মিনিং অডিট বলতে আমি কী বুঝাই

একটা অর্গানানাইজেশনের অর্থনৈতিক অডিট হয়, তার ওয়েবসাইট থাকলে সার্চ এঞ্জিন অপটিমাইজেশন অডিটও হয়। এইসব হিসাব নিকাশের উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানিটির ঐ বিষয়গুলির সম্যক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া। এই জায়গায় মিনিং অডিট জিনিসটা জটিল এবং নতুন তাই বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

মিনিং অডিট এর ধারণাটি আমার মাথায় এসেছে কয়েকটি পয়েন্ট মিলিয়ে।

প্রথমত মানুষ তার লাইফে মিনিং চায়। সে মিনিংফুল কিছু করতে চায়। মোটিভেটর হিসেবে টাকা খুব ভালো নয় এমন দেখা গেছে এ সংশ্লিষ্ট গবেষণায়। [ ড্যান আরিয়ালির মোটিভেশন বই দেখুন এইসব গবেষণার খোঁজ পেতে।)

মিনিং কেড়ে নেয়া হলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। উৎসাহ হারিয়ে ফেলে কাজে। এটা খুব স্পষ্টভাবে ধরতে পেরেছিলেন পৃথিবীর সবচাইতে বড় একজন ভিশনারি কার্ল মার্ক্স।

যখন কোন ব্যক্তি কোন বস্তু তৈরি করে তখন বস্তুটি তার নিজেরই একটি বর্ধিত অংশ হয়ে উঠে। একজন কুমার মাটির পাত্র বানাল, এই পাত্রটি তারি এক বর্ধিত অংশ, বানানোর পর যখন সে এর দিকে তাকাবে তখন তার মনে এক ধরনের পূর্নতার বোধ আসবে। এটাই তাকে উৎসাহ দেয়।

কিন্তু আধুনিক শ্রম ব্যবস্থায় যখন শ্রমিকেরা আলাদা আলাদা অংশ বানায়, যেমন কেউ বানাচ্ছে বোতাম, কেউ বানাচ্ছে কলার, কেউ বানাচ্ছে হাতা; তখন পুরো বস্তু তৈরি করার ফলে যে মিনিং তৈরি হয়, সেটি ওই শ্রমিক পায় না।

এছাড়া, বস্তু উৎপন্ন হলে সে দেখতেও পাচ্ছে না। বস্তুটি চলে যাচ্ছে।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে শ্রমিক মিনিং না পেয়ে একটা মেশিনে রূপান্তরিত হয়। তার কর্মক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতা কমে যায়।

আধুনিক কোম্পানিগুলিতে, বিশেষত ইন্টারনেট স্টার্ট আপ বা অন্যান্য স্মার্ট কোম্পানিগুলিতে কর্মীর উৎসাহ, উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা খুবই দরকারি।

আবার, সকল কাজ এক কর্মীকে দিয়ে করানো সম্ভব হয় না, কারণ কাজের ক্ষেত্রটি জটিল ও বড়। এবং কর্মীকে মিনিং দিতে সকল কাজের সাথে তাকে যুক্ত করা জরুরী আমরা আগেই বলে এসেছি। এই দ্বিমুখী সমস্যা কোম্পানিগুলি কীভাবে সমাধান করবে?

এখান থেকেই মিনিং অডিটের চিন্তাটি এসেছে।

প্রথমত দেখতে হবে কোম্পানিটি কীভাবে তার মূল লক্ষ্য ও মূল পূর্নাঙ্গ প্রোডাক্টের সাথে তার সকল কর্মীকে যুক্ত করছে বা আদৌ যুক্ত করতে পারছে কি না।

এই লক্ষ্যে ইনভেস্টিগেশন করা হবে। কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ও এক্টিভিটি দেখা হবে।

নানা ভাবে ডেটা সংগ্রহ করে, সেগুলি বিশ্লেষণ করা হবে।

এরপর সিদ্ধান্তে আসা হবে, কোম্পানিটি কর্মীদের কতটুকু মিনিং দিতে পারছে। এবং এই জায়গায় আর কাজ করা প্রয়োজন কি না। যদি দেখা যায় কোম্পানিটি পর্যাপ্ত মিনিং এড করতে পারছে না, তাহলে কীভাবে তারা কর্মীদের লাইফে মিনিং যোগ করতে পারে আরো  বেশি সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হবে।

এতে কর্মীরা প্রোডাক্টের সাথে ও কোম্পানির মূল লক্ষ্যের সাথে আর ঘনিষ্টভাবে যুক্ত হবে।

তাদের উৎসাহ, উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা বহুগুণে বেড়ে যাবে। যেটি একটি স্মার্ট কোম্পানির জন্য অপরিহার্য।

শেষ করা যাক মিনিং বিষয়ে একটা এনেকডোট্যাল গল্প দিয়ে।

একবার নাসার ঝাড়ুদারকে নাকী জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি এখানে কী করেন?

সে বলেছিল, আমরা চাঁদে মানুষ পাঠাই।

সে ছোট একটি কাজ করছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্যের সাথে একাত্ম। নাসা এখানে তার লাইফে মিনিং দিতে পেরেছে। এই কর্মীর উৎসাহ, উদ্যমে ভাঁটা পড়বে না।

আরেকটি গল্প, ক্রিস্টোফার কগলারের জীবনে ঘটে যাওয়া, সেটাও এখানে শেয়ার করা যায়। এই কগলার একজন ফিল্ম নির্মাতা, একবার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিউ ইংল্যান্ডের একটা মিউজিয়ামে। মিউজিয়ামটির নাম ওয়াডসওর্থ এথেনিয়াম মিউজিয়াম অব আর্ট। সেখানে তারা একটি ছবি দেখছিলেন দাঁড়িয়ে, ছবিটি পট্রেইট অব এ ম্যান ইন আর্মর, এঁকেছেন রেনেসাঁর শিল্পী সেবাস্টিয়ান দেল পিওম্বো।

ছবিটি এই,

তারা যখন মুগ্ধ হয়ে ছবিটি দেখছেন তখন পেছন থেকে একটা কণ্ঠ শুনলেন। একজন জিজ্ঞেস করছেন, এখানে কয়টা মুখ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন?

তারা ভেবেছিলেন হয়ত কোন গাইড প্রশ্নটি করেছেন। কিন্তু ঘুরে দেখলেন সিকিউরিটি গার্ড মিস্টার এঞ্জেল করটেস।

কগলার দম্পতি উত্তর দিলেন, একটা মুখই তো দেখছি।

তখন সিকিউরিটি গার্ড মিস্টার এঞ্জেল করটেস বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, না, ছবিটিতে দুইটি মুখ আছে।

তিনি ছবিতে থাকা লোকটির ডান কাঁধের উপড়ে থাকা আবছা আবছা মুখটি দেখিয়ে দিলেন।

তারপর তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন রেনেসাকালীন সময়ে ছবি আঁকার জিনিসপত্রের অনেক দাম ছিল। অনেক সময় পাওয়াও যেত না। তাই শিল্পীরা ছবির উপর ছবি আঁকতেন। এই ছবির ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। অনেক দিনের পরে, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ও প্রাকৃতিক বয়সবৃদ্ধিজনিত কারণে রঙের লেয়ার উঠে গেছে ও আবছাভাবে অন্বয় মুখটি বের হয়েছে। এটাকে বলা হয় দ্য ঘোস্ট।

মিউজিয়ামের সিকিউরিটি গার্ড তিনি, কিন্তু তিনিও মূল কাজের সাথে যুক্ত, যে কাজটি হলো তারা গ্রেট কিছু শিল্পকর্ম মানুষদের দেখাচ্ছেন। মিউজিয়ামটি তাকেও এই মিনিং দিতে পেরেছে ফলে তার কাজটি আর নিছক নিরাপত্তারক্ষীর কাজ হয়ে থাকে নি।