দেশে দেশে রোহিংগা ইস্যু- গুগল ট্রেন্ড বিশ্লেষণ

রোহিংগাদের উপর রাখাইন স্টেইটে এথনিক ক্লিনজিং এবং গণহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমার, এই ঘটনা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে পরিণত হয়ে উঠেছে। কারন দুই লাখের মত রোহিংগা মানুষ প্রাণ বাঁচাতে এসেছেন বাংলাদেশে রিফিউজি হয়ে। মায়ানমার আর্মির এই গণহত্যাকে কীভাবে দেখা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, তার এক চিত্র আমরা দেশ বিদেশের পত্রিকার রিপোর্ট থেকে পাই, আরেক চিত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি থেকে।

এছাড়াও আরেক পদ্বতিতে আমরা দেখতে পারি রোহিংগা ইস্যু কীরকম প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে বিশ্বজুড়ে। এর জন্য আমাদের গুগল ডাটার উপর নির্ভর করতে হবে, এবং আমরা পাবো গুগল ইউজারদের এই ইস্যুতে সার্চ ডাটা। এর মাধ্যমে হয়ত আমরা এই ঘটনার বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারনা পেতে পারি।

 

বিশ্বজুড়ে রোহিংগা ইস্যুঃ

 

এটা গত ত্রিশ দিনে “রোহিংগা” টার্মে সার্চ ট্রেন্ড। আগস্ট ২৭ থেকে সেপ্টেম্বরের ১৪ পর্যন্ত হঠাৎ করেই তা বেড়েছে। অর্থাৎ, অনেক লোক এই বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন। সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখের পরে একটু কমেছিল, ১৪ তারিখের পর আবার বাড়ছে।

কোন কোন দেশের লোক সবচাইতে বেশী আগ্রহী এই ইস্যুতে? নিচের ছবিতে তা দেখা যাবে।

সবচেয়ে বেশী এই দেশগুলির মানুষ আগ্রহী হয়েছেন, গুগল ডাটা অনুযায়ী। সবচেয়ে বেশী মালদ্বীপে। এরপর মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়া সমান সমান। তারপরই আছে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তান, মালয়শিয়া। দেখা যাচ্ছে বেশীরভাগই মুসলিম দেশ।

কোন কোন টপিকে সার্চ হচ্ছে, তা দেখা যাকঃ


দেখা যাচ্ছে টপিকের ক্ষেত্রে জেনোসাইড, ম্যাস মার্ডার, মুসলিম ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়েছে। সার্চ ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেঃ


 

বাংলাদেশে রোহিংগা ইস্যুঃ

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সার্চ ট্রেন্ডটা উর্ধ্বমুখী স্বাভাবিক ভাবেই, এবং কোন বিভাগের মানুষ বেশী এ নিয়ে আগ্রহী গুগলে তা নিচে দেখা যাবে।


দেখা যাচ্ছে রংপুর, খুলনা ও চট্রগ্রামের মানুষ বেশী আগ্রহী।

 

ভারতে রোহিঙ্গা ইস্যুঃ

 

যেসব সিটি থেকে বেশী সার্চ হচ্ছে এর মধ্যে দ্বিতীয়তে আছে কলকাতা। বাংলাদেশে রোহিংগারা শরণার্থী হয়ে আসছেন, বাংলাদেশ ঘটনার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে, ফলে বাঙালীত্বের কারণে কলকাতায় এই আগ্রহ তৈরী হয়েছে ধারণা করা যায়। তবে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ রোহিংগা ইস্যুতে যে অঞ্চলের মানুষের, তা দেখা যাচ্ছে শ্রীনগর; অর্থাৎ কাশ্মীরের রাজধানী। এটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়, কাশ্মীরের নির্যাতীত মুসলমানরা কী রোহিংগাদের এই অবস্থা দেখে, একাত্মতা অনুভব করছেন এই রোহিংগাদের সাথে…এটাই কি তাদের আগ্রহের কারণ?

 

 

আমেরিকাতে রোহিংগা ইস্যুঃ

গুরুত্বপূর্ন দেশ ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকাতেও রোহিংগা ইস্যুতে সার্চ বেড়েছে মধ্য আগস্ট থেকে। তারা কোন কোন টপিকে সার্চ দিচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ন। কারণ মিয়ানমার যেহেতু রোহিংগা ইস্যুটাকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান হিসেবে চালাতে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।

কোন শব্দেঃ


কোন টপিকেঃ


আমেরিকায় এই ইস্যুতে সবচেয়ে বেশী সার্চ হচ্ছে কানশাস স্টেইট থেকে।

 

মায়ানমারে কীরকম সার্চ হচ্ছেঃ


তেমন বেশী না। সবচেয়ে বেশী সার্চ হচ্ছে রাখাইন স্টেইট থেকে। হয়ত তারা বার্মিজ ভাষা বা অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু যেহেতু আমরা গুগল ডাটা ব্যবহার করছি ইংরাজি কিওয়ার্ড রোহিংগা সামনে রেখে, তাই সে অনুযায়ী বলতে হচ্ছে মিয়ানমারে এই ইস্যুতে তেমন কোন সার্চ হচ্ছে না।

 

শ্রীলঙ্কায় রোহিংগা ইস্যুঃ


বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট এই দেশটিতে অন্য দেশগুলির মত হঠাৎ করেই এই ইস্যুতে সার্চ বাড়েনি। উঠানামা করেছে। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে এই ইস্যুতে তারা আগ্রহী। তার সার্চ কিওয়ার্ডে রোহিংগা ক্রাইসিস, রোহিংগা-বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইত্যাদি কিওয়ার্ড প্রাধান্য পেয়েছে।

 

 

উপসংহারঃ

প্রায় সব দেশেই আগস্টের মাঝামাঝি থেকে রোহিংগা ইস্যুতে মানুষেরা আগ্রহী হয়েছেন ও গুগলের শরণাপন্ন হয়েছেন দেখা যাচ্ছে। মায়ানমারের ক্ষেত্রেই কেবল ভিন্নতা, দেখা যাচ্ছে তাদের মানুষের এ ব্যাপারে আগ্রহ তেমন নেই। মায়ানমারের আর্মি যেসব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে রোহিংগাদের টেররিস্ট প্রমাণ করতে বিশ্বে বসবাসরত ইন্টারনেট ইউজাররা তা গ্রহণ করছেন না, তা তাদের সার্চ কিওয়ার্ড দেখে ধারণা করা যায়। মিয়ানমারের রোহিংগাদের উপর আগ্রাসন গণহত্যা, ম্যাসাকার, এথনিক ক্লিনজিং ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত হচ্ছে বেশী। দেখা গেছে মুসলমান অধ্যুষিত জায়গা থেকে বেশী সার্চ হচ্ছে। অর্থাৎ, এ ব্যাপারে মুসলমানদের উদ্বেগ বেশী বুঝা যাচ্ছে। ধর্মীয় জাতীয়তা এবং ধর্মের স্বজাতির বিপদে তাদের এই উদ্বেগ হয়ত তাদের দেশের সরকারকে এই ইস্যুতে ভূমিকা পালন করতে, মিয়ানমারকে চাপ দিতে উদ্বুদ্ধ করবে।

 

সীমাবদ্ধতাঃ

কেবলমাত্র গুগল ট্রেন্ড/সার্চ ডাটার উপর ভিত্তি করে।