মোজাফফর হোসেনের ‘খুন হয়ে যাচ্ছে সব সাদেক’ গল্পের বইতে তিনটি গল্প আলাদা করে রাখা যায়। এক, স্মৃতির দরজা খুলে, দুই, অন্ধকারে বসে থাকেন বনসাই বাবা এবং তিন, একা থাকার অসুখ। এই গল্পগুলি বেশ ডার্ক।
বাকী অনেক গল্পে সামাজিক সময়সাময়িক কালের কিছু সমস্যা এসেছে, কিন্তু আমার মনে হয় নি গভীর ভাবে কোন সমস্যার স্বরূপ বা প্রভাব উঠে আসতে পেরেছে গল্পাকারে। এগুলি অনেকটাই দূর্বল গল্প, নাম ভূমিকার গল্পটিসহ। উপরোক্ত তিনটি গল্পের সাথে যাওয়ার মতো নয়।
সামাজিক সমস্যামূলক গল্পের প্রধান সমস্যা হলো তা কীরকম জানি এনজিও এনজিও হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। এক্ষেত্রে লেখককে সাবধানতার সাথে অবস্থার চিত্রায়ণ করতে হয়, বা তার একান্ত নিজস্ব গল্পটি বলতে হয়। এনজিও দায় গল্পের মধ্যে ফুটে উঠলে গল্প তার শিল্প সৌন্দর্য হারায়। আরেক সমস্যা, এইসব গল্প সামাজিক ইস্যু চলমান থাকা কালে জনপ্রিয় হয়। তখন লেখক এই ভ্রান্ত ধারনা লাভ করতে পারেন যে এইরকম গল্পই বোধহয় ভালো। তখন এইদিকে তিনি যদি মন দিয়ে ফেলেন, তাহলে হালকা গল্পের দিকেই মন দেয়া হয়।
গ্রন্থের গল্পগুলি গ্রামের সমাজ নির্মান করতে চেয়েছে। লেখকের গ্রামে থাকার নিজস্ব অভিজ্ঞতা এতে কাজ করেছে মনে হলো। গ্রামের শিশু ধর্ষনের মতো বিষয় প্রায় গল্পেই এসেছে। স্মৃতির দরোজা খুলে গল্পের উপস্থাপন ভালো লেগেছে।
অলীমেয়েলী, চক্করকাটা জটি ইত্যাদি চরিত্রগুলির ব্যাপারে পড়তে গিয়ে মনে হলো গ্রামীন পটভূমিতে রচিত হতে থাকা কোন উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে এরা নির্মিত হচ্ছে। সেই উপন্যাসে পিতা পুত্র সম্পর্কের নানা দ্বন্দ্ব সমস্যা থাকবে, ধরা যায় একজন বাবার কথা যিনি আগে তেজস্বী ছিলেন কিন্তু বুড়ো হয়ে নিশক্তি ও দূর্বল হয়ে গেছেন। সন্তানদের কাছেও এখন তার চুপ হয়ে থাকতে হয়। মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে এইসব জিনিস হয়, তার শক্তি সামর্থ্য কমে যায় এবং তার সামাজিক-পারিবারিক অবস্থান অনেকটাই বদলে যায়। এই বদলে যাওয়া অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরণের আচরণ করেন। এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিদ্রোহ করতে আমরা দেখি শহীদুল জহীরের গল্পের তোরাব সেখকে। ডেভিড লিঞ্চের এলভিন স্ট্রেইটকে দেখি শান্ত এবং আত্মসমালোচনাময় এক যাত্রায় বের হতে, নো কান্ট্রি ফর ওল্ডম্যানের বুড়ো শেরিফকে দেখি তার বোধ্যতার সীমার বাইরে যাওয়া পৃথিবী ও নিজের দূর্বলতাকে মেনে নিতে।