এফ এ প্যালে এই প্রাচীন গ্রীসের কাহিনীগুলি গ্রীক থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেছেন। সেখান থেকে আমি বাংলায় অনুবাদ করলাম। এই লেখাতে থাকা কাহিনীগুলি নিয়ে যে বই তার নাম, গ্রীক উইট। বইটির অনেক কাহিনীর মধ্যে একুশটি আমি এখানে রাখলাম।
এক
সক্রেটিস বলতেন, মেসিডোনিয়ার রাজা আর্কেলাস হাজার হাজার মুদ্রা খরচ করে সুন্দর প্রাসাদ বানিয়েছেন, তার চিত্রশিল্পী জিইক্সিসকে দিয়ে বাড়ি সাজিয়েছেন কিন্তু নিজেকে কিছু দিয়েই সাজান নি। তাই অনেকেই তার বাড়ি দেখতে যায় কিন্তু কেউ মেসিডোনিয়া ভ্রমণ করবে না তাকে দেখতে। যারা যায় তারা তার সম্পদে আকৃষ্ট হয়েই যায়, কিন্তু বিবেক-বুদ্ধিযুক্ত লোকেরা ওতে আকৃষ্ট হবে না।
সক্রেটিস এটা বলতেন ব্যক্তির জ্ঞান বুদ্ধি প্রজ্ঞায় নিজেকে বিভূষিত করে তোলার গুরুত্ব বুঝাতে।
দুই
একবার একজন বিখ্যাত পতিতা সক্রেটিসকে বললেন, তোমার প্রভাবের চাইতে মানুষের উপর আমার প্রভাব বেশী। আমি চাইলে তোমার সব অনুসারীকে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু তুমি আমার কোন অনুসারীকে নিতে পারবে না।
সক্রেটিস বললেন, হয়ত ঠিকই বলেছ। কিন্তু তুমি ওদের নিয়ে যাচ্ছো পাহাড়ের খাদে আর আমি আমার অনুসারীদের খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে তুলছি, নিয়ে যাচ্ছি সদগুণের মন্দিরে। যেই রাস্তা অতি অল্প লোকেরই পরিচিত।
তিন
ধনী ও অত্যন্ত সুদর্শন এলসিবিয়াদেস একবার বেশ গর্ব ভরে তার বন্ধু ও গুরু সক্রেটিসকে কিছু দামী উপহার সামগ্রী পাঠালেন।
সক্রেটিসের বউ জ্যানথিপি এতে খুশি হলেন, এবং সক্রেটিসকে বলতে লাগলেন উপহার গ্রহণ করার জন্য।
কিন্তু সক্রেটিস বললেন, না, আমরা এগুলি প্রত্যাখান করে এলসিবিয়াদেসকে আমাদের গর্ব দেখাব।
[সক্রেটিসের বউ জ্যানথিপি, এলসিবিয়াদেস ইত্যাদি সম্পর্কে আরো ]
চার
হিপপোম্যাকাস্ট বিখ্যাত জিমনেস্ট। একবার তার এক ছাত্র এমন পার্ফর্ম করলো যে এসেম্বলীর সবাই তুমুল করতালি দিলো। হিপপোম্যাকাস্ট তার ছাত্রকে বললেন, তুমি নিশ্চয়ই বাজে পারফর্ম করেছো, তা না হলে এদের ভালো লাগত না। শৈল্পিক কিছু করলে এরা কখনোই হাততালি দিত না।
পাঁচ
দি গ্রেট স্টোয়িক জেনো একবার দেখলেন এক যুবক বেশী কথা বলছে। শুনছে না। তিনি তাকে বললেন, যুবক, প্রকৃতি আমাদের দুইটি কান দিয়েছে এবং মুখ দিয়েছে একটি, যাতে কথা বলার পরিমানের দ্বিগুন আমরা শুনতে পারি।
[ স্টোয়িক দর্শন সম্পর্কে, স্টোয়িক ভার্চ্যু সম্পর্কে ]
ছয়
সক্রেটিস বলতেন কোন থিয়েটারে যদি মঞ্চ থেকে ঘোষক বলে নাপিতেরা দাঁড়ান, দর্জিরা দাঁড়ান ইত্যাদি তাহলে ঐসব পেশাজীবীরাই কেবল দাঁড়াবেন। কিন্তু যদি বলে বুদ্ধিমানেরা দাঁড়ান দেখি, তাহলে আর কোন লোক বাকি থাকবে না, সবাই দাঁড়াবে। মানবজীবনের সবচাইতে বিধ্বংসী ভুল হচ্ছে এটা, বেশীরভাগ লোকই বোকা কিন্তু তারা নিজেকে জ্ঞানী ভাবে।
সাত
এক লোক একবার সক্রেটিসকে বলছিলো, মানুষ যা আকাঙ্খা করে তা পেয়ে গেলে তা দারুণ।
সক্রেটিস উত্তর দিলেন, মানুষের কোনও আকাঙ্খা না থাকা তার চাইতেও দারুণ।
সক্রেটিস প্রায়ই বলতেন ঈশ্বরের গুণ হলো তিনি কিছুই চান না। যত কম পারা যায় তত চাওয়াটা মানুষকে ঈশ্বরের কাছাকাছি করে তোলে।
আট
হত্যা করা হবে এই ভয়ে যখন এরিস্টটল এথেনস ছেড়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যাচ্ছেন কেন?
এরিস্টটল সক্রেটিসের মৃত্যুকে ইংগিত করে বললেন, আমি চাই না এথেনিয়ানরা দর্শনের বড় ভুল দুইবার করুক।
নয়
এরিস্টটল অসুস্থ হলে একবার ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিলেন। এরিস্টটল কিছু প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন, গ্রাম্য ভাঁড়দের সাথে যেভাবে ব্যবহার করো সেরকম আমার সাথে করলে হবে না। কী কারণে এগুলি মানতে হবে তার পক্ষে যুক্তি দাও। আমি মেনে চলবো।
দশ
একবার ইরেত্রিয়ার এক যুবক স্টোয়িক দার্শনিক জেনোর কাছে শিক্ষা নিয়েছিল। সে যখন বাড়িতে ফিরে গেলো তখন তার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কী দর্শন শিখে এসেছো, আমাকে বলো।
ছেলেটি বলল, আপনাকে একদিন দেখাব।
এই কথায় রেগে গিয়ে বাবা ছেলেটিকে এক চড় দিলেন। ছেলেটি নিরবে সহ্য করল, এবং বলল, এই দর্শনই শিখেছি, পিতার ক্রোধ সহ্য করে যাওয়া।
এগারো
ডায়োজিনিস, দ্য সিনিক’কে বিক্রির জন্য দাস বাজারে ওঠানো হলো। নিলামকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কী পারো?
ডায়োজিনিস উত্তর দিলেন, মানুষকে শাসন করতে।
নিলামকর্তা বললো, তোমার কি মনে হয় লোকেরা দাস বাজারে আসে মনিব কিনতে?
বারো
সক্রেটিস একবার এক ভুল-শিক্ষিত (ill-taught) সম্পদশালী যুবককে দেখে বলেছিলেন, দেখো, ঐ স্বর্নালী গাধাটিকে!
তেরো
দার্শনিক এনাকজারচাস আলেকজান্ডার দি গ্রেটের খুব সমালোচনা করতেন। একবার আলেকজান্ডার রেগে গিয়ে বললেন তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবেন। এনাকজারচাস তখন বললেন, মাটির উপরে পচবো না নিচে পচবো এ নিয়ে আমি ভাবিই না।
চৌদ্ধ
একবার ডায়োজিনিস দ্য সিনিককে এটিকার একজন লোক অভিযোগ করে বলল, আপনি লেসিডিমোনিয়ানসদের এত প্রশংসা যেহেতু করেন তাহলে সেখানে গিয়ে বাস করলেই পারেন।
ডায়োজিনিস বললেন, একজন ডাক্তার লোকদের স্বাস্থ্য চিকিৎসা করেন, তিনি সুস্থ লোকদের সাথে গিয়েই শুধু বসে থাকেন না।
পনের
একবার এক চোর ডেমোস্থিনিসের জিনিস চুরি করতে গিয়ে ধরা খেল। সে তখন ডেমোস্থিনিসকে বলল, বিশ্বাস করেন, আমি জানতাম না এটা আপনার।
ডেমোস্থিনিস বললেন, কিন্তু তুমি তো নিশ্চিত জানতে এটা তোমার না।
ষোল
এক্সাইলাস একবার ইস্থমিয়ান বক্সিং ম্যাচ দেখছিলেন। যখন একজন বক্সার অন্য জনকে আঘাত করল তখন দর্শকরা চেঁচিয়ে উঠল। এক্সাইলাস বললেন, এই দেখো, প্র্যাক্টিস কী করে, যে লোক আঘাত করল সে কিন্তু নিরব, আর দর্শকেরা চিল্লায়।
সতের
সেইজ সলোনকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একটা রাষ্ট্রে কীভাবে অন্যায় কমানো যায়। সলোন বলেছিলেন, অন্যায় যাদের প্রতি করা হয়েছে তারা যে ক্রোধ অনুভব করে এতে, সেই ক্রোধ যাদের প্রতি অন্যায়টি করা হয় নি তারাও যদি একইভাবে অনুভব করে তাহলেই রাষ্ট্রে অন্যায় কমানো সম্ভব।
আঠারো
এরিস্টিপ্পাস তার পুত্রকে পছন্দ করতেন না। এজন্য তার বউ তাকে দোষারূপ করে বললেন, ও তো তোমারই অংশ।
এরিস্টিপ্পাস মাটিতে থুতু ফেলে বললেন, এই থুতুও আমার অংশ, কিন্তু কোন কাজের নয়।
উনিশ
এক স্পার্টান যুদ্ধে যাবার সময়ে তার মা’কে অভিযোগ করে বলছিল তার তরবারিটি খাটো।
মা তখন বললেন, তাহলে এক পা সামনে যাবে।
বিশ
এরিস্টটল ছিলেন আলেকজান্ডার দি গ্রেটের গুরু। তিনি আলেকজান্ডাদের ভয়ানক রাগ কমাতে বলেছিলেন, রাগ নিচের লোকদের না তোমার থেকে উপরের লোকদের উপর করতে হবে। আর যেহেতু তোমার সমান কোন লোকই নেই, তাই কেউ তোমার ক্রোধের যোগ্য নয়।
একুশ
এলসিবিয়াদের একবার অনেক দাম দিয়ে দারুণ একটি কুকুর কিনলেন। এরপর এর লেজ কেটে দিলেন।
তিনি বলেছিলেন, এটা করলাম যাতে এথেনিয়ানরা এটা নিয়েই কথা বলে আর আমার অন্য কাজগুলির সম্পর্কে মনযোগী হতে না পারে।