মুরাদুল ইসলাম » অবশ্যপাঠ্য » আন্ডারডগ যেভাবে খেলায় জিতে

আন্ডারডগ যেভাবে খেলায় জিতে

খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড়ে কচ্ছপ জিতছিলেন এবং খরগোশ হারছিলেন। এই গল্প বলে আমাদের ইশপ একটা নীতি শিক্ষা দিছিলেন। আরও কিছু লাইফ বিষয়ক ইনসাইট এই গল্প ব্যবহার করে দেয়া যায়। যেটা একবার সাইটের একটা লেখায় প্রকাশ করছিলাম।

আইজ, তেমনি আরেকটা জিনিশ মনে হইল। ধরা যাক, আবার খরগোশ ও কচ্ছপ দৌড় শুরু করতে চাইলেন। সেইক্ষেত্রে, আপনারা কার পক্ষে বাজি ধরবেন? খরগোশের পক্ষেই। কারণ দৌড়ে উনিই জিতবেন। কচ্ছপ পারবেন না। এই ক্ষেত্রে কচ্ছপের জিতার সম্ভাবনা হইল ০ ভাগ।

লাইফের নানা জায়গায়, আপনে থাকতে পারেন কচ্ছপের জাগায়। প্রতিযোগিতা খরগোশের লগে। সেইক্ষেত্রে, কেমনে আপনে আপনার এজ পাইবেন বা, কেমনে আপনার জিতার সম্ভাবনাটারে একটু বাড়াইতে পারবেন?

এটা জরুরী একটা জিনিশ।

খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড়ে যাই। এই দৌড়ে এখন, কচ্ছপরে বুইঝা নিতে হবে, তিনি যদি কেবল খেলার নিয়ম কানুন শিখেন, রাস্তার মাপ জোক নেন, ম্যাপ মুখস্ত করেন, এগুলা কাজে দিবে না। কারণ এই নিয়ম মাইনা তিনি খরগোশরে হারাইতে পারবেন না। তিনি আন্ডারডগ। তারে প্রথমত ইতিহাস হিসাব কইরা দেখতে হবে, ওইদিন যে কচ্ছপ খরগোশরে হারাইছিল, সেইদিন খরগোশ কেন ঘুমাইছিল? এইটা কি আবহাওয়ার জন্য? বৃষ্টির দিন? রবীন্দ্রসংগীত বাজতেছিল? নাকি দিনের কোন নির্দিষ্ট পিরিয়ড? নাকি কোন সিজন? নাকি দৌড়ের আগে খরগোশ বিয়ার খাইছিল?

এইসব জিনিশ জানা বেশি কাজের।

কচ্ছপ এগুলা জাইনা, একই রকম অবস্থায় দৌড় করবেন এই শর্ত দিতে পারেন। এই ভিন্ন অবস্থায়, তার জেতার সম্ভাব্যতা ০% থেকে একটু বাড়ে, ইতিহাস হিসাবে ধরা যাক ১০% হইল। এই ১০% পার্সেন্টে উন্নতি বড় উন্নতি। জিতার একটা সম্ভাবনা থাকে তার।

জিতা হারা পরের হিসাব, আগের হিসাব জিতার সম্ভাব্যতার।

খেয়াল করলে দেখবেন, একসময় যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন দূর্বল ছিল, তখন শক্তিশালী দলের সাথে খেলা পড়লে আমরা চাইতাম বৃষ্টি আসুক। কারণ বৃষ্টি আসলে সাধারণ অবস্থার চাইতে ভিন্ন এক অবস্থার তৈরি হয়, আর সেখানে আন্ডার ডগ হিসাবে আমাদের জিতার সম্ভাব্যতা লাফ দিয়া বাইড়া যায়।

আন্ডারডগ কখনো মূল নিয়মে খেলে জিততে পারে না।

বিখ্যাত ডেভিড ও গলায়াথের গল্পেও একই কথা। দানব গলায়াথরে হারাইয়া দিছিলেন রাখাল বালক ডেভিড। তার অস্ত্র ছিল গুলতির মত একটা জিনিশ। গলায়াথের সাথে গলায়াথের নিয়মে খেলতে গেলে তলোয়ার নিয়া যাইতেন, সেখানে তার জিতার সম্ভাব্যতা থাকত জিরো।

এইরকম কথা প্রচলিত, ডেভিডের গুলতির হাত খুব ভাল ছিল যেহেতু তিনি তার পশু রক্ষার্থে বাঘ ভল্লুক তাড়াইতেন এগুলা দিয়া। এই তথ্য বাদ দিলেও, আমরা ধরি তিনি গুলতি নিয়া একটা চান্স নিলেন। তারে বলা হইছিল অন্য অস্ত্র নিতে, কিন্তু তিনি কিছুই নেন নাই। এই চান্স নেয়াটাই তার জিতার সম্ভাব্যতা কিছু বাড়াইয়া দিছে। ধরা যাক ৫% করছে। আগে ছিল ০%। আর এই ৫% এ ভাগ্যের কাজ করার একটা জায়গা থাকে, এবং তার গুলতির বুলেট গিয়া লাগল ঠিক গলায়াথের চোখে। একটা নতুন ইতিহাস হইল। তিনি হারলে, এটা কোন গল্পই হইত না, জানা কথাই তো ছিল যে, দানব গলায়াথের সামনে একটা বালক জাস্ট উইড়া যাবে।

ধরা যাক, আপনাদের এলাকার ক্রিকেট টিম, একটা ভালো টিমের সাথে ডাকাডাকির খেলা খেলতে গেলেন। এইখানে বড় অংকের বাজিও আছে, মান সম্মান জড়িত। আন্ডার ডগ হিসাবে, আপনাদের উচিত কী হবে? অসুবিধাজনক পিচ, মাঠ পছন্দ করা। বাজে আব হাওয়ার দিন পছন্দ করা। আপনাদের এই শর্তগুলা বড় দল মেনে নিবে, যেহেতু আপনারা দূর্বল দল। আর এই অসুবিধাজনক পিচে, আপনাদের জিতার সম্ভাব্যতা ভালো পিচের চাইতে একটু বাড়ে। কারণ গর্তযুক্ত বাজে পিচে ঐ দলের প্লেয়াররা অসুবিধায় পরে যাইতে পারে, আর আপনাদের গুড লাকের কাজ করার অল্প হইলেও জায়গা তৈরি হয়, যেটা জিতাইয়া দিতে পারে খেলায়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং