সার্লের চাইনিজ রুমে চিন্তাক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ধরা যাক, একটা কম্পিউটাররে স্টেপ বাই স্টেপ প্রোগ্রাম করে দেয়া হলো চাইনিজ ভাষায় কথোপকথন চালানোর। তারে চাইনিজ বর্নমালা ইত্যাদি দেয়া হল। এবং এরপর একজন চাইনিজ লোক তার সাথে চীনা ভাষায় আলাপ করে গেলেন। তিনি কনভিন্স হয়ে গেলেন যে, তার সাথে তিনি চ্যাট করছেন সে চাইনিজ ভাষা বুঝে।

এই জায়গায় আমরা কি বলতে পারি, ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রাম চাইনিজ ভাষা জানে বা বুঝে?

দার্শনিক জন সার্লের মতে, আমরা বলতে পারি না ঐ প্রোগ্রাম চাইনিজ ভাষা জানে। কারণ সে নির্দিষ্ট কিছু স্টেপ বাই স্টেপ কর্ম অনুসরণ করে যাচ্ছে, যেগুলি তাকে শেখানো হয়েছিল।

আমরা কম্পিউটারের জায়গায় মানুষ বসালেই ধরতে পারব যে, সার্লে কী বলতে চাচ্ছেন।

যেমন এক রুমে আপনাকে রাখা হল। আপনাকে নিয়ম দেয়া হলো কীভাবে চাইনিজ ভাষায় প্রশ্ন আসলে উত্তর দিতে হয়। আপনার বর্নমালা দেয়া হল। এরপর রুমের এক ফাঁক দিয়ে কাগজে করে আপনাকে চাইনিজ ভাষায় জিজ্ঞাস করা হল হাউ আর ইউ ইত্যাদি।

আপনি আপনাকে দেয়া নিয়ম তথা প্রোগ্রাম অনুযায়ী উত্তর দিয়ে গেলেন। কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন। এক পর্যায়ে বাইরের চাইনিজ লোক মনে করবেন আপনি চাইনিজ ভাষা জানেন, কিন্তু আসলেই কি আপনি চাইনিজ ভাষা জানেন? আপনি তো কেবল কিছু নিয়ম অনুসরণ করে গেছেন।

এইভাবে জন সার্লে চিন্তাক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপক্ষে তার যুক্তি দেন।

এখন ধরা যাক, আমরা যে বাংলা ভাষা বুঝি, এই “বুঝি” অর্থটা কি এখানে?

আমাকে যদি বাংলায় বলা হয়, ‘এক গ্লাস পানি দেন’, তাহলে আমি তার কথা বুঝতে পারব। তিনি প্রতিটা শব্দ দিয়ে কি বুঝাচ্ছেন, এবং তাকে এক গ্লাস পানি এনে দিব।

এই বুঝতে পারব কারণ হল, আমার কাছে ‘গ্লাস’ ‘পানি’ ‘আমি’ ইত্যাদি অনেক শব্দ আছে। এগুলির অর্থ আমি জানি, এবং বাংলা ভাষার গ্রামার বা কীভাবে বাক্য তৈরি হয় এটা আমি জানি। তাই বুজতে পারব। চাইনিজ ভাষায় বললে পারব না কারণ ওই ভাষার ক্ষেত্রে শব্দভাণ্ডার গ্রামার ইত্যাদি জানা নেই। জানা থাকলে পারতাম।

ফলে, দেখা যাচ্ছে, আমার ভাষাটা বুঝা, বা যে জিনিশটারে বলা হচ্ছে বুঝা, সেটাতে যেতে বেশি ডেটা লাগবে। এই লজিক অনুযায়ী, কম্পিউটার প্রোগ্রামকে পর্যাপ্ত ডেটা দিলে সেও একইভাবে বাক্যের প্রতিটি শব্দ দ্বারা কী বুঝাচ্ছে, তা বুঝে উত্তর দিবে।

এবং আমাদের ক্ষেত্রে যে “বুঝা” বলা হচ্ছে, যে আমরা ভাষাটা বুঝি, সেটার অর্থ আসলে কী হয়? এক, আমরা কি ওই ভাষার অন্তর্নিহিত কোন অর্থ বুঝি? দুই, নাকি আমাদের কাছে ভাষার গ্রামার, শব্দ, ব্যবহারের কমন নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে যে ডেটা আছে, সেই অনুপাতে আত্মীকরণ করে থাকি?

দ্বিতীয়টার পক্ষে যুক্তি হল, এখন ল্যাটিন বা গ্রিক আমি ‘বুঝব’ না, কারণ আমার কাছে ওই ভাষার ডেটা নাই।

এবং এই দ্বিতীয়টা হলে, একই জিনিশ কম্পিউটার প্রোগ্রামের পক্ষে সম্ভব। ফলে চিন্তাক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্ভব।