েটি পুলিশে ফোন দিল। পুলিশের কাছে ঐ ভয়ংকর ফোনকলটির নাম্বার দিল।
কিছুক্ষণ পর ফোন নাম্বারটির লোকেশন ট্রেস করে পুলিশ মেয়েটিকে ভয়ার্ত কন্ঠে ফোন্দিয়ে বলল, আমরা নাম্বারটি ট্রেস করেছি। বাড়ির ভেতর থেকেই এটি আসছে। তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে যান!
সমস্যাটি নিজের ভেতরেই। আমাদের ক্ষেত্রেও এই আত্মনিয়ন্ত্রনের সমস্যাটি নিজের ভেতরে, নিজেদের জিনে।
আমরা এর থেকে বের হতে পারি না। আমাদের চারপাশের জগত, মিডিয়ার ম্যানুপুলেশন, আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি নানাদিক থেকে শক্তি নিয়ে আমাদের ভেতরে থাকা দানব নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে।
এবং এদের বশবর্তী হয়ে আমরা এমন সব কাজ করি যা আমাদের জন্য খারাপ পরিনতি নিয়ে আসে, এবং বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে আমাদের নিকটজনের জন্য।
বিশ্বে সেলফ-কন্ট্রোলের বই, যেমন কীভাবে ওয়েট কমাতে হবে, কীভাবে ধূমপান ছাড়া যায়, কীভাবে ধনী হওয়া যায় ইত্যাদি বই বেস্ট সেলার হিসেবে আপনি দেখতে পাবেন। কিন্তু কখনো দেখবেন না, কীভাবে ধূমপান শিখতে হয়, কীভাবে খেয়ে অতিরিক্ত মোটা হতে হয় ইত্যাদি বই বেস্ট সেলার। কারণ এই দ্বিতীয় ধরণের জিনিস না পড়েই লোকে করতে পারে। এইসব প্রবণতার ইঙ্গিত তার জিনের মধ্যেই যেহেতু রয়েছে।
মানুষের সৌন্দর্য, প্রতিসাম্য ও নারী পুরুষের চাহিদা
এই জেনেটিক ইনফ্লুয়েন্স বা প্রভাব সম্পর্কে যা জানা হয়েছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব কীভাবে পড়ে এ নিয়েই লেখা হয়েছে মিন জিনস বইটি।
একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যায়, তা হলো মানুষের সৌন্দর্য কী, বা আমাদের কোন মানুষকে কেন সুন্দর মনে হয়। এর কোন নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এই প্রশ্নটি শুনলে মনে হয় এটি দর্শনের বিষয়। এবং এই সৌন্দর্য কী তা সমাজ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই প্রশ্নের আরো নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া গেছে, ফলে কেবল দর্শনের আলোচ্য হয়েই প্রশ্নটি আর থাকল না। এমন আরো অনেক বিষয়ের ক্ষেত্রেও জিনিসটা সত্য। যেমন, জীবনের অর্থ কী, এর মত মৌলিক দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর এখন বিজ্ঞানে খোঁজা হয় ও বিজ্ঞানই অপেক্ষাকৃত ভালো উত্তর প্রদান করতে পারে। তাছাড়া যেটা আজ বিজ্ঞান নামে পরিচিত তার নাম তো একসময় ছিল প্রাকৃতিক দর্শন।
আমাদের দেহের এক অংশ অন্য অংশের প্রতিরূপ। এক হাত অন্য হাতের, এক কান অন্য কানের, ইত্যাদি। কিন্তু এটি সব সময় একশোভাগ মিল হয় না।
আমরা প্রতিসাম্য পছন্দ করি। প্রতিসাম্যকে সুন্দর মনে করি।
বিজ্ঞানের স্টাডিতে দেখা গেছে, মহিলা এবং পুরুষ উভয়ই প্রতিসাম্যিক মানুষকে পার্টনার হিসেবে বেশী পছন্দ করে। এবং মহিলারা প্রতিসাম্যিক পুরুষের সাথে যৌনকর্মে তাড়াতাড়ি অর্গাজমে পৌছায় এবং আর অর্গাজম হলে তারা বেশী গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা তৈরী হয় ওই সময়।
আরেকটি উদ্ভট স্টাডিতে কয়েকজন পুরুষকে একইরকম টি শার্ট পরতে দেয়া হলো কিছুদিন। এরপর এই ঘামে গন্ধওয়ালা টিশার্ট নিয়ে কিছু মহিলাকে গন্ধ শুঁকতে বলা হলো এবং এর মাধ্যমে কোনটি বেশী আকর্ষক তা নির্ণয় করতে বলা হলো। দেখা গেল তারা যে টিশার্টকে বেশী আকর্ষক মনে করছে ওটা ছিল ঐ পুরুষদের মধ্যে সবচাইতে বেশী প্রতিসাম্যিক জনের।
কেন এই প্রতিসাম্য সুন্দর বা যৌনভাবে আকর্ষক তার রহস্য জানতে প্রাণীজগতের দিকে তাকাতে হবে। প্রাণীজগতে প্রতিসাম্যকে দেখা হয় সুস্থতা, রোগহীনতা, এই দেহে ভালো জিন আছে- এমন সব জিনিসের প্রতীক হিসেবে। যদিও আমরা সূক্ষ্ণভাবে অন্য কোন মানুষের প্রতিসাম্য পরিমাপ করতে পারি না, কিন্তু দেখাতে আমরা প্রতিসাম্য যতটুকু দেখতে পাই, তা আমাদের মেটিং ডিসিশনকে অসচেতনভাবে প্রভাবিত করে থাকে।
মানুষের বাম দিক ও ডানদিক তৈরী হয় একই জেনেটিক ব্লুপ্রিন্টের মাধ্যমে। তাই দুইদিকই একশোভাগ একইরকম তথা প্রতিসাম্যিক হয় না। সামান্য ব্যতিক্রম থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে থাকে বেশী, অনেকের ক্ষেত্রে কম। ডান ও বাম হাতের ইনডেক্স ফিংগারে ব্যতিক্রমতা থাকে ২ থেকে ৭% এমন দেখা গেছে স্টাডিতে।
দেখা যায় সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা প্রতিসাম্যিক। বিল ক্লিনটনের প্রতিসাম্য রেটিং এত এত বেশী ছিল যে কম্পিউটার প্রোগ্রাম তাকে মডেল ক্যাটাগরিতে রেখেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার, এমনকী জঙ্গলে যেসব জায়গায় মিডিয়ার প্রভাব পৌছায় নি সেসব জায়গায় গিয়ে মানুষের ছবি দেখালে লোকেরা প্রতিসাম্যিক ব্যক্তিকেই সুন্দর মনে করে। অর্থাৎ, এটি একটি ইউনিভার্সাল বৈশিষ্ট্য যা প্রাণী হিসেবে মানুষ প্রাণীজগত থেকেই পেয়েছে।
পরিস্কার চামড়া, প্রতিসাম্য ইত্যাদিকে মানুষ সুন্দর মনে করে।
মানুষেরা পুরুষেরা কী চায়, তা দেখতে ১৯২০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৬০ জন মিস আমেরিকাকে দেখা হলো। তাদের একেকজনের আকার ভিন্ন হলেও, একটা জায়গায় মিল, তাদের সবারই কোমড় ভাগ নিতম্বের ফলাফল ০.৬৯ থেকে ০.৭২ এর মধ্যে।
যেমন, অড্রে হেপবার্ন (৩১.৫-২২-৩১) এর কোমড় ভাগ নিতম্বের ফল ০.৭। একই জিনিস মেরিলিন মনরোর (৩৬-২৪-৩৪) ক্ষেত্রেও।
দেখা যাচ্ছে, আকার নয়, আকৃতিই পুরুষের কাছে বিবেচ্য। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন পুনরোৎপাদনই দায়ী। ০.৮ রেশিওর চেয়ে নিচের নারীরা যৌনকাজে গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা দ্বিগুন বেশী ০.৮ রেশিওর নারীর চাইতে।
এছাড়া পূর্ন ঠোট, উজ্জ্বল চুল, বড় চোখ ইত্যাদিকে পুরুষেরা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ মনে করে ও আকর্ষণ বোধ করে।
আবার পুরুষ সেই নারীকে পছন্দ করে যে তার প্রতি আগ্রহী।
আর নারীদের চাওয়াটা একটু জটিল। তারা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও পুরুষের সামাজিক স্ট্যাটাসকে বেশী গুরুত্ব দেয়। মেরিলিন মনরো জন এফ কেনেডির সাথে আগে প্রেম করেছেন কিন্তু সেক্স করেছেন ভদ্রলোক প্রেসিডেন্ট হবার পরেই। অনেক প্রাণীর মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায় যে কেবল উচ্চ স্ট্যাটাসের পুরুষের সাথেই নারীরা সেক্স করে। যেমন গরিলা।
বিভিন্ন সঙ্গী চাই জাতীয় ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নারীরা “টাকা” শব্দটি পুরুষের চাইতে দশগুণ বেশী ব্যবহার করে।
বিল ক্লিনটন পাওয়ারফুল পজিশনে থাকা অবস্থায় ইন্টার্ন মনিকার সাথে সেক্স করেছিলেন, এমন জিনিস নারীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। কোন সিনেটর নারী ইন্টার্ন যুবকের সাথে সেক্স করবে না। পাওয়ারফুল পজিশনে নারী থাকলে সাধারণত এই পাওয়ারকে সে যৌনকাজে ব্যবহার করে না।
নারী যখন পুরুষের সৌন্দর্য দেখে তখন টাকা ও স্ট্যাটাস বড় ভূমিকা পালন করে। সাইকোলজির এক পরীক্ষায় দামী রোলেক্স ঘড়ি হাতের কুৎসিত পুরুষ ও বার্গার কিং ইউনিফর্ম পরা সুদর্শন পুরুষের মধ্যে থেকে কুৎসিত পুরুষটিকেই নারীরা তীব্রভাবে পছন্দ করেছে।
স্ট্যাটাস, টাকার পরে উচ্চতাকে নারীরা আকর্ষনীয় মনে করে।
আবার বয়সও একটা ফ্যাক্ট। বেশী বয়েসী পুরুষ তারা এড়িয়ে চলতে চায় কারণ এতে পুনরোৎপাদনের কোয়ালিটি নষ্ট হয়। কারণ স্পার্মের জিন কপির কপি হতে থাকে, যত বয়স বাড়ে ততো মূল থেকে কপির দূরত্ব বেশী হয়।
এসবই মূলত অসাধারণ পুনরোৎপাদন প্রক্রিয়া, এবং সন্তানের টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য।
আকর্ষক বৈশিষ্ট্যগুলি, যেমন প্রতিসাম্য, পরিস্কার চুল ইত্যাদি নির্দেশ দেয় ভালো জিনের। এর প্রতি আকৃষ্ট হয় পুরুষেরা, তারা যৌনভাবে উদ্দিপনা অনুভব করে। বিজ্ঞানীরা একবার একটি নকল মাছ বানালেন সব ধরনের এইসব জেনেটিক সিগনাল পূর্নমাত্রায় দিয়ে। নাম দিলেন সেক্স বোম্ব। পুরুষ মাছেরা এই নকল মাছকে দেখে আসল স্বাস্থ্যবান স্ত্রী মাছদের রেখে হন্যে হয়ে ছুটেছিল এই নকল মাছের পিছনে।
আধুনিক কালে মেইক আপ ইন্ড্রাস্ট্রি, কসমেটিক সার্জারি ইত্যাদির মাধ্যমে নারীরা এরকম সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে। প্রতিবছর ১০০ হাজারের বেশী আমেরিকান মহিলারা ব্রেস্ট উন্নত করার সার্জারিতে নিয়ে থাকে।
নারী পুরুষের যৌনতা ও ভিন্নতা
বুশ ক্রিকেট নামে এক ধরণের ঝিঁঝিঁ পোকা আছে। এদের পুরুষ পোকাটি যখন স্ত্রী পোকার সাথে যৌনকর্মে মিলিত হয় পুনরোৎপাদনের অংশ হিসেবে, তখন প্রচুর বীর্য ত্যাগ করে। এর পরিমাণ তার শরীরের ওজনের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। এই বিপুল পরিমাণ বীর্য স্ত্রী পোকাটির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এবং এর মাধ্যমে সে সন্তান উৎপাদনের জন্য ডিম তৈরী করে।
বুশ ক্রিকেট তার জীবনে খাদ্য খুব বেশী খায় না, এবং পুরুষ পোকাটি এর এক বড় অংশই দিয়ে দেয় বীর্য হিসেবে। তাই তার জন্য ব্যাপারটি সহজ না, এই কারণে বুশ ক্রিকেটের পুরুষেরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রচুর বাছবিচার করে। তারা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবান স্ত্রী পোকাই খুঁজে যে প্রচুর ডিম তৈরী করতে সক্ষম।
আবার বুশ ক্রিকেটের স্ত্রী পোকারা সেক্সের জন্য পুরুষ খুঁজতে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে সঙ্গী নির্বাচনে বাছবিচার কম। কারণ সেক্সে তাদের তেমন ক্ষতি নেই, কিন্তু প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া যায় বলে বড় লাভ আছে।
মানুষ প্রজাতির ক্ষেত্রে পুরুষদের যদি যৌনকর্মে বিপুল পরিমাণ বীর্য ত্যাগ করতে হতো তাহলে মানুষের পুরুষেরাও যৌনকর্মে অনাগ্রহী হতো। কিন্তু যেহেতু এমনটা হয় না, তাই ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়।
দেখা গেছে মানুষের পুরুষেরা ক্যাজুয়াল যৌন সঙ্গী নির্বাচনে অত বাছবিচার করে না। কলেজ স্টুডেন্টদের উপর চালিত এক বৈজ্ঞানিক স্টাডিতে দেখা গেছে, যখন গড় সুশ্রী কোন নারী যৌনতায় আহবান করে তখন ৭৫ ভাগ পুরুষ এতে আগ্রহী হয়। আর যারা অনাগ্রহ প্রকাশ করে তাদের বেশীরভাগই সরি বলে বা দুঃপ্রকাশ করে। একই জিনিস যখন নারীদের ক্ষেত্রে করা হয়, যখন গড় সুশ্রী কোন পুরুষ তাদের ক্যাজুয়াল সেক্সে আহবান করে তখন কোন নারীই এতে আগ্রহ প্রকাশ করে নি।
জেনেটিক কারণেই মানুষের নারীরা ক্যাজুয়াল সেক্সে অনাগ্রহী, আবার একই কারণে অধিকাংশ পুরুষেরা এতে আগ্রহী।
নারী ও পুরুষের এরকম কিছু পার্থক্য রয়েছে যা জেনেটিক্যালিই তৈরী হয়েছে। যেমন, পুরুষেরা নারীদের চাইতে গড়ে ২০% বেশী ওজনের হয়, এই ওজনের অধিকাংশ থাকে মাসল ম্যাসে। শক্তির দিক থেকে নারীদের চাইতে তাদের বেশী শারিরীক শক্তি থাকে। আবার প্রায় সব সমাজেই (৯৬%) গড়ে নারীরা পুরুষের চাইতে বেশীদিন বাঁচে।
পৃথিবীতে সব চাইতে বেশী অপরাধ করে পুরুষেরা। আমেরিকার জেলে থাকা বন্দীদের ৯৩% ই পুরুষ।
কোন মারাত্মক দূর্ঘটনার পরে নারীরা তাদের ভাষা ক্ষমতা তাড়াতাড়ি ফিরে পায় পুরুষের চাইতে। পুরুষ ও নারীদের ব্রেইন আলাদাভাবে কাজ করে। ভাষা ব্যবহার ও বুঝার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ব্রেইন ভিন্ন পদ্বতি ব্যবহার করে। নারীদের সহমর্মীতা বা এমপ্যাথী পুরুষের চাইতে বহুগুণ বেশী।
ইনফিডেলিটি বা মানুষের চিটিং স্বভাব
মানুষের ঠিক সঙ্গী পেয়ে যাওয়াটাই খেলার শেষ নয়, সঙ্গী পেয়ে যাবার পর তার সাথে বিশ্বস্থভাবে থাকা এবং সেও সেভাবে থাকছে কি না ইত্যাদি বিষয় চলে আসে। বিয়ে এবং একগামীতা আমাদের জিনের অনুকূল বিষয় নয়। আমেরিকায় চার ভাগের এক ভাগ মহিলা এবং অর্ধেক পুরুষ স্বীকার করেছে যে তারা সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেও অন্যের সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় সব সমাজেই মানুষের এই প্রবণতা রয়েছে। এর জন্য কঠিন সব শাস্তি, সামাজিক বিধি নিষেধ ইত্যাদি আরোপ করা হয়েছে কিন্তু তাও এটি বন্ধ হয় নি।
