দুইভাবে মানুষ অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এক হচ্ছে প্রেস্টিজ এর মাধ্যমে। এর বাংলা অর্থ হতে পারে- সম্মান, মর্যাদা। আর দুই, ডমিন্যান্স বা কতৃত্ব, আধিপত্য দ্বারা। অর্থাৎ, একজন মানুষ অন্যের কাছে অনুকরনীয় হতে পারে তার মর্যাদা থাকলে, আর দুই তার আধিপত্য থাকলে।
মর্যাদা বা সম্মানীত মানুষকে যখন অন্য মানুষ অনুকরণ করে বা অনুসরন করে তখন সে স্বতস্ফূর্তভাবে তা করে। সে ঐ মানুষটিকে সম্মান করে। পক্ষান্তরে, আধিপত্য বা কতৃত্বকে যদি কেউ মানে তখন তার সেই মানা স্বতস্ফূর্ত হয় না। কতৃত্ব যিনি প্রয়োগ করেন তার ভয়ে বা তাকে সন্তুষ্ট করতেই সে ঐমত চলে।
প্রেস্টিজিয়াস মানুষের ক্ষেত্রে অন্য মানুষের মনযোগ ও তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যেহেতু কৃত্রিম নয়, তাই এটি অনেক বেশী কার্যকরী। প্রেস্টিজিয়াস মানুষদের অনুকরন করার মধ্য দিয়েই মানব সভ্যতা এগিয়েছে।
এই প্রেস্টিজ মানুষ কীভাবে অর্জন করে? মানুষের ইতিহাস থেকে দেখা গেছে, এটি একজন অর্জন করেন অন্যকে সাহায্য করার মধ্য দিয়েই। নিঃস্বার্থ সাহায্য তাই সমাজে খুবই বড় গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। জঙ্গলে শিকার-সংগ্রহ সমাজে থাকা অবস্থায় সহযোগীতা ছিল টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ন। পরবর্তীতে এটি তুলনামূলকভাবে কমে গেলেও, মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও স্বার্থপরতা তৈরী হলেও মানুষ এই সহযোগীতা বা সাহায্যকে সবচেয়ে বড় সম্মানীয় গুণ হিসেবে এখনো দেখে।
প্রেস্টিজ মানুষ অর্জন করে অন্যকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে।
এবিসি’র বিখ্যাত সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমানপোর বিলিনিয়ার টম স্টেয়ারের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কীভাবে গিভিং প্লেজ এর সাথে যুক্ত হলেন?”
গিভিং প্লেজ হচ্ছে ওয়ারেন বাফেট এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস এর একটি আন্দোলন বা প্রচেষ্টা যেখানে তারা বিলিনিয়ারদের অর্ধেক সম্পত্তি দান করে দিতে বলেন।
টম স্টেয়ার বলেন, “আমি ওয়ারেন বাফেটের কাছ থেকে একটি ফোন পেয়েছিলাম। তিনি যদি ওটাকে ভালো মনে করেন তাহলে তো তা ভালোই।”
অর্থাৎ, বাফেটের একটি ফোনেই তিনি তার অর্ধেক সম্পত্তি দিতে রাজী হয়ে গেছেন। ২০১০ সালে ইন্টারিভিউয়ের সময়, ৪০ জন বিলিনিয়ার বাফেটের কথায় রাজী হয়েছিলেন। জানুয়ারী ২৮, ২০১৫ পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৮ জন বিলিনিয়ার, যারা তাদের অর্ধেক সম্পদ দিয়ে দেবার ব্যাপারে একমত হয়ে যোগ দিয়েছেন।
ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত একজন মানুষ। তার আহবানে তাই সাড়া দিয়েছেন অনেকে। সম্মানীত মানুষকে অনুকরণ করা মানুষের কালচারাল বৈশিষ্ট্য। তাই চ্যারিটি সংস্থাগুলি দান সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রথমে সম্মানিত কোন মানুষের কাছ থেকে দান নেয়। যাতে অন্য সব মানুষেরা তাতে উৎসাহী হয় এবং দান করে।
প্রেস্টিজ এর সাথে এই সাহায্য জেনেরোসিটি বা দাক্ষিণ্য, ঔদার্য বা অন্যকে নিঃস্বার্থ সাহায্য করা সম্পর্ক গভীর।
লুক্স নারায়ণ এর একটি ইনসাইটফুল টেড টক আছে মাত্র প্রায় ৬ মিনিটের। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের মৃত্যুসংবাদের পৃষ্ঠা প্রতিদিন পড়ে তার দিন শুরু করতেন। যেহেতু ডাটা এনালাইসিস করা তার কাজ, তাই বিশ মাসের মৃত্যুসংবাদ নিয়ে তিনি দেখতে চাইলেন সেইসব মানুষের জীবন আসলে কীভাবে পরিচিত হচ্ছে তাদের মৃত্যুখবরে। ২০০০টি মৃত্যুসংবাদ তিনি বিশ্লেষণ করলেন।
এখানে বিখ্যাত এবং অবিখ্যাত মানুষেরা ছিলেন। বিখ্যাত ও অবিখ্যাত দুই দল মানুষের ভেতরেই সবচেয়ে কমন শব্দ ‘জন’ একটি নাম। এবং এর পরে যে শব্দটি ছিল কমন ও বেশী তা হলো সাহায্য বা হেল্প।
অর্থাৎ, মানুষের জীবন বর্ননায় উঠে আসে তিনি কেমন সাহায্য করেছেন অন্যদের সে কথাও এবং যেসব মানুষ অন্যদের নিঃস্বার্থ সাহায্য করতে পারেন তারা সম্মানীয় হয়ে উঠেন।
এই স্বার্থপর সময়েও মানুষের গভীরে এই বোধ রয়ে গেছে। তাই, প্রশ্ন হলো আমি বা আপনি কীভাবে আমাদের সমাজকে বা মানুষকে সাহায্য করছি? আদৌ করছি কি? পিটার সিংগার বলেন আপনি যদি নিজের জন্য স্বার্থপর ভাবে না বেঁচে থেকে অন্যের জন্য, পৃথিবীর জন্য কাজে নিজেকে যুক্ত করেন, তাহলে আপনি জীবনে আরো বেশী পূর্নতা খুঁজে পাবেন। সেই জীবন যাপন হবে অধিকতর নৈতিক।