আপনার বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তি হতে পারে বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের জীবন থেকে নেয়া তিনটি শিক্ষা। রিচার্ড ফাইনম্যান ছিলেন একজন জিনিয়াস। পদার্থিবিজ্ঞানকে তিনি খুবই সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। পদার্থবিজ্ঞানেই নোবেল পুরস্কার পান।
আপনি যেন নিজেকে বোকা না বানান, কারণ নিজেকে বোকা বানানোই সবচাইতে সহজ। এই গুরুত্বপূর্ন সত্যটি ফাইনম্যানের বয়ানেই বিখ্যাত।
বুদ্ধিবৃত্তিকে শাণিত করার জন্য প্রথমে আপনাকে দুনিয়া বুঝার চেষ্টা করতে হবে ও নিজের উদাহরণ খাড়া করতে হবে। আপনি যদি নিজস্ব উদাহরণ ও এনালোজির দাঁড় করাতে না পারেন তাহলে আপনি জিনিসটা বুঝলেন না। সাইকোলজিস্ট ডেনিয়েল কায়নেম্যান এই কথাটিই বলেছেন কানেক্টিং ডটের কথা। এভাবেই বুদ্ধিমানেরা বই থেকে শিখেন। অন্যান্য ঘটনার সাথে বইয়ের ঘটনাকে কানেক্ট করে। বেশিরভাগেই এটা পারে না, আর তাদের অনেকেই বলে বই থেকে কিছু শেখা যায় না।
ফাইনম্যান এটি শিখেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে। বাবা চাইতেন ছেলে বড় হয়ে হবে বড় পদার্থবিজ্ঞানী। এজন্য ছোটকাল থেকেই তিনি ফাইনম্যানের কল্পনাশক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করেন। পাখি দেখলে কেবল পাখির নাম জানলেই আপনি পাখিটাকে বুঝলেন না। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল, এই নলেজটি ফালতু, কারণ এটি দোয়েল কী, দেখতে কীরকম, আবাস কোথায় তার, তার জীবন যাপন কেমন ইত্যাকার জিনিস আপনাকে জানায় না। এগুলি না জেনে আপনি কখনো বলতে পারেন না আপনি দোয়েলকে জানেন।
ফাইনম্যানের বাবা যখন ছোট ফাইনম্যানকে ট্রাইনোসেরাস রেক্স সম্পর্কে বলতেন, তখন উচ্চতা বুঝাতে ব্যাখ্যা করতেন, এটা তোমার ঘরে আটকে যাবে, তবে এর মাথা তো লম্বা তাই ঘরে আটবে না।
এই ধরনের ব্যাখ্যা মানুষের কল্পণাশক্তিকে জাগায় ও নিজ থেকে ভেবে বুঝতে সাহায্য করে। ফাইনম্যান পরবর্তী কালে সহজে ব্যাখ্যা করার দূর্লভ গুণটির প্রকাশ ঘটান ও দি গ্রেট এক্সপ্লেইনার নামে খ্যাত হন।
এম্পেথি লাগবে আপনার বুদ্ধি বাড়াতে। এম্পেথির বাংলা অর্থ সহমর্মিতা বা সহানুভূতি। আরো ক্লিয়ার করে বললে, অন্যের অবস্থানে নিজেকে রেখে জিনিসটা বুঝার চেষ্টা করা। এই জিনিস আমি দেখেছি অধিকাংশ লোকেরই নাই।
লিডারের এই গুণ থাকতে হয়। আলফা মেইল নামে একটা ওয়ার্ড প্রচলিত আছে, অনেকটা ভুল ভাবে। যেখানে আলফা মেইল বলতে কেবল ডমিন্যান্সই বুঝায়। কিন্তু এটি ভুল, স্বয়ং আলফা মেইল তত্ত্ব যিনি দিয়েছিলেন, সেই বিজ্ঞানী ফ্রান্স ডি ওয়ালের মতে। তিনি শিম্পাঞ্জিদের পলিটিক্স ব্যাখ্যা করতে এক বইয়ে টার্মটি ব্যবহার করেন। তিনি দেখিয়েছেন আলফা মেইলদের এম্প্যাথী থাকে সবচাইতে বেশি। সহজাত ভাবেই এটা তাদের প্রচুর পরিমাণে বেশি থাকে। এজন্য শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী পড়লে আপনি দেখবেন কম বয়েস থেকেই তিনি কীভাবে অন্যের জন্য এগিয়ে যেতেন বিপদের আশঙ্কা থাকলেও।
ফাইনম্যান অন্যের দিক থেকে ব্যাপারটা দেখতে জানতেন। তাই অনু পরমাণু ইত্যাদির স্থানে নিজেকে বসিয়েও তিনি পর্যবেক্ষণ করতে পারতেন কল্পনায়। ফলে তার জন্য বুঝা এবং অন্যকে বুঝানো সহজ হয়ে উঠত।
ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স অনেজ জরুরী বিষয়, কেবল লজিকই বুদ্ধিমত্তা নয়।
তিন নাম্বার বিষয় হলো, সবাই সব বিষয় পারে না। সব বিষয়ে আগ্রহ থাকে না। কিছু কিছু বিষয় তার সীমার বাইরে বা তার জন্য পেইনফুল। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। বের করুন কোন কোন বিষয় আপনি পারেন না।নিজের সীমাবদ্বতা। এগুলিতে সময় ব্যয় করার কিছু নেই। এড়িয়ে যান। ফাইনম্যান আর্ট হিস্টরি, ফিলোসফি, ও মিউজিকে খারাপ ছিলেন। তিনি এগুলি এড়িয়ে গেছেন, কখনো এগুলিতে দুই নম্বরী করে পাশ করেছেন। মিউজিক তাকে ফিজিক্যাল পেইনও দিত, এমন অভিযোগও রয়েছে তার। অর্থাৎ, একজন জিনিয়াসও অনেক জিনিস পারেন না, অনেক বিষয়ে অনাগ্রহী থাকতে পারেন। নিজের বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ানোর জন্য, এ ব্যাপারেও ক্লিয়ার থাকতে হবে।
অনেকে খুব দ্রুত বুঝতে চান। সহজে ও দ্রুত বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ানোর চেষ্টা কাজের কথা নয়। কোন জিনিস নিয়ে বললেই, ভাই বই সাজেস্ট করেন। এই প্রশ্ন প্রমাণ করে তার আগ্রহ কম। কারণ আগ্রহ থাকলে আপনি এই প্রশ্ন আমাকে করতেন না। আগে নিজে জানার চেষ্টা করতেন। ফাইনম্যান যখন নোবেল পুরস্কার পেলেন তখন সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনার কোয়ান্টাম ফিজিক্স বিষয়ক কাজ কি আমাদের জন্য এক মিনিটে বলতে পারবেন?
ফাইনম্যান বলেছিলেন, এক মিনিটে আমার কাজ যদি বলা যেত তাইলে কি আর আমি এর জন্য নোবেল পাইতাম!
একই ধরনের কথা অস্ট্রিয়ান ফিল্মমেকার, স্ক্রিণলেখক মিখায়েল হানেকে বলেছিলেন তার প্যারিস রিভিউ ইন্টারভিউয়ে। তিনি সিনোপসিস লেখেন না। কারণ অল্পকথার সামারিতে ব্যাখ্যা করা গেলে তিনি এত বড় করে লিখেছেন কেন, এই ছিল তার কথা।
বইঃ জিনিয়াসঃ দি লাইফ এন্ড সাইন্স অব রিচার্ড ফাইনম্যান। ফ্রান্স দি ওয়ালের টেড টক, দি সারপ্রাইজিং সাইন্স অব আলফা মেইল, মিখায়েল হানেকের ইন্টারভিউ আর্ট অব স্ক্রিনরাইটিং -০৫ প্যারিস রিভিউ।