একগামীতা প্রাণীজগতে খুব সহজলভ্য নয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখতে একগামীতা মনে হলেও আসলে তা নয়। বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকবার্ডদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তারা কিছু পুরুষ পাখিকে ভেসেক্টোমি করলেন, অর্থাৎ এরা সেক্স করতে পারবে কিন্তু স্পার্ম উৎপন্ন করতে পারবে না। পুরো জননঋতুতে তারা এদের পর্যবেক্ষণ করলেন। তারা সঙ্গীর সাথে সেক্স করছে, নারী সঙ্গীরাও ঠিকমতো খাচ্ছে, ঘুরছে, সুখী পরিবার।
পরে দেখা গেল একসময় তার স্ত্রী সঙ্গী পাখিটি ডিম পারতে লেগে গেল ও ডিম পারল। বিজ্ঞানীরা তো জানেন যেহেতু তার সঙ্গী পুরুষ পাখিটি স্পার্মহীন, তাহলে নিশ্চয়ই সে অলক্ষ্যে অন্য কোন পুরুষের সাথে সেক্স করে তার স্পার্ম নিয়েছে। নাহলে ডিম আসলো কোথা থেকে?
ব্ল্যাকবার্ডের এই ইনফিডেলিটি ধরতে চতুর বিজ্ঞানীদের নিষ্ঠুর পরীক্ষাটি করতে হয়েছিল, কিছু পাখিকে পুরুষত্বহীন করে।
প্রাণীজগতেও মনোগামি বা একগামীতাকে যত পিওর ধরা হয়, আসলে তা নয়। ভেতরে ফাঁক থাকে।
মানুষের শরীর বলে যে সে ইনফিডেলিটির জন্য তৈরী। গরিলার টেস্টিকল হয় গলফ বলের মত আকারের, শিম্পাঞ্জির বেইজ বল আকারের। গরিলার টেস্টিকল তার শরীরের তুলনায় খুব ছোট কিন্তু শিম্পাঞ্জির টেস্টিকল সে অনুসারে বেশ বড়। এই পার্থক্যের কারণ হিসেবে প্রাইমেটোলজিস্টেরা বলেন, গরিলার ছোট টেস্টিকল থেকে যে স্পার্ম উৎপন্ন হয় তাই সন্তান তৈরীর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু শিম্পাঞ্জি যতটুকু স্পার্ম দরকার তার চাইতে অনেক বেশী স্পার্ম উৎপন্ন করে।
গরিলাদের ক্ষেত্রে সবচাইতে শক্তিশালী পুরুষটি একচ্ছত্র ভাবে নারীদের সাথে সেক্স করে। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জি স্ত্রী’রা দিনে অনেকবার বিভিন্ন শিম্পাঞ্জি পুরুষের সাথে সেক্স করে। বিভিন্ন শিম্পাঞ্জি পুরুষের স্পার্ম ওই স্ত্রী শিম্পাঞ্জির ভিতরে যুদ্ধ করে, এবং যার স্পার্ম বেশি হয় তার জেতার বেশি সম্ভাবনা তৈরী হয়। তার স্পার্ম ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে, অর্থাৎ বাচ্চা তার হবে।
গরিলার টেস্টিকল তার শরীরের ওজনের ০.০২ ভাগ, শিম্পাঞ্জির বড় টেস্টিকল তার শরীরের ০.৩০ ভাগ, আর মানুষের টেস্টিকল গরিলার তুলনায় অনেক বড় কিন্তু শিম্পাঞ্জির তুলনায় ছোট, শরীর ওজনের ০.০৮ ভাগ। গরিলা থেকে চারগুণ বড় আর শিম্পাঞ্জির চার ভাগের এক ভাগ।
শিম্পাঞ্জির মতই মানুষ প্রয়োজনের চাইতে বেশী স্পার্ম তৈরী করে। এর ৯৯% স্পার্ম ফারটাইল নয়। এরা স্ত্রীর জননাঙ্গের ভেতরে অন্য পুরুষের স্পার্মকে খুঁজে বের করে এবং ধ্বংস করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর বাকি স্পার্ম ব্লকার হিসেবে কাজ করে, অন্য পুরুষের স্পার্ম ইউরেটাসে ঢুকতে বাঁধা দেবার জন্য।
মানুষের পুরুষদের মধ্যে এই অধিকাংশ এন্টি স্পার্ম ব্লকার তৈরী হয় কারণ এটাই তার জন্য দরকারী, এবং শরীর আগে থেকেই ধরে নিচ্ছে তার সঙ্গী অন্য লোকের সাথে সেক্স করবে। বিয়ে ইত্যাদি প্রথা চালু হবার পূর্বে জঙ্গলের সমাজে মানুষ তো শিম্পাঞ্জিদের মতোই ছিল, ফলে শরীরি প্রবণতা রয়ে গেছে সেই সময়ের।
বিয়ে প্রথার মাধ্যমে একটি কমিটমেন্টে পুরুষ ও নারীরা আবদ্ধ হলেও তাদের ভেতরে জিনের ক্রিয়া অব্যাহত থাকে। নারী যখন অন্য সঙ্গীর সাথে সেক্স করে তখন সে তার সন্তানের জন্য আরো ভালো বা বেহতর জিন চায়। অধিকাংশ নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা যখন অন্য সঙ্গীর সাথে সেক্স করে তখন কনডম ব্যবহার করে না, কিন্তু মূল সঙ্গী বা স্বামীর ক্ষেত্রে করে। আর পুরুষ যখন অন্য সঙ্গীর সাথে সেক্স করে তখন সে চায় আরো ফার্টিলিটি। সাবকনশাসলি এটা ড্রাইভ করে তাদের।
দেখা গেছে, বেশীরভাগ মহিলা যারা অন্য সঙ্গীর সাথে সেক্স করে তারা তাদের বিয়েকে আনহ্যাপী বলে মনে করে। কিন্তু বেশীরভাগ পুরুষ এক্ষেত্রে তাদের বিয়েকে হ্যাপীই মনে করে। অর্থাৎ, হ্যাপি ম্যারেজ মনে করলেও সে বাইরে সেক্স করতে যায়।
মানব পুরুষের ইনফিডেলিটি চেক করার মত প্রাকৃতিক কোন ব্যবস্থা মানুষের ক্ষেত্রে নেই, যেমন আছে হ্যাংগিং ফ্লাই নামক মাছিদের মধ্যে। এদের পুরুষেরা যখন কোন শিকার ধরে তখন নিয়ে আহবান করতে থাকে নারীদের সেক্সে। নারীরা আকৃষ্ট হয়ে আসে এবং যত দ্রুত সম্ভব পুরুষটির শিকার করে আনা খাবারটি খেতে থাকে। সেইসময়ে দ্রুত পুরুষটি নারীটির সাথে সেক্স করতে থাকে। স্পার্ম আউট করার পর পুরুষটির ঐ শিকার করা পোকাটির বাকি অংশ থাকলে তা নিয়ে আবার আহবান করতে থাকে আরেকটি নারীকে।
এভাবে পুরুষটিকে আগে নারীটিকে খাদ্য দিতে হয়, পরে সেক্সের সুযোগ সে পায়।
ট্রাইব প্রবণতা ও যুদ্ধ
মানুষের মধ্যে ট্রাইবাল প্রবণতা আছে। পরীক্ষায় কিছু মানুষ নিয়ে লাল এবং সাদা নামে দুইটা ভাগ করে দেয়া হলো। এতে লাল গ্রুপের লোকেরা নিজেদের মধ্যে এবং সাদা গ্রুপের লোকেরা নিজেদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত আন্তরিক ব্যবহার করছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে এটা হয়ে যাচ্ছে। এত দ্রুত মানুষ, কোন কারণ ছাড়াই গ্রুপ আইডেন্টিটি নিয়ে নেয়।
সমাজবিজ্ঞানী হেনরি তাজফেলের একটা বিখ্যাত পেপার আছে যা প্রকাশ হয় সোশ্যাল ক্যাটেগোরাইজেশন এন্ড ইন্টারগ্রুপ বিহেভিওর জার্নালে। সেখানে তিনি দেখান যে খুব সহজে কোন কারণ ছাড়াই মানুষরে দুই গ্রুপে ভাগ করে ফেলা যায়, এবং মানুষেরা গ্রুপের প্রতি মারাত্মক অনুগত হয়ে পড়ে। এই আনুগত্যের তীব্রতা এতো বেশী থাকে যে এর জন্য গ্রুপের হয়ে তারা অন্যদের আক্রমণ করতেও দ্বিধা করে না।
