আসলে এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বা সাইকোলজিক্যাল খেলার মত, যা আবিষ্কার করেন কানাডিয়ান উদ্যোক্তা জ্যাসন কোমেলি। প্রত্যাখাত হবার ভয় এবং লজ্জ্বা কাটিয়ে উঠার জন্য এই খেলা। প্রত্যাখাত হবার ভয়ের কারণেই অনেক উদ্যোক্তা অনেক কাজ করতে পারেন না।
মূল আইডিয়াটা এমন, ত্রিশ দিন একজন বের হয়ে প্রত্যাখানের খোঁজ করবেন। ত্রিশ দিনে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে প্রত্যাখানের ভয় চলে যাবে।
স্টোয়িক দার্শনিক ডায়োজিনিসের সম্পর্ক গল্প আছে এমন, তিনি পাথরের মূর্তির কাছে ভিক্ষা চাইতেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করত, ডায়োজিনিস আপনি মূর্তির কাছে ভিক্ষা চান কেন? ডায়োজিনিস বলতেন প্রত্যাখাত হবার অনুশীলন করছি।
রিজেকশন থেরাপির আইডিয়াটা এই গল্পের মত।
জিয়া জিয়াং নামের একজন উদ্যোক্তার প্রত্যাখানের ভয় ছিল প্রচন্ড। তিনি কীভাবে এই ভয় দূর করা যায় তা পড়তে গিয়ে রিজেকশন থেরাপির ব্যাপারে জানতে পারেন। এরপর তিনি ঠিক করেন ত্রিশ দিন নয়, একশ দিন তিনি প্রত্যাখান খুজবেন এবং এভাবে প্রত্যাখাত হবার ভয় কাটিয়ে উঠবেন।
তিনি তা করেছিলেন। অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস তিনি চাইতে থাকলেন লোকের কাছে। যেমন, প্রথমদিন একজন অপরিচিত লোকের কাছে একশ ডলার ধার চাইলেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি প্রত্যাখানের স্বীকার হন। এবং এটাই তিনি খুঁজছিলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর ভাবে মানুষ তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়।
এই উদ্যোক্তা জিয়া জিয়াং এর পরে প্রত্যাখান নিয়ে তার পরীক্ষা এবং যা তিনি শিখেছেন তা অন্যদের শেখাতে শুরু করেন। এ নিয়ে তার ব্লগে লিখেন, বই লিখেন। যে রিজেকশন তার ভয় ছিল তাকেই তিনি ব্যবসায়িক লাভে পরিণত করতে সক্ষম হন। এ নিয়ে তার সুন্দর লেকচার টেড টকে আছে।
জিয়া জিয়াং যা করেছেন, তা হল এন্টিফ্র্যাজাইল হওয়া। দার্শনিক নাসিম তালেবের আইডিয়া এন্টিফ্র্যাজাইল। নাসিম তালেব এন্টিফ্র্যাজাইলকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা এভাবে বলা যায়, ধরা যাক একটি বাকসের মধ্যে রাখা কাচের টুকরা। তা পাকা মেঝেতে ফেলে দিলে ভেঙ্গে যাবে। এটি একটি ফ্র্যাজাইল বস্তু।
এন্টিফ্র্যাজাইল হবে এমন বস্তু যা ফেলে দিলে কেবল যে ভাঙবে না এমন নয়, প্রতিবার ভাঙার চেষ্টা করা হলে সে আরো বেশী অভঙ্গুরতা অর্জন করে নিবে। অর্থাৎ প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে সে শক্তি আহরন করে নিয়ে আরো শক্ত হয়ে উঠবে। এই বস্তুই ফ্র্যাজাইলের প্রকৃত বিপরীত বস্তু, এন্টিফ্র্যাজাইল।
স্টোয়িক দার্শনিক ধারার একটি মূল বিষয় হল কী নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং কী নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই, তা বুঝতে পারা। যেমন, আপনার একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আছে, তা মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে বাড়িতে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। আপনি মনে করেন এটি একটি সম্ভাবনায় প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যা একটি সমস্যার সমাধান করবে এবং ব্যবসায়িক দিক থেকে আপনার লাভ হবে ভবিষ্যতে। কিন্তু এখানে, বিভিন্ন বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে আপনি খারাপ ব্যবহারও পেতে পারেন। তাদের ব্যবহার আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু ঐ ব্যবহারে আপনার নিজের কী প্রতিক্রিয়া হবে তা আপনার নিয়ন্ত্রণে। আপনি প্রস্তুত হয়ে গেলে প্রত্যাখান আপনাকে কাবু করতে পারবে না। উপরন্তু আপনি প্রতিটি প্রত্যাখান থেকে শক্তি সংগ্রহ করে হয়ে উঠবেন এন্টি ফ্র্যাজাইল। এবং ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে অন্য উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা।