স্মল বিজনেসের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং গ্রোথ হ্যাক

আপনার স্মল বিজনেস প্রতিষ্ঠানের কনজিউমারদের কাছে সহজে পৌঁছানোর একটি উপায় হলো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে এখন ফেইসবুক পেইজে বুস্ট করে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আমি মনে করি মার্কেটিং মানে কেবল আপনাকে বা আপনার কোম্পানিকে অন্যের সামনে উপস্থাপনই নয়।

মার্কেটিং কী?

নির্ভর করে কনটেক্সট এর উপরে।

আপাতত এই সংজ্ঞাটা থাক যে, আপনার কনজিউমারদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা, যাতে সে আপনার এম্বাসেডর হয়, অর্থাৎ আপনার সুনাম প্রচার করে ও আপনার কাছ থেকে নিজে কিনে, এবং অন্যকে কিনতে উৎসাহিত করে।

এখানে সম্পর্ক বলতে লং টার্ম ভালো সম্পর্ক বুঝাচ্ছি। ফলে যারা শর্ট টার্ম সম্পর্ক করে নিজের লাভ নিয়ে নিতে চান, তাদের ব্যবসার জন্য এই মার্কেটিং নয়।

লং টার্ম ভালো সম্পর্কের ক্ষেতরে একজনকে খেয়াল রাখতে হয়, যার সাথে সম্পর্ক হয়েছে তার ভালোর দিকটাও। কেবল নিজের লাভ দেখলে কোন সম্পর্ক লং টার্ম ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠে না।

প্রযুক্তিগত কিছু অনুমান ধরে নেই,

  • বাংলায় গুগলের সার্চ রেজাল্ট দেয়ার দক্ষতা আরো ভালো হবে। আরো ভালোভাবে ও সঠিকভাবে গুগল বাংলা সার্চের জন্য ফলাফল হাজির করতে পারবে। 
  • গুগল ভয়েজ সার্চ আরো পপুলার হবে, এবং এর মাধ্যমে বাংলায় প্রচুর সার্চ হবে। 
  • এমনিতেও বাংলায় সার্চের পরিমাণ বাড়বে।

এই অনুমান ধরে নিয়ে কথা হলো, স্মল বিজনেসের জন্য মার্কেটিং  গ্রোথ হ্যাক  হলো কন্টেন্ট মার্কেটিং এ যাওয়া। ধরা যাক, আপনি চামড়ার ব্যাগ বানান ও বিক্রি করেন। আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে ভোক্তারা কিনতে পারেন পণ্য। সেখানে আপনি একটি ব্লগ রাখেন ও চামড়ার ব্যাগ সম্পর্কিত ইউনিক ও দরকারী লেখা প্রকাশ করতে থাকেন।

এতে অনেক অনেক পাঠক আপনার সাইটে চলে আসবেন না। কিন্তু যার দরকার তিনি সার্চ দিয়ে আসবেন। তিনি আপনার সাইটের তথ্য থেকে উপকার পেলে আপনার সাইটের সুনাম অন্যদের কাছে প্রচার করবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।

এভাবে আপনার সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হলো। এবং তার মাধ্যমে আরো অনেকে আপনার কথা জানতে পারল।

এই মার্কেটিং মডেলটা অনেক শক্তিশালী।

এবং এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ড তৈরি হবে, ও পরিচিতি পাবে।

ব্র্যান্ড মানে নানা কালারের লোগো এবং চালাক চালাক ট্যাগলাইন না। অনেক অনেক বিজ্ঞাপন না । ব্র্যান্ড একটা গল্প, আপনি যে গল্প উপস্থাপন করবেন, এবং আপনি যে প্রতিজ্ঞা করছেন যা সমাজের সাংস্কৃতির গভীর যেসব বিশ্বাস আছে, তার সাথে যাচ্ছে। এর ফলেই লোকজন আপনার সাথে কানেক্ট করতে পারবে।

ব্র্যান্ড এওয়ারনেসের বা আপনার ব্র্যান্ডের নাম মানুষ জানে কি না, এ নিয়ে কয়েকটি টার্ম আছে, যেগুলি দিয়ে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের শক্তি বুঝতে পারবেন। আপনার শক্তিশালী ব্র্যান্ড হলে, সেটি আপনার জন্য বিরাট সম্পদ।

ধরেন কোন একটি প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি দেখেই একজন কনজিউমারের মনে পড়ল অমুক ভাইয়ের কোম্পানি তো এই জিনিস বানায়। এটা হলো আন এইডেড ব্র্যান্ড রিকল।

আপনার প্রোডাক্টের ভিজুয়াল প্যাকেজ উপস্থাপন করলে ভোক্তা ছিনতে পারল, এটা এইডেড ব্র্যান্ড রিকল বা ব্র্যান্ড রিকগনিশন।

একটা থিওরী আছে যে, কনজিউমারের কনসিডারেশন সেট এ থাকা প্রথম তিনটা ব্র্যান্ড থেকেই সে কিনবে। ফলে মার্কেটিং এর একটা বড় উদ্দেশ্য থাকে এই কনসিডারেশন সেতে নিজের ব্র্যান্ডকে ঢুকিয়ে দেয়া ও নাম্বার এক এ রাখা।

কন্টেন্ট মার্কেটিং সফল হলে, অর্থাৎ আপনি আসলেই ভাল কন্টেন্ট দিতে পারলে, এই তিন ক্ষেত্রেই আপনি মারাত্মক সুবিধা পাবেন।

আপনার কন্টেন্ট মার্কেটিং সফল হবার সম্ভাবনা কম যদি আপনি সার্চ দিয়ে ঐ রিলেটেড কন্টেন্ট বের করে তা হুবহু অনুবাদ করে প্রকাশ করতে থাকেন।

আপনাকে আপনার বিজনেস রিলেটেড ইউনিক কন্টেন্ট দিতে হবে। মানুষের লাইফে ভ্যালু এড করতে হবে। আর, এর জন্য অল্প পরিশ্রম দরকার। গুগল ব্যবহার করে আপনি রিসার্চ করতে পারেন। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট ও উপস্থাপন যেন হয় আলাদা।

একটা বইয়ের অনলাইন দোকান ধরা যাক কন্টেন্ট মার্কেটিং এ গেল। তারা বিদেশী সাইট থেকে, বিলিনিয়াররা কী কী বই পড়েন পোস্ট দেখে তা অনুবাদ করল। এটির চাইতে বেশি কার্যকরী হবে, যদি তারা এই পোস্ট লেখে যে, কীভাবে আপনার বাসায় বইকে ভালো রাখবেন। কারণ বাংলাদেশে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে বই নষ্ট হয়ে যায়। শুকাতে হয় ও আরো নানা যত্ন নিতে হয়। এগুলি নিয়ে বিস্তারিত একটা লেখা প্রকাশ করলে ভোক্তাদের উপকারে লাগবে। তারা অন্যদের কাছে শেয়ার করবে।

ব্র্যান্ড রিকল বিষয়ে ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে এবার বইমেলায়। যেসব বই কিনেছি এদের সবার নামই জেনেছি ফেইসবুক থেকে। অনেকে পোস্ট দিয়েছেন সে সূত্র ধরে। কিন্তু মেলায় গিয়ে খেয়াল করলাম বইয়ের নাম মনে আছে, লেখকের নাম তো জানি, কিন্তু প্রকাশনীর নামটা মনে নাই। প্রকাশনীগুলির এখানে মার্কেটিং এর সমস্যা রয়েছে। যেহেতু আমি একজন ভোক্তা ফেইসবুক থেকেই নিউজটি পেয়েছি তাই তারা চাইলে এবং ক্রিয়েটিভলি চিন্তা করতে পারলে ফেইসবুকে নিজেদের ব্র্যান্ড মার্কেটিং করে ভোক্তার মেমোরিতে নিজেদের স্থান অর্জন করে নিতে পারত।

এবার আমার বই বের হল জাদুকরের কেবিন থেকে। যে প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তাদের এটি প্রথম বিক্রিত বই, এবং তাদের সবচাইতে বেশি বিক্রি হওয়া একটি বই। এই বিক্রির পেছনের একটি কারণ হিসেবে আমি মনে করি একটা গ্রোথ হ্যাক কাজ করেছে। আমি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম যারা #জাদুকরেরকেবিনথেকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে কমেন্ট করবেন তাদের কমেন্টের উত্তরে আমি কোন কোট বা উপদেশ দেব। এটা ক্রিয়েটিভ ছিল, এবং এটা ছিল টু ওয়ে থিং। মন্তব্যকারীরা ঐ কাজটি করবেন কারণ তাদের জন্য আমিও কিছু একটা করব। ফলে অনেকে অংশ নেন। প্রচুর মানুষের সামনে পোস্টটি যায়।

এটি ছিল জানুয়ারির ১৮ তারিখে। অর্থাৎ, যখন পাঠকেরা কী কী বই কিনবেন তার তালিকা তৈরি করছেন।

এই সময়ে হওয়ায়, এবং ক্রিয়েটিভলী গ্রোথ হ্যাক ব্যবহার করায় এটি ভোক্তাদের মেমোরিতে স্থান নিতে সক্ষম হয়। যারা দেখেছেন তার অল্প সংখ্যক কিনেছেন, সবাই তো পাঠক না। আবার পাঠকের নিজস্ব রুচিও আছে। কিন্তু, কথাটা এখানে হচ্ছে মেমোরিতে এটি যেতে পেরেছে।

এরপরেও আমি পুরো মাস জুড়ে হ্যাশট্যাগ #জাদুকরেরকেবিনথেকে জীবিত রেখেছি। যারা বই কিনেছেন তারা বইয়ের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন, আমি হ্যাশট্যাগ সহকারে পোস্ট দিয়েছি। এখন এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে বা কিওয়ার্ড দিয়ে কেউ সার্চ দিলেই অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন।

একটা পণ্যকে আগ্রহী ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো একটি বড় ব্যাপার। এটি না করে যদি কেউ বসে থাকেন ও ভাবেন ভোক্তারা নিজেই ছুটে আসবে, এটি হবে না যদি না পণ্যটি নিত্য ব্যবহার্য অপরিহার্য হয়, এবং মার্কেটে প্রতিযোগি না থাকে। বইয়ের ক্ষেত্রে তো নয়ই।

শুরু করেছিলাম কন্টেন্ট মার্কেটিং নিয়ে।

আমি সম্প্রতি একটি অনলাইন শপ থেকে ভেজালমুক্ত কিছু জিনিস কিনেছি। মিষ্টি কুমড়ার বিচি, বিভিন্ন নাটস থেকে বানানো প্রোটিন পাউডার, পিনাট বাটার ইত্যাদি। তাদের সাইটে এইসব জিনিসের গুণাগুণ, খাবার সবচাইতে ভাল পদ্বতি, এবং কীভাবে এগুলি তৈরি করা হয়েছে এসব নিয়ে ভালো কন্টেন্ট থাকতে পারত। কিন্তু নেই। পণ্যের বর্ননার অবস্থাও খুবই করুণ।

মানুষ এদের গুরুত্ব কম দেয়। কনটেন্টের বা কনটেন্ট মার্কেটিং এর। তাই, এইসময়ে যারা এদিকে শ্রম ও ইনভেস্ট করবেন, তারা মার্কেটিং এ ভাল এডভান্টেজ পেতে থাকবেন প্রতিযোগিদের চাইতে।

একটা সাইটে ভালো কন্টেন্ট থাকলে সেখানে আসা ভিজিটরদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা যায়, বিশ্লেষণ করা যায় বিভিন্ন টুল দিয়ে। এটি একজনকে বুঝতে সহায়তা করে তার ভোক্তা কীরকম, কী চায় ইত্যাদি অনেক ব্যাপার নিয়ে। এই বিশ্লেষণ করা সব সময় সহজ না, কারণ ডেটা পাওয়া মানেই তো সব কাজ না। কোন ডেটা নিবেন ও সেটাকে কীভাবে ভাগ করবেন, কীভাবে সেখান থেকে ইনসাইট বের করবেন এগুলি গুরুত্বপূর্ন। নির্ভর করে ব্যবসার প্রকৃতির উপর। পরবর্তী পোস্টে আমি এসব টুল নিয়ে আলোচনা করব।