মেন্টরিং এর দুই প্রধান সমস্যা নিয়া আগে লেখছিলাম। প্রথম সমস্যা, যে শিখতে আসছে মেন্টরের কাছে সে একসময় মিমেটিক ডেজায়ারের কারণে মেন্টররে প্রতিপক্ষ মনে করতে পারে ও শত্রুতা শুরু করে দেয়। দ্বিতীয় সমস্যা, মেন্টর ইচ্ছা করে যে শিখতে আসছে তারে বনসাই করে রাখতে পারে।
ডেরেক সিভার্সের একটা লেখা আছে, কেমনে মেন্টরের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাস করে হেল্প নিতে হয় এই বিষয়ে।
প্রক্রিয়াটা হল,
আপনে প্রথমে ক্লিয়ারলি আপনার সমস্যাটারে লেখবেন।
সেই সমস্যায় আপনার অবস্থা কী, আপনার কাছে কী কী পথ আছে, কোন পথে গেলে কী হইতে পারে বলে আপনার ধারণা, আপনার এই বিষয়ে অভারল চিন্তা, সব লেখবেন।
এমনভাবে লেখবেন যাতে মেন্টর ক্লিয়ারলি জিনিশটা বুঝতে পারেন। এবং খেয়াল রাখবেন জিনিশটা পড়তে খুব বেশি টাইম লাগে এমন যেন না হয়।
এরপর আপনে নিজের লেখা পইড়া ভাববেন মেন্টর কী বলতে পারেন।
যা যা আপনার মনে হয়, সেগুলার হিশাবে লেখাটারে এডিট করবেন আবার।
এইবার, আবার ফাইনালি অনুমান করবেন মেন্টর কী উত্তর দিতে পারেন। আপনে তার লেখা পড়ছেন বা কথা শুনছেন। তার দর্শন আপনি কিছুটা হইলেও বুঝেন। সেইগুলার হিশাবেই ভাববেন মেন্টর কী বলতে পারেন।
এই পর্যায়ে, আপনি নিজেই আপনার সমস্যার উত্তর পাইয়া যাবেন।
মেন্টররে হুদাই আর ইমেইল দিতে হবে না।
সিভার্স এইরকমই করেন। ইমেইল দিতে হইলে, তিনি তাদের ধন্যবাদ দিয়া ইমেইল দেন, ইন্সপায়রেশনের জন্য।
তার ওই লেখাতে তিনি উল্লেখ করেন, নিজের মেন্টরদের সাথে অনেক বছরেও তার কথা হয় নাই। একজন মেন্টর জানেনই না যে তার অস্তিত্ব আছে।
সিভার্সের এই আইডিয়ায় আপনার হয়ত একলব্যের কথা মনে পড়তেছে। মহাভারতের হিরণ্য-ধনু আর রানী বিশাখার পুত্র একলব্য গেছিল দ্রোনাচার্যের কাছে ধনুর্বিদ্যা শিখতে। গুরু দ্রোণ তারে শিখান নাই কারণ সে ক্ষত্রিয় নয় এবং কুরুদের প্রতিপক্ষ।
গুরুর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে একলব্য জঙ্গলে দ্রোণের মূর্তি বানাইয়া এর সামনে প্র্যাক্টিস করত। একসময় সে মহা ধনুর্বিদ হইয়া যায়।
সম্ভবত একলব্য এইখানে, সিভার্সের মতোই ভাবছিল। ভুল যখন সে করতেছিল, তখন সে হয়ত ভাবত, এইখানে গুরু দ্রোণ হইলে কী উপদেশ দিতেন, কী করতে বলতেন।
চমস্কি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অকার্যকরতার আলাপে একবার বলছিলেন, মাঝে মাঝে তো দেখা যায় এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই বড় জ্ঞানী গুণী ভিন্ন চিন্তার লোক বাইর হইয়া যান। এটা হয় কারণ এইরকম দুয়েকজন শিক্ষক থাকেন ব্যবস্থায়, যারা ছাত্রছাত্রীদের ইন্সপায়ার করেন। হাতে হাতে দেখানির চাইতে, এই ইন্সপায়রেশনের ভূমিকা বেশি। কারণ এইটা কমন বুদ্ধির ব্যাপার, আপনি কাউরে মাছ দিলে তার একদিনের উপকার হয় কিন্তু মাছ ধরা শিখাইলে ওইটার প্রভাব ব্যাপক।
আন্তোইন ডি সেইন্ট জুপেরীর লিটল প্রিন্সে একটা অসাধারণ কথা আছে। আপনে জাহাজ বানাইতে চাইলে বাজনা বাদ্য বাজাইয়া লোক জড়ো কইরা বইলেন না কাঠ সংগ্রহ করতে এই সেই, বরং তাদের ভিত্রে বিশাল অনন্ত সাগরের প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষা জাগাইয়া তুলেন।
মহাভারতের এক ব্যাখ্যা হইল, একলব্য যখন দ্রোণের মূর্তি বানাইয়া, তারে গুরুরূপে উপাসনা কইরা প্রাকটিস শুরু করলেন, তখন পরমাত্মাই আইসা দ্রোণরে শিখান।
প্রকৃত অর্থে, এইখানে তার নিজের ভেতরের আকাঙ্ক্ষা, তার নিজের ব্রেইনের ক্ষমতাই কাজ শুরু করে, শিষ্য এখানেই গুরুর দেখানো পথে হাঁটা শুরু করেন।
শিষ্য যেহেতু তার দর্শন জানেন, সেইটার পথ অনুসরণ করে নিজের ব্রেইনরে ব্যবহার করা শিখেন এই প্রক্রিয়ায়। এইভাবেই একলব্য ধনুর্বিদ্যায় সবার চাইতে সেরা হয়ে যান।