শাহরুখ খানের সাইকোলজি

এক

শাহরুখ খান এক ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। আমি তারে বুঝতে চেষ্টা করতেছি বেশ কিছুদিন হইল। তারে মানুষ এতো লাইক করে কেন।

অন্য নায়কদেরও করে, কিন্তু তারে যেমনে করে, ওই রকম কম দেখা যায়।

এবং সে দেখতে অনেক নায়কের চাইতে ভালো না। অভিনয়ও অত্যধিক ভালো, এরকম কিছু না। তাও তার জনপ্রিয়তা এই মাপের কেন।

এর এক কারণ সে মারাত্মক বুদ্ধিমান। জিনিয়াস লেভেলের তার মার্কেটিং বুদ্ধি।

সে নারীদের কাছে প্রিয়। পুরা বলিউডে নারীদের কাছে এত প্রিয় আর কেউ সম্ভবত নাই। সেই হিশাবে দুনিয়াতেও নারীদের কাছে তার মত প্রিয় কেউ নাই। ফলে নারীরা কী চায় বুঝতে আপনে তারে দেখতে পারেন।

এইখানে কন্ট্রাডিক্টরি এক জায়গা আছে অবশ্য। নারীরা চায় তার প্রেমিক শাহরুখের মত হোক কেয়ারিং, রোমান্টিক ইত্যাদি। কিন্তু, শাহরুখ যে অন্য নায়িকাদের সাথেও কেয়ারিং ওইটা আবার চায় না।

শাহরুখ যখন বুঝতে পারছে তার মূল শক্তির জায়গা নারীদের ভালোবাসা, সেইটা তার সুপার হিট কিছু রোমান্টিক ফিল্মের জন্য, তখন সে ওইটারে আরও ইম্প্রুভ করে গেছে। নারীদের সম্মান করা, নারীদের আগাইয়া রাখা, নারীদের প্রতি কেয়ার এগুলাতে তার ধারে কাছে কেউ নাই। রিল মহাবিদ্যালয় ভর্তি আছে তার এমন নানা আচরণের।

সভ্যতার কন্ট্রলিং ফোর্স হইল নারী। একই পরিমাণ পুরুষের কাছে প্রিয় হইলে যে ক্ষমতা, অর্ধেক নারীর কাছে প্রিয় হইলে ক্ষমতা তার চাইতে অনেক বেশি। কারণ ওই অর্ধেক নারীর সমসংখ্যক বয়ফ্রেন্ড, এবং তিনগুণ আকাঙ্ক্ষী লোকেরা থাকবে। নারীদের চয়েজ তাদের প্রভাবিত করবে।

শাহরুখ সফল, বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী, শূন্য থেকে বড় হওয়া, ফ্যামিলি ম্যান, লয়াল, নারীদের সম্মান দেয় – নারী ভক্তরা এইগুলাই তো চায়। অন্য অনেকে এটা ট্রাই কইরাও পারবে না, যেমন সালমান খান। রিল মহাবিদ্যালয়ে দেখলাম, এই বুজুর্গ নাকি মেয়েদের হাগ করতে গেলে হাত মুঠি কইরা রাখেন। কিন্তু তাও তিনি নারীদের কাছে শাহরুখের মত হইতে পারবেন না, কারণ তার লাইফ উলটা কথা বলে।

রিল মহবিদ্যালয়ে গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন পূর্বক দেখা যায়, শাহরুখ নারীদের ব্যাপারে যেমনে উদার, পুরুষদের ব্যাপারে তেমনেই সংকীর্ণ। পুরুষ অভিনেতাদের সে প্রতিযোগী ভাবে। সব সময় নিজেরে সেরা বলে, নতুন হিরোদের ভালো বললেও একটা কিন্তু লাগাইয়া দেয়, তার বেশি বুদ্ধির জন্য ঐটা সহজে ধরা যায় না। কারণ এই জায়গাতে সে নিজের ব্র্যান্ড নিয়া সচেতন এবং ইন্সিকিউরও।

তার ট্রু ইমোশন দেখা কঠিন। কারণ সে খুবই পলিশড। চর্চার মাধ্যমে এইটা অর্জিত হইছে, সাথে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট তো আছেই। অনেক গ্রেট পলিটিশিয়ান এটা করছেন, যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা। জেলে থাকার সময় কাঙ্ক্ষিত মুখভঙ্গি তিনি অনেক চর্চায় অর্জন করে নিছিলেন।

কী বলতে চাইতেছি বুঝতে আপনে রণবীর কাপুর ও শাহরুখ খানের ভিডিও রিল মহাবিদ্যালয় থেকে দেখতে পারেন। প্রায়ই দেখবেন রণবীরের ট্রু ইমোশন, সে যেইটা বলতে চাইতেছে ওইটা বলতে পারতেছে না। একটা ট্রু এপিয়ারেন্স আছে। কিন্তু শাহরুখের মধ্যে ওইটা নাই। ওবামার মধ্যেও নাই।

দুই

শাহরুখ ডার্ক ট্রায়াড পার্সোনালিটির লোক, জাংগিয়ান দিক থেকে বললে তার শ্যাডো খুব শক্তিশালী।

তার মধ্যে নার্সিসিজম, সাইকোপ্যাথী, ম্যাকায়াভেলিয়ানিজম আছে। এইগুলা যাদের মধ্যে প্রবল থাকে, কনট্রোলে না থাকলে তাদের লাইফ খারাপ হয়।

নার্সিসিজম – নিজে অতি গুরুত্বপূর্ণ নিজেই মনে করা। নিজের আরোপিত নিজ গুরুত্ব।

ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম – এই টার্ম দিয়ে বুঝায়, ম্যানিপুলেশন, দ্বিচারিতা, এবং পদ্বতিগত ভাবে এক্সপ্লয়েট করাকে। যেমন গ্যাসলাইটিং।

সাইকোপ্যাথি – সিম্পেথিহীন, সিনিসিজম, নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি।

শাহরুখের ক্ষেত্রে খুব আন কন্ট্রলড না। সে নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার, বা যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ফাউন্ডেশনাল ধ্যান ধারণা সে অর্জন করছে, তাতে এইসব ট্রেইটের প্রভাব বেশি।

তার ফ্যানের সাথে আচরণে এটা ধরা যাবে না। কিন্তু যখন সে তার লাইফ নিয়া বলে, তখন বুঝা যাবে। যেমন, সে তার নিজে ও তার পরিবার ছাড়া কাউরে নিয়া ভাবেই না, রিল মহাবিদ্যালয়ে দেখছি সুন্দর করে বলে সোচতাই নেহি।

এইটা কিন্তু সিম্পেথী কমের প্রকাশ।

যেই ডিটারমিনেশন, হার্ড ওয়ার্ক, নিয়ম নীতি মেইন্টেইন করে সে তার পারসোনা তৈরি করছে, এর পেছনে একটা সাইকোপ্যাথিক ড্রাইভ থাকতে হয়। আম পাবলিক এটা পারবে না। দুনিয়ার বড় বড় ইনফ্লুয়েনশিয়াল লোকদের এটা থাকে। কর্পোরেট সিইও এবং সিনিয়র লিডারশীপের মধ্যে ডার্ক ট্রায়াড ট্রেইট বেশি দেখা যায় সাধারণ পাবলিকের চাইতে।

এইগুলা তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে, এবং আবেগ সরাইয়া লং টার্মে দেখতে হেল্প করে। শাহরুখের লাইফে এইটা দেখবেন, সব বড় পরিচালকদের সাথে তার গভীর ভালো সম্পর্ক। এদের সাথে সে পারিশ্রমিক নিয়াও কথা বলে না। যা দিবেন, ফাইন। কারণ সে জানতো, সে লং টার্মে খেলতে আসছে, এবং এইজন্য এদের সাথে সম্পর্ক ভালো হইলে সুবিধা। তার নিজের পরিশ্রম, অভিনয় দক্ষতায় তার বিশ্বাস ছিল। বুঝতে পারছে, মেইন চ্যালেঞ্জ হইল, ফিল্ম পাইয়া যাওয়া। এইটা কাজে দিছে, লং টার্মে সে সবাইরে ছাড়াইয়াই যাইতে পারছে।

কেউ বলতে পারেন, শাহরুখ তো আশার বানী শোনায়, তাইলে সে কীভাবে সিনিসিজম বা নেগেটিভ আউটলুকের হয়। ভক্ত, আশার বানী সে তোমারে শোনায়, তুমি তার ভোক্তা। কিন্তু তার লাইফের যে কর্মক্ষেত্র, বলিউড বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি, ওইটারে শুরু থেকেই সে ব্যাটলগ্রাউন্ড হিশেবে দেখে, এইখানে তারে কম্পিট করে টিকতে হবে, অন্যরা তার কম্পিটিটর। এখনো, এই বুড়া বয়েসেও তারে যখন জিগানো হয়, নেক্সট কে তার মত স্টার রনবীর অথবা আর কেউ, তখন সে উইঠা বলে আয়াম দ্য লাস্ট অব দ্য স্টারস!