মানুষ হিসেবে আমরা যে এই সকল কিছু, আমাদের চারপাশরে দেখি ও বুঝি, এটা কীভাবে হয়?
সাধারণ মানুষেরা এটা নিয়ে ভাবে না। কিন্তু অসাধারণেরা ভাবেন। এই অসাধারণদের জন্যই এই লেখা।
একটা কোর্স করতেছি নিউরোসাইন্স ও পারসুয়েশন নিয়ে। সেখান থেকে কিছু ছবি ব্যবহার করব।
মানুষ হিসাবে আমাদের, আমার এবং আপনার একটা ব্রেইন আছে। এই ব্রেইনেই আমাদের সকল কিছু প্রসেস হয়। আমরা কোথাও সাপ দেখলে এই ব্রেইনই বুঝায় যে জিনিসটা সর্প।
ব্রেইন দুইটা আছে আমাদের, বুঝার জন্য বলা যায়। কায়নেম্যান যেটাকে বলেছেন সিস্টেম ওয়ান থিংকিং ও সিস্টেম টু থিংকিং।
বা বলা যায়, একটা হলো আদি ব্রেইন। আরেকটা হলো যৌক্তিক ব্রেইন।
আদি ব্রেইন ও যৌক্তিক বা র্যাশনাল ব্রেইনের ব্যাপারে একটা তথ্য মনে রাখলে আপনি দুইটার শক্তি সম্পর্কে বুঝতে পারবেন সহজে।
আদি ব্রেইনের উৎপত্তি হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে। আর র্যাশনাল ব্রেইনের ৫ মিলিয়ন বছর আগে।
এই যে ব্যবধান, এটা শক্তিরও। এইজন্য ৯৯.৯ ভাগ সিদ্ধান্ত মানুষ নেয় আদি ব্রেইন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। যুক্তি দ্বারা বিচার করে নয়!!
আদি ব্রেইন কাজ করে ইমোশন বা আবেগের দ্বারা তাড়িত হয়ে।
খুবই ইমিডিয়েট অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে আদি ব্রেইন।
পক্ষান্তরে র্যাশনাল মুডে গেলে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের আলোকে বিচার করা যায়। ওটাকে বলে ক্রিটিক্যাল থিংকিং বা র্যাশনাল থিংকিং।
আদি ব্রেইনের ৫০০ মিলিয়ন বছরের ইতিহাস যেহেতু, এবং যেহেতু কেবলমাত্র আবেগই তার অবলম্বণ, তাই প্রচুর প্রচুর বায়াস দ্বারা তাড়িত থাকে।
বায়াস মানে হলো পক্ষপাতিত্ব, বা অন্ধভাবে কোন একটা পক্ষে যাওয়া। বায়াস মূল জিনিসটার উপরে একটা চশমা এঁটে দেয়। ঐ চশমার মাধ্যমে ভিন্ন জিনিস লোকে দেখে।
আপনারা ত ওই গল্প জানেন। এক লোক খুব ধার্মিক এবং এক লোক চোর। দুজন খুব সকালে পুকুরে গেছেন হাত মুখ ধুইতে। তাদের দেখা হলো। চোর ভাবলো, হালায় তো রাইতে চুরি কইরা আসছে। আর ধার্মিক লোকটা ভাবলো, ওই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই নামায পড়তে আসছেন।
এটা একটা পক্ষপাতিত্বের উদাহরণ। খুবই দ্রুত, ইমিডিয়েট এক্সপেরিয়েন্সে, নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জাজ করা।
সাইকোলজিস্ট গুস্তাব জাং যখন বলেন মানুষ জাজ করে কারণ চিন্তা করা তার জন্য কঠিন, এটাতে তিনি আদি ব্রেইনই বুঝান। যদিও ঐসময় হয়ত নিউরোসাইন্সের এত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছিল না।
আমাদের অভিজ্ঞতা আসলে কতো পার্সেন্ট দুনিয়ার ঘটনাবলির? ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ এর পরে কোন একটা সংখ্যা হতে পারে। খুবই টাইনি। কিন্তু বিচারের সময় আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দ্বারাই সকল কিছু দেখি!
আমাদের যত ইমোশন আছে, এগুলি প্রকাশের শব্দ পর্যন্ত আমাদের নাই। ইংরেজিতে ১৮০০০ ইমোশন প্রকাশ করার শব্দ আছে।
আর আমরা দিনেই ৪৮ হাজার আবেগের মুখোমুখি হই।
তাই, আবেগই আমাদের পরিচালিত করে। অর্থাৎ আদি ব্রেইন।
আবেগকে মানুষ ট্রুথ ভাবে, ও ভাবে অথেনটিক ফিলিং। কিন্তু তা নয়। কারণ ওষুধ দিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাইপোলার বা স্কিজোফ্রেনিয়া যারা দেখেছেন বা যাদের আছে তারা এটি ভালো জানবেন।
ফলে যে ভুল বুঝাটা আমাদের হয়, ফিলিং বা আবেগই অথেনটিক আমি, এটি ভুল। আবেগ হলো হরমোনজনিত কিছু কেমিকেল রিয়েকশন।
এখন, কথা হলো, আবেগ দ্বারা পরিচালিত হলে আমাদের সমস্যা কী আছে?
মানুষের বেশিরভাগ সমস্যার মূলে আসলে এটাই। কিন্তু এটাই আবার মানবজাতির টিকে থাকার জন্য দরকারী ছিল।
অনেক কিছুই, যেমন ব্যবসা বা স্টক মার্কেট টিকতো না মানুষ যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে।
বিহেভিওরাল একনোমিক্স বা সাইকোলজি ও একনোমিক্সের যে যৌথ ফিল্ড এতে একটা তর্ক আছে ইমোশনাল চিন্তা বা সিস্টেম ওয়ান থিংকিং ভালো না খারাপ।
অনেক অযৌক্তিক ভয় বেটার জিনিস দিয়েছে সভ্যতাকে। যেমন, এরোপ্লেইন যাত্রা বা আকাশযাত্রার নিরাপত্তা বেড়েছে মানুষের এ নিয়ে অযৌক্তিক ভয়ের কারণে।
একটা যুক্তি আছে, কোন দড়িকে সাপ মনে করা বড় ঝুঁকি না, কিন্তু সাপকে দড়ি মনে করা ডেডলি।
কথাটি ঠিক আছে। ইমোশনের পক্ষে এই কথাটি।
কিন্তু এই কথাটিকে কনটেক্সট বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। একসময় সাপ এবং দড়ির যুক্তিটি বেশি প্রাসংগিক ছিল। যেমন জঙ্গলের সমাজে।
এখন কী অতটা আছে, বা এখনকার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কি বিচার করা হবে না?
রিস্কি আচরণ করে মানুষের সঙ্গী আকর্ষণের প্রক্রিয়া ছিল জঙ্গলের সমাজে। কিন্তু এই তাড়নায় এখন কেই মাদক নিয়ে বা রিস্কি আচরণ করে সঙ্গী আহরণ করতে চাইলে তা কি ভালো হয়?
হয় না তার জন্যই।
দড়িকে সব সময় সাপ ভাবার দুইটা সিরিয়াস সমস্যা আছে।
এক, ফিয়ার ও নিরাপত্তাহীনতা জনিত এই অভারথিংকিং মানসিক শান্তি নষ্ট করবে ও অসুখী করবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক বিনাশ করে লাইফের কোয়ালিটি কমাবে।
দুই, সেলফ ফুলফিলিং প্রফেসির মত, একসময় দড়িটি সাপ হয়ে যাবে বা ব্যক্তি সাপকেই ডেকে আনবে। ভক্ত কবীর তার দোহায় যেমন বলেছিলেন, ছাগলের ভয়ে বেড়া দিলাম বাগানে, আর এখন বেড়াই আমার বাগান খাচ্ছে।