মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » ডেভিড ও গোলায়াথের গল্প যে শিক্ষা দেয়

ডেভিড ও গোলায়াথের গল্প যে শিক্ষা দেয়

হিব্রু বাইবেলে ডেভিড এবং গোলায়াথের গল্প আছে, যা খুবই বিখ্যাত।

এক প্রাচীন জাতি যাদের সাথে ইজরাইলাইটদের বিরোধ ছিল। এক যুদ্ধে ইজরাইলাইট এবং ওই জাতি এক জায়গায় এসে মিলল যে মাঝখানে খাদ। কোন দলই পাহাড় থেকে খাদে নেমে অন্যদলকে চার্জ করতে চাইল না। কারণ খাদে নামা মানেই হার, কারণ এতে উপরে থাকা প্রতিপক্ষ সুবিধা পাবে।

আগে যুদ্ধে অনেক সময় এমন হত যে, একদল তাদের সেরা যোদ্ধা পাঠাত, অন্যদল পাঠাত তাদের সেরা যোদ্ধা। এই দুইজনের যুদ্ধ হতো। ম্যাসিভ রক্তক্ষয় এড়াতে এই ছিল ব্যবস্থা।

ইজরাইলাটদের বিরোধীরা পাঠাল তাদের সেরা যোদ্ধা গোলায়াথকে। যে ছয় ফিট নয় ইঞ্চি লম্বা, জায়ান্ট। তার ভয়ে ইজরাইলাইটদের কেউ যুদ্ধে যেতে সাহস পেল না।

ইজরাইলাটদের নেতা সউল দুশ্চিন্তায় পড়লেন। আর তখন এগিয়ে এলো এক কিশোর, নাম ডেভিড। সে মেষ চড়ায়।

সে এসে বলল, গোলায়াথকে সে হারাতে পারবে।

সউল প্রথমে মানা করলেও শেষে আর কাউকে আসতে না দেখে রাজী হলেন তাকে পাঠাতে। সউল তাকে অস্ত্র, বর্ম ইত্যাদি দিতে চাইলেন। ডেভিড নিতে অস্বীকৃতি জানাল।

সে যখন গোলায়াথের দিকে এগিয়ে গেল, গোলায়াথ ভেবেছিল এর অস্ত্র কোথায়, আর এই কিশোর বালক কেন।

ডেভিড এগিয়ে গিয়ে তার পকেট থেকে পাথর ও পাথর ছোঁড়ার এক ধরণের গুলতি বের করল। নিখুঁত নিশানায় ছুড়ল ঠিক গোলায়াথের চোখ লক্ষ্য করে। গোলায়াথের চোখে গিয়ে লাগল। সে পড়ে গেল।

ডেভিড ও গোলায়াথের এই গল্প, সেক্যুলার ইন্টারপ্রিটেশনেও দূর্বল বা আন্ডারডগের হাতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের পতন বুঝায়। কিন্তু ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল কিছু অন্য ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন এই গল্পের। যার সাপেক্ষে কয়েকটি কথা বলা যায়। হতে পারে এই কথাগুলিই হলো এই গল্পের শিক্ষা, যা মানুষেরা তাদের লাইফে ব্যবহার করতে পারেন।

এক, তীর ছোঁড়া বাঁ গুলতির মত অস্ত্র ছোঁড়া প্রাচীন যুদ্ধের এক মারাত্মক অস্ত্র ছিল। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ, হাতাহাতি যুদ্ধ, আর তৃতীয় ছিল তীর জাতীয় অস্ত্র ছোঁড়া। ডেভিড এই অস্ত্রে পারদর্শী ছিল। কারণ মেষ চড়াতে গিয়ে এটা শিখেছিল। এদের হিংস্র জন্তুদের হাত থেকে বাঁচাতে তাকে নিয়মিত এই অস্ত্র ছুড়তে হতো।

দুই, ডেভিড তার অস্ত্র বদলায় নি। সে নিজের অস্ত্র নিয়েই যুদ্ধে নেমেছে। সে বর্ম ও অন্যান্য অস্ত্র নিলে হয়ত যুদ্ধে হারত। সে তার কাজে নিখুঁত এটা জানত। ফলে তার কনফিডেন্সের ঘাটতি ছিল না।

তিন, ডেভিড ছিল বুদ্ধিমান। সে বুঝতে পেরেছিল গোলায়াথ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, সে হাতাহাতি যোদ্ধা। ফলে দূর থেকে তাকে কাবু করা ইজি। ধরা যাক আপনার হাতে একটা পিস্তল, আর আপনার প্রতিপক্ষ একজন বড় রেসলার যার হাতে তরবারি। সেক্ষেত্রে যুদ্ধে আপনার জেতা স্বাভাবিক। ভল্লুক পানিতে এলিগেটরকে হারাতে পারবে না, তেমনি স্থলে ভল্লুককে হারাতে পারবে না এলিগেটর। কোন অস্ত্রের যোদ্ধা এটা দেখতে হবে ডেভিড ও গোলায়াথের গল্পে। এটা দেখলে গোলায়াথকে শক্তিশালী মনে হবে না, আবার ডেভিডকেও আন্ডারডগ মনে হবে না।

চার, বিভিন্ন মেডিকেল অনুমান বলে যে গোলায়াথের এমন বেশি উচ্চতার কারণ তার হরমোন জনিত সমস্যা। এই কারণে সে চোখেও দেখত কম। এমন লোক ভালো যোদ্ধা হবার কথা নয়। খুব সম্ভবত ইজরাইলাইটদের প্রতিপক্ষ তাদের ভয় দেখিয়ে ধোঁকা দিতেই তাকে পাঠিয়ে ছিল। তারা তাদের ধোঁকায় সফলও হয়েছিল প্রায়। কারণ ইজরাইলাইটদের যোদ্ধারা গোলায়াথের সাথে লড়তে সাহস পায় নি। সম্ভবত, ডেভিড এই চালাকিটা ধরতে পেরেছিল।

এই গল্পের একশনোবেলব একটা শিক্ষা হলো, কোন কাজে আপনি অন্যদের চাইতে বেশি পারদর্শী, এটাই আপনার স্ট্রেংথ, এবং এটি নিয়েই যুদ্ধে যান। সমাজ, ট্রেন্ড বা অন্য কেউ ভিন্ন অস্ত্র গছাতে চাইলেও ভুলে যাবেন না যে, ঐ অস্ত্র যতই ভালো হোক না কেন, ঐটা চালানোতে আপনার ন্যাচারাল ট্যালেন্ট যদি না থাকে, তাহলে পারবেন না এর থেকে সুবিধা নিতে। এর চাইতে যেদিকে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট আছে, সেখানে ইনভেস্ট করলে, আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং