ভিজ্যুয়াল আর্ট মুভমেন্ট তথা পপ আর্টের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এন্ডি ওয়ারহল। আমেরিকান এই শিল্পী, চলচ্চিত্র পরিচালক ইন্টারভিউ নামের একটি ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেই ম্যাগাজিনে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার এবং “দ্য মাস্টার অব সাসপেন্স” বলে পরিচিত চলচ্চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের একটি কথোপকথন প্রকাশিত হয়।
এই কথোপকথনটি অনলাইনে তুলে দিয়েছে ফিল্মমেকার আইকিউ। সেখান থেকে এটি বাংলায় ভাষান্তর করা হলো।
এই কথোপকথনটিতে ফিল্ম মেকিং এর গুঢ় কোন তথ্য নিয়ে আলোচনা করেন নি এই দুই পরিচালক। তাদের কথার বিষয়বস্তু ছিল মার্ডার বা খুন।
বিশ শতকের এই দুই আইকনের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। তাদের দুজনই পপুলার কালচার এবং হাই আর্টের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছিলেন ভিন্ন ভিন্ন পদ্বতিতে। দুজনই ইলাস্ট্রেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ওয়ারহল ছিলেন বানিজ্যিক ইলাস্ট্রেটর এবং হিচকক সাইলেন্ট মুভির টাইটেল ইলাস্ট্রেট করতেন।
এন্ডি ওয়ারহলঃ আপনি যেহেতু এতসব ঘটনা জানেন, কখনো কী বুঝতে পেরেছেন কেন লোকে খুন করে? এটা আমাকে সব সময়ই বিব্রত করে। কেন তারা এটা করে?
আলফ্রেড হিচককঃ ঠিক আছে, আমি আপনাকে বলছি, আসলে এর কারন ছিল অর্থনৈতিক। বিশেষত ইংল্যান্ডে। বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপারটা ছিল প্রচুর ঝামেলাপূর্ন, অনেক টাকা লাগত।
এন্ডি ওয়ারহলঃ কিন্তু কেমন লোকেরা আসলে খুন করে? মানে কেনো?
আলফ্রেড হিচককঃ হতাশাগ্রস্ততা থেকে। তারা এটা করে হতাশায়।
এন্ডি ওয়ারহলঃ সত্যি নাকী?
আলফ্রেড হিচককঃ চরম হতাশায়। তাদের কোথাও যাবার জায়গা থাকত না, তখনকার দিনে মোটেল ছিল না এবং তাদের যেতে হতো পার্কে ঝোঁপঝাড়ের পিছনে। তাই হতাশায় তারা খুন করত।
এন্ডি ওয়ারহলঃ কিন্তু যারা অনেক লোক খুন করে, গণহত্যাকারী তাদের ব্যাপারটা কী?
আলফ্রেড হিচককঃ তারা মানসিক রোগী। চরম মানসিক ব্যাধীতে আক্রান্ত। প্রায়ই এরা হয় পুরুষত্বহীন। যেটা আমি ‘ফ্রেঞ্জি’ তে দেখিয়েছি। খুনের আগ পর্যন্ত লোকটা পুরোপুরি পুরুষত্বহীন ছিল এবং খুনের মাধ্যমেসে তার পৌরুষের সূচনা করল। কিন্তু বর্তমানে, এই রিভলভারের যুগে অবশ্যই চিত্র ভিন্ন। কেউ একজন এভাবে বলতে পারেন, রাস্তার চাইতে পিস্তলের ব্যবহার এখন ঘরে বেশি হয়। এবং আপনি জানেন, পুরুষেরাও খুন হয়।
এন্ডি ওয়ারহলঃ আমি গুলি খেয়েছিলাম, সেটা আমার কাছে ফিল্মের মতোই মনে হয়েছিল। আমার মনে হয় নি সেটা সত্যি। পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে এখনো ফিল্মের মতো। আমার সাথে এটা ঘটল কিন্তু মনে হচ্ছি আমি টিভি দেখছি। টিভিতে যখন আপনি সেটা দেখেন, তা বাস্তবে নিজের উপর ঘটার মতোই।
আলফ্রেড হিচককঃ হ্যা হ্যা।
এন্ডি ওয়ারহলঃ তাই আমার সব সময় মনে হয় যেসব লোকেরা এটা করে তাদের অবশ্যই একই অনুভূতি হয়।
আলফ্রেড হিচককঃ আপনি জানেন, এর বেশিরভাগই মুহুর্তের মধ্যে ঘটে যায়। .
এন্ডি ওয়ারহলঃ আপনি যদি একবার তা করেন, তাহলে আবার করতে পারেন, এবং বার বার করতে থাকলে আমার মনে হয় তা হবে করার মতো সামান্য কিছু।
আলফ্রেড হিচককঃ সেটা নির্ভর করবে আপনি প্রথম বডি কোথায়, কীভাবে ডিসপোজ করেছেন তার উপর। খুন করার পর এটা ছোট সমস্যা। প্রথম খুনের পর।
এন্ডি ওয়ারহলঃ হ্যা, আপনি ভালোভাবে করতে পারলেই কিন্তু পথে উঠে গেলেন। আমি প্রায়ই ভাবি যে কসাইরা এটা খুব ভালোভাবে করতে পারবে। প্রায়ই আমার মনে হয়, কসাইরা হতে পারে সেরা খুনি।
এন্ডি ওয়ারহল হিচককের সাথে ছবি তুলেছিলেন এই স্বাক্ষাতের সময়। সেখানে তিনি হাটু গেড়ে ছিলেন আলফ্রেড হিচককের সামনে এবং নিজেই স্বীকার করেছিলেন হিচকককে সম্মান জানাতেই তার এই অবস্থান।
“সবাই হবে সবার মত” এন্ডি ওয়ারহলের বিখ্যাত উক্তি। আর্ট নিউজে ১৯৬৩ সালে তার এক ইন্টারভিউ প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে অংশবিশেষ ভাষান্তর।
ওয়ারহলঃ কেউ কেউ বলেছেন যে, বেখট চাইছিল সবাই যেন একইভাবে চিন্তা করুক। আমি চাই সবাই একইভাবে চিন্তা করুক। কিন্তু বেখট আসলে সেটা চাইছিল একরকম কম্যুনিজমের মাধ্যমে। রাশিয়া যেটা করছে সরকারের মাধ্যমে। এখানে এটা হচ্ছে আপনা থেকে কোন কঠোর সরকার ব্যবস্থা ছাড়াই। তাই এটা যেহেতু কোন চেষ্টা ছাড়াই হচ্ছে তাই কম্যুনিস্ট না হয়েও তা হবে না কেন? সবাই দেখতে একই রকম, একইরকম কাজ করে এবং আমরা দিনে দিনে আরো একইরকম হচ্ছি।
আমি মনে করি সবাই হবে মেশিন। আমি মনে করি সবাই হবে সবার মত।
আর্ট নিউজঃ এটাই কী পপ কালচারের মূলকথা?
ওয়ারহলঃ হ্যা। এটা হলো সবকিছু পছন্দ করা।
আর্ট নিউজঃ মেশিনের মত লাইক করা?
ওয়ারহলঃ হ্যা, কারণ আপনি একই কাজ প্রতিবার করে যান। আপনি একই কাজ বার বার করে যান।