মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » এপিকিউরাস মেনোয়কিউসের প্রতি

এপিকিউরাস মেনোয়কিউসের প্রতি

এপিকিউরাস প্রাচীন গ্রীসের একজন দার্শনিক ছিলেন। তার জন্ম ৩৪১ বিসিইতে, এবং মৃত্যু ২৭০ বিসিইতে। যিশুর জন্মের ৩৪১ বছর আগে তার জন্ম, এবং যিশুর জন্মের ২৭০ বছর আগে তার ধরাধাম ত্যাগ।

প্রাচীন গ্রীসের এই দার্শনিক ছিলেন এপিকিউরিয়ানিজম প্রবক্তা। এপিকিউরাস মনে করতেন, সুখই আরাধ্য। প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নৈতিক ভালো হচ্ছে, যাতে তার সর্বোচ্চ সুখ হবে, এবং যাতে কষ্ট সে এড়িয়ে যেতে পারবে।

এপিকিউরাস মনে করতেন দেবতারা মানুষের জীবনে হস্তক্ষেপ করেন না তাই মানুষের উচিত না ধর্মীয় নৈতিকতা নিয়ে মাথা ঘামানো। মানব সমাজের নিয়ম নীতিগুলা হচ্ছে যেগুলা মানুষেরা সম্মত হয়েছে মানতে যাতে তারা সামগ্রিক ভাবে কষ্ট এড়াতে পারে। তাই দেবতাদের নিয়ম নীতি মানার চাইতে মানুষের উচিত সুখ খোঁজা, এবং কষ্ট এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা।

তিনি প্রধানত তার সময়কার প্লেটোবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তার দর্শন মত প্রচার করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান স্টয়িক দার্শনিকেরা

এপিকিউরাস মনে করতেন মানুষের সেন্স/ইন্দ্রিয়ই জ্ঞানের উৎস। এই ধারণাটি বিভিন্ন সমস্যা আছে।

তার বেশীরভাগ লেখাই হারিয়ে গেছে। কেবল তিনটা চিঠি, এবং কিছু উক্তি বেঁচে আছে। তার দর্শনের মূলনীতিগুলি আরো মিলে রোমান দার্শনিক সিসেরোর লেখায়, এবং তার দর্শনের বিরোধী সেক্সটাস এম্পিরিক্যাসের লেখায়।

তার দর্শন শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল, কারণ মানুষ একে ভোগবাদের/হেডোনিজমের সমর্থক হিশেবে মনে করেছে নানা সময়ে। এপিকিউরাস এবং তার অনুসারীরা সাধারণ জীবন যাপন করতেন।

তার মতে দর্শন চর্চার উদ্দেশ্য নিজে সুখী হওয়া এবং অন্যদের সুখী হতে সাহায্য করা। ভেতরের শান্তি অর্জন এবং ভয় থেকে মুক্তি। কষ্ট এড়িয়ে চলা।

এপিকিউরাস প্রাথমিক পর্যায়ের একজন বস্তুবাদী-উপযোগবাদী দার্শনিক ছিলেন। তাই পরবর্তীকালে কার্ল মার্ক্স, জেরেমি বেন্থাম প্রমুখ বস্তুবাদি-উপযোগবাদী দার্শনিকেরা তার চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

তার বেঁচে যাওয়া তিনটি চিঠির একটি এই চিঠি। এখানে তার দর্শনের একটা রূপরেখা আছে।

এপিকিউরাস

এপিকিউরাস মেনোয়কিউসের প্রতিঃ সম্ভাষণ

কেউ যেন যৌবনে দর্শনচর্চা করতে গিয়ে এটা না বলে যে আমার এখনো বয়েস হয় নি, বা বৃদ্ধ বয়েসে দর্শন চর্চা করতে গিয়ে এটা না বলে যে, আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। কারণ আত্মার সুস্থতা উপভোগের কোন বয়স হয় না।

এবং যে ব্যক্তি বলে যে দর্শন চর্চার সময় এখনও আসেনি বা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে তাকে সেই ব্যক্তির সাথে তুলনা করা যেতে পারে যিনি বলেন যে সুখের সময় এখনও আসেনি বা ইতিমধ্যে চলে গেছে।

সুতরাং যুবক এবং বৃদ্ধ উভয়েরই দর্শন চর্চা করা উচিত। যুবকেরা করবে যাতে তারা তাদের তরুণ বয়েসের আশীর্বাদের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে কৃতজ্ঞতাবোধ অর্জন করে বেশী বয়েসের দিকে যেতে পারে।

আর বৃদ্ধরা করবেন যাতে তারা একইসাথে তরুণ এবং বৃদ্ধ বয়েসের প্রজ্ঞার মধ্যে থাকতে পারেন, ও নির্ভীকভাবে এগিয়ে যেতে পারেন ভবিষ্যতের দিকে।

অতএব, বুদ্ধিমানের পথ হলো, সুখের জন্য প্রস্তুত করে এমন জিনিসগুলি অনুশীলন করা, যেহেতু সুখ অর্জনের মাধ্যমেই আমাদের সকল কিছু অর্জিত হয়, এবং সুখ না থাকলে আমরা সব কিছু দিয়ে সুখই খুঁজতে থাকি।

দেবতাদের বিষয়ে

আমি তোমাদের প্রতি ক্রমাগত যে সব উপদেশ দিয়ে গেছি, সেগুলো অনুশীলন ও অধ্যয়ন উভয়ই করো এবং এগুলোকে উত্তম জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গণ্য করো।

প্রথমত, দেবতাদের আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং অবিকৃত বলে বিশ্বাস করা, যেমন এর সার্বজনীন ধারণাটি আমাদের মনে বর্ণনা করা হয়েছে, তার সাথে বাইরের কোন কিছু যুক্ত করবে না।

প্রতিটি চিন্তা এই মূল চিন্তার সাথে সঙ্গতি রেখে করবে। কারণ দেবতারা যে রয়েছেন তা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায়। কিন্তু অনেক লোকেরা যেভাবে বিশ্বাস করে, দেবতারা ওইরকম নন। ওই লোকদের বিশ্বাসগুলি আমলে নিবে না।

এবং ওই লোক অধার্মিক নয় যে বেশীরভাগ লোকে যে দেবতাদের বিশ্বাস করে সেই দেবতায় অবিশ্বাস করে, বরং অধার্মিক হলো সে যে, বেশীরভাগ লোকের ধারণাকে দেবতাদের সাথে যুক্ত করে। বেশীরভাগ লোকেরা দেবতাদের সম্পর্কে যে ধারণা করে তা আদিকাল থেকে চলে আসছে এমন না, এই ধারণাগুলি ভুল অনুমান। তাদের গল্প মতে, খারাপ লোকেদের উপর দেবতাদের শাস্তি এবং অসম্মান নেমে আসে, এবং কিছু সুবিধাদিও।

খারাপ বিষয়ে দেবতারা নির্বিকার

[এই গল্পগুলি মিথ্যা, কারণ দেবতারা] একচেটিয়া ভাবে কেবল সদগুণগুলির প্রতি নিবেদিত, তাই তারা এই সদগুণগুলির সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেন, এবং তাদের মত যারা সেইসব লোকদের প্রতিই আকর্ষণ অনুভব করেন, অন্য বাকি কিছু তাদের কাছে অপরিচিত।

মৃত্যু

নিজেকে এই বিশ্বাসে অভ্যস্ত করো যে মৃত্যু আমাদের কাছে কিছুই নয়, কারণ সমস্ত ভালো এবং মন্দ চেতনায় নিহিত এবং মৃত্যু হলে চেতনার বিনাশ হয়।

অতএব, মৃত্যু যে আমাদের কাছে কিছুই নয়, এই সত্যের সঠিক উপলব্ধি মরণশীল জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে, অসীম সময় যোগ করে নয় বরং অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে। কারণ যে ব্যক্তি সত্যিকার ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে মরে যাবার পরে আর ভয় পাবার মত কিছু থাকে না, তার বেঁচে থাকা কালে ভয় পাবার কিছুই থাকে না।

তাই, কোন ব্যক্তি যখন বলে যে সে মৃত্যু ভয় পায়, এটা বোকামি। কারণ সে মৃত্যুর ঘটনাটাকে, ঘটনাটা ঘটার সময়ের যন্ত্রণাকে ভয় পায় না, বরং মৃত্যুর চিন্তাই তাকে যন্ত্রণা দেয়। যে জিনিশ আমাদের বর্তমানে যন্ত্রণা দিচ্ছে না সেই জিনিশ ভেবে যন্ত্রণা পাবার কোন মানে হয় না। মৃত্যু, যা খারাপের মধ্যে সবচাইতে বড় খারাপ, আমাদের কাছে কিছুই না। এই উত্তম যুক্তিতে যে, আমরা যখন বেঁচে আছি তখন সে নেই, আর যখন সে থাকবে তখন আমরা বেঁচে থাকব না। তাই এটা জীবিত বা মৃত কারো কাছেই কিছুই নয়। কারণ জীবিত বা মৃতকে সে কিছুই করতে পারবে না।

মানুষের চিন্তার অসংগতি

কিন্তু অনেক মানুষ একসময় মৃত্যুকে সবচাইতে খারাপ ভেবে ভয় পায়, আবার অন্য সময় ভাবে মৃত্যু হচ্ছে দুনিয়ার খারাপি থেকে মুক্তির এক পথ। কিন্তু প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা জীবনের সাথে লেগে থাকতে বা এর থেকে চলে যাওয়ার ভয়, কোনটাকেই চান না। কারণ জীবনে তিনি কোন দোষ দেখেন না, আবার স্বাভাবিক মৃত্যুকে খারাপ ভাবে দেখেন না। তার কাছে এটা খাদ্য পছন্দ করার মতোই। তিনি সবসময় সবচাইতে বেশী অংশ পছন্দ করেন না, পছন্দ করেন বেশী মজাদার অংশ। এটা সময়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি সবচাইতে দীর্ঘ সময় চান না, চান উপভোগ্য সময়।

এবং যে ব্যক্তি যুবককে বলে “ভালোভাবে বাঁচো” এবং বৃদ্ধকে বলে “ভালো ভাবে মৃত্যুবরণ করো” তাকে সরল বলা যায়। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আনন্দের এই জন্য নয়, বরং এই যুক্তিতে যে, ভালো জীবন যাপনের ও ভালোভাবে মৃত্যুবরণ করার শিল্প, দুইটা আসলে একই জিনিশ।

আরো খারাপ সে, যে বলে, “জন্মগ্রহণ না করলেই ভালো ছিল, অথবা জন্মগ্রহণ করা যেন হাদেসের দরজা দিয়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে আসা।”

এটা যদি সে বিশ্বাস থেকে বলে থাকে, তাহলে সে কেন জীবন থেকে চলে যাচ্ছে না? কারণ পথ তো খোলাই আছে তার জন্য। আর যদি সে ফাজলামি করে বলে থাকে তাহলে এমন জিনিশ নিয়ে ফাজলামি করছে যা ফাজলামি করার মত না।

ভবিষ্যৎ

ভবিষ্যৎ নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে, ভবিষ্যৎ ঠিকঠাক আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই, আবার ঠিকঠাক আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরেও নেই। তাই আমরা যেন কখনো এই আশায় বসে না থাকি যে এটা আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বা এই হতাশায় না ভুগি যে, এটা কেন অনেকটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে

আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে বলতে গেলে, আমাদের ভাবতে হবে কিছু আকাঙ্ক্ষা প্রাকৃতিক এবং কিছু কাল্পনিক। প্রাকৃতিক আকাঙ্ক্ষাগুলির মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় এবং কিছু কেবল মাত্র প্রাকৃতিক। প্রয়োজনীয় আকাঙ্ক্ষাগুলির মধ্যে কিছু সুখের জন্য দরকার (যেমন বন্ধুত্ব) এবং আরো কিছু দরকার শারীরিক আরামের জন্য ( পোশাক, ঘরবাড়ি) এবং আরো কিছু দরকার জীবন ধারণের জন্য (যেমন ক্ষুধা, পিপাসা নিবৃত্তি)।

যখন আমরা আমাদের চাওয়াকে ঠিকঠাক বুঝতে পারব, তখন আমরা আমাদের প্রতিটা সিদ্ধান্ত বিচার করতে পারব এইভাবে যে, আমাদের শারীরিক মানসিক শান্তি আনয়ন করবে কি না এই সিদ্ধান্ত। তার উপর ভিত্তি করেই আমরা কোন জিনিশ পছন্দ করব, কোন জিনিশ এড়িয়ে যাব। একটা সুখী জীবনের মূলমন্ত্র হলো, ভয় এবং যন্ত্রণা এড়িয়ে যাওয়া। আমরা যখন এই অবস্থা অর্জন করে ফেলি, তখন আমাদের ভেতরের অশান্তি দূর হয় যায়। কোন কিছু নেই বা কোন কিছু অতিরিক্ত দরকার এই অনুভব থাকে না, কারণ শরীর ও মন তখন তার পূর্ণরূপে বিরাজ করে। আমাদের কেবল দরকার সুখ, কারণ সুখের অনুপস্থিতিতেই আমরা দুঃখবোধ করি, এবং বিপরীতভাবে, যখন আমরা দুঃখবোধ করি না, তখন আমাদের সুখের চাহিদাও থাকে না।

সুখী জীবনের শুরু এবং শেষ

এবং এই যুক্তিতে আমরা বলি সুখই হলো একটি সুখী জীবনের শুরু এবং শেষঃ কারণ আমরা বুঝতে পারি সুখই প্রথম ভালো, এবং আমাদের প্রকৃতির অংশ। আমরা এই সুখকেই আদর্শ মান ধরে অন্য সকল ভালো কিছু পরিমাপ করে থাকি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা সকল সুখের পেছনেই ছুটি। কখনো আমরা কিছু সুখ ছেড়ে দেই কারণ পরবর্তীতে এগুলি আমাদের জন্য নিয়ে আসে বড় দূর্ভোগ। একইভাবে, আমরা বিশ্বাস করি কিছু কিছু কষ্টভোগ সুখের চাইতে ভালো কারণ এই কষ্টের কারণে আরো বেশি সুখ আসে দীর্ঘ ব্যবধানে।

তাই, সকল সুখই ভালো কারণ তা আমাদের প্রকৃতির অংশ, কিন্তু সকল সুখকেই গ্রহণ করা যাবে না। ঠিক একইভাবে, সকল কষ্ঠই খারাপ কিন্তু সকল কষ্ট সকল সময়ে এড়িয়ে যাওয়া উচিত না।

সুবিধাবিচারঃ লাভ ক্ষতি বিচার করা

ঠিক উপায় হচ্ছে, লাভ ও ক্ষতি পর্যালোচনা করা, সুবিধা অসুবিধা বিচার করে দেখা। কোন ভালো জিনিশকেও আমরা কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে খারাপ, এবং খারাপ জিনিশকেও নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ভালো হিশেবে দেখে থাকি।

স্বয়ংসম্পূর্ণতা বা জীবনে তুষ্ঠ থাকা

আমরা মনে করি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অনেক উচ্চ পর্যায়ের ভালো। এই কারণে না যে আমরা সব সময়ে অল্প নিয়ে জীবন যাপন করতে চাই, বরং যখন আধিক্য নাই তখন যা অল্প আছে আমাদের তাতে যেন সন্তুষ্ট থাকতে পারি। আমরা সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করি যে, যে বিলাসিতার অভাব সবচাইতে কম অনুভব করে, সেই সবচাইতে বেশী এটা উপভোগ করে। প্রাকৃতিক আকাঙ্ক্ষাগুলি সহজে পূরণ করা যায়, কিন্তু যা প্রাকৃতিক নয় এমন আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণ করা কঠিন। যখন চাহিদার অশান্তি দূর হয়, তখন সাধারণ খাবারেই মহাভোজের আনন্দ উপভোগ হয়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় রুটি এবং পানিই নিয়ে আসে সর্বোচ্চ সুখ।

তাই, সাধারণ খাবার দাবারে অভ্যস্ত হওয়া কেবল যে স্বাস্থ্যকর তাই নয়, এটি জীবনের অনিবার্য বাঁধাসমূহের জন্য ব্যক্তিকে প্রস্তুত করে তোলে। এটি আমাদের সমৃদ্ধির সময়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করতে শেখায়, যা অভাবের সময়ের পরে আসে, এবং অনাকাঙ্ক্ষিত খারাপ সময় মোকাবেলার জন্য তৈরি রাখে। আমরা যখন বলি সুখই সর্বোচ্চ লক্ষ্য তখন আমরা ভোগবাদী বিলাসী জীবন বুঝাই না, যেটা অনেকেই ভুল বুঝে বা ইচ্ছা করে এইভাবে বুঝতে যায়। আমরা যা বুঝাই তা হলো, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি। অতিরিক্ত মদ্যপান, দলবল নিয়ে আনন্দ পার্টি করতে থাকা, উদ্দাম যৌনতা, দামী এবং বিশাল সব মহাভোজ – এগুলি সুখী জীবনের পথ নয়। সত্যিকার সুখ আসে যৌক্তিক বুদ্ধিমত্তা, সতর্কতার সাথে নিজের পছন্দ ও এড়িয়ে যাবার পেছনের কারণ বিচার, এবং যেইসব ভুল বিশ্বাস মানুষের বেশীরভাগ মানসিক অশান্তির মূলে সেইগুলাকে পরিহার করার মাধ্যমে।

বাস্তববাদী যৌক্তিক চিন্তা

বাস্তববাদী যৌক্তিক চিন্তাই হচ্ছে এইসকল সদগুণগুলির মূল, সব ভালোর সেরা ভালো, এমনকী দর্শনের চাইতেও মূল্যবান। এটা আমাদের দেখিয়ে দেয় যে আমরা যুক্তি, সম্মান, এবং ন্যায়বিচার ছাড়া একটা সুখী জীবন যাপন করতে পারি না। একইভাবে, আমরা যুক্তি, সম্মান ও ন্যায়বিচারের সাথে জীবন যাপন করতে পারব না একটা সুখী জীবন যাপন করা ছাড়া। সদগুণ এবং সুখী একে অন্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, এদের আলাদা করা যাবে না।

একজন সুখী মানুষের বিত্তান্ত

“ওই ব্যক্তির চাইতে কে আর ভালো যে ধার্মিক, দেবতাদের উপরে যার শক্ত বিশ্বাস, এবং যে মৃত্যুভয়ে ভীত নয়, এবং গ্রহণ করে নেয় মৃত্যু প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। সে বুঝতে পারে সুখের সবচাইতে বড় উৎসগুলি নাগালের মধ্যে, এবং কষ্ঠ তীব্র নয় অথবা স্বল্প সময় স্থায়ী হয়।

অনেক দার্শনিকেরা যে বলেন, সকল কিছু এক প্রয়োজনীয়তার শক্তিতে উদ্ভূত, সে এই চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে যুক্তি দেয়, দেবতাদের গল্প গাঁথায় বিশ্বাস করা শ্রেয়, প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের নিয়ন্ত্রনবাদী ব্যাখ্যার চাইতে। কারণ প্রথমটি উপাসনার মাধ্যমে একটা আশার আলো দেখায়, এবং দ্বিতীয়টি প্রয়োজনীয়তার এক অলঙ্ঘ নিয়মে বেঁধে দেয়।

ভাগ্য বিষয়ে, যেমন অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন তাকে দেবী হিশেবে, এইভাবে সে ভাবে না। সে বিশ্বাস করে না কোন দেবতার ইশারায় সকল কিছু ঘটে থাকে। সে তাকে একটা অনিশ্চয়তার শক্তি হিসাবেও দেখে না, যার কারণে মানুষ সুখ বা দুঃখ ভোগ করে থাকে। কিন্তু সে বিশ্বাস করে, মানুষের সাফল্য এবং ব্যর্থতার বড় অংশে ভাগ্যের প্রভাব থাকে। সে বিশ্বাস করে, একটা ভালো পরিকল্পণা করে শুরু করা কাজ ব্যর্থ হলেও, ভাগ্যের কারণে সফল হওয়া বাজে পরিকল্পনার কাজের চাইতে উত্তম। জীবনে ভালো বিচার বুদ্ধি যদি ব্যর্থও হয় তা বাজে বিচার বুদ্ধিতে ভাগ্য গুণে সফল হওয়ার চাইতে ভালো।

এই জিনিশগুলি নিয়ে ভাববে

দিন ও রাতে এই জিনিশগুলি, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট যা যা আরো আসে তা নিয়ে ভাববে। একা একা ভাবতে পারো, অথবা সমমনাদের সাথে নিয়ে। তাহলে কখনো তোমার মন জাগ্রত বা ঘুমন্ত, কোন অবস্থাতেই দুর্দশায় থাকবে না। তুমি হয়ে যাবে মানুষদের মধ্যে দেবতার মত। একজন মরণশীল হয়ে তখন অমরদের আশীর্বাদ সাথে নিয়ে বাস করবে।

নরম্যান ডি উইটের ইংরাজি অনুবাদ থেকে। বিষয় ভিত্তিক ভাবে ভাগ ভাগ করেছেন ডি উইট।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং