মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » ফ্রেঞ্চ র‍্যাডিক্যাল বুদ্ধিজীবীরা

ফ্রেঞ্চ র‍্যাডিক্যাল বুদ্ধিজীবীরা

দ্যেলুজ আর গাতারি নিয়া আজ পড়তেছিলাম কিছু সময়। এদের সময়ে ফ্রান্সের যে ইন্টেলেকচুয়াল অবস্থা, পুরা ওয়েস্টার্ণ ফিল্মের মত। রেডিকালিজমের ওয়াইল্ড ওয়েস্ট।

একবার একটা ডিপার্টমেন্ট বিশ জন লোক নিয়া শুরু হইল। যার মাঝে জ্যাক দেরিদা, রোলা বার্থ, জ্যাক রাঞ্চের, এলা বাদিয়ু, দেল্যুজ, জা ফ্রাঞ্চো লয়তার্দ, আর জুডিথ মিলার ছিলেন। আর হেড হইলেন মিশেল ফুকো।

নামগুলা দেইখাই বুঝতে পারা যায় ডিপার্টমেন্টের কী দশা হইছিল। ছাত্রছাত্রীরা সিলিং ভাইঙ্গা ফেললো চেক করতে সরকার তাদের গোপনে রেকর্ড করতেছে কি না। রাঞ্চের, বাদিয়ুরে ফায়ার করা হইল ক্লাস মিস করার অজুহাতে । তারা দেল্যুজের সেমিনারে গিয়া হাংগার স্ট্রাইক করলেন।

এক পর্যায়ে জুডিথ মিলারেরা গ্রেডরে ক্যাপিটালিস্ট বুলশিট বলে গ্র্যাডিং পর্যন্ত বাদ দিলেন। ‍তারা বললেন, আমাদের কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে আসছেন লিখিত কাজের ভিত্তিতে গ্রেড দেয়া হবে না, আর অন্য একদল সিদ্ধান্ত নিছেন যারে তাদের যোগ্য মনে হবে তারে গ্রেড দিবেন।

ফ্রেঞ্চ সরকার ভাবগতিক সুবিধার না দেইখা ঘোষনা দিল, ওই ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টের ডিপ্লোমা গ্রহণযোগ্য হবে না।

দেল্যুজ, মাঝখানে সার্ত্রে, এবং ডানে ফুকো, ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৭১

দ্যেলুজের ক্লাসে বাদিয়ু তার মাওবাদি গ্রুপ নিয়া গিয়া সরাসরি বিরক্ত করতেন। দেল্যুজ সহ্য কইরা যাইতেন। কিন্তু একবার তার টেবিলে পাইলেন ডেথ স্কোয়াডের প্রচারণাপত্র, যারা আত্মহত্যারে প্রমোট করতেছে। এই একবারই তিনি রাইগা যান।

গাতারি একবার একটা গ্রুপ করেছিলেন। যার উদ্দেশ্য রোমান্টিক কাপলদের সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়া। কারণ তার ফিলোসফি ছিল, লাভ একটা ক্যাপিটালিস্ট ব্যাপার।

একবার ফ্রেঞ্চ সরকার ভাবলো সরকারের কী কী ভুল হইতেছে তা বের করতে বাম বুদ্ধিজীবীদের ফান্ড দিবে। ফেলিক্স গাতারিরে এমন ফান্ড দেয়া হইল। বামেরা আসতে লাগল নানা প্রজেক্ট নিয়া। কেউ ক্যামেরা কিনবে, কেউ মটরসাইকেল, কেউ এবর্শন করাবে। গাতারি সবাইরে ধুমাইয়া টাকা দিয়া ফান্ড খালি কইরা দিলেন।

গাতারি ছিলেন লাকা ভক্ত। লাকার সব লেকচারে তিনি যাইতেন। তার বন্ধুরা তারে ডাকতো লাকা বলে। গাতারি অনেক টাকা পে কইরা লাকার পেশেন্টও হইছিলেন।

তো একবার থেরাপির কাউচে শুইয়া সেশনের সময় গাতারি গুরুরে বললেন, রোলা বার্থ তার জার্নালে আমার প্রবন্ধ ছাপাইবেন।

লাকা বললেন, ওর জার্নালে কেন, আমারটাতে ছাপাইবা তুমি। ওরে না কইরা দেও।

গুরুর কথা শুইনা গাতারি রোলা বার্থের ঐখানে দিলেন না। লাকারেই দিছিলেন। আর লাকা সেই প্রবন্ধ আর ছাপান নাই কখনো।

দেল্যুজ-গাতারি যখন এন্টি-অডিপাস লেখতেছেন, তখন লাকা পরস্পর সেই খবরটা পাইলেন। তিনি গাতারিরে ধরলেন। এই তোমরা নাকি এইরকম কী একটা বই লেখতেছ?

গাতারি বিপদ টের পাইলেন। যে বই তারা লেখতেছেন, সেইটা লাকার পুরা একাডেমিক কেরিয়ার নাই কইরা দিবে, সাইকোএনালিসিসের মাজা ভাইঙ্গা। তিনি তো এইটা তার গুরুরে বলতে পারেন না। তিনি বললেন, আরে ঐটা এমন কিছু না, ঐ দেল্যুজের সাথে তার এক পুরানা প্রজেক্ট নিয়া। সেই ভালো জানে, আমি কিছু জানি না।

লাকা ফোন দিলেন দেল্যুজরে। দেল্যুজ লাকারে চরম অবিশ্বাস করতেন। লাকা বললেন আপনের লগে আমি দেখা করতে চাই।

দেল্যুজ বললেন, না, যা বলার ফোনেই বলেন।

লাকা সুবিধা করতে পারলেন না। তখন অন্য এক পন্থা নিলেন। তিনি গাতারিরে বারে নিয়া গিয়া ভালোরকম মদ খাওয়াইলেন। তারপর জিজ্ঞাস করলেন বইয়ের বিত্তান্ত কী?

গাতারি রাখঢাক কইরা, এমনভাবে বললেন যেন মনে হয় এইটা লাকার পথেরই বই। কিন্তু বুদ্ধিমান জ্যাক লাকা একটু চিন্তা কইরাই ধরতে পারলেন আসলে বইটা কী নিয়া। ঐ রেস্টুরেন্টেই তাদের শেষ দেখা হয়। এরপর লাকা আর গাতারির সাথে দেখা করেন নাই।

এন্টি-অডিপাস বের হইবার পরে লাকা এইটারে নিষিদ্ধ কইরা দেন তার ছাত্রদের মধ্যে। কেউ এইটা নিয়া কোন কথা বলতে পারবে না।

বই

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং