মিডিয়া চিন্তাঃ ভিডিও কন্টেন্ট বিষয়ে

লেখা পড়ার সময় মানুষ এনালিটিক হয়। কারণ লিখিত বাক্য পড়ে তার বুঝতে হয় এখানে, জিনিশগুলা কল্পনা করে নিতে হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, তাই ভিডিও এনালিটিক সাইড একটিভ করবে না। ভিডিওর মূল আপিল আবেগের দিকে।

মিডিয়াম ইজ দ্য মেসেজ, এই ধ্রুব সত্য মনে রাখেন।

মিডিয়াম ভ্যালু নিউট্রাল না। সকল মিডিয়াম এক না। একেক মিডিয়ামের চরিত্র একেকরকম তাই, এর মধ্যে থাকা কন্টেন্টের চরিত্রও বদলে যায়।

ফেসবুক ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট বেড়ে যাবার সাথে সাথে একটা আগ্রাসী আক্রমণ পালটা আক্রমণ দেখতে পাচ্ছেন। মার্শাল ম্যাকলুহানের কাঁধে হাত রেখে আমরা যারা বসেছিলাম, তারা জানতাম এটা হবে, ভবিতব্য ছিলো।

ভিডিওতে জুতা খুলে মারতে চাচ্ছেন কেউ, হাত দিয়ে মারার ইশারা করছেন, গালাগালি তো আছেই। এই এটাকিং মুড আবেগ সাইডের কর্মতৎপরতা। সামনেও কিছুদিন এটা বলবৎ থাকবে। একসময় যদি দেখা যায় গালি পালটা গালি, আক্রমণ ইশারা ইত্যাদি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তখন সামগ্রিক কনসেন্ট এর বিরুদ্ধে যাবে, এবং একটা সাধারণ নিয়ম তৈরি হবে অলিখিত ভাবে যে এটা করা যাবে, এটা যাবে না।

ভিডিওর এই আগমনের সাথে অর্থনৈতিক যোগাযোগ আছে। অর্থনৈতিক ইনসেন্টিভস থাকায় মানুষ বেশী ভিডিও বানাচ্ছেন। আমি এটাকে ভালো মনে করি। কারণ এটি ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার বাইরে। ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার যে পাওয়ার স্ট্র্যাকচার, তারে ডিসরাপ্ট করার ক্ষমতা রাখে এই একক মিডিয়াগুলা।

বিদ্যমান সমাজের এই বিষয়টা খেয়াল করেন, ধরা যাক একজন ব্যক্তি কোন ইন্টারেস্টিং ব্যবসা শুরু করেছেন, বা গুরুত্বপূর্ণ লেখালেখি করছেন বা দারুণ গান গেয়েছেন, ইত্যাদি যেকোন কিছু হতে পারে। তার সাথে যোগাযোগ করবে কিছু লোক, তাদের বিভিন্ন মিডিয়া কোম্পানি হায়ার করে রাখছে। এদের নাম দেয়া হইছে সাংবাদিক। কেউ কেউ হয়ত থাকবে ফ্রিলান্সার সাংবাদিক, কন্টেন্ট দেয় ওইসব মিডিয়ায়।

এখন বলতে পারেন, এটা তো ভালো, খারাপ কী। এদের মাধ্যমেই খবর সবার কাছে যাবে। কথা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে উলটা একটা দিক আছে, যেখানে এই মিডিয়াগুলা তাদের ক্ষমতার চর্চা করে। আপনার অবস্থান, কথা, কাজ তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলে তারা আপনারে বাজে ভাবে উপস্থাপন করবে। আপনার পিছনে লাগবে। তারা আপনারে ভালোভাবে তুলে ধরবে যতক্ষণ আপনার কথা, কাজ, অবস্থান তাদের পক্ষে যায়। ফলে, আপনি আসলে তাদের অবস্থানই শক্তিশালী করেন।

তাদের এই শক্তির উৎস এটাই। তাদের নিজস্ব কোন শক্তি নাই, তারা শক্তিরে মবিলাইজ করে। এর মাধ্যমে মারাত্মক শক্তিশালী হয়ে উঠে। বিশ্বের বড় বড় অনেক ব্র্যান্ডদের থেকেও তাদের শক্তি বেশী। এবং এই শক্তি দিয়া তারা ন্যারেটিভ তৈরি করে, সত্য তৈরি করে, মানুষের জীবন নাজেহাল করে, তাদের মতের বিরোধীদের দমন করে, এবং অভারটনের উইন্ডো – সমাজে আলোচনার সীমা পর্যন্ত ঠিক করে দেয়!

তারা যখন কারো নামে একটা বাজে রিপোর্ট করে, তখন প্রশাসন এবং অন্যান্য সংযুক্ত লোকগুলাও এর পেছনে লাগে। যেন মাছেদের খাবার দেয়া হইছে। মাছেরা দৌড়ে খাইতে আসে।

যেইসব খারাপ আইডিয়া সমাজে বিদ্যমান আছে, যেগুলা ইনজাস্টিস তৈরি করে, অনাচার তৈরি করে, এইগুলা তৈরি এবং বজায় রাখার পেছনে এই মিডিয়াদের দায় সবচাইতে বেশী। আম পাবলিকরে প্রোপাগান্ডায় ম্যানিপুলেট করাই এদের প্রধান কাজ।

ইন্টারনেট প্রযুক্তি, এবং ওয়েব টুর বিস্তারের আগে তো এইসব ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ার ছিল একচেটিয়া ক্ষমতা।

গ্রীক মিথে ছিল গর্গন দানবী মেডুসার কথা। সে তাকাইয়া মানুষদের পাথরে পরিণত করে ফেলতো। ট্র্যাডিশনাল মিডিয়াগুলা এমন, তাকাইয়া আপনার ক্ষতি, মানহানি ও বিনাশ করতে পারে। কী বলা যাবে কী বলা যাবে না, কোনটা ভালো কোনটা মন্দ ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত প্রোপাগান্ডা ছড়াইতে ছড়াইতে মানুষদের অনুগত করে। তারা এতোই অনুগত হয় যে, এর বাইরে কিছু আছে ভাবতেই পারে না।

এই মিডিয়া কোম্পানিগুলা এতো পাওয়ারফুল যে, বড় ব্র্যান্ডেরাও এদের নিয়মিত ভেট দেয়। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেয়, বিজ্ঞাপনের নামে। সেই বিজ্ঞাপন দিয়ে মিডিয়া কোম্পানিগুলা ব্র্যান্ডদের পক্ষে পাবলিকদের সম্মোহিত করে। পাবলিক ব্র্যান্ডদের প্রডাক্ট বা সেবা কিনে। ব্র্যান্ডদের লাভ হয়। এর এক অংশ আবার বিজ্ঞাপনে চলে যায়, মিডিয়া কোম্পানিদের কাছে।

এই ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া মেডুসা, এবং আপনি একজন সাধারণ লোক, এর সাথে তার নিয়মেই খেলতে পারেন এখন। সেই নিয়মটা হলো, ডানায়ে-জিউসপুত্র পার্সিয়াস যেমন মেডুসার মাথা কেটে একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে রেখেছিল, এবং এর দ্বারা শত্রুদের পাথরে পরিণত করেছিলো।

ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ বা স্বাধীন কন্টেন্ট নির্মান এমনই, পার্সিয়াসের মত মেডুসার মাথা কেটে নিজের কাছে রেখে দেয়া। এটা বৃহত্তর কোন সমাধান না, কিন্তু, ট্র্যাডিশনাল মিডিয়ারে ডিসরাপ্ট করতে পারবে। বিভিন্ন ভয়েস, ও ভিউরে জায়গা দিতে পারবে। অপেক্ষাকৃত গণতান্ত্রিক হবে, মতের দিক থেকে, এবং অর্থনৈতিক লাভের দিক থেকেও।

কেউ যদি নয়া প্রযুক্তিরে দোষ দেন, ব্যবহার করবেন না বলেন শুদ্ধতা নষ্টের কারণ দেখিয়ে, তাহলে তিনি নতুন প্রযুক্তিতে অহেতুক ভীত। অবস্থা যেমন আছে তেমন থাকুক, এমন এক বায়াস আছে তার। তিনি জানেন না ট্র্যাডিশনাল মিডিয়াও ওইসময়ের বিভিন্ন প্রযুক্তির জন্য তৈরি হয়েছে। এর মূল স্তম্ভ জোহানেস গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রচলন। গুটেনবার্গের এই প্রযুক্তি মানুষের সমাজ, ইতিহাস, স্মৃতি, চিন্তার ধরন, পাওয়ার স্ট্র্যাকচার, সব কিছু বদলে দিয়েছে । একইভাবে টিভি, রেডিও ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলেছে। সমাজ বদলে দিয়েছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তিও দিচ্ছে, এবং দিতে থাকবে।

অবশ্যই ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া এটা লাইক করবে না। তারা বিরোধিতা করবে, রুচিসহ নানা দোষ দিবে, কখনো বগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চাইবে। কারণ তার সর্বময় ক্ষমতায়, এবং তার রুটি রুজিতেও হাত পড়ছে। প্রায় এক অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু, এই নব উত্থানরে পরাস্থ করতে পারবে না সহজে।

Newsela - Myths and Legends: Perseus, renowned hero of ancient Greece

কারণ পার্সিয়াস একবার মেডুসার মাথা কেটে নিজের কাজে ব্যবহার করা শিখে ফেললে, আর পিছে তাকায় না।