মুরাদুল ইসলাম » অবশ্যপাঠ্য » দ্য কনজুরার ও ফোকাস

দ্য কনজুরার ও ফোকাস

এই ছবিটা হচ্ছে, দ্য কনজুরার। হিরোনিমাস বখ (সম্ভবত এটাই উচ্চারণ) এবং তার ওয়ার্কশপের একটি পেইন্টিং ১৫০২ সালের।

পেইন্টিং দ্য কনজুরার

এই ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে দেখানো হচ্ছে একজন যাদুকর যাদু খেলা দেখাচ্ছে। লোকেরা দেখছে। একজন লোক বেশ নিচু হয়ে মনযোগ দিয়ে দেখছে। ওদিকে তার পকেট থেকে টাকার থলি নিয়ে যাচ্ছে যাদুকরের একজন লোক।

এই ছবির মেসেজটা বাস্তব দুনিয়ার ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য।

সবাই আপনাকে বোকা বানাতে চাচ্ছে। আপনাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যেমন, ফেইসবুক আপনার মনযোগ চায়, এবং আপনাকে অবিরত বিজ্ঞাপন দেখায় নানাভাবে। আপনাকে প্রলুব্ধ করছে আপনার পরিশ্রমের টাকা তাকে দিয়ে দিতে। এরকম বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে প্রায় সকল কিছু।

আপনার দীর্ঘমেয়াদী লাভের জন্য দুনিয়া কাজ করছে না। করছে বিপরীতে। প্রতিটা এজেন্ট তার লাভটাই দেখছে আগে।

আপনি যদি এদের আহবানে সাড়া দেন, তাহলে ক্ষতি আপনার। আপনার টাকা থাকবে না, কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হবে, মানসিক শান্তি থাকবে না।

এটেনশন হচ্ছে আপনার সবচাইতে বড় এক সম্পদ। এই এটেনশনই নিয়ে নেয় কনজুরার। এবং একে ভুল পথে চালনা করে আপনাকে বোকা বানায়।

দুইটা ফ্লেমিশ প্রবাদ, যা এই দ্য কনজুরার পেইন্টিং এর অনুপ্রেরণা ছিল, তা এখনো প্রযোজ্য মানুষের জন্যঃ

“He who lets himself be fooled by conjuring tricks loses his money and becomes the laughing stock of children.”

যে নিজেকে কনজুরারের চালাকিতে বোকা হতে দেয় সে তার স্বর্বস্ব হারায় ও শিশুদেরো হাসির পাত্র হয়।

“No one is so much a fool as a willful fool.”

যে নিজের ইচ্ছাতেই বোকা বনে তার চাইতে বড় বোকা আর হয় না।

মার্শাল আর্টে একটা কথা আছে, যেখানে আপনি মনযোগ দিবেন, সেখানে শক্তি প্রবাহিত হবে।

মনযোগের গুরুত্ব বুঝতে এই টেড টকটি দেখতে পারেন। এখানে একজন কনজুরার দেখিয়েছেন কীভাবে মানুষের মনযোগ সরিয়ে তাকে বোকা বানানো সম্ভব।

মনযোগের একটা বিষয় হলো, আপনি একেবারে সচেতন না হয়েও মনযোগ দিতে পারেন। ফলে, ফেইসবুকে সাধারণ স্ক্রল করাও আপনার মনযোগ নিয়ে নেয়।

আপনার মোবাইলের সোশ্যাল এপসকল, এবং আপনি মার্কেটে হেঁটে গেলে আশেপাশের দোকানসকল ইত্যাদি, তথা ধরেন পুরা দুনিয়াই, নিরপেক্ষ না। আপনার বিপক্ষে।

ফলে, আপনাকে এ সম্পর্কে সচেতন থেকেই কিভাবে এখানে চলবেন, কিভাবে বেস্ট উইন সিচুয়েশন বের করবেন তা ঠিক করতে হবে। আপনাকে আপনার একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে।

যত বেশি ডিস্ট্রাকশন কমাবেন অর্থাৎ যা আপনার মনযোগ নানাদিকে নিয়ে আপনার ফোকাস নষ্ট করে সেগুলি কমাবেন, ততোই আপনার ফোকাস বাড়বে। আর ফোকাস বাড়া মানে ঐ জিনিসে স্ট্রেংথ বাড়বে।

এই ভিডিওতে বল কয়বার পাস হচ্ছে গুনতে পারবেন কি?

ডিস্ট্রাকশন এড়াতে, ও ফোকাস ঠিক রাখতে কী করা যায়? কিছু প্র্যাক্টিক্যাল উপায়।

১। সকালের মুডকে গুরুত্ব দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি ফেইসবুকে গেলেন, একজন লোকের কমেন্ট দেখলেন, বা পোস্ট দেখলেন। এটি দেখে মুড বা মেজাজ খারাপ হবার সম্ভাবনা অনেক। যদি হয় তাহলে, বহুদূরের অচেনা একজন (এমনকি নিতান্তই গর্দভ হতে পারে যে আপনার পোস্ট বুঝেই নি) আপনার উদ্বেগ বাড়িয়ে দিল। এটি আপনার কাজে ক্ষতি করবে। লাইফে সরাসরি ক্ষতি করবে। এর জন্য দায়ী কে? এই সমস্যায় আপনার অবদান কী? আপনার অবদানটা হলো, সকালে ঐ এপে ঢোকা।

মানুষের দিনে একটা প্রোডাক্টিভ উইনডো থাকে। মানে এইসময়েই আপনি আপনার প্রোডাক্টিভিটির শীর্ষে থাকেন। এই সময় হলো ঘুম থেকে জাগার এক ঘন্টা পর থেকে শুরু করে আরো দুই ঘন্টা ত্রিশ মিনিটের মত।

অর্থাৎ, ৭ টায় ঘুম থেকে উঠলে ৮ টা থেকে শুরু, এবং ১০ টা ৩০ পর্যন্ত।

সকালের মুড ঠিক রাখতে না পারলে এই সময় আপনার নষ্ট হবে।

তাই সকালে চেষ্টা রাখতে হবে যত কম ডিস্ট্র্যাক্ট হওয়া যায়। কোন সোশ্যাল এপ ইত্যাদি না।

২। পরেরদিন কী কী করবেন তা আগের রাতে ঠিক করে রাখেন।

৩। কী কী করা দরকার তা লিখে রাখুন। তাহলে বেশি মনে থাকবে।

৪।  একটা উইয়ার্ড পদ্বতি আছে কোন জিনিস চাইলে তা পাওয়ার। স্কট এডামসের ডিলবার্ট ফিউচার বইতে এটি ছিল। এডামস বিজনেসের লোক, কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল সিন্ডিকেটেড কার্টুনিস্ট হবার। এ নিয়ে তার স্ট্রাগল আছে। ওই স্ট্রাগলের সময়ে তিনি প্রতিদিন পনের বার করে কাগজে লিখতেন,

আমি স্কট এডামস, একজন সিন্ডিকেটেড কার্টুনিস্ট হবো।

তো, তিনি একসময় বিশ্বের সবচাইতে পপুলার কমিক স্ট্রিপ ডিলবার্ট এর ক্রিয়েটর হন।

শ্যান প্যারিশের নলেজ প্রোজেক্টে এডামসের লোজারথিংক পডকাস্টে তিনি কথা বলেছেন তার কিছু প্রাথমিক স্ট্রাগল নিয়ে। এটি ইন্টারেস্টিং পডকাস্ট।

ডিলবার্ট প্রথম একটি বড় সংস্থা থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল, অনেক রিজেকশনের পর। নামটা ভুলে গেছি। সেটা তার বড় সাকসেস ছিল, কিন্তু ঐ সময় ডিলবার্ট জনপ্রিয় হয়নি, এবং গল্পের ধরণ ভিন্ন ছিল। পরে এডামস স্ট্রিপে ইমেইল যুক্ত করে দেন মানুষের ফিডব্যাকের জন্য।

পাঠকেরা ফিডব্যাক পাঠান। সে অনুসারেই স্টোরি লাইন পালটে দেন এডামস। আর তাতেই জনপ্রিয় হতে থাকে ডিলবার্ট কমিক্স।

এই জিনিসটা উল্লেখ করলাম ফিডব্যাক এবং ভালো ফিডব্যাক লুপ তৈরি করার গুরুত্ব বুঝাতে।

ইফেক্টিভ কাজ করতে ফিডব্যাকের গুরুত্ব অনেক।

ডন নরম্যানের বউ ডিজাইন অব এভ্রিডে থিংস।  ডিজাইনের দুনিয়ায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। উডাসিটিতে ইন্ট্রো টু ডিজাইন অব এভ্রিডে থিংস নামে তার একটি চমৎকার কোর্স আছে। প্রতিদিন আমরা যেসব জিনিস দেখি, সেগুলিকে নতুনভাবে দেখার চোখ তৈরি হবে এই কোর্স করলে। এবং ডিজাইন থিংকিং এ আপনি প্রবেশ করতে পারবেন। সেটি এক সুন্দর দুনিয়া।

এই কোর্স করতে গিয়ে দেখলাম প্রজেক্টে ফিডব্যাকের গুরুত্ব সম্পর্কে বার বার বলা হয়েছে, তাই প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টি আসলো। প্রাথমিক ডিজাইন শেষ করে অন্যান্য লোকদের ফিডব্যাক নিতে হয়। তাদের ফিডব্যাক মনযোগ দিয়ে শুনতে হয়। কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, তাদের ফিডব্যাক ইন্টারপ্রেট করতে হয়। সরাসরি কেউ হয়ত বলতে পারবে না। সাধারণভাবে বলবে। কিন্তু সেখান থেকে ইনসাইট আপনাকেই বের করে নিতে হবে অনুমান করে। ফিডব্যাক সম্পর্কে এই কথাটি না বলা হলে ফিডব্যাক নেয়া বিষয়ক ধারণাটি সম্পূর্ণ হয় না।

মূল জায়গায় ফিরি, যে জিনিস চান তা দিনে পনের বার করে লেখা। এটিকে বলে এফার্মেশন পদ্বতি। এডামস বলেন তার অনেক লক্ষ্য এভাবে সফল হয়েছে। কিছু হয় নি।

এবং তিনি অনেক মেইল পান মানুষের। যারা এটি ব্যবহার করেছেন ও সফল হয়েছেন।

এটি কীভাবে কাজ করছে বা করে?

হয়ত বার বার লেখার কারণে বিষয়টা আমাদের মনে থাকে। আমাদের ফোকাস ঠিক থাকে। ডিস্ট্র্যাকশন থেকে তখন আমরা দূরে থাকতে পারি বেশি।

এছাড়াও, এই বার বার লেখা আপনাকে ঐ জিনিসের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে। রিচার্ড ওয়াইজম্যানের বই দি লাক ফ্যাক্টরে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন লাকি লোকদের কোন বিশেষ ক্ষমতা আছে কি না, যেমন ই এস পি। এরকম কিছু পান নি।

কিন্তু চমৎকার একটি জিনিস বের করেছেন ওয়াইজম্যান। সব লাকি লোকই লাক প্রত্যাশা করেন। আর লাক প্রত্যাশা করার কারণে চারপাশের কোন সুযোগ সহজেই তাদের চোখে ধরা দেয়।

যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে লাক প্রত্যাশা করার জন্য ট্রেইন করেন, তখন তার পারসেপশন বা দেখার জায়গা বড় হয়ে ওঠে, এবং তিনি সুযোগ দেখতে পারেন।

বার বার ঐ জিনিস লেখা নিজেকে একরকম লাক প্রত্যাশা করার জন্য ট্রেইন করা।

৫। মেডিটেশন চিন্তার একটি ব্যায়াম। এটি স্থির থাকতে ও ক্লিয়ার চিন্তায় সাহায্য করে। কিন্তু যেভাবে মেডিটেশনের প্রচারণা হয় প্রোডাক্টিভিটি টুল হিসেবে, এটি মেডিটেশনের মূল কথা না। বরং, এরকম মেডিটেশন আসলে একটা বিচ্যূতি।

মানুষ হিসেবে আমাদের নানা ধরণের আবেগ আছে। আবেগ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদি।

কিন্তু আমরা চাই না আবেগ দ্বারা হাইজ্যাকড হয়ে যেতে। চাই না যে আমরা যা দেখছি তা আবেগের প্রভাবে ভুল দেখতে। ভুল সিদ্ধান্ত নিতে।

