মুরাদুল ইসলাম » অবশ্যপাঠ্য » নাভাল রবিকান্তের কাছ থেকে যা শেখা যায় 

নাভাল রবিকান্তের কাছ থেকে যা শেখা যায় 

 

নাভাল রবিকান্ত একজন ফিলোসফার সিইও। তিনি এঞ্জেললিস্টের কো ফাউন্ডার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এঞ্জেললিস্ট স্টার্টআপদের জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম যেখান থেকে  উদ্যোক্তারা ইনভেস্টরদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ও প্রতিভাবান লোকদের হায়ার করতে পারেন।

একজন ইনভেস্টর হিসেবে নাভাল ইনভেস্ট করেছেন ১০০ টিরও বেশি কোম্পানিতে। এর মধ্যে আছে টুইটার, উবার, ইয়াম্মার এবং আরও অনেক।

ছবিঃ নাভাল রবিকান্ত

নাভাল একজন অসাধারণ প্রতিভাবান লোক, একজন ভরাসিয়াস রিডার। তার একটি দীর্ঘ ইন্টার্ভিউ পড়লাম এই কদিনে। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি জিনিস বা চিন্তা নিয়ে এই লেখাটি।

 

১। বইয়ের জন্য খরচ করা টাকা বিষয়েঃ

একটি খুব ভাল বই যার দাম হবে মাত্র দশ বা বিশ ডলার, কিন্তু এটি আপনার জীবনকে অর্থপূর্ণভাবে বদলে দিতে পারে। বইয়ের জন্য টাকা ব্যয়কে আমি কখনো খরচ হিসেবে দেখি না। এমনকি যখন আমার টাকা ছিল না তখনো দেখি নি, তখনো আমি বইয়ের পেছনে খরচ করেছি। বরং আমি দেখি এটাকে নিজের উপর ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে।

 

২। স্বভাবঃ

আমি মনে করি মানুষ হলো স্বভাবের তৈরি পুরোটাই। মানুষের বাচ্চা যখন জন্ম নেয় তখন তার মধ্যে কোন স্বভাবের লুপ থাকে না, একেবারে ব্ল্যাংক স্টেইট। তারা বড় হয় ও আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে স্বভাবের জন্ম হয়, এবং এদের জন্য তারা কন্ডিশনড হয়ে পড়ে।

আমরা অবচেতনে অনেক স্বভাব এভাবে তৈরি করি, এবং দশকের পর দশক নিজেরা তা বয়ে বেড়াই। আমরা হয়ত বুঝতে পারি না যে এদের অনেকগুলি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একটা পর্যায় পর্যন্ত, আমাদের হ্যাপিনেস লেভেল , ডিপ্রেশন লেভেল, মুড এবং আমাদের এটিচ্যুড এগুলাও স্বভাব। আমাদের অন্য মানুষদের জাজ করা, বা কী ধরনের খাবার আমরা খাই, কতবার খাই, এক্সারসাইজ করি কি না, বই পড়ি কি না, এগুলির সবই স্বভাব।

আমরা স্বভাব ছাড়া চলতে পারি না। আমরা আমাদের ইগো এবং আত্মপরিচয়ের সাথে এগুলিকে যুক্ত করে রাখি। যেমন আমি অমুক, আমি এইরকম।

কিন্তু আমাদের আসলে আনকন্ডিশন্ড করে নিজের স্বভাবকে আলাদা করে দেখাটা গুরুত্বপূর্ন। যেমন, “এটা আমার স্বভাব। হয়ত আমি এটা আমার শৈশবকালে নিয়েছিলাম যখন মা বাবার আকর্ষন লাভের চেষ্টা করছিলাম। এবং এর পরে আমি এটাকে এত শক্ত করেছি ও দিনের পর দিন করে গেছি যে আমি এটাকে নিজের আত্মপরিচয়ের অংশ বলে থাকি।”

আপনার প্রশ্ন করা উচিত, এই স্বভাব আমাকে কি হ্যাপি করছে না আমার জন্য সমস্যা তৈরি করছে? আমাকে কি স্বাস্থ্যবান করে তুলছে নাকই অলস করে তুলছে?

 

৩। মানকি মাইন্ড বা আমাদের ভেতরের বান্দরগুলিঃ 

আমি মনে করি, আমরা যখন বাচ্চা ছিলাম  তখন আমাদের মেন্টাল স্টেট ছিল ব্ল্যাংক স্টেট। আমরা তখন বাস করতাম বর্তমান সময়ে, যা দেখতাম তা দেখে নিজেদের তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখাতাম।

কিন্তু তখন শৈশব শুরু হয় তখন আমাদের মধ্যে ডেজায়ারের জন্ম হয়। আমরা অনেক কিছু চাইতে শিখি। আমরা লং টার্মে প্লানিং শুরু করি। তখন আমাদের চিন্তার শুরু হয় ও আমরা ইগো এবং আত্মপরিচয়ের নির্মান শুরু করি।

এর সবই স্বাভাবিক ও ভালো। এটাই প্রাণী হিসেবে আমাদের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে আমার মনে হয়, আমাদের চিন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন দেখা যায় আমরা প্রতিনিয়ত নিজের মাথার মধ্যে নিজের সাথে কথা বলে চলেছি, বলেই চলেছি।

আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের মাথার ভেতরে চলছে অন্য চলচ্চিত্র, হাঁটার মধ্যে আমরা আর নেই।

আপনার মাথায় চলতে থাকা এসব চিন্তা অথবা   ফ্যান্টাসিগুলি যদি আপনি বলতে শুরু করেন, তাহলে আপনি উন্মাদ সাব্যস্থ হবেন।

আপনি হয়ত রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, এবং আরও এক হাজার মানুষ হাঁটছে, এই হাঁটার কোন এক সময়ে তারা নিজেদের মাথার মধ্যে নিজেরা কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। তারা যা দেখছে তা জাজ করছে। তাদের মাথায় হয়ত আগামীদিনের ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার চিত্র ভাসছে। এইসব ফ্যান্টাসি তাদের বাস্তবতা থেকে বাইরে নিয়ে যায়।

এটা হতে পারে লং টার্মে প্ল্যান করার সময় বা কোন প্রবলেম সলভ করার জন্য ভালো। আমরা তো হলাম রেপ্লিকেশন মেশিন, এই মেশিন হিসেবে আমাদের সারভাইভালের জন্য হয়ত এটি ভালো। কিন্তু আমাদের হ্যাপিনেসের জন্য খারাপ।

আমাদের মাইন্ড হওয়া উচিত আমাদের একটি সাহায্যকারী টুল, আমাদের প্রভু নয়।

এটা এমন কিছু নয় যা আমাকে নয়িন্ত্রণ করবে ও ২৪ ঘন্টা/৭ দিন পরিচালনা করবে।

আমি এই মানকি মাইন্ড বন্ধ করে দেবার অভ্যাস আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করছি। এটা অনেক কঠিন। ছয়মাস সাতমাসের অভ্যাস নয় এটি। অনেক কঠিন। এবং এটি সাপ্রেস করা নয়। বন্ধ করে দেয়া। সাপ্রেস করে দেয়া হলে কাজ হবে না। কারণ তখন মাইন্ডই মাইন্ডকে সাপ্রেস করছে।

 

৪। ডেইলি ওয়ার্ক আউট এবং প্রায়োরিটিঃ

আমার অভ্যাসদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পজেটিভ প্রভাব রেখেছে প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ক আউট করা। এটা ছিল কমপ্লিট গেইম চেঞ্জার। আমি এর কারণে গভীর রাতে বাইরে থাকছি না, নিজেকে হেলদি ফিল করছি। আপনি যখন কাউকে কোন ভালো অভ্যাসের কথা বলবেন তখন সবচাইতে কমন উত্তরটি হলো, আমি সময় পাই না।

