সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টে নারীরা কেন সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখান না

অনেক সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের ঘটনা জানা যায় ঘটনা ঘটতে থাকার অনেক দিন পরে। তখন লোকেরা প্রশ্ন করেন কেন ঐ নারীরা সাথে সাথেই এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান নি। সাধারণত পরবর্তীতে ঐ ভোক্তভোগী নারী ও অন্য নারীদের যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাতে মনে হয় তাদের ঐরকম পরিস্থিতিতে পড়লে সাথে সাথেই প্রতিবাদ করার কথা ছিল। কিন্তু এমন হয় না।

এর কারণ হিসেবে গবেষকদের মত হলো, ঐ পরিস্থিতিতে নারীটি ভীত হয়ে পড়েন।

কিছু নারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যদি কোন ইন্টারভিউতে আপনাকে সেক্সুয়ালি হ্যারাসিং প্রশ্ন করা হয় তাহলে আপনারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। প্রশ্নগুলি ছিল এমনঃ

১। আপনার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?

২। আপনাকে কি লোকে আকর্ষনীয় মনে করে?

৩। আপনি কি মনে করেন কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের ব্রা পরা গুরুত্বপূর্ন?

৬২% উত্তর দিলেন তারা  প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করবেন কেন তিনি এমন প্রশ্ন করলেন এবং তাকে বলবেন এটা অভদ্রতা।

২৮% বললেন তারা আরো মারাত্মকভাবে প্রতিবাদ করবেন ও ইন্টারভিউ রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন।

৬৮% বললেন তারা এই তিন প্রশ্নের যেকোন একটির উত্তর দান থেকে বিরত থাকবেন।

গবেষকেরা এবার পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছু নারীকে (বয়স এভারেজ ২২) ডেকে আনলেন। এবং তাদের এই প্রশ্নগুলি করলেন। দেখা গেল এদের কেউই উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান নি।

তারা সব প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন। হ্যারাসিং প্রশ্নগুলির ক্ষেত্রে খুবই অল্প সংখ্যকের উত্তরের সময় প্রতিবাদের আভাস ছিল। এই উত্তরগুলির সময় সবাই বিভিন্ন ভাবে পরিস্থিতি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন।

রিসার্চাররা বলেন কোন হ্যারাসিং পরিস্থিতির ব্যাপারে কল্পনা করলে নারীরা যতটুকু রাগান্বিত হবে ভাবেন, পরিস্থিতিতে পড়লে এমনটা হয় না। বাস্তব পরিস্থিতিতে রাগকে প্রতিস্থাপিত করে ভয়। এইজন্য ইন্টারভিউয়ে উত্তর দানের সময় অনেকে ফেইক স্মাইলের চেষ্টা করেছিলেন। এটি সম্ভবত হ্যারাসারকে শান্ত করতে করা বলেই গবেষকদের মত।

অথরিটির প্রতি মানুষের আনুগত্য বিষয়ক মিলগ্রামের পরীক্ষার মতো করে এই পরীক্ষাটি করেন Julie A. Woodzicka (Washington and Lee University) and Marianne LaFrance (Yale)। প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে জার্নাল অব সোশ্যাল ইস্যুতে।

Reference: Woodzicka, J. A., & LaFrance, M. (2001). Real versus imagined gender harassment. Journal of Social Issues, 57(1), 15-30.

এখানে সমস্যাটা হচ্ছে নারীরা যেভাবে কল্পনা করেন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেরকমটা বাস্তবে করতে পারেন না। যেমন অথরিটির আনুগত্যের সময় নারী বা পুরুষের হয়ে থাকে। তারা যখন কল্পনা করেন তখন ভাবেন  অথরিটি আদেশ দিলেও কোন অন্যায় না নৈতিক ভাবে খারাপ কাজ তারা করবেন  না।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতে পড়লে দেখা যায় তারা করে ফেলেন, অথরিটির আদেশ মেনে।

বাস্তব পরিস্থিতি ও কাল্পনিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের চিন্তার বা কাজের এই বিশাল পার্থক্য আমাদের অনেক সমস্যার জন্য দায়ী। বিশেষত নৈতিক সমস্যাগুলির জন্য। এবং এই জিনিস আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে কেন নারীরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের ঘটনা সাথে সাথে প্রকাশ করেন না। উত্তর হলো, ভয়ের কারনেই।