রাফায়েল একজন ইতালিয়ান মহান শিল্পী। মাইকেল এঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং এই রাফায়েল তিনজন মিলে সেইসময়ে শিল্পের এক সমৃদ্ধ সময় পার করেছেন। এদের তিনজনই একই সময়ের। তবে রাফায়েল অল্প বয়েসে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৭। এই ৩৭ বছরের মধ্যেই তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ করে গেছেন।
তার একটি গ্রেটেস্ট মাস্টারপিস হল স্কুল অব এথেন্স। এটি রেনেসাকালীন ইটালীর একটি ফ্রেসকো আর্ট। এর ছবিটি দেখে প্রাচীন দার্শনিকদের নাম মিলাচ্ছিলাম।
ঠিক মাঝের দুজন দার্শনিক হচ্ছেন প্লেটো ও এরিস্টটল। প্লেটোর হাতে আছে তার বই, এরিস্টটলের তার পুস্তক। প্লেটো ভাববাদী দার্শনিক। উপরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে তাই ছাত্র এরিস্টটলকে এই জগতের দৃশ্যমান জিনিসের বাইরেই কিছু মহান জ্ঞাণ আছে সেরকম ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ধর্মবিশ্বাস, আত্মার অমরত্ব ইত্যাদি তার ভাবনার অনেকটা জুড়ে ছিল। আর অপরদিকে এরিস্টটলের হাত নিচের দিকে। তিনি গুরুকে বুঝাচ্ছেন, না গুরু; আমাদের আগে জগত বুঝতে হবে। প্লেটোর পড়নে যে পোষাক তার রঙের অর্থ বাতাস এবং আগুন। দুইটাই ভরহীন জিনিস। ভাববাদী দার্শনিকের ভাব ফুটাইয়া তুলতে ভরহীন বস্তু বলে পরিচিত। অন্যদিকে বাস্তববাদী দার্শনিক এরিস্টটলের পোষাকের রঙের অর্থ পৃথিবীর মাটির রঙ এবং পানির রঙ। দুইটা মিলেই পৃথিবীর ভরের বৃহদাংশ।
যদিও এরিস্টটল প্লেটোর শিষ্য ছিলেন কিন্তু পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন গুরুর প্রতিদ্বন্দ্বী। কল্পণাপ্রবণ গুরুর শিক্ষাকে তিনি মেনে না নিয়ে নিজের মত ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। তিনি প্লেটোর দর্শনের এমনসব ব্যখ্যা দিতে থাকেন যে প্লেটোর দর্শন জটিল হয়ে পড়ে। প্লেটো তার একাডেমীতে উত্তরসুরী হিসেবে যখন তাকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে নিযুক্ত করলেন তখনো মনক্ষুন্ন হন এরিস্টটল। প্লেটোর মৃত্যুর পর তিনি একাডেমী ছেড়ে চলে যান এবং প্রতিষ্ঠা করেন লাইসিয়াম।
বামদিকে উপরে আছে মিউজিক, লাইট, আর্চারির দেবতা এপেলো। ডানদিকে উপরে জ্ঞানের দেবী এথেনা।
সামগ্রিকভাবে প্লেটোর দিকের জ্ঞাণীরা চিন্তার দিক থেকে ভাববাদী। আর এরিস্টটলের দিকের দার্শনিকেরা বাস্তববাদী। একেবারে কোনার দিকে ডানদিকে রাফায়েল নিজেকে রেখেছেন। জ্ঞাণীদের মাঝে জানতে আগ্রহী এক তরুণের মত তাকে দেখা যাচ্ছে।
এই ছবিতে নাম্বার দেয়া আছে। বার নাম্বারে আছেন গ্রীসের মহান দার্শনিক সক্রেটিস। সক্রেটিস সম্পর্কে একটা ফেসবুকে দেয়া পোস্ট এম্বেড করে দেয়া হল। এটা সক্রেটিসের মৃত্যু নিয়ে লেখা। এখানে সক্রেটিসের দার্শনিক পদ্বতি, তার শাস্তি এবং দন্ড ইত্যাদি নিয়ে ফিকশন আকারে লেখা আছে।
প্রথম যে প্রশ্ন হবে তা হল গ্যাডফ্লাই কি জিনিস?উত্তর ডাঁশপোকা! যা ঘোড়াকে বিব্রত করে। প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক সক্রেটিস... Posted by Muradul Islam on Saturday, June 20, 2015
"আই এম ডায়োজিনিস, দ্য ডগ; আই নাজল দ্য কাইন্ড, বার্ক এট দ্য গ্রীডি এন্ড বাইট স্কাউন্ড্রেলস।"১১। একবার ডায়োজিনিস রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন। দেখলেন একটা প্রস্টিটিউটের ছেলে লোকদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ডায়োজিনিস তাকে লক্ষ্য করে বললেন, "সাবধান খোকা! খেয়াল রেখো ঢিল যেন তোমার বাপের উপর না পড়ে।" ১২। গ্রীসের লোকেরা একবার কুকুর কুকুর বলে ডায়োজিনিসের দিকে হাড়গোড় ছুঁড়ে দিল। ডায়োজিনিস উত্তেজিত হলেন না। তিনি শান্তভাবে কুকুরের মত তাদের গায়ে মুত্র বিসর্জন করতে লাগলেন। ১৩। এক দর্শনের ছাত্র ডায়োজিনিসের কাছে এসে বলল, "আমার কাছে দর্শনবিদ্যা কঠিন মনে হয়।" ডায়োজিনিস বললেন, "ভালোভাবে বাঁচতে চাও না যখন, বেঁচে আছো কেন?" ১৪। ডায়োজিনিসকে জিজ্ঞেস করা হল, "বিয়ের সঠিক বয়স কোনটি?" ডায়োজিনিস উত্তর দিলেন, "একজন যুবকের জন্য এখনো আসে নি। আর বৃদ্ধের জন্য তো নেইই।" ১৫। একবার এক শুভানুধ্যায়ী ডায়োজিনিসকে বললেন, "মানুষেরা আপনাকে দেখে হাসে।" ডায়োজিনিস উত্তর দিলেন, "গাধারাও তো মানুষদের দেখে হাসে। মানুষেরা কী গাধাদের হাসিতে লক্ষ দেয়? তাহলে আমি কেন তাদের হাসিতে লক্ষ দেব?"
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এবং ডায়োজিনিস
১৬। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ডায়োজিনিসের কথা শুনেছিলেন। ভাবলেন একবার দেখা করা যাক। তিনি গুণীর কদর দিতেন। আলেকজান্ডার ডায়োজিনিসের সামনে গিয়ে বললেন, "আমি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট।" ডায়োজিনিস বললেন, "আমি ডায়োজিনিস দ্য সিনিক।" আলেকজান্ডার বললেন, "আপনি কী আমাকে ভয় পান না?" ডায়োজিনিস বললেন, "কেনো? তুমি কী? ভালো না খারাপ জিনিস?" আলেকজান্ডার বললেন, "অবশ্যই ভালো।" ডায়োজিনিস বললেন, "ভালো জিনিসকে কে ভয় পায়?" আলেকজান্ডার মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি প্রায়ই দেখা করতেন এই পাগলাটে দার্শনিকের সাথে। ডায়োজিনিস নিজেকে বিশ্বনাগরিক বলতেন। আলেকজান্ডার বিভিন্ন দিকে যুদ্ধ করে বিভিন্ন অঞ্চল আয়ত্ত্বে আনছেন দেখে তিনি এটা নিয়েও বিদ্রুপ করতেন। একবার বললেন, "আমাকে যেন মাথা উপুর করে কবর দেয়া হয়।" লোকেরা বলল, "কেন?" ডায়োজিনিস বললেন, "যেভাবে যুদ্ধ জয় হচ্ছে তাতে তো মেসিডোনিয়া দুনিয়া উলটিয়ে ফেলবে। তখন উলটানো দুনিয়ায় আমার মাথাটা উপরের দিকে যেন থাকে তাই এই ব্যবস্থা।" আলেকজান্ডার আরেকবার এলেন ডায়োজিনিসকে দেখতে। ডায়োজিনিস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পণা কী?" আলেকজান্ডার বললেন। "সমস্ত গ্রীস নিজের আয়ত্ত্বে আনা।" "তারপর?" "তারপর সমস্ত এশিয়া মাইনর নিজের আয়ত্ত্বে আনা।" "তারপর?" "সমস্ত পৃথিবী নিজের আয়ত্ত্বে আনা।" নাছোড়বান্দা ডায়োজিনিস আবার জিজ্ঞেস করলেন, "তারপর? আলেকজান্ডার বললেন, "তারপর আর কী! বসে বসে বিশ্রাম নেব শান্তিতে।" ডায়োজিনিস বললেন, "এই কাজের জন্য এত ঝামেলা! এটা তো এখনি করতে পারো।" আরেকবার ডায়োজিনিসের টবের পাশে এসে দাড়ালেন আলেকজান্ডার। তিনি বললেন, "ডায়োজিনিস, আপনার জন্য আমি কী করতে পারি?" ডায়োজিনিস বললেন, "আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। তোমার জন্য সূর্যের আলো আমার গায়ে লাগছে না।"আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বলেছিলেন, আমি আলেকজান্ডার না হলে, ডায়োজিনিস হতে চাইতাম।১৭। একবার প্লেটো ডায়োজিনিসকে বললেন, "আপনি যদি ডিওনিসাসকে সম্মান দিতেন, তাহলে এখন লেটুস পাতা ধুতে হত না।" ডায়োজিনিস শান্তভাবে বললেন, "প্লেটো, তুমি যদি এখন লেটুস পাতা ধুতে তাহলে তোমাকে ডিওনিসাসকে সম্মান দেখাতে হত না।" ১৮। প্লেটো একবার 'মানুষ হল দ্বিপদ বিশিষ্ট পালকহীন প্রাণী' বলে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিলেন। ডায়োজিনিস একটা মুরগীর পালক ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন । প্লেটো এবং সামনে উপস্থিত সবার সামনে পালকহীন মুরগীটাকে রেখে বললেন, "এই হল প্লেটোর মানুষ।" ১৯। একবার প্লেটো ডায়োজিনিসকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। ডায়োজিনিস তার কাদামাখানো পা দিয়ে প্লেটোর দামী কার্পেট অবজ্ঞাভরে মাড়িতে যেতে যেতে বললেন, "এই আমি প্লেটোর গর্ব মাড়িয়ে গেলাম।" প্লেটো বললেন, "ডায়োজিনিসের গর্ব দিয়ে।"