এই কথাটির অর্থ হলো, এটি আমার প্রায়োরিটি নয়।

আপনাকে বলতে হবে সোজা এটা আপনার প্রায়োরিটি কি না। কোন জিনিস আপনার নাম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি হলে এটি আপনি করবেন। এভাবেই জীবন চলে। আপনার যদি এক শতছিন্ন ঝুড়ি থাকে আর তাতে ১০ বা  ১৫ টি প্রায়োরিটি তাহলে কোনটিই আপনি অর্জন করতে পারবেন না।

আমি যা করেছিলাম তা হলো নিজেকে বলেছিলাম, ‘আমার জীবনে আমার নাম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি হলো আমার হেলথ। তা আমার হ্যাপিনেসের উপরে, আমার ফ্যামিলি, আমার কাজ সব কিছুর উপড়ে। ফিজিক্যাল হেলথ দিয়েই সব কিছুর শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, আমার মেন্টাল হেলথ। তারপর আমার স্পিরিচুয়াল হেলথ। এরপর আমার ফ্যামিলির হেলথ। এরপর ফ্যামিলির ওয়েলবিং। এরপর আমি বাইরের পৃথিবী নিয়ে আমার যা কাজ আছে তা করতে পারি।

এখন যেহেতু এটি আমি প্রায়োরিটি, তাই আমি কখনো বলতে পারি না আমার সময় নেই। আমি সকালে উঠে ওয়ার্ক আউট করি, যত সময়ই লাগুক না কেন। এখন দুনিয়া গলে যাক বা ধ্বংস হয়ে যাক, দরকার থাকলে আমার জন্য ত্রিশ মিনিট সে অপেক্ষা করতে পারবে।

 

৫। হ্যাপিনেস

হ্যাপিনেস এমন জিনিস যার উত্তর সবার জন্য একরকম নয়। আমার কাছে যা হ্যাপিনেস আপনার কাছে তা মনে হতে পারে হাস্যকর, এবং আপনার কাছে যা হ্যাপিনেস তা আমার কাছে মনে হতে পারে হাস্যকর। কারো জন্য এটা আত্মতুষ্টির অনুভূতি, কারো জন্য স্যাটিসফ্যাকশন, কারো জন্য মেন্টাল ফ্লো স্টেইট। আমার কাছে হ্যাপিনেস হচ্ছে ইভলভ হতে থাকা বা পরিবর্তিত হতে থাকা জিনিস। এক বছর আগে আমি যা হ্যাপিনেস বলতাম এখন হয়ত ভিন্ন বলব।

এখন আমার কাছে হ্যাপিনেস হলো ডিফল্ট স্টেট। যেখানে আপনি কোন কিছু মিস করছেন এমন ফিলিং থাকবে না। আমরা তো খুবই জাজমেন্টাল, সারভাইভাল, রেপ্লিকেশন মেশিন। আমরা রাস্তায় হাঁটতে থাকি আর আমাদের মাথায় বাজতে থাকে আমার ওইটা দরকার, আমার এটা দরকার। এভাবে আমরা ডেজায়ারের একটা ফাঁদে আটকা পড়ে যাই। হ্যাপিনেস হলো এমন একটা স্টেইট যেখানে আপনার কোন কিছু মিসিং মনে হবে না। যখন কোন কিছু মিস ফিল হচ্ছে না তখন আপনা মাইন্ড বন্ধ হবে এবং ফিউচারের কোন প্ল্যান বা অতীতের কোন বিষয় নিয়ে অনুতাপ করাবে না।

তখন আপনি একটা ইটার্নাল নীরবতা অনুভব করবেন। তখন আপনি তুষ্ট ও হ্যাপি। আপনি আমার এই ধারনার সাথে দ্বিমত করতে পারেন। কারণ আমি আগেই বলেছি হ্যাপিনেস একেকজনের কাছে একেকরকম। কিন্তু একটা বিষয় এখানে আছে। মানুষ ভুলভাবে মনে করে হ্যাপিনেস মানে পজিটিভ চিন্তা, পজিটিভ ফিলিং।

যত আমি পড়েছি, বা যত আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমি নিজেকে দিয়ে ভেরিফাই করে দেখেছি যে প্রতীতি পজেটিভ চিন্তা আসলে একটি নেগেটিভ চিন্তাকে ধরে রাখে। এটা হলো কনট্রাস্ট। তাও তে চিং এই পোলারিটি ও ডুয়ালিটির কথা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছে। আমি যদি বলি আমি হ্যাপি, তার অর্থ দাঁড়ায় কোন এক পয়েন্টে আমি স্যাড ছিলাম। আমি যদি বলি সে সুন্দর, তাহলে অন্য কেউ আছে অসুন্দর। প্রতিটি পজেটিভ চিন্তার ভেতরে নেগেটিভ চিন্তা আছে, আবার নেগেটিভ চিন্তার ভেতরেও পজেটিভ চিন্তা আছে। এর কারণেই, জীবনের প্রচুর গ্রেটনেস অর্জিত হয় সাফারিং এর মধ্য দিয়ে।

আমার মতে হ্যাপিনেস কোন পজেটিভ চিন্তা না। নেগেটিভ চিন্তাও না। এটা হলো ডেজায়ারশূন্যতা। বিশেষত বাইরের জিনিসের প্রতি। যত কম আমার ডেজায়ার থাকবে তত বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি তুষ্ট থাকব, আর তত আমার মাইন্ড ফিউচারে বা অতীতে কম যাতায়াত করবে। আমি যত প্রেজেন্ট থাকব, তত আমি বেশি তুষ্ট থাকব ও হ্যাপি থাকব।

হ্যাপিনেস আমার কাছে হলো সাফার না করা, ডেজায়ার না করা, ভবিষ্যৎ বা অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা না করা, বর্তমান মুহুর্তকে আলিঙ্গন করা, এবং বাস্তবতা যা সেভাবে তাকে গ্রহণ করা। ন্যাচারের কিন্তু হ্যাপিনেস বা আন হ্যাপিনেস এমন কোন কনসেপ্টই নেই। একটি গাছের কাছে কোন রাইট বা রং নেই, কোন ভুল বা শুদ্ধ নেই।

ন্যাচার একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে। একটি কজ এবং ইফেক্টের চেইন চলে আসছে সেই বিগ ব্যাং থেকে আজ পর্যন্ত। প্রতিটা জিনিস যেরকম আছে সেরকমই সে পারফেক্ট। আমাদের মাইন্ডই আমাদের হ্যাপি বা আনহ্যাপি বলে বা কোন জিনিসকে আমাদের ডেজায়ার অনুসারে বলে পারফেক্ট অথবা পারফেক্ট না।

আমি এও বুঝতে পেরেছি যে সেলফ অগুরুত্বপূর্ন। আপনি যদি মনে করেন আপনি মহাবিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিস, তাহলে আপনার চাহিদা মত, ডেজায়ার মত মহাবিশ্বকে আপনার বদলাতে হবে। আপনি গুরুত্বপূর্ন হলে মহাবিশ্ব আপনার ডেজায়ার পূরণ করতে তা করত। করছে না যখন তখন নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে এই ধারনায়।

আপনি যদি আপনাকে একটি এমিবা বা ব্যাকটেরিয়া হিসেবে দেখেন বা আপনার সব কাজকে দেখেন পানিতে লেখার মত অথবা বালি দিয়ে নির্মিত প্রাসাদের মত, তখন জীবন থেকে আপনার আশা কমে যাবে যে এটি এরকম হওয়া উচিত বা ওরকম হওয়া উচিত। জীবন যেরকম আছে সেরকমই। তখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার হ্যাপি বা আনহ্যাপি হবার কোন কারণ নাই। আসলে এগুলির কোন প্রয়োজনই নাই।

অনেক মানুষ ভাবেন এটা বোধহয় খুবই  হতাশাজনক বাস্তবতা। কিন্তু তা নয়। শিশুদের দেখেন। এটা ছোট শিশুদের বাস্তবতার মত। তারা হ্যাপি থাকে কারণ তারা পরিবেশের সাথে মিশে যায়, তাদের ডেজায়ার কী, পছন্দ কী এগুলি নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমি মনে করি নিউট্রাল স্টেইট হলো পারফেকশন স্টেইট। মানুষ তার নিজের মাথায় বন্দি না হলে হ্যাপি থাকতে পারে।

 

৬। ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু

ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু হলো এমন জিনিস যা আমি অনেক সতর্কতার সাথে নিজের জন্য নিয়েছি, এবং নিজেকে বলেছি যে, এটা হলো জীবনের পথ। কখনো আমি এগুলির ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করব না। আমি এরকমই সারাজীবন থাকব। আমি অন্য কোন ভাবে জীবন যাপন করতে চাই না।’

ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু হলো এমন জিনিস যা কখনো আপনি কম্প্রোমাইজ করবেন না।

আমি মনে করি অনেস্টি একটা কোর, কোর, কোর ভ্যালু। অনেস্টি বলতে আমি বুঝাচ্ছি, আমি নিজে হতে চাই, জাস্ট মি। আমি এমন কোন পরিবেশে বা এমন কোন মানুষের সাথে থাকতে চাই না যাদের সাথে কথা বলার আগে আমার হিসেব করে বলতে হয়। ( পড়ুনঃ নিজে হইয়া বাস। )

আমার মনে যা আছে তা যদি আমি বলতে না পারি তাহলে আমার মাথার মধ্যে একই কথার নানা সূতা তৈরি হবে। তখন আমি আর বর্তমান মোমেন্টে থাকতে পারব না। কারো সাথে কথা বলতে গেলেই আমি চলে যাব ফিউচার প্লানিং এ বা অতীত নিয়ে অনুতাপে। যার সাথে আমি পুরো অনেস্ট হতে পারব না, আমি তার আসে পাশে থাকতে চাই না।

আরেকটি ফাউন্ডেশনাল ভ্যালুর উদাহরণ হলো আমি শর্ট টার্ম কোন কিছু চাই না। শর্ট টার্ম ডিলিং এ আমার বিশ্বাস নেই। ধরেন আমি কারো সাথে বিজনেস করছি, দেখা গেল তারা অন্য আরেকজনের ব্যাপারে শর্ট টার্ম চিন্তা করছে, তখন এর সাথে আমি বিজনেস করব না। আমি মনে করি লাইফের সব লাভ আসে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট থেকে। এটা টাকা, হেলথ, রিলেশনশীপ, লাভ, একটিভিটি বা অভ্যাস যাই হোক না কেন। আমি কেবল সেইসব লোকদের সাথেই চলতে চাই যাদের সাথে বাকী জীবন চলতে পারব। আমি সেসিসব জিনিসেই কাজ করতে চাই যেগুলি লং টার্মে সুবিধা দেবে।

আরেকটা জিনিস, আমি হায়ারার্কিক্যাল সম্পর্কে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কে। আমি কারো উপরে বা নিচে থাকতে চাই না। কোন ব্যক্তি যদি আমাকে বন্ধুর মতো এবং আমি যদি তাকে বন্ধুর মতো ট্রিট করতে না পারি তাহলে আমি তার সাথে ইন্টারেক্ট করতে চাই না। এছাড়া আমি এখন আর রাগে বিশ্বাস করি না। কম বয়স যখন ছিল তখন অনেক রেগে যেতাম। কিন্তু এখন আমি বুদ্ধদের মতোই মনে করি, রাগ হলো এমন এক জ্বলন্ত কয়লা যা আপনি হাতে ধরে আছে অন্যকে তা দিয়ে আঘাত করবেন বলে। আমি এখন রাগান্বিত লোকদের থেকে দূরে থাকি। তাদের লাইফ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। রাগান্বিত হতে হলে, আমি জাজ করছি না, তুমি অন্য কারো সাথে অন্য কোথাও গিয়ে রাগান্বিত হতে পারো।

এরকম অনেক ভ্যালু আছে। আমি জানি না ভ্যালুর ক্ল্যাসিকাল সংজ্ঞায় এগুলি পড়বে কি না। কিন্তু আমি কখনো এগুলির ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করব না। আমি এভাবেই আমার সারা জীবন যাপন করে যেতে চাই। আমি মনে করি সবারি কিছু ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু আছে, এবং প্রতিটি গ্রেট সম্পর্ক, তা কো ওয়ার্কারের সাথে, বা ওয়াইফ, হাজবেন্ড, বন্ধুত্ব ইত্যাদি যাই হোক না কেন, মূল জিনিসটা হলো ভ্যালুগুলি এক কি না। ভ্যালু এক লাইনে থাকলে ছোট ছোট জিনিস কোন সমস্যা তৈরি করে না।

সাধারণত আমি দেখি মানুষেরা ঝগড়া করছে কোন কিছু নিয়ে, কিন্তু আসলে ঝগড়ার কারণ তাদের ভ্যালুগুলি আলাদা। ভ্যালুগুলি এক লাইনে হলে, এক রকম হলে ছোট জিনিসগুলি বড় সমস্যা তৈরি করে না।

র‍্যাডিক্যাল অনেস্টি বলতে আমি যা বুঝাই তা এমন না যে কারো মুখের উপর আমি বলে বসব সে কুৎসিত। আমি বলতে চাচ্ছি যা আমি চিন্তা করছি তা যেন বলতে পারি, এবং যা আমি বলছি তা যেন আমার চিন্তাতেও থাকে। মুখে এক মনে এক যেন কখনো না হয়। রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছিলেন, আপনি যেন কখনো কাউকে বোকা না বানান, আর নিজেকে বোকা বানানোই সবচেয়ে সহজ।

আপনি অন্যকে মিথ্যা বললে, ঐ মুহুর্তে আপনি নিজের সাথেই মিথ্যা বললেন।  একসময় নিজের মিথ্যায় নিজেই বিশ্বাস করবেন। তখন আপনি বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক হারাবেন এবং সেটি আপনাকে ভুল পথে নিয়ে যাবে।

ভ্যালু সাধারণত খুব বড়ভাবে পরিবর্তিত হয় না সময়ের সাথে। তবে আপনার ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু কী তা জানতে কিছু  সময় লাগে। আমার ভ্যালুগুলি সময়ের সাথে অল্প পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আমূল পরিবর্তন নয়।

আমার স্ত্রী একজন মারাত্মক ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড পারসন। আমিও তাই। এটি অন্যতম এক ফাউন্ডেশনাল ভ্যালু যা আমাদের এক করেছে। আপনার যখন বাচ্চা হবে তখন ব্যাপারটি অন্যরকম হয়ে যায়। তখন জীবন, জীবনের উদ্দেশ্য, ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর বদলে যায়। হঠাত করে গুরুত্ব আপনার নিজের শরীরের উপর থেকে চলে যায় বাচ্চার শরীরের উপর। এটা আপনাকে বদলে দেয়। আপনার ভ্যালুগুলি তখন কম স্বার্থপর হতে থাকে।

এরকম ভ্যালুর একটি বড় পরিবর্তন সম্পর্কে আমি বলতে পারি। আমার যখন অল্প বয়স ছিল তখন থেকেই আমার একটি কোর ভ্যালু হচ্ছে ফ্রিডম। আমার কোর কোর একটি ভ্যালু। এখনো আছে। কিন্তু আগে এর সংজ্ঞা ছিল আমার কাছে ফ্রিডম টু, অর্থাৎ কিছু করতে পারার বা হবার স্বাধীনতা।  কিন্তু এখন আমার কাছে তা ফ্রিডম ফ্রম। এখন আমি যে ফ্রিডম খুঁজছি তা অন্তর্গত ফ্রিডম। রাগান্বিত হওয়া থেকে মুক্তি, রিয়েকশন দেখানো থেকে মুক্তি, স্যাড হওয়া থেকে মুক্তি, জোর করে কিছু করা থেকে মুক্তি। এখন আমি বাইরের বা ভিতরের জিনিস থেকে মুক্তি চাই।

 

৭। বান্দর খেলা 

সামাজিকভাবে আমাদের বলা হয়, ‘যাও জিম করও, যাতে তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগে।’ কিন্তু এটি মাল্টি প্লেয়ার গেইম। অন্বয় লোকেরা দেখবে আমরা ভালো চাকরি করছি কি না। আমাদের বলা হয়েছে, “যাও, টাকা কামাও। বাড়ি কেনো।” আবারো এটি বাইরের বান্দর বান্দর খেলা।

হ্যাপি হতে হলে, নিজেকে হ্যাপি হবার ব্যাপারে ট্রেইন করুন। এটা পুরাটাই অন্তঃস্থ, বাইরের উন্নতির সাথে সম্পর্ক নেই। বাইরের কোন ভ্যালিডেশনের দরকার নেই। এখানে ১০০ ভাগ আপনি আপনার সাথে প্রতিযোগিতা করছেন।

আমরা সামাজিক প্রাণী, বিশেষত পিঁপড়া বা মৌমাছির মতো। বাইরের জিনিস নিয়ে প্রতিযোগিতা করার জন্য আমরা প্রোগ্রামড, তাই আমরা সিঙ্গেল প্লেয়ার গেইম কীভাবে খেলতে হয় ও জিততে হয় তা জানি না। আমরা মাল্টি প্লেয়ার গেইমে প্রতিযোগিতা করি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের জীবন সিঙ্গেল প্লেয়ার গেইম। আপনি একা জন্মেছেন। একা মরবেন। আপনার সব স্মৃতি, সব অনুমান, সব চিন্তা – সব কিছুই একা। তিন প্রজন্মের মধ্যে আপনি নাই হয়ে যাবেন। এবং কেউ এ ব্যাপারে ভাবিত হবে না। আপনি দুনিয়াতে আসার আগে যেমন কেউ আপনাকে নিয়ে ভাবিত ছিল না। এটা পুরোটাই সিঙ্গেল প্লেয়ার গেইম।

সব সত্যিকার স্কোর কার্ড হলো নিজের অন্তঃস্থ।

 

৮। হিংসা থেকে বাঁচার উপায় 

হিংসা বা জেলাসি আমার সবচাইতে শক্তিশালী একটা আবেগ ছিল এবং এর থেকে মুক্তি পেতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি আগে অনেক জেলাস ছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে এর থেকে মুক্তি পাই।

এটা খুবই বিষাক্ত এক আবেগ। কারণ আপনি যার প্রতি জেলাস দিন শেষে সে গুড লুকিং বা সফল বা তারা যা তাই থেকে যাচ্ছে শুধু আপনি হয়ে উঠছেন আরও বেশি আনহ্যাপি।

আমার একটি ব্রেকথ্রো মোমেন্ট আছে এ নিয়ে, যেদিন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম আমি যেসব লোকদের বিষয়ে জেলাস তাদের জীবনের একটা অংশ কেবল আমি নিয়ে নিতে পারি না। নিতে হলে তার পুরো জীবনটাই নিতে হবে ও আমার জীবনের সাথে অদল বদল করতে হবে। আমি তখন ভেবে দেখলাম এটা আমি চাই না। আমি আমাকে তার সাথে অদল বদল করতে চাই না। তাদের ডেজায়ার, প্রতিক্রিয়া, ফ্যামিলি, তাদের সমস্যা ও বাস্তবতা এগুলির সব আমি নিতে চাই না। সুতরাং, একটা অংশ নিয়ে জেলাস হবার কিছু নেই।

সামনে নাভাল রবিকান্তের আরো কিছু আইডিয়া নিয়ে লেখা প্রকাশ করব। এই লেখাটির লিংক শেয়ার করুন।

লেখাটির ব্যাপারে ফেইসবুকে মতামত জানাতে পারেন এখানে

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং