সমাজের দেয়া শেইম

রজনীকান্তের বিখ্যাত রোবট মুভির এক দৃশ্য এইটা।

রজনীকান্তের বানানো রোবট আগুন লাগা বিল্ডিং থেকে এক মেয়েরে বাঁচাইয়া নিয়া আসে।

ওই সময় মেয়েটার গায়ে কোন কাপড় ছিল না।

সাংবাদিক, মানুষ ঘিরে ধরে। মেয়েটা, তার মা মনে করে এখানে মেয়েটার শ্লীলতা হানি হইল, সে এখন মুখ দেখাবে কেমনে সমাজে।

মেয়েটা পালাইতে যায়, গাড়ির সাথে ধাক্কা খাইয়া মারা যায় বা বলা ভালো সুইসাইডই করে।

রজনীকান্ত তার রোবটরে বকা দেয়, হারামজাদা বুঝস নাই তুই ওর গায়ে কাপড় নাই?

ভিলেন খুশি হয়। কারণ, এতে রোবটের নির্বুদ্ধিতা, এবং কাজের ভয়াবহতা প্রমাণ হইল।

বুঝানো হইল রোবটই মারছে যেন।

কিন্তু আসলে মেয়েটারে মারছে কে?

যারা শেইম দেয়, সমাজ ও সমাজের মানুষ। এরাই মারছে। রোবটের দোষ, সে এদের এই অযৌক্তিক শেইম দেয়ার গেইমটা ধরতে পারে নাই।

এইরকম সমাজ, তথা সমাজের মানুষেরা নানা ভাবে ব্যক্তিরে শেইম প্রদান করতে চায়, তারে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

ফিল্মের দৃশ্যরে রূপক ভাবেন, এইরকম অনেক মানুষরে সমাজ নানা ভাবে মাইরা ফেলে শেইম দিয়া। হয়ত আপনারেও মাইরা ফেলছে আপনি টের পান নাই কারণ আপনি মাইনাই নিছেন। যেমন ফিল্মের চরিত্রগুলা টের পায় নাই মেয়েটারে মারলো কে।

আপনারে মারছে, হয়ত আক্ষরিক অর্থে মারে নাই, যেহেতু এখনো জিন্দা আছেন ও লেখা পড়তেছেন। মারছে, আপনারে তাদের চাহিদামত বানাইয়া, সেই জন্য শেইমের চাপ দিয়া, আপনার ভিতরে ইন্সিক্যুরিটি ভইরা দিয়া। আপনে আপনার প্যাশন, ইচ্ছা, আনন্দ এইগুলা সমেত কিছু করতে গেলে তারা বিচারকের পজিশন নিয়া শেইম দিবে। আপনিও মাইনা নেন। আপনে কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় জন্ম নিবেন থেকে শুরু করেন, মরার পরে ক্যামনে সৎকার হবেন, সব পর্যায়ে, স্তরে স্তরে আপনার জন্য সব ঠিক করে রাখছে তারা। ব্যত্যয় হইলেই আপনারে শেইম দিবে, আপনারে সব জায়গায় চাপ দিবে।

এইরকম যদি হইত, সমাজ নামের এক এনটিটি চাপ দেয়, লভক্রাফটিয়ান আদি দেবতার মত কিছু, তাইলে হয়ত মেনে নেয়া যাইত, উনি তো সবাইরেই দিতেছেন। কিন্তু, এইখানে, সমাজের একক হইল মানুষ। মানুষেরাই আপনারে শেইম দিবে, চাপ দিবে। তাদের আলাদা আলাদা গেইম আছে, আছে আলাদা মানসিক অবস্থা, পরিবেশ, শিক্ষা ও রুচি। এবং এদের বেশিরভাগই আপনারে ব্যর্থ দেখতে চায়, আরো বৃহৎ অংশ নিউট্রাল, আপনার কিছুতে তার কিছু যায় আসে না।

সমাজের মানুষদের এই শেইম প্রদানের মেকানিজম, এই সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশন বুঝতে না পারলে, এবং এরে মুখের উপর প্রত্যাখ্যান করতে না পারলে আপনার ব্যক্তি হিশাবে মুক্তি হবে না।