সুকুমার রায়ের জীবনের হিসাব কবিতার শিক্ষা 

জীবনের হিসাব কবিতার মূলভাব

গ্রেট সুকুমার রায়ের জীবনের হিশাব কবিতার মেসেজটা কী? 

গল্পটা এইরকম এক বিদ্যেবোঝাই বাবু উঠেছেন নৌকায়। তিনি মাঝিকে নানা জ্ঞানের প্রশ্ন করেন। মাঝি উত্তর দিতে পারে না। বাবু হাসেন ও মাঝিকে বলেন তার জীবন আনা আনা করে ১২ আনাই মিছে। এমন সময় ঝড় উঠে। মাঝি বলে বাবু সাঁতার জানেন? বাবু না বোধক উত্তর দেন, তখন মাঝি বলে, আরে বাবুমশাই, তোমার জীবন তো পুরাটাই মিছে।

sc-mmh · জীবনের হিসাব

বিদ্যে বুঝাই বাবু তার সাঁতার নামক প্র্যাক্টিক্যাল স্কিল না থাকার কারণে হেরে গেলেন। 

এই কবিতা বা ছড়া দিয়ে সুকুমার রায় কি বুঝাইতে চাইছেন জ্ঞানের সাথে প্র্যাক্টিক্যাল স্কিল দরকারী? 

এমন যদি হয়, তাহলে মাঝির সাথে উপস্থাপনের ফলে বিষয়টা একতরফা হয়ে গেছে। যেমন, দেখেন, বিদ্যে বোঝাই বাবু ও মাঝির যাত্রায় ঝড় ছিল দূর্ঘটনা। মানলাম এখানে বাবু হারলেন। 

কিন্তু এইসব বিদ্যেবোঝাই বাবুদের জ্ঞানের কাছে তো অন্যান্য জায়গায় মাঝিরা পেরে উঠবে না। মার খাবে। 

একটা প্রবণতা আছে বাংলার সাহিত্যে। বই পড়া জ্ঞানী কিন্তু প্র্যাক্টিক্যাল স্কিলের অভাব এমন চরিত্র তৈরির। হুমায়ূন আহমেদ এটা অনেক করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় না বাস্তবে এইরকম হয়। আপনার চারপাশে খেয়াল কইরেন কারা বিসিএস দিয়া বড় সরকারি চাকরি করতেছে ও দেশ চালাচ্ছে। এরা দেখবেন মাঝি না, ওই বাবুমশাইয়ের মতোই। অশিক্ষিতরা কায়িক শ্রম দেয়, খাটে গার্মেন্ট কারখানায় বা মধ্যপ্রাচ্যে, কিন্তু উন্নয়নের ক্রিম কারা পায়? বিদ্যার বাবুরাই তো!  

জ্ঞান জিনিশটা আসলে একটা টুল। এইটা ব্যবহার করে মানুষ সুবিধা নেয় সমাজে। সুকুমার রায়ের ছড়াটারে জ্ঞান বিরোধী অবস্থান থেকে দেখলে নিজের জন্যই ক্ষতিকর। 

কারণ মাঝি হইলে আপনি কেবল নৌকাতে, ও ঝড় উঠলে নৌকা ডুবি হইলেই কেবল বিদ্যার বাবুদের হারাইতে পারবেন। কিন্তু তারা অন্য সব জায়গায় আপনারে হারাবে। 

জ্ঞান বিরোধী মেসেজটা নিলে মাঝির, বা মাঝির পক্ষে যারা আছেন, তাদের জীবনের হিসাব নাও মিলতে পারে।

আরেকটা মেসেজ কল্পনা করা যাইতে পারে, সুকুমার রায় অহেতুক জ্ঞানের গর্ব ভালো না দেখাইছেন। এইরকম নৈতিক মেসেজ এখানে অর্থহীন, কারণ গর্ব বা অহংকারে যে পতন হইল বাবুর, সেইখানে ঝড় উঠা ছিল মূল বিষয়, এবং তা দৈব। দৈব জিনিশ মানুষের দোষ গুণ পাপ পুণ্য নিরপেক্ষ জিনিশ। 

কোন মেসেজ না নিয়ে, এমনিতে একটা ইন্ডিভিজুয়াল হাসির ঘটনা হিসেবে ছড়াটা পড়া বেটার।