সায়েন্স ফিকশনঃ রু

 

 

এই গল্পটি লেখা হয় সম্ভবত এপ্রিল ২০১১ তে।

 

                                                          সায়েন্স ফিকশনঃ রু

 

রোবট

বিজ্ঞানী রিকির বিশ্বস্ত রোবট রু অনবরত কথা বলে চলেছে। রু দেখতে পুরো মানুষের মত।তাকে তৈরী করেছে স্বনামধন্য রবো কোম্পানী। কন্ঠস্বরে দেয়া হয়েছে মানুষের কন্ঠের মত কোমলতা। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও রু অনেক উন্নতমানের। বিজ্ঞানের এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রায় সব তথ্যই এর মাথার কপোট্রনে সেট করে দেয়া আছে।

বিজ্ঞানি রিকি একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন নিয়ে ব্যস্ত।

“তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছ?” রু প্রশ করল।

রিকি ম্যাগাজিন হতে মুখ তুলে বললেন, “হ্যা রু। বল কি বলছিলে?”

“বলছিলাম অষ্টম মাত্রার সেই সমীকরনটার কথা। আমার মনে হয় না এরকম কোন সমীকরন তুমি তৈরী করতে পারবে। আমার কাছে পুরোটাই অসম্ভব মনে হয়।”

রিকি রু এর দিকে তাকিয়ে সসামান্য হেসে বললেন, “তোমার মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক রু। বর্তমান বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্যাদি দিয়ে এটি অসম্ভব। তোমার মাথায় শুধু এই তথ্যগুলোই আছে, এবং মুক্তভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। বুঝেছ?”

রু মাথা নেড়ে বলল, “তাহলে বলছ তুমি নতুন কিছু দিয়ে অষ্টম মাত্রার সমীকরনটা প্রমান করতে পারবে?”

চিন্তিত মুখে রু বললেন, “হ্যা।আমি সমীকরন সলভ করে ফেলেছি। কয়েকদিনের মধ্যে আশা করছি বিশ্ববাসী জেনে যাবে । এটি হবে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।”

“সমীকরনটা যেন কি? শেষ তিনটা এক্স এর পরে যেন কি?”

এই প্রশ্ন শোনে আৎঁকে উঠলেন বিজ্ঞানী রিকি! আশ্চর্য হয়ে তাকালেন রু এর দিকে। তিনি একে কখনো সমীকরনটার ব্যাপারে কিছু বলেন নি। তাছাড়া এই রোবটকে শুধু আবিষ্কৃত তথ্যই দেয়া হয়েছে। অনাবিষ্কৃত কোন কিছু এর জানার কথা নয়!

হাত থেকে ম্যাগাজিন ছুড়ে ফেলে রিকি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি এটা জনলে কীভাবে? তোমাকে তো এই তথ্য দেয়া হয় নি?”

রু নিরব থহেকে শুন্য দৃষ্টি মেলে চেয়ে রইল। বিজ্ঞানি রিকি অজানা কারনে ভয়ে শিউড়ে উঠলেন। এটা কীভাবে সম্ভব! রু এর মাথায় এই সমীকরন যাওয়ার কথা না। কিন্তু সে কাল যেখানে রিকি আটকে ছিলেন সেখান পর্যন্ত জেনে গেছে! প্রায় আশি ভাগ বলা যায়। বিখ্যাত রবো কোম্পানীর রোবটে সমস্যা হবার কথা না। রিকি উঠে পাশের রুমে গিয়ে যোগাযোগ মডিউল দিয়ে রবো কোম্পানীর অফিসে যোগাযোগ করলেন।

ওপাশ থেকে ধাতব কন্ঠে আওয়াজ আসল, ” মহান বিজ্ঞানি রিকি, আপনার জন্য আমরা কি করতে পারি?”

বিজ্ঞানি রিকি রু এর অস্বাভাবিক আচরনের কথা সব বললেন।

খসখসে কন্ঠে ওপাশ থেকে আওয়াজ আসল, “দুঃখিত মহামান্য রিকি।আমাদের কোম্পানীর নিয়ন্ত্রন রোবটদের হাতে চলে গেছে। আমি একটি সাধারন কম্পিঊটার। আমাদের সুপার কম্পিউটার এনসি১২২ এখন রোবটদের নিয়ন্ত্রনে। তারাই আমাদের সব রোবটগুলো নিয়ন্ত্রন করছে।”

বিজ্ঞানি রিকি ভিতরে হালকা চাপ অনুভব করলেন। কয়েকদিন ধরে রু একটু অন্যরকম আচরন করছিল। স্টাডি রুমে কাগজ নাড়াছাড়া করতেও দেখেছিলেন দু একবার। আরো আগে তার বোঝা উচিত ছিল। বিজ্ঞানি রিকি যোগাযোগ মডিউলটা রেখে ঘুরে দাড়ালেন।

সামনে দাঁড়িয়ে আছে রু। হেটে হেটে চলে এসেছে এই রুমে। মুখে ধাতব যান্ত্রিক হাসি। আস্তে করে বলল, “আমাকে ইকোয়েশনটা বল?”

এখন তার কণ্ঠ খসখসে।

রিকি ভয়ার্ত মুখে বললেন, “ইকোয়েশন দিয়ে কি করবে তুমি? তুমি একটা রোবট।”

রু আবার যান্ত্রি হাসি ফুটিয়ে বলল, “আমরা মানুষের চেয়ে শক্তিশালী অষ্টম মাত্রার রোবট বানাব। তখন মানুষকে আমরা ব্যবহার করব বিজ্ঞানী রিকি। যেভাবে এতদিন তোমরা করেছ আমাদের।তোমার কোন চিন্তা নেই। আমি তোমাকে আমার সহকারী হিসেবে রাখব।”

বিজ্ঞানী রিকির মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে উঠল। হাতে স্বয়ংক্রিয় ধাতব অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসছে রু। যেকোন মুহুর্তে ট্রিগার চেপে ধরতে পারে।

বিজ্ঞানি রিকি দেখলেন রু এর হাতের অস্ত্রটা মারাত্বক। এর গুলিতে এই পুরো বিল্ডিংটা উড়ে যাবে। বিজ্ঞানি রিকি চিন্তা করে দেখলেন রোবটদের এই সমীকরন জানানো ঠিক হবে না। বললেও এরা হত্যা করবে না করলেও তাই। তিনি নিশ্চুপ অপেক্ষা করতে থাকলেন মৃত্যুর।

রুকে যে রোবটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছিল তারা উত্তর পাবার জন্য এক মিনিট সময় ঠিক করেছিল। উত্তর না পেয়ে তারা গুলি করার নির্দেশ পাঠাল রু এর কপোট্রনে। প্রায় সাথে সাথেই গর্জে উঠল রু এর হাতের অস্ত্র। বিজ্ঞানি রিকির মাথার খুলি উড়ে গেল মুহুর্তে। তারপর বড় কয়েকটি বিস্ফোরনে ধবংশ হয়ে গেল পুরো বিল্ডিং।

প্রায় ঘন্টা দু একের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ল বিজ্ঞানি রিকির মৃত্যুর খবর। বিজ্ঞান একাডেমি শোক প্রকাশ করে বার্তা ছাড়ল, মহান বিজ্ঞানি রিকির দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যুতে মানবজাতি শোকাহত।

পরদিন রবো কোম্পানি একটি নিউজ দিল। মাত্র তিন মিনিটের জন্য তাদের কোম্পানিতে সামান্য সমস্যা হয়েছিল গতকাল। এখন সব ঠিক আছে। তারা আরো ভাল বুদ্ধিমত্তার নতুন কিছু রোবট তৈরী করেছে। এই রোবটগুলো নিয়েই সমস্যা হয়েছিল। তবে তিনি মিনিটের মধ্যেই তারা ঠিক করতে সক্ষম হন। বিজ্ঞানি রিকির মৃত্যুতে তারা শোক প্রকাশ করল। এবং তার সম্মানে তারা নতুন রোবটদের নাম রাখল রিকি।

তবে এই সামান্য তিন মিনিটের সমস্যায় ধংশ হয়ে যায় অষ্টম মাত্রার সমীকরন! বিজ্ঞানি রিকির অসামান্য কাজ। হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে চিরতরে কেউ জানার আগেই।