লা রাশফুকোর ইনসাইট যা আপনারে হেল্প করবে

দ্য স্টর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি

লা রাশফুকোর চিন্তা

 

ফিচার ইমেজঃ ড্যানিশ গোল্ডেন এইজের শিল্পী র‍্যামব্র্যান্টের আঁকা দ্য স্টর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি। এখানে দেখা যাচ্ছে, ঝড় উঠেছে সমুদ্রে আর নবী যিশু তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে ঝড় থামিয়ে দিচ্ছেন।

লা রাশফুকোর জন্ম ১৬১৩ সালে ও মৃত্যু ১৬৮০ সালে। এই ফ্রেঞ্চ থিংকার ও লেখক ছিলেন ফ্রান্সের অভিজাত সম্প্রদায়ের একজন। তার লেখার মধ্যে আছে মেমোয়ার, ম্যাক্সিম ও তার চিঠিপত্র। তার ম্যাক্সিমগুলা হচ্ছে ছোট ছোট এক লাইন বা কয়েকলাইনের বানী। লা রাশফুকো দ্বারা অনেকেই প্রভাবিত হইছেন, যেমন ফ্রেডরিক নীতশে। ১৯ শতকের প্রায় সব সেরা ফ্রেঞ্চ ক্রিটিকই তারে নিয়া লেখছেন।

ম্যাক্সিমগুলাতে তার চিন্তা প্রকাশ পাইছে। এইগুলা চালাকি বা উইট নির্ভর না, বেশিরভাগই তার এথিক্যাল অবস্থান ও মানব প্রকৃতি বিষয়ে তার ভাবনার প্রকাশ। অবশ্যই এইগুলা তার জীবন এবং ঐ সময়ের কনটেক্সটে। বর্তমানে জ্ঞাণ ও বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে হয়ত কোন বিষয়ে আমাদের বেটার ব্যাখ্যা আছে। এটা সময়ের এডভান্টেজ। এই কারণে পরবর্তী সময়ের জ্ঞানীরা পূর্ববতী সময়ের জ্ঞানীদের চাইতে বেশি জ্ঞানী হইতে পারেন, কিন্তু এই হওয়াটা পূর্ববর্তীদের কান্ধে পা রাইখাই।

লা রাশফুকো
ছবিঃ লা রাশফুকো

উইট নিয়া রাশফুকোর কথা হইল, আপনে উইটযুক্ত গর্দভ পাইতে পারেন কিন্তু কখনো ভালো জাজমেন্ট আছে এমন গর্দভ পাইবেন না।

আমি গর্দভ ইউজ করি ফুল বুঝাইতে। গর্দভ বা গাধা যারা আছেন প্রাণীকূলের তাদের অপমান করতে নয়, তবুও তাদের কাছে ক্ষমা চাইয়া নেই, যদিও তারা বাংলা লেখা পড়তে পারবেন না। ফলে এই ক্লিয়ার করাটা যতটা না তাদের জন্য, তার চাইতে বেশি অন্যদের জন্য যারা এই লেখা পড়তে পারবেন। বিশেষত হোমো সেপিয়েন্স, এবং অদৃশ্য বা অজানা যারা আছেন বাতাসে বাতাসে।

আইজ রাশফুকোর এই ম্যাক্সিমগুলা আবার পড়তে গিয়া মনে হইল কয়েকটা নিয়া লেখি, এবং ইন্টারপ্রেট করি। ফিলোসফি বা থটের ধারা হইল হইল ইন্টারপ্রিটেশনের ধারা, ফিলোসফি ফিলোসফির ইন্টারপ্রিটেশনই।

রাশফুকো ফুল বা গর্দভ নিয়া বলতে গিয়া বলছেন, বুড়া ফুল হইল সেরা ফুল। ইয়াং গর্দভ থেকে তাদের গর্দভী অনেক বেশি।

এইটা হয়ত এই কারণে হয় যে, বুড়া হইছেন যিনি তিনি তার ওয়ার্ল্ডভিউ ত্যাগ করতে চান না সহজে।

পরে আরেক বানীতে রাশফুকো বুড়াদের নিয়া বলছেন। তিনি বলছেন, বুড়ারা ভালো ভালো উপদেশ দিতে লাইক করে, কারণ খারাপ কিছু কইরা তো আর দেখাইতে পারবে না।

রাশফুকো বুড়াদের যে লাইক করতেন না তা বুঝা যায়।

রাশফুকোর অবস্থান উইকনেসের বিরুদ্ধে, যেইটা আমার পছন্দের। তার মতে আমাদের যেইসব দোষ আছে এর মাঝে উইকনেস বা দূর্বলতাই হইল একমাত্র দোষ তা ঠিক করা যায় না।

আরেক জায়গায় তিনি বলছেন, সদগুণের বিপরীত খারাপ দোষ তথা ভাইস না, উইকনেস।

তার এই কথা বুঝতে দূর্বলতারে ব্যাখ্যা করতে হবে। এই দূর্বলতা খালি ফিজিক্যাল না। অনেক অনেক লোক আছে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ভিতরে ভিতরে। অনেক টাকার মালিক তাও ভয় পাবে, ভাবে তার টাকা যদি নাই হইয়া যায়। এইগুলা ভিতরের উইকনেস। উইকনেস যে যারা মাইনোরিটি আছে এদের সুবিধা দিলে এরা আমাদের হঠাইয়া দিবে। একটা দূর্বল প্রাণের ভয়। আপনে যদি এইভাবে দেখেন তাইলে দেখবেন মানুষের প্রায় দোষাবলী উইকনেস থেকে জন্ম নেয়। এই প্রতিষ্ঠাকাতর লেখক যারা সরকারের পাও চাটে বা সিনিয়রদের বা এমপ্লয়ীরা বা ঘুষখোরেরা…এইগুলার মূল বিন্দুতে যদি যান দেখবেন একটা ভয় থেকে তারা এইটা করে, যার উৎপত্তি উইকনেস থেকে।

আরেক জায়গায় রাশফুকো বলতেছেন, একজন মানুষ থেকে পুরা মানবজাতিরে বুঝা সহজ।

তার এই কথাটা রাইট ম্যাথমেটিক্যালি। কারণ পুরা মানবজাতির আচরণের বিগ একটা স্যাম্পল আছে। তা নিয়া আপনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাদের বিষয়ে। কিন্তু এক ব্যক্তি তো এইখানে আলাদা, তারে গড় করা যায় না তাই।

চালাক গর্দভের চাইতে বিরক্তিকর গর্দভ আর নাই।

রাশফুকোর এই কথা, আমার চালাক বিষয়ক উক্তির সাথে মিলাইয়া পড়তে হবে, যেইটা হলো, চালাক চালাকি করে এইজন্য খারাপ লাগে না, খারাপ লাগে এই কারণে যে সে ভাবে তার চালাকি আমরা বুঝব না।

চালাক গর্দভের ভুল দুইটা।

অভিয়াসলি এক হইল চালাকি।

দুই হইল আমাদের বোকা মনে করা।

ফলত, তারে নিয়া চলা বা তারে এনকাউন্টার করা বিরক্তিকর।

আপনারে মানুষ বুদ্ধিমান সেরা মনে করবে ততক্ষনই, যতক্ষণ তার মতের সাথে আপনার কথা মিলে যাইতেছে।  এইটা আমি আগে স্ট্যাটাসে বলছিলাম, যেহেতু স্ট্যাটাস লেখতে লেখতে এই অভিজ্ঞতা হইছে আমার। রাশফুকোরও হইছিল টের পাই। তিনি বলেন, নিজের মতের সাথে না মিলা ছাড়া, আমরা কদাচিৎ কাউরে বুদ্ধিমান ভাবি।

চালাকি নিয়া রাশফুকো আবার বলেন, নিশ্চিতভাবে ধোকা খাবার উপায় হইল, নিজেরে নিজের প্রতিবেশীর চাইতে চালাক ভাবা।

আপনে ভাবেন কি?

লাভ বা প্রেম নিয়া রাশফুকো বলেন, বাতাস আগুন নিভায় যেমন তেমন দাঊদাঊ আগুন জ্বালায়ও। দীর্ঘ না দেখা হালকা লাভরে নিভাইয়া দেয়, আর গ্রেট লাভরে দেয় দাঊদাঊ জ্বালাইয়া।

আবার প্রেম নিয়া তিনি বলেন, যখন আমরা কাউরে লাভ কইরা লাভ করা বন্ধ করি (মানে শেষ হয় আর কি), তারে দ্বিতীয়বার আর লাভ করা অসম্ভব।

লাভ নিয়া রাশফুকো আবার বলেন, সত্যিকার লাভ হইল ভূতের মত। সবাই এই নিয়া কথা কয়, কিন্তু দেখছে খুবই অল্প লোকে।

রাশফুকো কন, মানুষের প্রতিভা হইল ফলের মত, ঠিক সিজন আইলে চইলা আসে।

ঠিক সিজন বলতে উনি সময় আর ঠিক পরিবেশ বুঝাইছেন। আর উনি এখানে পুরুষ মানুষ বুঝাইছেন। ম্যান উইমেন আলাদা করা আছে আর বানীতে। আমি ম্যানের লিবারেল অনুবাদ করলাম মানুষ হিসাবে। মানে উইমেনরেও ঢুকাইয়া।

আমরা গোয়াড় কেন হই এ নিয়া তিনি বলেন, আমরা গোয়াড় হই কারণ আমরা ন্যারো-মাইন্ডেড। আমাদের কাছে এইটা বিশ্বাস করা হার্ড যে আমাদের দেখার বাইরেও কত কিছু আছে।

রাশফুকো কন, বেশিরভাগ মানুষ লোকরে বিচার করে তার জনপ্রিয়তা বা সম্পদ দেইখা।

এইটা ট্রু আপনেও জানেন। এইজন্যই এই সাইটের লেখার নিচে লাইক/শেয়ার কাউন্ট সরাইছিলাম, যাতে এইগুলা দেইখা কেউ লেখার মেরিট জাজ করতে না যায়।

রাশফুকোর অনেক বানীই ব্যক্তি নিয়া। মানে ব্যক্তি হিসাবে আমরা নিজেরে নিয়া কী ভাবি, বা কীসব ভুল চিন্তা করি। আধুনিক বিহেভিওরাল ইকোনমিক্সে যারে বলবে কগনিটিভ বায়াস।

আমাদের কাছে আমাদের ইগো বা আত্মসম্মানের দাম বেশি। রাশফুকো কন, অহংকার সবারই সমান, প্রকাশে ভিন্নতা। তিনি কন, সবাই দেখবেন বলে তার মেমোরি খারাপ, ভুইলা যায়, কিন্তু কখনো বলতে শুনবেন না বলতেছে তার বিচারবুদ্ধি খারাপ।

আমরা আমাদের সেরা বিচারবুদ্ধিরে অনুসরণ করার মতো শক্তিশালী না। অর্থাৎ আমরা যৌক্তিক প্রাণী না দিনশেষে। রাশফুকো এটাও বলেন। সত্যি কথা।

বেশিরভাগ লোক ন্যায়বিচার চায় নিজে অন্যায়ের স্বীকার না হইতে।

আমি বলছিলাম, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বা এ বিষয়ে কথা বলতে আগে ভাবা উচিত ঐ জিনিস আমার বা আমার নিকটজনের হইলে কেমন লাগত। এটা হইল সবচাইতে দূর্বলপন্থায় এথিক্যাল থাকা।

দূর্বল পন্থায় কারণ একজন স্ট্রং এথিক্যাল লোক অন্যায়ের স্বীকার সে হবে কি হবে না, এই বিচারে যাবে না ন্যায়বিচারের পক্ষে থাকতে। তার কাছে জাস্টিস দরকারী সব মানুষের বেটারমেন্টের জন্য। মোরাল এজেন্ট হিসেবে সে এখানে ধর্তব্যই না।

কিন্তু ঐ জিনিস খুবই কম লোক পারবে। মানব প্রকৃতিরে বিবেচনায় নিলে তা স্বাভাবিক।

অহংকার নিয়া রাশফুকো আবার বলেন, মানুষ যখন অন্যের দোষের সমালোচনা করে, এটা যতটা না ঐ দোষ সংশোধনের জন্য, তার চাইতে বেশি এই অহংকারে যে “ঐ দোষ আমার নাই”।

লেখার শেষদিকে চলে আসছি।

রাশফুকো বলেন, আমরা যতটা নিজেরে সুখী বা দুখী ভাবি, কখনোই ততোটা না।

অর্থাৎ, দুই জিনিসই আমরা বাড়াইয়া ভাবি।

এটার সাপোর্টে সাইকোলজিস্ট (অর্থনীতিতে নোবেল পাইলেও যিনি নিজেরে ইকোনমিস্ট বলতে লাইক করেন না) ড্যানিয়েল কায়নেম্যানের একটা ইনসাইট আছে। তিনি লেখছিলেন, আমরা যে জিনিস নিয়া ভাবি ওইটারেই অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।

হিরো বিষয়ে রাশফুকো বলেন, হিরোরা অংশত জিনিয়াস, অংশত ভাগ্যে হিরো হন।

মনোমিথের হিরো’জ জার্নি দেখলে আমরা দেখি, হিরোরা একটা সিচুয়েশনে পড়েন। প্রথমদিকে এডভেঞ্চারে যাইতে চান না। উমবের্তো একো যারে বলেন, তারা সবার মত অনেস্ট কাওয়ার্ডের লাইফই চান, পরে এক্সিডেন্টালি হিরো হন। রাশফুকো এই এক্সডেন্টাল জিনিসরে লাকে ফেলেন, আর হিরোরে ক্রেডিটও দেন, কারণ জিনিয়াসনেস ছাড়া কেউ হিরো হয় না। যেমন বিল গেটস, জিনিয়াসনেস ছাড়া তিনি হিরো হন নাই জাস্ট লাকে। অংশত তার জিনিয়াসনেসই তারে হিরো করছে, অংশত স্বাভাবিক ভাবেই লাক।

আর এই লেখায় রাশফুকোর লাস্ট কথা, গ্রেটদেরই কেবল গ্রেট ফল্ট থাকে।

যেটারে নাসিম তালেব উলটাইয়া বলছেন, জিনিয়াসের গুণ আপনে কপি করতে পারবেন, দোষ কপি অসম্ভব।