মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » সেলিব্রেটি ওরশিপের মনস্তত্ত্ব

সেলিব্রেটি ওরশিপের মনস্তত্ত্ব

শাহরুখ বা অন্য যেকোন সেলিব্রেটি ফ্লড পারসন। এরা মানুষ, এদের নানাবিদ মানবিক দূর্বলতা আছে।

যেমন শাহরুখের চালাকি, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম, এম্প্যাথী কম থাকা আচরণ।

হয়ত তার পলিশড আচরণের জন্য এইগুলা অসচেতন, ভক্ত দর্শকের দৃষ্টি এড়ায়। কিন্তু সচেতন দর্শক, শাহরুখের ভক্ত হইলেও এটা খেয়াল করবে। তার পাবলিক প্রায় সব কিছুই থিয়েটার।

অনেকে বলেন, সে তার বউয়ের প্রতি লয়াল ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু চোখের সামনে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার লগে জ্যাকেট নিয়া কিচ্ছা আছে, এগুলা অবশ্য কম জানি, বাট আছে। শাহরুখ এইটা তার বুদ্ধি, এবং তার পাওয়ারফুল বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যে ভালোভাবে ডিল করে গেছে।

কিন্তু তার অতি ভক্ত যেগুলা আছে, তারা কেন মানতে চায় না শাহরুখের ফ্ল? এইটা কি কেবল শাহরুখ ভক্তদের ক্ষেত্রে হয়?

না। অন্যান্য বড় সেলিব্রেটির ভক্তদের ক্ষেত্রেও হয়। তারা ওইগুলা ইগনোর করে যায়, ওইগুলারে খারাপ ভাবে না। শাহরুখের অভিনয় তাদের কাছে ভালো লাগে। তাদের কাছে সে সবচাইতে সেরা অভিনেতা। অতএব, শাহরুখের বুদ্ধি, পার্সনাল লাইফ এভ্রিথিং তারা সেরা ভাবে। এইটা হালো ইফেক্ট।

মানুষের এক বায়াস, চিন্তার ভ্রান্তি, সে এক গুণের জন্য কারো প্রতি মুগ্ধ হইলে, তার পারসেপশনে মনে হইতে থাকে লোকটার সবই ভালো।

আবার গ্রুপ বাইন্ধা যে সেলিব্রেটিরে তারা ভালো বলে, ও তার একরকম পূজা করে, এর পেছনে দুইটা সামাজিক-আধ্যাত্মিক কারণ থাকে। সামাজিক কারণ হইল, তারে নিয়া আলোচনা করা যায়। যেমন, শাহরুখের ফিলিম ডর যে দেখছে, সে আরেকজন ডর দেখার লগে আলাপ করতে পারবে, এইরকম এইরকম দেখছিলাম, হ্যান ত্যান। এই আলাপের জায়গা করে দিয়ে সেলিব্রেটিরা বৃহত্তর কালচারের অংশ হইয়া উঠে। কম্যুনিটিও তৈরি হয়, এদের বলে ফ্যান ক্লাব, যেমন বাংলাদেশে আছে অনন্ত জলিল ফ্যান ক্লাব, ওমর সানী ফ্যান ক্লাব, এগুলার সভাপতি ইত্যাদিও আছে।

দুই, এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, ডেনায়াল অব ডেথে যা বলছিলেন আর্নস্ট বেকার। মানুষের বেসিক ফিয়ার হইল সে মরে যাবে। এই ভয় তার ভেতরে বর্তমান থাকে। সে একদিন থাকবে না ধরাধামে।

এই ভয়রে ম্যানেজ করতে হয় তার লাইফে নানা ভাবে। কিছু মানুষ সৃষ্টিশীল কাজ করেন, কিছু লোক মিনিংফুল সামাজিক বা দুনিয়ার জন্য কাজ করেন, অনেকে ব্যক্তিগত উন্নতিতে ফোকাস দেন। কিন্তু সবাইরেই এমন কোন কজে ইনভলব হইতে হয়, যেইটা অমর। বা তাদের ধারণায় দীর্ঘদিন থাকবে, তাদের মরার পরেও।

সেলিব্রেটির ফ্যানেরা সেলিব্রেটি ওরশিপের মাধ্যমে এই ইম্মরটাল প্রজেক্টে অংশ নেয়, তারা ভাবে ওই সেলিব্রেটি দীর্ঘদিন থাকবে বেঁচে কালচারের অংশ হিশাবে, ফলে তারে ওরশিপের মাধ্যমে তারা এই বিলিফ সিস্টেম বা গুরুত্বপূর্ণ কজের লগে কানেক্টেড হইয়া গেল, এবং কোন এক ভাবে যেন, তারাও রয়ে যাবে এর সাথে।

এইটাই তাদের লাইফে মিনিং দেয়, তারা শান্তি পায়, জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। শাহরুখের মত বড় সেলিব্রেটিদের গুরুত্ব এই জায়গাতেই, কেবল বিনোদন দেয়াতে নয়, তারা এক স্পিরিচুয়াল চাহিদাও পূরণ করে যান।

কেন ইব্রাহিমিও একেশ্বরবাদী রিলিজিয়ন, যেমন ইসলাম এইসব সেলিব্রেটি কালচার, বিনোদন, অভিনয় ইত্যাদির এগেইন্সটে থাকে, এইটা কি ভাবছেন?

কারণ আব্রাহামিক একেশ্বরবাদের মূল জায়গা হইল, গড ছাড়া কাউরে ওরশিপের জায়গায় নেয়া যাবেই না। আখনয়াটন শুরুতেই প্রাচীন মিশরে সব সিম্বল ভেঙে দিছিলেন, কারণ মানুষ গডের রূপ কল্পণা করে নিবে, এই ভয়ে।

ধর্ম একটা ইম্মরট্যালিটি প্রজেক্ট। ধর্ম এবং তার কালচারও দীর্ঘদিন ধরে আছে ও থাকবে। মানুষ ধর্মীয় বিলিফ সিস্টেমে একই কারণে যুক্ত হয়, এইটা তারে মরার ভয়রে ম্যানেজ করতে সাহায্য করে। কারণ ধর্ম বলে আপনার মৃত্যু নাই। এই জীবনে মরবে, বাট পরকাল আছে, ওইখানে একসময় অনন্ত জীবন পাবেন। অর্থাৎ আক্ষরিক ভাবেই বলে, আপনার স্থায়ী মৃত্যু নাই।

ফলে, ইসলাম বুঝে যে মানুষ যখন ভালো বিনোদন দিয়া দিয়া বড় সেলিব্রেটি হইয়া যাবে, তখন আম পাবলিকের কালচারে তার অন্তর্ভূক্তি হবে, এবং তারে কেন্দ্র করেই একটা কজ বা বিলিফ সিস্টেম তৈরি করে নিবে আম পাবলিকেরা। আম পাবলিক মুগ্ধ হবে, অভিনয়ের বা খেলার গুণ বা দক্ষতারে অন্য সব জায়গায় স্থাপন করে ভাববে, ওই সেলিব্রেটিরে একটা গডলি অবস্থানে নিয়া কল্পনা করবে। সুতরাং দিন শেষে এইটা ধর্মের বিলিফ সিস্টেমের কাউন্টারে খাড়া হয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং