কোন একটা কাজে একজন কেন ফেমাস হন, লোকসকল কেন তারে এডমায়ার করে এটা নিয়ে ইভলুশনারি সাইকলজিস্টেরা দিয়েছেন প্রেস্টিজ থিওরি। হান্টার গেদারার সোসাইটিতে যার ভালো শিকারের স্কিল ছিল, উনি বড় পশু শিকার কইরা আনতেন। ও সবাইরে নিয়া খাইতেন। এতে মানুষের কাছে তিনি বিখ্যাত হইতেন। তার প্রভাব বাড়ত। অনেক লোক তারে মেন্টর হিশাবে মানত তার কাছ থেকে শিকারের স্কিলটা শিখতে।
খেলার সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রে এইটা অনেক মিলে। উনারা খেলা খেলতে যান অন্যান্য দেশের টিমের সাথে। এই খেলাধুলা এক প্রতীকী ফাইট। সেইখান থেকে তারা জয় করে নিয়ে আসেন বাইসন তথা ট্রফি। খেলা দেখতে দেখতে মনে হয় লোকের যে, তারা সবাই মিলে জয় করেছে। বীরেরা যুদ্ধজয় করে আসছেন। মিডিয়া এইভাবেই উপস্থাপন করে কারণ তারা জানে এইভাবে উপস্থাপন করলেই পাবলিক গ্রহণ করবে।
যখন কোন অভিনয় করা সেলেব্রেটি বা খেলাধুলার ইস্টার সেলেব্রেটি তাদের সেলেব্রেটিজম ভাঙ্গাইয়া রাজনীতিতে আসেন, সেই জিনিশটারে ক্যামনে দেখা যায়?
ধরা যাউক, এক দেশে ১ কোটি লোক আছেন। তারা এক কিরকেটাররে খুব পছন্দ করেন তার খেলার জন্য। খেলার জন্য উনারে তারা তাদের আধুনিক দেবতা তথা বড় সেলেব্রেটি বানাইয়া ফেললেন।
যেহেতু পাবলিক উনারে লাইক করেন, তাই মিডিয়ার আলো উনার উপরে। খেলার দিন শেষ হবার কালে সেলেব্রেটি ভাবলেন এই মিডিয়ার আলো, এই সেলেব্রেটিজমের পাওয়াররে তিনি অন্য জায়গায় এনক্যাশ করবেন, তিনি পলিটিক্সে নামবেন।
ওই দেশে দুই পলিটিক্যাল পার্টি ছিল। অর্ধাঅর্ধি ধরি।
সেলেব্রেটি এক দলে চলে গেলেন। যেহেতু সেলেব্রেটি তাই নমিনেশন মিলল। তিনি এখন ৫০ লাখ লোকের দলে গেলেন। কোন পাওয়ার ইউজ করে? ১ কোটি লোক মিলেমিশে যে পাওয়ার দিছিল ওইটারে ইউজ করে।
রাফলি বলা।
যে দলের বিরুদ্ধে গেলেন সেলিব্রেটি, সেলিব্রেটি হইতে তিনি তাদের সমর্থনও পাইছিলেন। এই জায়গায় তাদের সাথে একটা বিশ্বাসঘাতকতা করা হইল কি না?
এই প্রশ্নের বিরুদ্ধে যুক্তি হবে, সেলিব্রেটিও তো মানুষ। তার স্বাধীনতা আছে। তারে তুমি সাপোর্ট দিছ তাই তোমার বিরুদ্ধে যাইতে পারবে না এমন কি হয়?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, সেলিব্রেটি বলবেন, আমি কি তোদের দয়ায় সেলিব্রেটি হইছি? আমি নিজের খেলার পরতিভা দেখাইয়া সেলিব্রেটি হইছি। ঘাম ঝরাইছি, ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকছি, এত দূরে থাকছি যে আমার বাচ্চারা আমার চেহারা চিনে না, আমারে বাপ ডাকার বদলে মামা ডাকে!
এইসব ভ্যালিড প্রশ্ন।
তাও এই জায়গায় একটা ঝাপসা এথিক্যাল প্রশ্ন থাকে। ঝাপসা বিষয়টা বুঝতে আমাদের খেয়াল দিতে হবে বিভিন্ন পেশা বা সামাজিক অবস্থানের দিকে। যেমন ডাক্তর, এঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, খেলার সেলিব্রেটি। অভিনয়ের সেলিব্রেটি ইত্যাদি। এইসব নানা পেশার/অবস্থানের ব্যক্তির সমাজ থেকে অর্জন থাকে, তেমন দায়ও থাকে।
যেইটারে বলা যায়, পেশার বা অবস্থানের দায়। সেইরকম সেলিব্রেটিরও দায় থাকবে।
সেলিব্রেটিরে লোকে একটা ক্ষমতা দেয়। ক্ষমতার অন্য পিঠে থাকে দায়ের জায়গা।
সেলিব্রেটি বিজনেস করতে গেলে যেই অবস্থা তৈরি হয়, রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিলে, বা ধরেন ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নিলে, বা অগণতান্ত্রিক সরকারে অংশ নিলে – এইসব ভিন্ন ভিন্ন কাজ কিন্তু এক রকম কাজ না।
এই জায়গায় আপনে গিয়া নৈতিক বাটখারা দিয়া সেলিব্রেটিরে শাস্তি দিতে পারবেন না সর্বক্ষেত্রে। বড় আপত্তিও হয়ত জানাতে পারবেন না, যেহেতু তার ব্যক্তি স্বাধীনতার দাম আছে।
কিন্তু নৈতিক ভাবে বিচারের জায়গাটা থাকে। যে একজন সেলিব্রেটি তার সেলিব্রেটিজমের পাওয়ার দিয়া কোন কাজ করলে, সেইটা কেমন কাজ হইল, এবং যে পেশার জন্য তিনি সেলিব্রেটি হইছেন, ওইদিক থেকে কোন অনৈতিকতা থাকে কি না, সেটাও দেখার জায়গা থাকে।
সমাজের জন্যই এটা দরকার। পেশাটার জন্যও।
তা না হইলে, মানুষ একসময় সাবধান হবে। তাদের সাবধান হওয়া জরুরী। কারণ তারাই তো পাওয়ার (সোশ্যাল ক্যাপিটাল) তুলে দিতেছে।
তখন দেখা যাইতে পারে, ওই পেশার সেলিব্রেটিরে তারা সার্বজনীন দেবতা মানতেছে না।
কারণ যে আস্থায় ও ভালোবাসায় তারা পাওয়ার তুলে দিছিল, ওইটা আগের সেলিব্রেটি রাখেন নাই তার পক্ষ থেকে।
অলিখিত, এবং ঝাপসা হইলেও চুক্তিটা এইখানে ভঙ্গ হয়।