সেথ গোডিনের ১১ আইডিয়া

বিখ্যাত মার্কেটিং এক্সপার্ট, উদ্যোক্তা সেথ গোডিনের কিছু আইডিয়া, তার ব্লগ থেকে নেয়া, এবং বাংলায় ভাষান্তর করলাম।

ছবিঃ সেথ গোডিন।

১। গলা পরিষ্কার করা দরকারী না।

কথা বলার আগে গলা পরিষ্কার করার জন্য কিছু বলা হয়। এক দুই প্যারা, ভূমিকা। এটি করা হয়, যারা সামনে আছে তাদের মনযোগ আকর্ষণের জন্য। কিন্তু যখন আসলেই মনযোগ দিয়ে শ্রোতারা বসে আছেন কথা শোনার জন্য তখন এই ভূমিকার দরকার নেই। যখন একজন লিংকে ক্লিক করে এসেছেন আপনার ব্লগে, তিনি মনযোগ দিয়েই, আগ্রহী হয়েই এসেছেন, অতএব তার জন্য ভূমিকা না দিয়ে সরাসরি পয়েন্টে গিয়ে কথা শুরু করাই ভালো।

 

২। যারা আগ্রহী তাদের জন্যই লিখুন।

যারা পড়তে আগ্রহী না তাদেরকে পড়ানোর চাইতে যারা পড়তে আগ্রহী তাদেরকে পড়ানো অনেক সহজ। তাই যারা পড়তে আগ্রহী তাদের জন্যই লিখুন। একই জিনিস শেখানোর ক্ষেত্রেও। যারা শিখতে চায় না তাদের শেখাতে পারবেন না। যারা কৌতুক শুনতে চায় না তাদের কৌতুক বলে হাসাতে পারবেন না।

সবার কাছে বই বিক্রি করার চেষ্টা বৃথা। আমেরিকাতে ৫৮% লোক হাই স্কুলের পর আর কোন বই পড়ে না। আমেরিকাতে এই অবস্থা হলে আমাদের দেশে কী অবস্থা হবে ভাবেন।

 

৩। সমস্যা সমাধান ও ভালো সার্ভিস দেবার দুই উপায়

নাটক পন্থাঃ কাস্টমারদের বুঝিয়ে দিন আপনি কতো পরিশ্রম করছেন। সার্ভিসটি দিতে কতদূর পর্যন্ত কাজ করছেন। স্পেশাল অর্ডার থেকে বিগ ডিল নিন, সাথে বাড়তি খরচ, ঘাম ও কান্না।

অ-নাটক পন্থাঃ দেখান যে সার্ভিসটি আপনি সহজেই দিচ্ছেন।

দুই পন্থাই কাজ করতে পারে। নির্ভর করে কাস্টমার ও সিচুয়েশনের উপরে।

আপনি কোনটা বেছে নিবেন তা আপনার চয়েজ। আপনার উদ্দেশ্য কী তার উপর নির্ভর করে।

 

৪। দি জার্ক ফ্যালাসি

মিডিয়া বা বিজনেসে এমন একটি প্রচার খুব দেখা যায় যে, বিখ্যাত বা সফল ব্যক্তি মাত্রই তার কিছু অতি খারাপ দিক থাকতে হবে। এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন সফল হতে হলে ঐসব খারাপ দোষগুলি থাকতে হবে।

কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন বিজ্ঞানভিত্তিক ডেটা নেই। কিছু লোক সফল হয় কারণ তাদের ঐ দোষগুলি নেই, তারা জার্ক নয় তাই।

যেসব সফল লোক আছে, ব্যবসা চুক্তি ভঙ্গকারী, মারাত্মক স্বার্থপর, ধান্দাবাজ ইত্যাদি, এদের বিপরীতে ঠিক সমান সংখ্যক সফল লোক আছে তারা অন্যদের সাহায্য করেছে, যারা কথা দিয়ে কথা রেখেছে, যারা নিরবে ভ্যালু ক্রিয়েট করে গেছে।

দুই পথই কাজ করতে পারে। এর জন্যই দুই ধরণের লোককেই আমরা সফলদের কাতারে পাই।

জার্ক পন্থার সমস্যা এটা না যে এটি কম কার্যকরী। বরং সমস্যাটি হলো সারাদিন আপনি একটা জার্কই রয়ে গেলেন।

 

৫। “অত ভালো না” এর বিপদ

আমরা যারা কাজে ভালো তাদের সাথে কাজ করতে চাই। যারা তার কাজে “অত ভালো না” তাদের সাথে কাজ করতে চাই না। কিন্তু অনেক সময়ই, অনেক বিষয়ে আমরা বলে থাকি, আমি ওই জিনিসে অত ভালো না।

এই কথাটি অত সত্য নয়। প্রায় সব কাজের ক্ষেত্রে সত্যিকার কথাটি হলো, ঐ জিনিসে এখন পর্যন্ত আমি অত ভালো না।

অবশ্যই আপনি প্রোগ্রামার হিসেবে কখনো ভালো এক লাইন কোড লিখেছেন, বা লেখক হিসেবে ভালো হেডলাইন লিখেছেন। ডাক্তার হিসেবে হয়ত কখনো একবার ভালো ডায়াগনোসিস করেছেন, রোগ ধরতে পেরেছেন। কখনো আপনি অসাধারণ কিছু করেছেন।

তার মানে আপনি পারেন না এটা ঠিক নয়।

ঠিক হলো আপনি ওই কাজে বেশি মনযোগ দেন না।

আমি যে প্রোগ্রামার হায়ার করব সে তার কাজে বেশী মনযোগ দেয় না, কথাটি বেশী সত্য; আমি যে প্রোগ্রামার হায়ার করব সে তার কাজে অত ভালো না কারণ তার ডিএনএ খারাপ – কথাটির চাইতে।

এটা সত্যি হতে পারে আপনার কাজে এখনো আপনি অত ভালো না। কিন্তু দীর্ঘ, দীর্ঘ সময় ধরে মনযোগ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকলে আপনি কাজে বেটার হয়ে উঠবেন।

 

৬। “কিছুই না” করে টাকা

একজন বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল টাকা বানানোর কিছু উপায় সম্পর্কে। (সব সরাসরি উক্তি।)

“যেসব সার্ভে পূরণ করলে টাকা দেয় ওগুলি কি আমি করতে পারি?”

“সুপ্রিম থেকে টিশার্ট কিনে অন্যত্র বিক্রি করে কি টাকা বানাতে পারব?”

“আপনি কি মনে করেন ডগ ওয়াকার হিসেবে আপনি ঘন্টায় ৫০ ডলার করে পেতে পারি?”

“কোন বিখ্যাত মানুষের লেকচার শুনে আইসিওতে ইনভেস্ট করা কি সহজে ধনী হবার উপায়?”

সত্যি কথাটি হলো, যত শর্টকাট রাস্তা ছিল তা নেয়া হয়ে গেছে। বাকি যেসব শর্টকাট রাস্তা আছে ওগুলি গোপন ঝঞ্জালে, ধান্দাবাজিতে পূর্ন।

অথবা এভাবে ভাবলে কেমন হয়,

“কীভাবে আমি আমার স্ক্রিনপ্লের জন্য একজন এজেন্ট পেতে পারি, বা

“কীভাবে আমি একজন প্রকাশক পেতে পারি যে আমার লেখা বইটি প্রকাশের জন্য অগ্রীম ভালো টাকা দিবে?”

আপনার সেরা কাজটি অবশ্যই “কিছুই না” নয়। এটি হলো আপনি যা দিতে পারেন তার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন অংশ।

দীর্ঘ, এবং কঠিন পথটি বেছে নেয়াই ভ্রমণ হিসেবে সার্থকতা, কারণ এটি আপনি যার যোগ্য তা পাবার সবচাইতে ভালো উপায়।

 

 

৭। চার ধাপে মার্কেটিং

প্রথম ধাপ হলো এমন কিছু আবিষ্কার করা যা তৈরি করার যোগ্য, এমন গল্প বের করা যা বলার যোগ্য, এবং এমন অবদান যা নিয়ে কথা বলা যায়।

পরের ধাপ হলো ডিজাইন করা ও তৈরি করা। এমনভাবে যাতে লোকের এতে উপকার হয়, এবং লোকেরা এর মূল্য দেয়।

তৃতীয় ধাপ হলো, এবার আপনি আপনার গল্পটি ঠিক ভাবে ঠিক লোকজনের সামনে বলবেন।

চতুর্থ ধাপ, যা অনেক সময় ইগনোর করা হয়ঃ এই ধাপে আপনি নিয়মিত দেখা দেন, উদারতার সাথে, বছরের পর বছর,  যে পরিবর্তন আপনি করতে চাচ্ছেন সেই সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস তৈরি এবং শৃংখলাবদ্ধ করতে।

 

৮। সাংক কস্ট ভুলে যান

বিজনেস স্কুলে সিদ্ধান্ত নেয়া বিষয়ে আপনি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন যে শিক্ষাটি পেয়েছেন, সেটি বেশীরভাগ অংশই ভুল বুঝা হয়েছে।

যখন দুইটি অপশন থেকে একটি বাছাই করার মত পরিস্থিতিতে আসবে তখন ভাবুন কোনটায় ভবিষ্যতে ভালো হবে। ভুলে যান কোনটাতে অতীতে আপনি কতো ইনভেস্ট করেছেন। পাস্ট ইনভেস্টমেন্ট হারিয়ে গেছে, ওগুলি শেষ, আর পাবেন না। ভবিষ্যতের সাপেক্ষে এদের গুরুত্ব নেই।

আপনার দুই খন্ড জমি আছে। এক খন্ড আপনি কিনেছেন ১ লাখ টাকা দিয়ে। আরেক খন্ড কিনেছেন ১০ হাজার টাকা দিয়ে। এখন এক খন্ড জমিতে গ্যাস স্টেশন বানাবেন? এক্ষেত্রে কোন জমি বেছে নিবেন?

বড় রাস্তার পাশের জমিটি। কারণ সেখানেই গ্যাস স্টেশন করলে লাভ। এখানে অবশ্যই আপনি বিবেচনায় নিবেন না কোন জমি কতো দিয়ে কিনেছেন সে বিষয়টা।

আপনি একটি মুভির টিকেট সংগ্রহ করেছেন। এই টিকেট পাওয়া খুবই কঠিন। ৫০ টাকা খরচ হয়েছে।

দেখতে বের হয়েছেন, সিনেমা হলের সামনে যেতে এক লোকের সাথে দেখা। সে আপনার টিকেট কিনতে চায় ২ হাজার টাকায়। আপনি বিক্রি করবেন কি?

আপনি কত সময় খরচ করে টিকেট সংগ্রহ করেছেন তা বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হলো ঐ ২ হাজার টাকায় আপনি টিকেট কিনতেন কি না। উত্তর যদি না হয় তাহলে আপনার উচিত টিকেট বিক্রি করে দেয়া।

আবার ধরুন, আপনি গেলেন মুভিটি দেখতে। বিক্রি করলেন না টিকেট। গিয়ে দেখলেন মুভিটি মারাত্মক বাজে। আপনি দশ মিনিট দেখার পর আর নিতে পারছেন না। এখন কি দুই ঘন্টা বসে বসে দেখবেন যেহেতু কষ্ট করে সংগ্রহ করেছেন ও ৫০ টাকা খরচ করেছেন? নাকি চলে আসবেন বাকিটা না দেখে?

আপনি যা খরচ করবার তা তো করেই ফেলেছেন। এখন তার অজুহাত দিয়ে আরো ক্ষতি করার কি কোন মানে হয়?

সাংক কস্ট অর্থাৎ যে খরচ হারিয়েই গেছে তাকে ভুলে যান। ভবিষ্যতকে বিবেচনা করুন।

 

৯। কঠিন সিদ্ধান্ত বিষয়ে

কিছু সিদ্ধান্ত আছে যা আমরা নিতে বাধ্য হই, এগুলি আমাদের মনে হয় যেন আমাদের উপর অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং আমরা এগুলি থেকে কোন ভালো ফল যেন দেখতে পাই না।

কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিবেনঃ

১। স্বীকার করে নিন অবস্থাটি বাজে। আপনার ঐ অবস্থায় না থাকলেই ভালো হত। আপনি এমন আশা করেন নি। এই ধাপে আপনি বার বার ফিরে আসতে পারেন চাইলে। কিন্তু এই ধাপ অন্য ধাপগুলির কাজ করতে পারবে না।

২। সাংক কস্ট ভুলে যান। অতীতে আপনি কী করেছেন এর জন্য, কতো খরচ হয়েছে, কতো সময় দিয়েছেন, সব ভুলে যান।

৩। আপনার কী কী আপশন আছে আলাদা করুন। কোনটাই নিখুঁত নয়। কোনটাই আপনার আশানুরূপ আনন্দদায়ক নয়। সবগুলাতেই কিছু স্টেপ আছে যা আপনার জন্য আরামদায়ক নয়। এগুলি ঠিক আছে, যেহেতু পরিস্থিতিটাই এমন। সব লিখে নিন।

৪। প্রত্যেক অপশন এবার ভবিষ্যতের সাপেক্ষে বিচার করে দেখুন। সাংক কস্ট ভুলে যান, ভুলে যান অতীতে এর পেছনে কতো কী করেছেন, ভুলে যান কি আপনার যোগ্য, কেবল দেখুন কোন অপশনটি ভবিষ্যতে বেটার আউটকাম নিয়ে আসবে। সেটাই পছন্দ করুন। আর পেছনে তাকাবেন না, এগিয়ে যান।

 

 

১০। এলকোহল ও গাঁজার মার্কেটিং

 

১৯৩৩ সালে এলকোহলের উপর ইউএস নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অনেক ব্র্যান্ড পাই।

একই ভাবে উত্তর আমেরিকায় গাঁজার উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। পরে সম্ভবত সারা বিশ্বে। এখন কিছু মার্কেটাররা জিজ্ঞেস করছেন এলকোহলের মত সফল গাঁজার ব্র্যান্ড কি আমরা দেখব?

গাঁজা এবং এলকোহলের প্রোডাক্ট হিসেবে কিছু মিল আছে, তাদের ভোক্তা ধরণের মধ্যেও মিল আছে। কিন্তু, এলকোহলের নিষেধাজ্ঞা যখন উঠেছিল তখন ম্যাগাজিন ও টিভি বিজ্ঞাপনের স্বর্নযুগ ছিল। সিগারেটের সাথে এলকোহলের ব্র্যান্ডগুলি ছিল মূল বিজ্ঞাপনদাতা। তখন বার বার বিজ্ঞাপন দিয়ে, সামনে গিয়ে ভোক্তাদের আকর্ষন পাওয়া যেত।

কিন্তু গাঁজা যখন এলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে, এখন মূল মার্কেটিং মাধ্যম ইন্টারনেট।

এবং ইন্টারনেট কোন ম্যাস মিডিয়াম না। যদিও ম্যাস মিডিয়াম বলে মনে হয়, যেহেতু বিলিওন বিলিওন লোক এটি ব্যবহার করছেন।

কিন্তু এটি আসলে মাইক্রো মিডিয়াম। সরাসরি মার্কেটিং এর মিডিয়াম। ইন্টারনেটে তিন বিলিয়ন লোক আছেন কিন্তু তারা ৩০০০,০০০ টি ওয়েব পেইজ দেখায় ব্যস্ত।

এছাড়া পাব ও বারের হাজার বছরের ঐতিহ্য ছিল। ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং এলকোহলের ক্ষেত্রে শক্তভাবে কাজ করেছে। গাঁজার ক্ষেত্রে এমন হবে না।

চাহিদা এবং লাভ বেশী থাকায় হতে পারে কোন একক বিজেতাই গাঁজার বিজ্ঞাপন দখল করে নিতে পারে। কিন্তু এটি লোকাল এস্প্রেসো বা হুইস্কির মতোই ব্র্যান্ড হতে পারে, ভদকার মতো হবে না।

 

 

১১। সময় ও টাকার পার্থক্য

 

আপনি সময় ব্যয় না করে থাকতে পারবেন না। সময় সেইভ করে রাখতে পারবেন না। সময় ব্যয় করতে অস্বীকৃতিও জানাতে পারবেন না।

হয় আপনি আপনার সময় খরচ করেছেন।

অথবা সময় আপনাকে খরচ করছে।