মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » বই ও নলেজ বিষয়ে

বই ও নলেজ বিষয়ে

আমি সকল সময় এই নীতিতে বিশ্বাস করেছি যে, যার নলেজ বেশি হবে, সে এক্সট্রা সুবিধা পাবেন। নলেজ লেভারেজ হিসেবে কাজ করবে।


এবং এখনকার ইকোনমি হচ্ছে নলেজ ইকোনমি।


আর নলেজ গেদারিং এর জন্য মানুষের আবিষ্কার করা সেরা মাধ্যম লেখা বা বই পড়া।

কিন্তু এই জিনিশ প্রায়ই শুনেছি যে, বই পড়ে নাকি কিছু শেখা যায় না। ইভেন বাংলার ফেসবুক বুদ্ধিজীবীরাও একে নেগেটিভলি দেখাতে চায়।


এই উইয়ার্ড জিনিশ তারা কেন করে, বুঝতে সময় লেগেছে।


প্রথমত, বইয়ের নলেজ নিজে প্রসেস করতে হয়। বাস্তবতার সাথে কানেক্ট করে কাজে লাগাতে হয়। এই জিনিশ এরা পারে না। এবং এজন্য মনে করা এটা আর কেউ পারবে না। ফলে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বই পড়ে কিছু শেখা যায় না।


এই ভুল ধারণার মত বই নিয়ে আরও মারাত্মক কিছু ভ্রান্ত ধারণা এতদঞ্চলের লোক ধারণ করে।

যআমি মনে করি বই হলো মানুষের চিন্তা। মানুষের চিন্তার সাথে অন্য মানুষের চিন্তার ইন্টারেকশন হলেই ইনসাইট মিলে। একজন কাঠমিস্ত্রির কাছে আপনি গেলেন, কোন কাঠ দিয়ে বুকশেলফ বানালে ভালো হয় তা জানার জন্য। তিনি এক ঘণ্টা কথা বললেন। তার অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা শেয়ার করলেন। আপনিও কথাবার্তাও অংশ নিলেন। এবং এরপরে আপনি বুঝতে পারলেন সেগুন কাঠ বেটার হবে। আপনি সেগুন কাঠ পছন্দ করলেন আপনার বুকশেলফের জন্য। একই জিনিশ আপনি করতে পারতেন, একজন অভিজ্ঞ কাঠমিস্ত্রি বা কাঠ বিশেষজ্ঞের বই পড়ে।


অর্থাৎ, জিনিসটা লেখার মধ্যে থাকা চিন্তায়। এ ছাড়া লেখা তো অন্য কিছু নয়।

তাই পড়ার সময় কী উদ্দেশ্য নিয়ে পড়ছেন তা জরুরী। আপনি মনেটারি সিস্টেম নিয়ে জানবেন ধরা যাক। কারণ আপনার বুঝা জরুরী মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে কাজ করে। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে কালিদাসের লগে আসমান দেখতেছি মূলক ট্র্যাশ কবিতার বই পড়লে হবে না। মনেটারি পলিসি নিয়েই বই পড়তে হবে।


এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পড়ায় আপত্তির জায়গা নেই। ইভেন কবিতা, গল্প উপন্যাস পড়ার সময়েও আমরা আনন্দ বা শিল্প উপভোগ ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়েই পড়ি।


আরেকটি ব্যাপার বইয়ের ক্ষেত্রে, মানুষ মনে করে পড়া মানে আগা গোড়া বই পড়া। যেন এটি আপনার কর্তব্য। আপনার দরকার যা, আপনি তা দুই লাইন পড়ে পেয়ে গেলে পুরা বই কেন পড়বেন?


একেকটা বই যে লেখা হয়, এই চিন্তাগুলি একেকজন ব্যক্তি তার চিন্তার ক্ষমতা, ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ ইত্যাদির সাপেক্ষে কত তাড়াতাড়ি বুঝবে তা নির্ভর করে। যেমন কেউ ভূমিকা এবং সূচি পড়েই যদি বুঝতে পারে বইয়ের মেসেজ কী, তাহলে তার পুরা বই পড়ার কোন মানে নেই।

বই আমাদের চিন্তা বদলায় না, বইয়ের মধ্যে লেখা, লাইন, এগুলি চিন্তায় প্রভাব ফেলে। একটা লাইন ইনসাইট দিতে পারে, চিন্তায় শক্ত প্রভাব ফেলতে পারে।


পৃথিবীতে প্রচুর বই লেখা হয়, প্রকাশ হয়। সব বই আগাগোড়া পড়ার মত না সবার জন্য। এর কোন দায় নেই কারো। ধরা যাক আবার আপনি কোন কাঠ দিয়ে ওয়ারড্রব বানালে ভালো, এটা জানতে চান। গেলেন আরেক কাঠ বিশেষজ্ঞের কাছে। আপনি আগেই অনেক জেনেছেন কাঠ নিয়ে। ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ আপনার আছে। এখন ১০ মিনিটের আলাপেই আপনি বুঝতে পারবেন। কিন্তু কেউ যদি দাবী করে যে আপনাকে কাঠ নিয়ে তিন ঘণ্টা আলাপ করতেই হবে, তাহলে কি আপনি মানবেন? এটা অযৌক্তিক হয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং