অনিশ্চয়তায় সিদ্ধান্ত নেয়ার তরিকা

বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের মধ্যেকার এক ক্রিকেট ম্যাচে ট্রেন্ট বোল্ট এই ক্যাচটি নেন।

যখন লিটনের ব্যাটে লেগে বল উঠছিল শূণ্যে তখন ট্রেন্ট বোল্টের মাথায় কোন ডিসিশন মেকিং মডেল ছিল? তিনি কীভাবে চিন্তা করেছিলেন?

এখানে তাকে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

১। কত দ্রুত মুভ করবেন।

২। কোথায় হাত থাকবে।

৩। কীভাবে ডাইভ দিবেন।

এর একটি ভুল হলে তার ক্যাচ নেয়া সম্ভব হত না।

এই ধরণের অবস্থার ক্ষেত্রে ফিজিক্সে আমরা পড়েছি, ক্যালকুলেশন করে প্রাসের গতি ইত্যাদি বের করতে হয়।

বোল্ট কী এইসব ক্যালকুলেশন করে টরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

জার্ড জিগারেনজার একজন জর্মন সাইকোলজিস্ট, কাজ করেন ইর‍্যাশনালিটি, আনসার্টেইনটি ও মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়া বিষয়ে।

জনপ্রিয় ডিসিশন মেকিং এর বইগুলাতে যে মডেল দেয়া হয়, সব তথ্য ঠিক ভাবে বিবেচনা করে, একটি স্যাটিস্টিক্যাল মডেলে ফেলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, জিগারেনজার এর বিরোধিতা করেন। তার মতে, সকল সময় মানুষের পরিস্থিতি এইরকম থাকে না। অনেক সময় আসে যখন সময় থাকে খুব অল্প, মানুষ থাকে স্ট্রেসে, তাকে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

যেমন উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে বোল্টের সময় ছিল না নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথের অংক করার।

তাকে কিছু হিউরিস্টিক্স বা মেন্টাল শর্টকার্ট এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এগুলি হল,

বল যখন উঠেছে বলের দিকে চোখ রেখে দৌড়াতে হবে।

এমনভাবে দৌড়াতে হবে যেন তিনি বলকে যে এঙ্গেলে দেখছেন তা একই থাকে। বেশি দূরে দৌড়ালে তিনি বল ফেলে এগিয়ে যাবেন। কম দ্রুত হলে পেছনে পড়বেন।

অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ একমাত্র জিনিশটা হল, তার চোখ ও বলের ভেতরকার এঙ্গেল।

বাকি সব তথ্য বাদ দিলেও তার চলে।

জিগারেনজার এর মতে র‍্যাশনাল ডিসিশন মেকিং এ হিউরিস্টিক্স বা মেন্টাল শর্টকাটকে খারাপ হিসেবে দেখা হয়, তা ঠিক নয়। 

বাস্তবের দুনিয়ায়, যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেখানে তথ্য বিবেচনার চাইতে তথ্য ইগনোর করতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে জানার আর্ট হচ্ছে, কী জানতে হবে না, তা জানা।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ এন্ড্রু হালদেইন ২০১২ সালে জ্যাকসন হোল ইকোনমিক পলিসি সিম্পোজিয়ামে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার নাম ছিল দি ডগ এন্ড ফ্রিজবি। 

ছুঁড়ে দেয়া ফ্রিজবি ধরার সময় কুত্তা নিউটনিয়ান ফিজিক্সে ক্যালকুলেশন করে না। সে একটা সিম্পল মেন্টাল শর্টকার্ট ব্যবহার করে। একটা আনুমানিক কোন বজায় রেখে ফ্রিজবির দিকে নির্দিষ্ট স্পিডে তারে দৌড়াতে হয়। কোন জটিল গাণিতিক হিশাবে যেতে হয় না। 

বলাবাহুল্য, হালদেইনের এই বক্তব্য জিগারেনজারের রিসার্চ থেকে প্রভাবিত ছিল। 

জিগারেনজার র‍্যাশনালিটি ফর মরটালস বইতে উল্লেখ করেণ মেন্টাল শর্টকাট বা হিউরিস্টিকস কাজে লাগার মত হয় যখন বাস্তবতা তিনটা ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেঃ 

১। যখন অনিশ্চয়তার মাত্রা হয় অত্যধিক 

২। যখন অনেক অপশন বিরাজমান থাকে 

৩। যখন স্যাম্পল সাইজ হয় ছোট 

উপরোক্ত তিন ক্রাইটেরিয়া ইনভেস্টিং এ মিলে। প্রচুর অনিশ্চয়তা, প্রচুর অপশন এবং অনেক কম ঐতিহাসিক প্রমাণাদি আছে স্টক মার্কেটে। ফলে এখানে মেন্টাল শর্টকার্ট তথা সিম্পল মেথড বেশি কাজ করবে। 

ডিসিশন মেকিং এর দুইটা মডেলের কোনটাই মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়া ব্যাখ্যা করতে পারবে না।  আমাদেরকে দুইটা মডেল, র‍্যাশনাল ডিসিশন মেকিং এবং স্মার্ট হিউরিস্টিকস, দুইটাকেই ব্যবহার করতে হবে পরিস্থিতি বিবেচনায়। 

কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, যেখানে মানুষের কাছে আগে অনেক সময় থাকে, অনেক ডেটা থাকে, এবং উক্ত জায়গায় অনিশ্চয়তার পরিমাণ কম। সে অনেক কিছু চিন্তা করে কাজ করতে পারে। 

অনেক সময় সে পরিস্থিতি থাকে না।

মেন্টাল মডেল এবং মানুষের হিউরিস্টিকসগুলার স্টাডি আমাদের বাস্তব পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্ত নিতে ও মানুষ কীভাবে বাস্তব পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান করে সে ব্যাপারে ভাবতে সাহায্য করতে পারে।