প্রফেশনাল খেলা সমর্থনে সমর্থকদের ক্ষেত্রে এটাই হয়। এসব খেলা মানুষের পুরনো যুদ্ধ বিগ্রহ প্রবণতার এক নির্বিষ রূপায়ণ। প্রাচীন কালে রাজারা যুদ্ধ জয়ের পর দেশে গিয়ে উৎসব করত। একইরকম, বিশ্বকাপ ফুটবল জেতার পরে আমরা দেখি বিজয়ী দল দেশে গিয়ে তাদের দেশের লোকজনদের নিয়ে আনন্দে মাতে।
আপনার সমর্থন করা দল খেলায় জিতলে আপনার আনন্দ হবে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা তখন বেড়ে যাবে।
ট্রাইব আরো দেখা যায়, মানুষ অন্য মানুষকে একটা গ্রুপে ফেলে, গ্রুপ পরিচয়ে পরিচিত করে। কেনিয়ায় আগে কোন একজন অচেনা মানুষকে দেখলেই অন্যরা জিজ্ঞেস করতো সে কোন ট্রাইবের। কারণ সেখানে অনেক ট্রাইব করে থাকতো লোকেরা। আধুনিক সমাজে মানুষ জিজ্ঞেস করে আপনি কোন স্কুলে পড়েছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। একজন ব্যক্তি তার স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আরেকজন লোককে যেভাবে দেখেন, অন্য একজন লোক যে অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়েছে তাকে সেভাবে দেখেন না।
মানুষের ক্ল্যান বা ট্রাইব প্রবণতা আদি, এবং জেনেটিক কারণেই। প্রাচীন একটি কথা আছে যা মানুষের সম্পর্কজনিত জেনেটিক প্রবণতাকে তুলে ধরে,
‘Me against my brothers, me and my brothers against my cousins, me and my brothers and cousins against my clan, me and my clan against the world.’
অর্থাৎ, প্রথমে সে, তারপর তার ভাইয়েরা, এরপর কাজিনেরা, এরপর ক্ল্যান, এবং এই ক্ল্যানই তার সংঘবদ্ধ পরিচয়। কিন্তু ক্ষুদ্র এককে জেনেটিক কারণেই সে এবং তার পরিবার। কারণ এরা তাদের জিন বেশী শেয়ার করে।
বই বিষয়ে আমার মতামত ও শেষকথা
এই বইটি তথ্যগত দিক থেকে হালকা এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্থুলভাবে যেন মিল দেবার চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। একই বিষয়ে আরো অনেক ভালো, গভীর বই আছে।
বইটিতে উপস্থাপিত তথ্য দেখে এটা কেউ ভাবতে পারেন, যেহেতু এই প্রবণতা আমার জিনে আছে, তাই আমি এটি করতেই পারি।
এমন ভাবলে তা হবে মারাত্মক ভুল চিন্তা। বইটি লেখকেরা লিখেছেন এর উলটা উদ্দেশ্যেই। অর্থাৎ, জিনে এইসব প্রবণতা আছে, যা আপনার জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলছে, এ নিয়ে যেন আপনি সচেতন হতে পারেন ও বুঝতে পারেন সমস্যাটির মূল নিজের ভেতরেই। সমস্যা সমাধানের বড় ধাপ হচ্ছে সমস্যার মূলটি চিহ্নিত করতে পারা।
সুতরাং, এই লেখাটিকে বা বইটিকে কেউ নিজের বাজে অভ্যাস সমূহের সমর্থনে ব্যবহার না করলেই ভালো হয়।
আর মানুষ কেন কী করে বা মানবজীবনের রহস্যের উত্তর কী, এ নিয়ে বৈবর্তিক ব্যাখ্যাকেই একমাত্র সঠিক ব্যাখ্যা মনে করতে হবে এমন কোন কথা নেই। এটা বায়োলজিক্যাল দিক থেকে একটা ব্যাখ্যা। এছাড়াও আরো নানা ধরণের ব্যাখ্যা আছে, এবং হতে পারে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। 🙂