আমাকে যখন বলা হলো আমি দেখতে মিচেল স্টার্কের মত তখন আমার বিশ্বাস হয় নি। এটা কীভাবে হবে? কেন একজন লোক দেখতে আরেকজন লোকের মত হবে! এটা তো ভয়ংকর কথা।
আমি ছবি মিলিয়ে দেখেও তেমন মিল পাই নি। কিন্তু অনেকে বললেন আছে আছে। তখন আমার নিজের প্রতিই সংশয় হল। তবে কি আমি নিজেকেই চিনি না? কোন এক বৈশাখী মেলায় বা জনবহুল কোন বাস্তবতায় যদি হারিয়ে দেয়া হয়, তাহলে নিজেকে চিনে বের করতে পারব কি?
এই গল্পটি আমাকে বলেছিলেন জুনেদ চাচা, এবং তিনি আমাকে ভালো করে বলে দিয়েছিলেন যে, যেন কখনো এই গল্পটি আমি কাউকে না বলি, কারণ তিনি যেখান থেকে তথা যে পরিবার থেকে গল্পটি শুনেছিলেন তারা এটি লুকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে গল্পটি আপনাদের সবাইকে বলা দরকার, এবং আমার অবস্থান ব্যাখ্যা দরকার।
অনেক আগে, যখন জুনেদ চাচা যুবক ছিলেন তখন তিনি গল্পটি শুনেন। সুইফট সাহেবের ছেলে জন থাকে গল্পটি বলে, এই জন ছিল চাচার ভালো বন্ধু। গল্পটি জনের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের, এবং নিজের চোখে দেখা। তাই অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
এক ছা পোষা সাধারণ লোক ছিলেন গ্রাহাম গ্রীন নামে। তিনি যখন যুবক তখন একবার পত্রিকায় জন উইলিয়াম ওয়াকার নামক একজন বিখ্যাত সেলিব্রেটির ছবি দেখতে পান, এবং অবিশ্বাস্য ভাবে আবিষ্কার করেন তার সাথে লোকটির চেহারার মিল।
এই উইলিয়াম ওয়াকার ফিল্মে অভিনয় করতেন। বয়সও তাদের প্রায় কাছাকাছি।
এমতাবস্থায়, গ্রীন সাহেবের ইচ্ছা হয় একদিন তিনি জন উইলিয়াম ওয়াকারের সাথে দেখা করবেন। তিনি যখন অভিনেতাটির অভিনয় দেখতেন তখন তার মনে হত তিনি নিজেই যেন অভিনয় করছেন। এজন্য প্রতিটি ফিল্ম তিনি কয়েকবার করে দেখতে লাগলেন। এভাবে দেখতে দেখতে তিনি লোকটির অভিনয়ের ভক্ত হয়ে গেলেন, কিন্তু ব্যাপারটি তার কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হলো, কারণ তার কাছে মনে হচ্ছিল তিনি যেন নিজেরই ভক্ত হয়েছেন, আর প্রায় সকল মানুষই তো নিজের সবচাইতে বড় ভক্ত হয়ে থাকেন।
গ্রাহাম গ্রীন বিয়ে করেন। বউ বাচ্চা সংসার হয়। ছোট কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। জাগতিক ঝামেলায় জড়িয়ে যান।
তিনি জন উইলিয়াম ওয়াকারের হাঁটার স্টাইল, কথা বলার ভঙ্গি, পোশাক এবং চুল আঁচড়ানোর ধরণ ইত্যাদি অনুকরণ করছিলেন যুবা বয়স থেকেই। কারণ তার ইচ্ছা ছিল একদিন উইলিয়াম ওয়াকারের সামনে গিয়ে থাকে চমকে দিবেন।
কিন্তু সেই সময় ও সুযোগ হচ্ছিল না।
একবার গ্রাহাম গ্রীন খুবই মারাত্মক দূর্ভাগ্যে পতিত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান (খুবই অল্পের জন্য)। তিনি একটি ট্রেইনে করে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে হঠাৎ তার ইচ্ছা হলো এক কাপ গরম কফি খাবেন। এই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তিনি ট্রেইন মিস করেন, আর সেই ট্রেইন চলে যায় এবং সেদিনই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে, ও প্রচুর লোক হতাহত হয়।
এই ঘটনা গ্রীনকে জীবন সম্পর্কে একটি ভিন্ন উপলব্ধি দেয়। তিনি বুঝতে পারেন জীবন খুব অনিশ্চিত ও যেকোন সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই বর্তমানেই বাস করা উচিত। যা প্রিয় ও পছন্দের কাজ তা করে ফেলা উচিত।
গ্রীন তার প্রিয় কাজ যা তিনি করতে চান এর তালিকা বানাতে গিয়ে প্রথমেই পেলেন তিনি জন উইলিয়াম ওয়াকারের সাথে দেখা করতে চান। এটা হবে একটা চমৎকার অনুভূতি। দারুণ উত্তেজনাকর। একইরকম দুইজন মানুষ, একইরকম স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে, বা পরস্পর হাত মেলাচ্ছে।
গ্রীন জন উইলিয়াম ওয়াকারের সাম্প্রতিক চেহারা ও স্টাইল নিয়ে জানলেন।
অতঃপর সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করে নিয়ে চললেন উইলিয়ামের বাসার দিকে। যা হয় হবে। একদিন দেখা না হলে আরেকদিন হবে। এই চেষ্টার মধ্যেও মজা আছে।
গ্রীন খুব আনন্দ পাচ্ছিলেন তার যাত্রায়। পথে বড় হ্যাট দিয়ে, লম্বা কোট পরে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন, কারণ জন উইলিয়াম ওয়াকার বিখ্যাত লোক। অন্য মানুষেরা দেখতে পেলে তাকে ওয়াকার মনে করে বসতে পারে।
গ্রীন বিকেলের দিকে উইলিয়ামের বাড়ির সামনে গেলেন। গেইট খোলা ছিল, তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন।
কয়েকজন মানুষ তিনি দেখতে পেলেন মনমরা হয়ে ঘুরছে। তিনি তাদের কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
একসময় তার মনে হলো এবার হ্যাট খোলে ফেলা যাক। তিনি খুলে ফেললেন।
মানুষজন, যারা তাকে দেখছিল তাদের মধ্যে একটা সন্ত্রস্ত চঞ্চলতা চলে এলো। দু’জন লোক খুব দ্রুত এগিয়ে এসে ধরে গ্রীনকে নিয়ে যেতে লাগল বিল্ডিং এর বাইরে।
ধ্বস্তাধ্বস্তির মধ্যেই একজন গুলি করে দেয় গ্রীনকে। গ্রীন লুটিয়ে পড়েছেন। অবাক হয়েই মারা যান।
দু’টি লাশই পাওয়া যায় বিল্ডিং এ। ওয়াকারের কয়েকজন শত্রু তাকে হত্যা করেছিল সেদিন বিষ খাইয়ে। পরবর্তীতে এরা যখন গ্রীনকে দেখতে পায় তখন মনে করতে থাকে কোন ভাবে ওয়াকার বেঁচে গেছেন। সন্ত্রস্ত হয়ে তারা গ্রীনকে খুন করে ফেলে।
একই দিনে, দুইজনই মারা যান।
এই হলো গল্পটি। এটি যেহেতু সত্য গল্প বলে আমি মানি, তাই আমি কখনো মিচেল স্টার্কের সাথে দেখা করতে চাই না। হ্যা, পুরোপুরি মিল না হলেও। কখন কী হয় বলা যায় না। সাবধান থাকা ভালো। কী বলেন?