জানার বিভ্রান্তি বিষয়ে কগনিটিভ সাইন্টিস্ট স্টিভেন স্লোম্যানের সাক্ষাৎকার
জ্ঞান, মানুষের জানার বিভ্রান্তি, কগনিটিভ বায়াস এই ব্লগের প্রধান বিষয়গুলির মধ্যে পড়ে। কগনিটিভ সাইন্টিস্ট স্টিভেন স্লোম্যান এসব নিয়ে গবেষণা করেন। তার গবেষণা এবং এর দ্বারা আহরিত জ্ঞান অবলম্বনে তিনি কথা বলেছেন ভক্সের শন ইলিং এর সাথে। এই কথোপকথনটি ভক্সে প্রকাশিত হয় ৩ নভেম্বর ২০১৭। গুরুত্বপূর্ন এই সাক্ষাৎকারটি বিজ্ঞান ভিত্তিক উপাত্তের আলোকে আমাদের চিন্তার সীমাবদ্বতা দেখিয়ে দেয়, ও মূর্খতা এবং মূর্খতাজনিত ঔদ্বত্যের বিরুদ্ধে সাবধান করে। এটি বাংলায় ভাবানুবাদ বা ভাষান্তর করা হলো ব্লগের পাঠকদের জন্য।
– মুরাদুল ইসলাম। ১১ নভেম্বর, ২০১৭।
কেন মানুষ জানার ভাণ করে? কেন প্রায়ই আত্মবিশ্বাস মূর্খতার বা কম জানার সমানুপাতে বাড়তে থাকে? স্টিভেন স্লোম্যান, একজন কগনিটিভ সাইন্সের অধ্যাপক, পড়ান ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে। তার কাছে আমাদের এইসব প্রশ্নের দারুণ উত্তর আছে।
“নিজের ন্যাযতা বিষয়ক অনুভূতিকে রক্ষা করার জন্য এক ধরনের বায়াস বা পক্ষপাতিত্ব আছে আমাদের। এবং আমাদের এই পক্ষপাতিত্বটা করতেই হয়।” বলেন তিনি।
তিনি লিখেছেন বই, “দ্য নলেজ ইল্যুশনঃ হোয়াই উই নেভার থিংক এলোন”। স্লোম্যানের রিসার্চের বিষয় হলো জাজমেন্ট, ডিসিশন মেকিং, এবং রিজনিং বা যৌক্তিক বিচার। তিনি বিশেষভাবে মানুষের জানার বিভ্রান্তি, বা সে বিশ্বাস করে জানে কিন্তু আসলে জানে না (দ্য ইল্যুশন অব এক্সপ্লেনেটরী ডেপথ)- এই বিষয়ে আগ্রহী।
আমাদের কেন এই জ্ঞানের বিভ্রান্তি? স্লোম্যান বলেন, কারণ আমাদের জ্ঞানের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
“অন্যেরা কী ভাবছে এর উপর বহুলাংশে নির্ভর করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, মনোভাব তৈরী করি এবং বিচার করে থাকি।”
আমাদের চারপাশের লোকেরা কোন বিষয়ে ভুল হয়ে থাকলে, খুব সম্ভবত আমরাও ঐ বিষয়ে ভুল হয়ে থাকব।
এই সাক্ষাৎকারে আমি এবং স্লোম্যান কথা বলেছি মানুষের অপরীক্ষিত বিশ্বাস তথা অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি তার গবেষনার রাজনৈতিক প্রয়োগের ব্যাপারে, এবং এই ইন্টারনেটের যুগে “ফেইক নিউজ” ও “বিকল্প সত্য” আমাদের কগনিটিভ বায়াসকে আরো খারাপ করে তুলছে কি না সে বিষয়ে।
কথোপকথনটি হালকা সম্পাদনা করা হয়েছে বুঝার সুবিধার জন্য এবং দৈর্ঘ্যের কথা মাথায় রেখে। – শন ইলিং।
শন ইলিং- কীভাবে মানুষ নিজের মত (বা অপিনিয়ন) তৈরী করে?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ মানসিক এবং অনুভূতির যে সমষ্টি আমাদের মনোভাব তৈরী করে তা আমাদের সামাজিক গ্রুপ দ্বারা বেশী প্রভাবিত হয়, সত্যের চাইতে। প্রাণী হিসেবে খুব যুক্তিবাদী নই আমরা। অধিকাংশ মানুষই চিন্তা করতে পছন্দ করে না বা পছন্দ করে যত কম চিন্তা করে থাকা সম্ভব সেভাবে থাকতে। অধিকাংশ বলতে এখানে আমি প্রায় সত্তুর শতাংশ লোকের কথা বলছি। এবং বাকী যারা আছে তারাও বেশীরভাগ সময় ও শক্তি ব্যয় করে নিজেদের পূর্ব বিশ্বাসকে জাস্টিফাই করতে। শুধু ফ্যাক্ট বা সত্যের উপর নির্ভর করে নতুন মত তৈরী করতে তারা এতটা সচেষ্ট নয়।
চিন্তা করুন, আপনি এমন একটি সত্য বলতে যাচ্ছেন যা আপনার সামাজিক গ্রুপের মতের বিরুদ্ধে যায়। আপনাকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে। আমি যদি বলি যে আমি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছি তাহলে আমার একাডেমিক কলিগেরা ভাববে আমি উন্মাদ। তারা আমার সাথে কথা বলতে চাইবে না। এই সামাজিক চাপ আমাদের প্রায়ই সামাজিক গ্রুপের পূর্বে ঠিক করা মতেই স্থির থাকতে প্রভাবিত করে।
শন ইলিং- এটা যেন অন্যভাবে বলা যে আমরা একটি জ্ঞান সমাজে বাস করি।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ একদম ঠিক। আমার বিশ্বাস, আমাদের প্রতিটি চিন্তাই অন্যদের মাথায় চলতে থাকা চিন্তার উপর নির্ভর করে। যখন আমি রাস্তা পার হতে যাই, তখন রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ির ড্রাইভারের চিন্তার উপরেই আমার পদক্ষেপ নির্ভর করে। আমি যদি বাসে উঠি, তাহলে ঠিক জায়গায় পৌছানো নির্ভর করে বাসচালকের মাথায় চলতে থাকা চিন্তার উপরে।
যখন আমি অভিবাসন সমস্যা নিয়ে আমার মনোভাব প্রকাশ করছি, তখন আসলে আমি করছিটা কী? আমি অভিবাসন নিয়ে কী জানি? আমি খুবই সীমাবদ্ধ এক দুনিয়ায় বাস করি, এবং তাই আমাকে অন্যদের বিশ্বাস ও জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে হয়। আমি জানি যা আমি পড়েছি, যা আমি বিশেষজ্ঞদের মুখে শুনেছি। আমার অভিবাসন নিয়ে সরাসরি কোন অভিজ্ঞতা নেই। আমি সীমান্তবর্তী এলাকায় যাই নি এবং নিজে থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষন করি নি।
এইদিকে থেকে দেখলে, যেসব সিদ্ধান্ত আমরা নেই, নিজের যেসব মনোভাব আমরা তৈরী করি, যেসব বিচার আমরা করে থাকি, সেগুলি অন্য মানুষদের চিন্তার উপর বহলাংশে নির্ভর করে।
শন ইলিং– এর বিপদ আছে নিশ্চয়ই?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ এক বিপদ হলো যদি আমি মনে করি আমি ব্যাপারটি বুঝেছি কারন আমার চারপাশের লোকেরা ভেবেছে যে তারা বুঝেছে, এবং তারা বুঝেছে ভেবেছে কারণ তাদের আশপাশের লোকেরা ভেবেছে নিজেরা বুঝেছে, তখন ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে, আমরা সবাই ভেবেছি আমরা ব্যাপারটা বুঝেছি কিন্তু কারোরই ধারণা নেই তারা কী নিয়ে কথা বলছে।
শন ইলিং- আমি এই সমস্ত ব্যাপারটিকে রাজনৈতিক পরিবেশের দিক থেকে ভাবার চেষ্টা করছি। আমরা বেশীরভাগেই আসলে আমরা যতটা বুঝি বলে ভাবি ততোটা বুঝি না, কিন্তু তবুও আমরা সবাই নানা ইস্যুতে মারাত্মক আত্মবিশ্বাসী। তাই, যখন আমরা রাজনীতি নিয়ে তর্ক করি, তখন আসলে আমরা কী বিষয়ে তর্কটা করছি? এটা কী ন্যায্য কোনটা সে বিষয়ে, নাকী ন্যায্যতা বিষয়ে আমাদের অনুভূতিটিকে বাঁচানোর জন্য?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ আমি নিশ্চিত না ন্যায্য জিনিস চাওয়া এবং ন্যাযতা বিষয়ে আমাদের অনুভূতির মধ্যে বড় কোন পার্থক্য আছে কি না। অন্য সব বিষয়ের মত রাজনীতিতেও আমরা সত্য কি তা শুনি বা দেখি না, আমরা সমাজের লোকদের মতের উপর নির্ভর করি। তাই তর্কটা হয়, অন্যকে কনভিন্স করতে, তখন আমরা নিজেদেরও কনভিন্স করার চেষ্টা করতে থাকি।
অবশ্যই ন্যায্যতা বিষয়ক আমাদের অনুভূতিকে রক্ষা করতে আমাদের পক্ষপাতিত্ব থাকে, কিন্তু এটা আমাদের করতে হবে। তা না হলে নতুন নতুন ইস্যুতে আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের আগের তর্কটা হয় অর্থহীন।
এটা বলা বাহুল্য যে, কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তা নিয়ে লোকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। প্রত্যেকের মধ্যেই এক অন্ধ তাড়না আছে নিজে ঠিক হিসেবে পরিচিত হবার, তারা চায় তাদের আশপাশের লোকেরা জানুক তারা ঠিক। এবং এটি করা একেবারেই সহজ। আশপাশের লোকেরা যা শুনতে চায় বা বলে তাই বলতে হয় এজন্য। আর যেসব লোকেরা একটু বেশী কারিৎকর্মা এরা তার আশপাশের লোকদের পূর্বধারণার সাথে মিলে এমন নতুন সত্য (ফ্যাক্টস) বের করে এবং তা দিয়ে সমাজের ঐ পূর্বধারনাটিকেই উপস্থাপন করে।
কিন্তু কিছু লোক সাধারণ মানুষের দলের চিন্তার বাইরে গিয়ে, নিজেরা দেখতে যায় ঐ মত সত্য কি না, তারা তথ্য উপাত্ত সহকারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ও এই তথ্য উপাত্ত যে ফলাফল দেয় সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত বা মত সাধারণ লোকদের পূর্বধারনার সাথে মিললো কি না এ ব্যাপারে তার কোন চিন্তা নেই। আসলে এমন কাজের জন্য কিছু পেশার লোককে রীতিমত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেমন বৈজ্ঞানিক, বিচারক, ময়না তদন্তকারী, ডাক্তার ইত্যাদি। কিন্তু প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও তারা সব সময় তথ্য উপাত্ত যে ফলাফল দেয় সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেন না, প্রায়ই নেন না, কিন্তু তাদের তা করা উচিত।
এমন সমাজে আমি বাস করতে চাই যেখানে সামাজিক পূর্বধারণা বা মতের বিরুদ্ধে গেলেও যেন ন্যায্য অবস্থান নিতে উৎসাহিত করা হয়। এই ধরনের সমাজে বাস হবে সবসময় একটা উত্তেজনাপূর্ন অবস্থায় থাকা, কিন্তু তবুও সে সমাজে বাস করার জন্য জন্য তা মেনে নেয়া যায়।
শন ইলিং- “ইল্যুশন অব এক্সপ্লেনেটরী ডেপথ” (মানুষ মনে করে স্পষ্ট এবং গভীরভাবে সে কোন বিষয় বুঝেছে। একটি জ্ঞানগত বিভ্রান্তি।) কিন্তু বাম এবং ডান উভয় পক্ষের লোকদের জন্য প্রযোজ্য। এটা দলের সমস্যা নয়, মানব সমস্যা।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ একদম ঠিক, এবং আমাদের তথ্য উপাত্ত তা স্পষ্টভাবেই দেখিয়ে দেয়।
শন ইলিং- কীভাবে আপনি উপাত্ত সংগ্রহ করেন? কী ধরনের পরীক্ষা করেছেন?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ আমি আমার ল্যাবে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি। আমরা আমেরিকান বিভিন্ন গ্রুপের কিছু লোক নিয়েছি, তাদের বিভিন্ন অনুমান নির্ভর প্রশ্ন করে উত্তর নিয়েছি। কোন রাজনৈতিক পলিসি সম্পর্কে লোকদের জানার বিভ্রান্তি বের করার জন্য আমরা তাদের বলেছি ঐ পলিসি সম্পর্কে তাদের মনোভাব রেইট করার জন্য এবং এরপর পলিসিটি সম্পর্কে তারা কী বুঝে তা ব্যাখ্যা করার জন্য (এটা কী, এর ফল কী হবে।), এবং এরপর আবার আমরা তাদের বলেছি ঐ পলিসি সম্পর্কে তাদের বুঝা ও মনোভাব রেইট করার জন্য। আমরা দেখেছি যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করার পর তাদের পলিসি বুঝা ও এ সম্পর্কে মনোভাবের রেটিং কমেছে, গড়ে।
শন ইলিং- আমরা এই যে আমাদের জ্ঞানের অন্য অন্যদের উপর এত নির্ভর করি, এটা কি খারাপ নয়? এটা কি আমাদের বুঝার ক্ষমতা কম থাকার বিপরীতে এক প্রতিক্রিয়া? নিজেরা তো আমরা কেবল অতি অল্পই জানতে পারব, তাই অন্যদের উপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই মনে হয়।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ আমি মনে করি এটি প্রয়োজনীয়। আমাদের আর কোন উপায় নেই। এক মাথা অনেক বিষয়ে জেনে বিশেষজ্ঞ হয়ে যাবে, এটা সম্ভব না। তাই আমাদের অন্যদের উপর নির্ভর করতে হবে। এটা আমাদের অবস্থার সাপেক্ষে এক যৌক্তিক প্রতিক্রিয়াই। যদিও, আমাদের বিভ্রান্তিতে বাস করতেই হবে এমন না। আমরা যদি বুঝি না তাহলে আমাদের ভাবতে হবে না আমরা বুঝি। কিন্তু, এটা আমি বুঝতে পেরেছি যে কিছু লোকের জীবনে বেঁচে থাকতে হলে এই ধারণাটা দরকার যে তারা বুঝেছে।
সমস্যা হচ্ছে, প্রায়, প্রায়ই আমাদের বিশ্বাস থাকে এমন কিছু পলিসি বা মতের পক্ষে যেগুলি পুরোপুরি অযৌক্তিক।
শন ইলিং- এটিই মারাত্মক সমস্যাজনক। না জানা বা মূর্খতা এবং আত্মবিশ্বাস এর মিশ্রণ এক ধ্বংসাত্মক জিনিস। যখন কারো মূর্খতার সমানুপাতে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, তখন আসলে এদের মনযোগ পাওয়ার কোন উপায় থাকে না।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ একদম ঠিক। এটি খুবই বিপদজনক ঔদ্বত্য। এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট তার এক নাম্বার উদাহরণ। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে সেই সমাজের কথা যারা এই সরকার ব্যবস্থাকে নিয়ে এসেছে ক্ষমতায়। ট্রাম্পের মিথ্যা কথা আমি যত ঘৃণা করি, তার চাইতে বেশী আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় যখন দেখতে পাই ৪৪ ভাগ আমেরিকান জনগন ট্রাম্পের কথাকে মূলধারার মিডিয়ার চাইতে বেশী বিশ্বাস করে।
এটা আমার মাথা খারাপ করে দেয়, কারণ এটিই তাঁকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।
শন ইলিং– এই কারণেই অতি “ফেইক নিউজ” এবং “বিকল্প সত্য” এত ক্ষতিকর।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ ঠিক, আমি ডান ও বাম উভয় দিক থেকেই এ নিয়ে দুশ্চিন্তিত।
শন ইলিং- কোন প্রমাণ আছে কি যে আমরা যুক্তিতে বা যুক্তি দিয়ে বিচারে পারদর্শী হয়ে উঠছি? আমরা কি আস্তে আস্তে আমাদের কগনিটিভ বায়াসগুলি অতিক্রম করছি?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ আট মাস আগে এ বিষয়ে আমার যে প্রতিক্রিয়া ছিল, এখন তার চাইতে অনেক ভিন্ন।
শন ইলিং- আমার মনে হচ্ছে আপনি মনে করেন ইন্টারনেট এবং পরস্পরবিরোধী হিংসাত্মক মিডিয়া গ্রুপগুলি অবস্থাকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।
স্টিভেন স্লোম্যানঃ এটা স্পষ্ট যে আমরা একটি বাবলে আছি যা আগে হয় নি। আমি তো রীতিমত ধাক্কা খেয়েছি এটা জেনে যে প্রায় অর্ধেক আমেরিকান সম্পর্কে আমি কত কম জানি। তারা কীভাবে যে চিন্তা করে তা আমি ভাবতে পারি না। এর পরিবর্তন হয় নি, যদিও আমি চেষ্টা করেছি। তবুও এটাই কথা, আমি ও আমার আশপাশের যারা আছে তারা কোন জিনিসকে একভাবে দেখে এবং গ্র্যান্ড র্যাপিডস, মিশিগানের প্রায় সবাই, ঐ জিনিসগুলিকেই অন্যভাবে দেখে, আমি নিশ্চিত।
ইন্টারনেট স্পষ্টভাবে অবস্থাকে আরো খারাপ করে তুলছে। আমরা সহজেই নিজেদের মত বিশ্বাসীদের নিয়ে অনলাইন কম্যুনিটি তৈরী করতে পারছি। এবং খবরগুলিও আমার কাছে আসছে আমার পছন্দমতো। এমনকী আমি অন্য পক্ষ কী ভাবে তা দেখতে গেলেও, গুগল আমি যা পছন্দ করি তাই আমাকে দেখাচ্ছে।
শন ইলিং- আপনি কি এই সমস্যার বাস্তব কোন সমাধান নিয়ে ভেবেছেন? আমরা কীভাবে আত্ম-সচেতনতা আরো বাড়াতে পারি ও বায়াসড চিন্তা কমাতে পারি? আমরা কীভাবে আরো জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ভিত্তিক সমাজ তৈরী করতে পারি?
স্টিভেন স্লোম্যানঃ যেসব লোক বেশী চিন্তাশীল তাদের এই বিভ্রান্তীতে পড়ার সম্ভাবনা কম। আপনি কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে আপনার চিন্তাশীলতার পরীক্ষা করতে পারেন। এগুলি এরকমঃ মোজেসের নৌকায় বিভিন্ন জাতের কতটি করে প্রাণী ছিল? বেশীরভাগ লোকেই বলবে দুইটি করে। অধিক চিন্তাশীলেরা বলবে শুন্য। (কারণ মোজেস নৌকা বানান নি, নৌকা বানিয়ে ছিলেন নোয়াহ।)
কথা এখানে শেষ মীমাংসায় আসা নয়, মীমাংসাটিকে পরীক্ষা করে দেখা ঠিক কি না। এরকম অনেক কম্যুনিটি আছে যারা পরীক্ষা করে প্রমাণকে উৎসাহিত করে। যেমন বৈজ্ঞানিক, ফরেনসিক, মেডিক্যাল, বিচার বিভাগীয় কম্যুনিটি। অন্য কম্যুনিটিগুলি এমন ব্যবস্থা নিতে পারবে না এমন নয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্যে যা শুনতে চায় তা বলে তাকে খুশি করা, এবং সবাই একমত হবে এমন কথা বলার শক্ত তাড়না মানুষের আছে। এটা আমাদের একটা পরিচয়ের অনুভূতি দেয়। এটি ত্যাগ সহজ নয়।
আমি ও আমার কলিগেরা কাজ করছি এমন এক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী করা যায় কি না, যাতে কথোপকথনে লোকেরা কী দাম দেয়, বিশ্বাস করে সেগুলিতে লক্ষ্য না দিয়ে, বাস্তব ফল কী হবে তা দেখিয়ে দেয়া। যখন ফল কী হবে তা নিয়ে আপনি কথা বলতে যাবেন, আপনাকে বাস্তব ফল নিয়ে ভাবতে হবে, তখন আমাদের সাধারণ কথোপকথনে অনুভূতিকে, পূর্বধারনাকে প্রাধান্য দেয়ার যে অবস্থা, তা বাদ যাবে।