\
শহরের মূল রাস্তার সাথে গইলাপাড়া ঢোকার গলি যেখানে মিলেছে তার কিছুটা সামনে যেখানে ছড়াটি ছিল, কয়দিন আগে যে ছড়ায় একটি মরা হাঁস পচে দূর্গন্ধ ছড়িয়েছিল, বার্ড ফ্লু এবং ভয়ানক দূর্গন্ধ থেকে বাচঁতে নগরবাসী তখন নাকে কাপড় চেপে আসা যাওয়া করত সেখানটায়, একটু বা দিকে রাস্তার পাশে মোটা লোহার পিলারের উপরে একদিন সরকারী লোকেরা দেশের এক বিশিষ্ট ব্যক্তির বিশাল ছবি ঝুলিয়ে দিল।
মানুষজন ক্ষুব্ধ হল;বিস্মিত হল, তারা কেউ কেউ বলল, এটা হতে পারে না, অসম্ভব,একজন সম্মানীত ব্যক্তির অসম্মান আমরা হতে দিতে পারি না এবং এদের মধ্যে লেউ কেউ বলল, এটা সরকারের কূটচাল, সরকার আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই এই বিশাল ছবি ঝুলিয়ে দিয়েছে,যাতে আমরা রাস্তার খানাখন্দ,ফুটপাত কিংবা ম্যানহোলের গর্ত এসব কিছু দেখতে না পারি এবং পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে বসে থাকি।কেউ কেউ এদের কথায় সায় দিল এবং অপেক্ষাকৃত বয়সে যারা তরুণ তারা বলল তারা এই ছবি খুলে ফেলবে,দরকার হলে আগুন দিবে,পুড়িয়ে ফেলবে, সরকারের এই অন্যায় তারা মানবে না, তারা প্রতিবাদ করবে এবং বিপ্লবের গণজোয়ার বইবে দিবে।
কিন্তু আসলে তারা কেউ ই কিছু করতে পারল না এবং ছবিটি দাঁড়িয়ে রইল সগর্বেই।মানুষজন আস্তে আস্তে জিনিসটাকে মেনে নিচ্ছিল কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞ লোক আঞ্চলিক এক পত্রিকায় এক গবেষনামূলক প্রবন্ধ লিখে সমগ্র ঘটনাকে আবার জীবিত করে তুললেন।তিনি তার গবেষনা মূলক প্রবন্ধে বললেন, তিনি এতদিন গবেষনা করে দেখেছেন এই ছবি রাস্তায় বসানোর পরে এই রাস্তায় দূর্ঘটনার পরিমান হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে, তিনি তথ্য প্রমাণ উপাত্ত হাজির করলেন এবং বার বার ঘোষনা দিলেন তার এই গবেষনা রিপোর্ট অকাট্য।
মানুষের মধ্যে আবার চাঞ্চল্য দেখা দিল,মানুষজন এক হল কি করা যায় ঠিক করতে।সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আলোচনায় যখন মগ্ন ছিলেন তখন রিকশাওয়ালা দবিরুদ্দিন, যার বাপের নাম চৌধুরী সবুরউদ্দিন,গ্রাম বারহাতি,সে হাত তুলে বেয়াদবের মত প্রশ্ন করল, আমি এক কান প্রশ্ন করবার চাই। এই লুকটা কিডা?
সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মাঝারি বিশিষ্ট ও অবিশিষ্ট রা একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন এবং তখনি তারা বুঝতে পারলেন এই লোকটি কে তা তারা নিজেরাই জানেন না। অনেকে বললেন এই লোক সরকারের লোক, কেউ কেউ বললেন দেশের প্রধান কবি,কেউ কেউ বললেন গায়ক নায়ক, কিন্তু সবার উত্তরই ছিল ধারণাকে কেন্দ্র করে তাই কারো উত্তরই আসলে গ্রহণ যোগ্য হল না।
এর মাঝে কেউ কেউ দবিরুদ্দিনের দিকে কড়া চোখে তাকাতে লাগলেন কারণ দবিরুদ্দিন এক সমস্যার মধ্যে থাকা অবস্থায় তাদের উপর আরেক সমস্যার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে দবিরুদ্দিনের বউ তাকে খোঁজে খোঁজে হয়রান হয়ে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বেড়িয়েছে।
আজ যে রাস্তার ছবি নিয়ে মিটিং হচ্ছে তা দবিরুদ্দিনের বউ জানে, শুধু দবিরুদ্দিনের বউ না শহরের সবাই ই প্রায় জানে,মাইক দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে সাতদিন ধরে, মাইক দিয়ে যখন বলে যাচ্ছিল, মিটিং মিটিং মিটিং………………………আপনারা সকলে আসিবেন…তখন দবিরুদ্দিনের বউ দবিরুদ্দিনকে বলেছিল, আপনে মিটিং এ যাইয়েন না, এইসব বড়লোকের কাম,আপনে রিকশা নিয়ে বাইর হইবেন, পোলার পেট নামছে।
দবিরুদ্দিন তার বউয়ের কথা শোনে নি; সে মিটিং এ চলে এসেছে।দবিরুদ্দিনের বউ রিকশা বাড়িতে দেখেই তার খোঁজ করছে এবং মিটিং এর দিকে পা বাড়িয়েছে। সে দবিরুদ্দিনের বাপ দাদা চৌদ্ধ গোষ্টিকে নির্মম ভাষায় স্মরণ করতে করতে,পেট অসুখে আক্রান্ত ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে হাটছে। হেটে হেটে সে যখন ছড়ার ধারে আসল তখন দবিরুদ্দিনের ছোট ছেলে, যে পেট অসুখে আক্রান্ত, মায়ের কোল থেকে নেমে রাস্তার পাশে পায়খানা করে বসল।
দবিরুদ্দিনের বউয়ের এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিল, তার উপর ছেলের এই কর্ম তার রাগ আরো বাড়িয়ে দিল, সে ঠগবগ করে ফুটে উঠল যেন, ছেলের গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রচারিত দৈনিকের এক টুকরো কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে ছেলের পায়খানা পরিস্কার করতে লাগল।
দবুরুদ্দিনের ছোট ছেলে তখন বাপের মতই আহাম্মকী এক কাজ করে বসল, দুটো চড় খেয়ে দূরে সরে না গিয়ে সে তার মাকে উদ্দেশ্য করে এবং রাস্তার পাশের সেই বিশিষ্ট জনের ছবিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেশ করল, মা এই লোকটা কিডা?
দবিরুদ্দিনের বউ ছেলের প্রশ্নে ছবিটির দিকে তাকাল এবং তার মনে হল এই ছবি ই সব কিছুর মূল। সে কাগজমুড়ানো ছেলের পায়খানা ছুড়ে মারল ছবিটির মুখে, আগেই বলা হয়েছে দবিরুদ্দিনের ছোট ছেলের পেট অসুখ ছিল সুতরাং ছবির বেশ কিছু অংশে লেপ্টে রইল হলুদ রঙ্গের বস্তু।
কাঠফাটা রোদের কারনে কয়েকদিনের মধ্যেই এই বস্তুগুলো বেশ ভালো রকমভাবে যখন ছবিটির গায়ে লেগে গেল তখন সবার নজরে এল বিষয়টি।এক কান দুই কান করে করে সরকারের বিশাল কান পর্যন্ত গেল এবং সরকার বিজ্ঞপ্তি জানালেন আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হল কারণ এহেন দুষ্কর্ম কল্পণাও করা যায় না।কিন্তু তারা আবার কিছুটা আশান্বিত ও হল কারণ আকাশে তখন মেঘেরা আনাগোনা করা শুরু করেছে, দেখতে দেখতে আকাশ কালো হয়ে গেল এবং তুমুল বৃষ্টি নামল। অধিকাংশ মানুষই ধারণা করতে লাগল ঈশ্বর সম্মানী লোকের মান বাচাঁতে এগিয়ে এসেছেন, তিনি চান না এই ছবিতে গু লেগে থাকুক এবং ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া ঘোরাফেরা করুক।
একদিন,দুইদিন,তিনদিন প্রবল বৃষ্টি হল। লাগামহীন বৃষ্টিতে এলাকার ড্রেইনেজ সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হল এবং শহরের মূল নদিটিও কূল কিনারা ছাঁপিয়ে বইতে লাগল।সৃষ্টি হল বন্যার। তবুও বৃষ্টি বন্ধ হল না। চলতেই থাকল, চলতেই থাকল।
–
প্রথম প্রকাশ এবং ছবি শিল্প ও সাহিত্য – বাংলানিউজ২৪