আধুনিক সমাজের শিক্ষা বিষয়ে

সমাজের মূল ড্রাইভ, মানুষের একত্রে সবচাইতে কার্যকর ভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া বের করা। কারণ সমাজের সারভাইভালের জন্য এটা দরকারী।

কৃষি সমাজে এইজন্য ছিল চাকর মনিবের সম্পর্ক, রাজা প্রজার, এবং জাতপ্রথা। জাতপ্রথা দিয়া বললে বুঝতে সুবিধা। ধরা যাক, মহাভারতের নিষাদ একলব্য, তার জাত নিচা হওয়ায় যুদ্ধ শিখতে পারলেন না গুরুর কাছে বা কর্ণ জাত পরিচয় লুকাইয়া শিখলেন, ইত্যাদি।

এটা কৃষিসমাজে ছিল। মুচির পোলা মুচি, কমজাতের পোলা কমজাত এইরকম। সারা দুনিয়াতেই ছিল।

কিন্তু ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভলুশনের পরে সমাজের এই উঁচা নিচা হিশাব নিকাশ বদলে যায়। ইন্ড্রাস্ট্রি ও টেকনোলজির বিপ্লব কাজ বদলাইয়া দেয়। ফ্যাক্টরিতে বহু মানুষের দরকার হয় কাজের জন্য। যারা একই কাজ বার বার করবে, এইভাবে বেড়ে যাবে প্রডাকশন।

এইরকম মানুষ বানাইতে তৈরি হইল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়। এক বছরে এক ক্লাস পাঠদান প্রক্রিয়া, এবং দুনিয়া ভরে গেল নানা ধরণের সাপ্লাই চেইনে। সবাই সবার লগে এইসব চেইনে কানেক্টেড। আপনার পুটকি ভরা বেশজাতের গর্ব, নিচা জাতরে ছুঁইবেন না? অবস্থা এমন দাঁড়ালো আপনার ছুঁইতেই হবে তাদের। আপনি হয়ত না ছুঁইলেন, দেখা গেল আপনার বেশজাতের স্ত্রী ও আপনার মাধ্যমে উৎপাদিত ছেলে বা মেয়ে, ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়া কমজাতের এক মেয়ে বা ছেলের লগে ভাইগা গেছে! এই টেনশনটা প্রধান টেনশন হিশাবে তাই ফিল্মে চলে আসতো।

অপেক্ষাকৃত বেটার ছিল এই অবস্থা, মহাভারতের কর্ণ বা একলব্য এই সমাজে থাকলে তাদের শিখায় আর কোন বাঁধা থাকতো না। শিক্ষকেরাও অনেক থাকতেন, জ্ঞান অপেক্ষাকৃত কম এক জায়গায় আটকানো দশায়। অবশ্য বেরিয়ার এইখানেও ছিল, টাকা।

ওই নয়া সমাজে কি হায়ারার্কি ছিল না? ছিল, কিন্তু অন্যরকম। গণতান্ত্রিক সমাজ তখন আসে আধুনিক ভাবে, মানুষ যুক্ত হয় ভোটের মাধ্যমে দেশ শাসনে। কিন্তু শাসকই মূল বাঁশি বাজাইতেন। এমনিভাবে ফ্যাক্টরিতে এসেম্বলি লাইন ওয়ার্কার, ম্যানেজার, মালিক সবাই মিলে ছিল তাদের কাঠামো, এইখানে হায়ারার্কি ছিল, কিন্তু তারা ছিল কানেক্টেড। শ্রমিক যদি নাখোশ হইয়া বলত কাজ করব না, তখন তাদের দাবী নিয়া বসতে হইত। আমরা এইসময়ে শ্রমিক ইউনিয়ন দেখি। সেই ইউনিয়নে শ্রমিকদের যোগ দেয়া নিয়ে পুরান হায়ারার্কি কনসেপ্টের মালিকদের সংঘর্ষ হইত। সমাজে নতুন একটা একনোমিক, সামাজিক গুরুতর চেইঞ্জ আসতে গেলে ফাইট হয়। আমরা দেখছিলাম ধনকুবের এন্ড্রু কার্নেগী কেমন গোলন্দাজ হায়ার করে তার ফ্যাক্টরির শ্রমিক মেরেছিলেন। এইগুলা ছিল নতুন সমাজ তৈরি হবার প্রসব বেদনা।

এখন আমরা যে সমাজের দিকে যাচ্ছি বা পা দিয়া ফেলছি, তা ইনফরমেশন এইজ। এখানে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এইজের হায়ারার্কি আর কাজ করবে না। এখন নতুন হায়ারার্কি তৈরি হবে। এবং লেখাটা শুরু করেছিলাম যে কথাটা দিয়ে সেখানে যাই, কেন হবে? কারণ মানুষের একত্রে কার্যকর ভাবে কাজ করতে হবে, এটাই সমাজের মূল ড্রাইভ। এখন নতুন উপায় বের হইছে একত্রে বেটারভাবে কাজের। এটা দাস খাটানো না, এসেম্বলি লাইনের এক বিষয়ে দক্ষ শ্রমিক কনসেপ্ট না, বরং একটা নেটওয়ার্ক কনসেপ্ট।

নেটওয়ার্ক সিস্টেমে উঁচা নিচা থাকবে, কিন্তু এর আগের সমাজের চাইতে কম। মানুষ বেশি ফ্রিলি কাজ করতে পারবে। নেটওয়ার্ক নিজেই একটা জিনিশ। বাংলাদেশে ফেসবুকে সরকার বা অথোরিটি রেস্টিকশন করতেছে প্রোফাইল, এই অভিযোগ দেখা যায়, কিন্তু অভিযোগ দাতারা অন্য নেটওয়ার্কে যান না কেন? কারণ ওইখানে ফেসবুকের মত মানুষ নাই, অর্থাৎ অডিয়েন্স নাই। নেটওয়ার্কের ভ্যালু তার নড সংখ্যায়। যত বেশি মানুষ তত বেশি তার শক্তি। সে নিজেই পরিবর্তন হবে, বিবর্তিত হবে, এবং তার নডেরা মানিয়ে নিবে। ফেসবুক নতুন ফিচার আনে, মানুষ মানিয়ে নেয়। আবার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই মানুষ তার নিজের উদ্দেশ্য হাছিল করে, কাজ করে। এ এক অদ্ভুত সমাজ বাস্তবতা, যা সর্বক্ষেত্রে দেখা যাবে। মানি সিস্টেমে ফেডের বাইরে বিটকয়েন, যদি ফেইলও হয়, অন্য নেটওয়ার্ক আসবে। এক বছরে এক পাঠ্যের শিক্ষার দিন থাকবে না, মানুষ নেটওয়ার্কে গিয়ে শিখবে, যেখানে শিক্ষার ম্যাটেরিয়ালস থাকবে আধুনিক, এবং শিক্ষার প্রসেস হবে তুলনামূলক কার্যকর। রাষ্ট্রের ক্ষমতা, নীতি নির্ধারণ, গণতান্ত্রিক দেশে, জনপ্রতিনিধিদের হাতেই কেবল থাকবে, নানা নেটওয়ার্ক এখানে ইনফ্লুয়েন্স করবে। ট্র্যাডিশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিন শেষ এমন না, তারা ইভলব হবে সময়ের সাথে। মানুষ হয়ে উঠবে নানা বিষয়ে দক্ষ। ইভেন যেসব পেশায় এক বিষয়ে দক্ষতা লাগে, ধরা যাক বিশেষ এক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সেও দেখা যাবে নানা বিষয়ে দক্ষ, কারণ তারে সাহায্য করতে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং তার ইভলভিং নেটওয়ার্ক।

এইসমাজে একলব্য ও কর্ণের লার্নিং এর বাঁধা থাকবে আরো কম। বরং তারা আরো বেশি স্বাধীনতা প্রয়োগ করে নিজে ঠিক করতে পারবে কোন নেটওয়ার্কে যোগ দিবে। একলব্য তীরবিদ্যা শিখতে যোগ দিতে পারে চাইনিজ তীরন্দাজদের কোন নেটওয়ার্কে। এবং এইখানে, গুরুর একটা ইউনিক কাজ তৈরি হবে। গুরুকে এসে শিষ্য বলবে না গুরু শিখাইয়া দেন, বলবে, গুরু কী শিখব, কই থেকে শিখব? গুরু তা দেখাইয়া দিবেন, এবং এইজন্য গুরুকে হতে হবে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী।

বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্বতি দুর্বল হয়ে উঠলে প্রাচীন গুরু পন্থা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। প্রাতিষ্ঠানিক পদ্বতি দুর্বল হবে না যদি ইভলভ হয়, এবং গুরু পন্থারেও আত্মীকরন করে ফেলে, যেটা তারা করবে।