আজ থেকে প্রায় ৫৯৩৯ দিন আগে আমি কানাডার ভিক্টোরিয়ায় এক কফিশপে কাজ করতাম। কফি বানানো ও পরিবেশনের কাজ।
বেতন ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় ডলার।
আমাদের কফিশপে জেফ ও ক্রিস নামে দুইটা ছেলে আসতে লাগলো। তারা সারাদিন বসে থাকতো, এসপ্রেসো খাইত, আর ল্যাপটপ খুলে ওয়াইফাই ব্যবহার করে কীসব করতো।
কয়েক সপ্তাহ এইভাবে যাবার পর আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, এদের কী কাজকাম নাই।
আমি তাদের জিজ্ঞেস করলা, তোমরা কী কাজ করো?
তখন তারা জানাইল তারা ওয়েব ডিজাইনার। এবং এই ল্যাপটপে বসে বসেই তারা কাজ করে!
আমার আগ্রহ হলো বিষয়টা নিয়ে। আমি তাদের আরো জিজ্ঞেস করলাম।
তারা জানাল, তারা স্থানীয় বিজনেসদের বলে ওয়েবসাইট লাগবে কি না। একটা ওয়েবসাইট বানাইয়া দিতে কয়েক হাজার ডলার নেয়।
তারা মাত্র কয়েকদিনেই একটা ওয়েবসাইট বানাতে পারে, ও তাতে এক হাজার ডলার কামিয়ে ফেলতে পারে।
এটা চিন্তাটাই আমার কাছে ছিল নতুন।
আমি ঠিক করলাম নিজে এটা করে দেখব।
সেইদিন কাজ শেষে বুলেটপ্রুফ ওয়েবডিজাইন নামে এক বই কিনলাম, ড্যান ক্যাডারহমের লেখা।
তারপর গুগলে ফ্রিলান্স ওয়েব ডিজাইন সার্চ দিয়া ক্যামেরন মল নামে ঊটার এক লোকের একটা জব বোর্ড পাইলাম।
সেই জব বোর্ডে অনেক জব ছিল। বিশেষত সান ফ্রান্সিসকোর স্টার্টাপগুলি ফ্রিলান্স ওয়েব ডিজাইনার হায়ার করতেছে। আমি ধুমাইয়া এপ্লাই করতে লাগলাম।
এবং কিছুদিন পরেই এই গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইট পাইলামঃ কেউই ১৮ বছরের এক বারিস্তারে তার ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য হায়ার করবে না।
তাই ঠিক করলাম একটা ফেঈক এজেন্সি খুলব।
ড্যানের বই দেখে দেখে একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেললাম। নাম দিলাম ম্যাটা ল্যাব।
এই ওয়েবসাইটে কোন স্পষ্ট তথ্য ছিল না আমরা কী করি, কোথায় অফিস বা কারা কারা কাজ করে।
এবং শিরোনামে এই ক্রিঞ্জি লাইন ছিল, “আমরা মানুষরে কুল স্টাফ বানাইতে সাহায্য করি।”
এরপর আমি ইমেইল স্প্যামারের মত যত জব পোস্ট আছে, সবাইরে ইমেইল করতে লাগলাম।
কিছু বাজে কমিউনিকেশন হলো, এবং এক পর্যায়ে আমি কেভিন স্টুয়ার্ট নামে এক ব্যক্তির ইমেইল পাইলাম।
সে বলল, সে অফারম্যাটিকা নামে সান ফ্রান্সিসকোর এক স্টার্টাপে কাজ করে। সে ওয়েব এপের জন্য ইন্টারফেইস ডিজাইন করাতে চায়।
তখন আমি ঠিকঠাক বুঝতেও পারি নাই ওয়েব এপ কী, কিন্তু তারে বললাম পারব।
সে আমারে বলল ২ হাজার ডলার দিবে। আমার মাথা ঘুরে গেল। এটা মাত্র কয়েকদিনের কাজ, এবং এই টাকা আমার পুরা মাসের আয়ের চাইতে বেশী।
পরদিন গিয়ে আমি কফিশপের কাজ ছেড়ে দেই।
আমি নিজেরে বলি যখন ইচ্ছা ঘুম থেকে উঠে যদি থাকা ও বাসা ভাড়ার মত টাকা আয় করতে পারি, তাহলেই আমি হ্যাপি।
তারপরে ইতিহাস।
আমার লক্ষ্যের কিছুটা উপরে চলে গেছে অর্জন।
এখনো ম্যাটাল্যাব আছে আমার। এবং আমি ও আমার বিজনেস পার্টনার ডজন খানেক কোম্পানি কিনেছি। বিশেষত, যার বই পড়ে ওয়েব ডিজাইন শিখেছিলাম তার কোম্পানি ড্রিবল।
আজকে আমাদের কোম্পানি টাইনি শেয়ার মার্কেটে পাবলিক হলো। এখন পর্যন্ত মার্কেট ক্যাপ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সামান্য নিচে।
আমি বুঝাতে পারব না এই যা হইল তা ব্যাখ্যা করা আমার জন্য কতোটা দুরূহ।
আমার উদ্যোক্তা স্পিরিট ছিলো না, ঐটা কাজ করে নাই।
আমার আসল দক্ষতা ছিল, কাজের জন্য অসাধারণ লোকদের খুঁজে বের করতে পারা। আমি আজ ধন্যবাদ দিতে চাই সবাইরে যারা টাইনি ও আমাদের অন্যান্য কোম্পানিতে কাজ করেছেন।
————–
এপ্রিলের বিশ তারিখে এন্দ্রু উইলকিনসন এই লেখা লিখে। তার প্রায় ১৬ বছর আগে শুরু করা কোম্পানি টাইনি পাবলিক হবার পরে।
যদিও সে বিনয়ে বলছে তার উদ্যোক্তা স্পিরিট নাই, কিন্তু তার এই লেখা থেকে দেখা যায়, কীভাবে সে ছিল গুড অবজার্ভার। দেখছে দুইজন লোক বসে নতুন ধরণের কাজ করে। তাদের থেকে বুঝার ট্রাই করছে।
এরপর শিখতে গেছে ও কাজ করতে লাগছে সরাসরি।
কুইকলি ফিডব্যাক নিছে, পথ বদলাইছে।
এই গল্পে আরো অনেক গল্প আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু মূল জিনিশ, সে কাজটা করতে ভয় পায় নাই। বিজনেসটা স্টার্ট করতে ভয় পায় নাই।