আল শেকেল বলছিলেন রিচার্ড ফাইনম্যানের সাথে তার কথোপকথন বিষয়ে।
আমার আর ফাইনম্যানের কথাবার্তায় অনেক সময় অন্য পদার্থবিজ্ঞানীদের মারাত্মক প্রতিভার বিষয়াবলীও আসতো। একদিন আমি তার সাথে কথা বলছিলাম ও বললাম, স্টিভেন হকিং যেভাবে মাথার মধ্যেই পাথ ইন্টিগ্রেশন করে ফেলেন এতে আমি অবাক হয়েছি। ফাইনম্যান তখন উত্তর দিলেন, আরে, ওটা তেমন বড় কিছু না। এর চাইতে আমি যেমন একটা টেকনিক বের করেছি তাই বেশী ইন্টারেস্টিং, ঐ মাথায় মেকানিকস করার চাইতে। ফাইনম্যান এখানে আসলে অহংকার দেখান নি, তিনি শতভাগ ঠিক ছিলেন। জিনিয়াসের গোপন সূত্র সৃষ্টিশীলতা, টেকনিক্যাল মেকানিকস নয়।
সাধারণ কোন গ্র্যাজুয়েট ছাত্রই দ্রুত ক্যালকুলেশন করার ট্রিকস আয়ত্ত্ব করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এতে কিছু হয় না। ক্রিয়েটিভিটি এবং ইনোভেশন দরকারী, যার জন্যই দেয়া হয় নোবেল।
ফাইনম্যান ছিলেন অসাধারণ একজন শিক্ষক, বিজ্ঞানী, যাকে সম্মানসূচক নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় তার কাজের জন্য। শিওরলি ইউ আর জোকিং মিস্টার ফাইনম্যান তার একটি অসাধারণ বই। সেখানে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন তিনি। একবার ব্রাজিলে গিয়ে দেখলেন ছাত্ররা খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ফেলছে। তিনি প্রথমে বুঝতে পারেন নি তারা এত দ্রুত করছে কীভাবে।
অনেক তদন্তের পর আমি শেষে বুঝতে পারলাম ছাত্রছাত্রীরা সব মুখস্ত করে রেখেছে এবং তারা জানতো না এগুলি দিয়ে আসলে কী বুঝায়। তারা যখন শুনতো আলো কোন মাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট কোনে প্রতিফলিত হয়েছে, তারা বুঝতো না যে ঐ মাধ্যম বলতে একটা বস্তু যেমন পানি বুঝাচ্ছে। তারা বুঝতো না “আলোর গতিপথ” হচ্ছে কোন দিকে তাকালে আমরা যা দেখি সে পথ, এরকম। সব কিছু তারা পুরো মুখস্ত করে রেখেছিল কিন্তু ওগুলো বুঝতে পারে নি। তাই আমি যদি প্রশ্ন করতাম ব্রেস্টারের কোন কি? তাহলে আমি যেন প্রশ্নটি করলাম কোন কম্পিউটারে, যে উত্তর বের করে দিচ্ছে। কিন্তু আমি যদি বলি, পানির দিকে তাকাও – কিছুই হয় না, এই কথার মাধ্যমে তারা কিছু বুঝতে পারে না।
বিভিন্ন ধরণের অলিম্পিয়াড যে হয়, (যেমন আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড) এতে বিভিন্ন ট্রিক্স, টেকনিক ব্যবহার করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগীতা হয়। গত পঁচিশ বছরের ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের সবচাইতে বেশী ১১ বার বিজয়ী হয়েছে চীন থেকে। চীন এর শিক্ষা ব্যবস্থায় একেবারে বাচ্চাকাল থেকে এর ট্রেনিং শুরু হয়। এবং কঠোর ডিসিপ্লিন ও ডিসিপ্লিনারি পানিশম্যান্টের মাধ্যমে এই প্রতিযোগীদের তৈরী করা হয়। তারা দ্রুত সমাধান করে ও পুরস্কার জিতে নেয়।
মানুষের প্রাকৃতিক প্রবণতা আছে জ্ঞানাঙ্খার। সে জানতে চায়, বুঝতে চায়। কিন্তু এর সাথে স্কুলের প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে ভালো ছাত্র হবার সম্পর্ক নেই। অনেক ভালো ছাত্র থাকতে পারে যে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী নয়, কিন্তু খুব দ্রুত সমাধান করে যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আপনি তাকে আটকাতে পারবেন না।
বাংলাদেশে বুঝা ও মুখস্ত বিরোধী কথাবার্তা বলে থাকেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। কিন্তু তিনিই আবার দেশের অলিম্পিয়াড জাতীয় প্রতিযোগীতাদের সাথে জড়িত।