কারণ আপনি বা আমি অনেকাংশেই আমাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল।

প্রতিনিয়ত আমাদের মাথায় নানা চিন্তা আসছে। এগুলি আমাদের নানা ভাবে প্রভাবিত করছে।

মেডিটেশন হল এগুলি থেকে দূরে থাকা। আমার কাছে মনে হয় মেডিটেশনের সিস্টেম একেকজনের কাছে একেকরম হবে। এবং কোন পদ্বতিই একমাত্র ‘ঠিক’ পদ্বতি নয়। কারণ, ব্যক্তির উপর নির্ভর করবে এটি। তার কেমন ভালো লাগে, বা কোনটা কার্যকর মনে হচ্ছে।

আমার কয়েকটি ধারণা মেডিটেশন নিয়ে, যেগুলি নিয়ে ভাবতে পারেন।

মেডিটেশন হবে প্রথমে খুবই অল্প সময়ের জন্য। মাত্র তিন মিনিট চার মিনিট। মেডিটেশনে একজন চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন।

তিনি কিছু হতে চাইবেন না ঐ সময়ে। না হতে চাওয়াই মেডিটেশন। সিরিয়াস নয়, হালকা হওয়াই মেডিটেশন, ফলে এটি কোন সিরিয়াস বিষয়ও নয়।

ফোকাস দিবেন নিঃশ্বাস, প্রশ্বাসে এবং এর মধ্যবর্তী সময়ে।

মাথায় নানা চিন্তা আসবে। এতে সমস্যা নেই। প্রথমদিকে নিয়ন্ত্রন কম থাকবে তাই বেশি আসবে। যখন বুঝা যাবে অন্য চিন্তা চলে এসেছে তখন আবার মূল ফোকাস, যেমন নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ফিরে আসতে হবে।

এছাড়া, কোন শব্দ নিয়ে কেউ মেডিটেশন করতে পারেন। কেবল এটা মাথায় থাকবে।

মেডিটেশনে বসে মনে হতে পারে সময় কতো হলো, বা কতো মিনিট গেল। এই অবস্থায় মনে রাখবেন, সময়ের ধারণা নাই করে দিতেই আপনি বসেছেন।

অথবা, মনে করতে হবে আপনার ব্রেইন একটা ঘর। সেই ঘরে নানা চিন্তা উঠছে এগুলি হলো চোর। আপনি বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দেখছেন। ভেতরে চিন্তাগুলি উঠছে নামছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। আপনি নিয়ন্ত্রন করছেন না বা কোন চিন্তাকে এগিয়ে নিচ্ছেন না।

এছাড়া, ভাবতে পারেন উপরে উঠে। স্টোয়িক দার্শনিকদের যে পদ্বতি ছিল, একেবারে উপর থেকে সব দেখা। মনে করতে পারেন আপনি মহাকাশে। সেখানের বিশালতার সাথে মিশে সব কিছু দেখছেন। স্টোয়িকরা এটা করতেন, কারণ উপর থেকে দেখলেই বুঝা যায় আমরা কতো ক্ষুদ্র।

মেডিটেশন বিষয়ে জো রোগান এবং নাভাল রবিকান্তের কথাবার্তা শোনা যায়।

ব্যায়ামের মতোই মেডিটেশনের ফল পেতে ছয়মাস সময় লাগবে। এসব লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট।

আপনার ফোকাস করার ক্ষমতা বাড়বে, ফলে বাড়বে শোনার ক্ষমতা। এটি একধরনের সুপারপাওয়ার।

মেডিটেশন করার সময় যদি দেখেন খারাপ লাগছে, বা নেগেটিভ ফিলিংগুলি চলে আসছে বা আপনার ভালো লাগছে না, তাহলে এটি আপনার করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। এমতাবস্থায় বন্ধ করা উচিত।

৬। এই অবিরত ফেইক সোশ্যাল (মানে এপভিত্তিক সোশ্যালতা) এর সময়ে ব্যক্তিকে ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করার চেষ্টা চলছে। কিছু কোম্পানি তো প্রকাশ্যেই, যেমন নেটফ্লিক্স প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে উল্লেখ করে মানুষের ঘুমকে!

নেটফ্লিক্স

এই অবস্থায় ব্যক্তির তার নিজেকে সময় দেয়াটাকে অগুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসচেতন কাজ হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

তারকোভোস্কিকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মানুষের প্রতি আপনার উপদেশ কী?

আমার মনে হয় আমি মানুষকে বলব তাদের একা হওয়াটা এবং নিজেকে যতটা বেশি পারা যায় সময় দেয়াটা শেখা উচিত। এখনকার তরুণ লোকেরা যে ভুল একটা করে, আমার মনে হয় তারা  এমন সব ঘটনার সংস্পর্শে আসতে চেষ্টা করে যেগুলি কোলাহলপূর্ণ। কখনো কখনো এগ্রেসিভ। একা না হবার জন্য এমন কাজ আমার মতে এক দূর্ভাগ্যজনক লক্ষণ। প্রতিটা মানুষের শিশুকাল থেকেই নিজের সাথে সময় কাটানোটা শেখা প্রয়োজন। এর মানে এই না একাকীত্বে ভুগতে হবে, কথা হলো সে যেন নিজেকে নিয়ে বোর হয় না, কারণ যেসব লোক নিজের সঙ্গতে বোর হয়ে যায় তারা আমার মনে হয় বড় বিপদে আছে, বিশেষত আত্মসম্মানের দিক থেকে।

৭। ফোকাস বলেন বা লাইফের যেকোন কিছুতে, একটা জিনিস আপনি যদি মনে রাখতে না পারেন তাহলে লাইফ মিজারেবল হয়ে উঠতে বাধ্য। সেটি হলো, “ভ্যালু আর প্রাইসের” পার্থক্য বুঝা।

আমাকে যদি কেউ বলে সবচাইতে সেরা পরামর্শ কী আপনার মতে, তাহলে আমি এটিই বলব, ভ্যালু আর প্রাইস যে এক জিনিস না এ সম্পর্কে ক্লিয়ার থাকেন। প্রাইসের থেকে ভ্যালুকে গুরুত্ব দেন সর্বদা।

ভ্যালু হচ্ছে কোন জিনিসের ভেতরের সার। ইন্ট্রিনসিক ভ্যালু। এর প্রকৃত কার্যকারীতা। এর উপকারীতা আপনার লাইফে।

আর প্রাইস হচ্ছে, সোসাইটি বা অন্য মানুষেরা সেই জিনিসকে কীভাবে দেখে। সে অনুসারে তারা প্রাইস ঠিক করে।

আপনার কাছে এক জিনিসের ভ্যালু ১০০০০ ধরা যাক। সোসাইটি এর দাম ১ টাকা দিয়ে দিতে পারে।

অধিকাংশ মানুষ সোসাইটির দেয়া প্রাইস অনুযায়ী ভাবতে থাকে। তারা ঐ ১০০০০ ভ্যালুর জিনিসকে ১ টাকার মনে করতে থাকে।

আবার কোন জিনিসের ভ্যালু ১, এবং সোসাইটি তার প্রাইস ১০০০০ করে রাখলে, ঐ জিনিসকে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

পার্টনার চয়েজ থেকে শুরু করে, প্রেম, বিলাসিতা, মুভি, বই সিলেকশন, স্টক কেনা – জীবনের সব ক্ষেত্রে আপনি এটি দেখতে পাবেন, একটু ভাবলেই।

পরিচালক সৃজিত অভিনেত্রী মিথিলাকে বিয়ে করলে মানুষ ট্রল করে। হাসে। একটা ছবিতে গুহার ছবি দিয়ে, আর পাশে সৃজিতের ছবি দিয়ে ট্রল করে।

এই যে ট্রল, এগুলি সোসাইটির প্রাইস। তারা মনে করছে সৃজিত এটাই পেলো।

কিন্তু আসলে সৃজিত কি পেয়েছে?

সেটা নির্ভর করছে তার লাইফে সে কী চায়, যে জিনিস সে পেয়েছে সেটির ভ্যালু তার লাইফে কেমন।

সৃজিত যদি সোসাইটির দেয়া প্রাইসের উপর বিশ্বাস রাখতো, তাহলে সে ভ্যালু পেতো না কখনোই। আপনি রাখলে আপনি পাবেন না কোন ক্ষেত্রেই। প্রকৃত লুজার হবার সবচাইতে ভালো এবং অব্যর্থ উপায় হলো ভ্যালুকে গুরুত্ব না দিয়ে সোসাইটির দেয়া প্রাইস দিয়ে কোন জিনিসকে বিচার করা।

সিম্পল উদাহরন এটি, পপুলার ঘটনা এবং সাম্প্রতিক তাই উল্লেখ করলাম। এরকম আপনি প্রচুর পাবেন, সব ক্ষেত্রে।

তাই মনে রাখবেন, ভ্যালুটা গুরুত্বপূর্ণ। ঐ জিনিস, ঐ শিক্ষা বা এন্টারটেইনমেন্ট বা ব্যক্তি আপনাকে কী ভ্যালু দিচ্ছে, সেটাই আপনার কাছে এর প্রকৃত মূল্য। সোসাইটির ধরে দেয়া দাম, এগুলি গর্দভদের জন্য।

অধিকাংশ মানুষ গর্দভ হতে হবে বিদ্যমান সোসাইটি ফাংশন করার জন্য। এজন্যই সোসাইটিতে মানবাধিকার নেই, এবং মানবাধিকার যে নেই তা এখানে বাস করা বেশিরভাগ মানুষগুলা বুঝেও না। বুঝবেও না। এটি সমস্যা নয়, আপনি সেই দলে না থাকলেই হলো।

যে জিনিসটা দিয়ে শুরু করেছিলাম, দি কনজুরার, সোসাইটি এখানে কনজুরারের ভূমিকা পালন করে। আপনারে ভ্যালু থেকে ডিস্ট্র্যাক্ট করে প্রাইসে নিয়ে যায়। আর আপনি প্রাইস দিয়েই তখন সকল কিছু বুঝেন। ওদিকে আপনার ভ্যালুয়েবল জিনিস পাওয়া হয় না, বা থাকলেও আপনি তা হারিয়ে ফেলেন।

৮।  কিউরিওসিটি বিষয়ে আমি আরেকটা লেখায় লিখেছি যে কিউরিয়াস মানুষই বুদ্ধিমান। এটা আমি মনে করি। কিন্তু ফোকাসের জন্য এই কিউরিওসিটিকেও চারিদিকে ব্যাপ্ত করে রাখলে হয় না।

শিশুদের সকল কিছু নিয়ে কিউরিওসিটি থাকে। তারা কেন কেন ইত্যাদি প্রশ্ন করে। বড় হবার সাথে সাথে মানুষের এমন কিউরিওসিটি কমে। অনেকের ক্ষেত্রে একেবারে কমে যায়।

কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষের ক্ষেত্রে এই কিউরিওসিটি ন্যারো হয়। আগে তারা একশোটা বিষয়ে আগ্রহী ছিল, তখন হয় তিনটা বিষয়ে। এই তিনটা বিষয়েই তারা তাদের গভীর আগ্রহ অনুভব করে, এবং সেদিকেই ফোকাস রাখে।

কিওরিসিটি থাকায় এইসব জিনিসে অনেক কাজ করলেও তাদের এটি কাজ বলে মনে হয় না। এমনকী এইসব কাজ করতে নিয়ম শৃঙ্খলারও তেমন দরকার হয় না।

কারণ, একাগ্রভাবে তারা ঐসব জিনিসেই ফোকাসড থাকতে পারেন।

৯।  শেষ কথা।

আপনার বিপক্ষে, আপনার লং টার্ম ক্ষতির জন্য কাজ করে যাওয়া এই মহা আয়োজন থেকে বাঁচতে আপনার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কী?

আপনি কি মনে করছেন, এই সিস্টেম মানে দুনিয়া নিরপেক্ষ?

2 thoughts on “দ্য কনজুরার ও ফোকাস”

  1. অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়ে ধারণা পেলাম। মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে আমাকে ইউজ করছে কিংবা এর ব্যাড সাইডস গুলো নিয়ে ভাবতাম কিন্তু এখন অনেক বিষয় ক্লিয়ার হলো। সাথে এই লেখাটার জন্য কোন কোন বইয়ের হেল্প নিয়েছেন (যদি নিয়ে থাকেন) সেটা উল্লেখ করলেও আরো বেশি উপকৃত হতাম।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং