লিটল প্রিন্স সম্পর্কে কিছু কথা
ধারনা করা হয়, এই বই হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ভাষার সবচেয়ে বেশি পঠিত ও অনুদিত বই। ফ্রান্সে ভোটের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে সেরা বই নির্বাচিত হয়েছিল এটি। এ পর্যন্ত ২৫০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং মোট বিক্রির পরিমান প্রায় ১৪০ মিলিয়ন কপি!
ডিসেম্বর ৩০, ১৯৩৫ সালে আন্তোইন দি সেইন্ট জুঁপেরী (বা অঁতোয়ান দ্যা স্যাঁৎ-একজ্যুপেরি, উচ্চারন নিয়ে সন্দেহ আছে) অর্থাৎ এই বইয়ের লেখক তার বিমান নিয়ে সাহারা মরুভূমিতে দূর্ঘটনায় পড়েন। তার সাথে ছিলেন আন্দ্রে রিভট। তারা রেইড নামে একটা রেসে ছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল পূর্বের একটা স্পিড রেকর্ড ভাঙ্গা এবং ১৫০০০০ ফ্রাংক পুরস্কার জেতা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা সম্ভব হয় নি। প্লেন ক্র্যাশ করে এবং সৌভাগ্যজনকভাবে তারা বেঁচে যান।
কিন্তু বেঁচে গিয়ে পড়লেন আরো বিপদে। জনশূন্য মরুভূমিতে খাদ্য এবং পানিবিহীন। প্রচন্ড সূর্যতাপে পানিশুন্যতা দেখা দিল। তাদের বিভিন্ন ধরনের হ্যালোসিনেশন শুরু হল। সৌভাগ্যক্রমে চতুর্থ দিনে একদল যাযাবর বেদুঈনের কাফেলা তাদের দেখা পায় এবং সেই বিশাল নিষ্ঠুর মরুভূমি থেকে উদ্ধার করে।
এই ছোট নভেলায় মূল কাহিনী একজন বৈমানিক যিনি প্লেন ক্র্যাশ করে সাহারা মরুভূমিতে গিয়ে পড়েন। তা মূলত জুঁপেরীর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে।
আন্তোইন দি সেইন্ট জুঁপেরী
আন্তোইন দি সেইন্ট জুঁপেরী (নামের প্রকৃত উচ্চারন) ছিলেন ফ্রান্সের একজন কবি, লেখক এবং প্রসিদ্ধ বৈমানিক। জন্মেছিলেন ১৯০০ সালের ২০ জুন। মৃত্যুবরন করেন ৩১ জুলাই ১৯৪৪ সালে। তার সবেচেয়ে বিখ্যাত বই “দ্য লিটল প্রিন্স”। তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এবং আমেরিকার ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড ও পেয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ থেকেই তিনি বিখ্যাত বৈমানিক ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে ফ্রেঞ্চ এয়ার ফোর্সে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে ফ্রান্স জার্মানীর সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষনার পর তিনি ফ্রেঞ্চ এয়ার ফোর্স থেকে অব্যাহতি নিয়ে আমেরিকায় চলে যান আমেরিকাকে নাৎসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করতে।
১৯৪০ সালে ফ্রান্স যখন জার্মানীর সাথে যুদ্ধবিরতি করে তখন চার্লস দি গলে তা মেনে নেন নি এবং গঠন করেন ফ্রান্স ফ্রি ফোর্স। এই ফোর্সের কাজ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে্র অক্ষশক্তি তথা জার্মানী, জাপান এবং ইটালীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া। তাদের এয়ার ফোর্সের নাম ছিল ফ্রি ফ্রান্স এয়ার ফোর্স। আন্তোনিও ডি সেইন্ট এক্সুপেরী অভিজ্ঞ পাইলট হিসেবে উত্তর অফ্রিকায় এই ফোর্সে যোগ দেন। ১৯৪৪ সালের জুলাইয়ে এর একটি মিশনে তিনি হারিয়ে যান এবং ধারনা করা হয় মারা যান।
তার স্মৃতিকথা Terre des homes নামে একটি বড় মানবতাবাদী সংঘটনের নামকরন করা হয়েছে।
দ্য লিটল প্রিন্স
আন্তোইন ডি সেইন্ট জুঁপেরী
লেখকের অন্যান্য বইঃ The Aviator, Southern Mail, Night Flight…
ফ্রেঞ্চ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদঃ ক্যাথরিন উডস
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদঃ মুরাদুল ইসলাম
উৎসর্গ
লিয়ন উয়ের্থকে।
যেসব ছোটরা এই বইটি পড়বে তাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই বইটি একজন বড় মানুষকে উৎসর্গ করার জন্য। এ জন্য অবশ্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছেঃ সে এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আরেকটি কারণঃ সে সবকিছু বুঝতে পারে। ছোটদের জন্য লেখা বইও। তৃতীয় কারণঃ সে ফ্রান্সে ঠান্ডা এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাস করছে। তার আনন্দের প্রয়োজন। এই কারণগুলি যদি যথার্থ মনে না হয়, তাহলে আমি বইটি উৎসর্গ করব সেই ছোট বাচ্চাটিকে যার থেকে এই লিয়ন ওয়ের্থ বড় হয়ে উঠেছে। সব বড়রাই একসময় ছোট বাচ্চা ছিল, যদিও খুব কম সংখ্যক বড় মানুষ তা মনে রাখেন।
আমি আমার উৎসর্গকে ঠিক করছিঃ
লিয়ন ওয়ের্থকে
যখন সে ছোট বালক ছিল।
অধ্যায়-১
আমরা এই বইয়ের কথকের সাথে পরিচিত হলাম। তিনি একজন পাইলট। এখানে বয়স্ক বা বড় মানুষদের প্রতি তার চিন্তাভাবনাও আমরা জানতে পারলাম।
যখন আমার ছয় বছর বয়স তখন একটা বইয়ে অসাধারণ এক ছবি দেখি। বইটির নাম ছিল স্টোরিজ ফ্রম দ্য নেচার। এটা ছিল বহু প্রাচীন এক বনভূমি নিয়ে। ছবিটা হল একটি বোয়া কনস্ট্রিকটর অন্য একটি প্রাণীকে গিলে ফেলছে এরকম ছবি।
ছবিটির একটি কপি নিচে দেয়া হলঃ
বইয়ে লেখা ছিল, বোয়া কনস্ট্রিকটর তাদের শিকারকে না চিবিয়ে পুরোটা গিলে ফেলে। এরপর তারা নড়তে পারে না। প্রায় ছয় মাস তাদের ঘুমিয়ে কাটাতে হয় এই খাদ্য পরিপাকের জন্য।
আমি জঙ্গলের উত্তেজনাপূর্ন জীবনের কথা গভীরভাবে চিন্তা করলাম। কিছুক্ষণ রঙ পেনসিল দিয়ে চেষ্টা করার পর আমি আমার জীবনের প্রথম ছবিটি আঁকতে সক্ষম হই। আমার জীবনে আঁকা প্রথম ছবি। ছবিটি দেখতে ছিল এরকমঃ
আমি আমার এই সেরা চিত্রকর্মটি বড়দের দেখালাম। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, এই ছবি দেখে তারা আতংকিত বোধ করছে কি না।
কিন্তু তারা উত্তর দিল, আতংক? মানুষ কেন একটা হ্যাটের ছবি দেখে ভয় পাবে?
আমার ছবিটি হ্যাটের ছবি ছিল না। এটা ছিল বোয়া কন্সট্রিকটর একটা হাতিকে হজম করছে এরকম ছবি। কিন্তু যেহেতু বড়রা আমার ছবিটি বুঝতে পারল না তাই আমি আরেকটি ছবি আঁকলাম। আমি বোয়া কন্সট্রিকটরের ভেতর দিকটা আঁকলাম। যাতে বড়রা সহজে দেখতে পারে। বড়রা সবকিছুর ব্যাখ্যা চায়। আমার দ্বিতীয় ছবিটা দেখতে ছিল এরকমঃ
এই ছবি দেখে বড়রা আমাকে উপদেশ দিল বোয়া কন্সট্রিকটরের ছবি ভিতর বা বাইরে সবদিক থেকেই আঁকা বন্ধ করে ভূগোল, ইতিহাস, গণিত এবং ব্যাকরনে মনযোগ দিতে। এই কারণেই, ছয় বছর বয়সে আমাকে একজন চিত্রশিল্পীর সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। আমি আমার ছবি নাম্বার ১ এবং ছবি নাম্বার ২ এর ব্যর্থতায় হতাশ হয়েছিলাম। বড়রা তাদের নিজ থেকে সহজে কিছু বুঝতে চায় না এবং ছোটদের জন্য এটি বিরক্তিকর বার বার তাদের ব্যাখ্যা করে সব বুঝানো।
তাই আমাকে অন্য পেশা বেছে নিতে হল। আমি বিমান চালনা শিখলাম। আমি বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় সামান্য উড়াউড়ি করলাম। এটা সত্যি, এক্ষেত্রে ভূগোলের জ্ঞান আমাকে খুব সাহায্য করেছিল। এক পলক তাকিয়েই আমি চীন এবং আরিজোনার পার্থক্য বুঝতে পারি। মধ্যরাতে কেউ যদি হঠাৎ হারিয়ে যায় তাহলে এরকম জ্ঞান খুব কাজে দেয়।
এই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার অনেক অসাধারণ এবং বিচক্ষণ মানুষের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। বড়দের সাথে চমৎকার উঠাবসা হয়েছে। আমি অনেক কাছ থেকে, অনেক ভালোভাবে তাদের দেখেছি। এতকিছুর পরেও তাদের প্রতি আমার পূর্বের ধারণার কোন পরিবর্তন হয় নি।
যখন কথাবার্তায় আমার কাউকে বেশ পরিস্কার বুদ্ধিসম্পন্ন মনে হত আমি তাকে আমার সেই প্রথম আঁকা ছবিদুটো দেখিয়ে পরীক্ষা করার চেষ্টা করতাম। ছবিদুটোকে আমি সবসময় সাথে সাথে রাখতাম। আমি দেখতে চাইতাম সে ছবি দুটো বুঝে কি না।
কিন্তু সে যাই হোক না কেন, ছবি দেখে বলত, এটা তো একটা হ্যাট। তখন আমি তার সাথে বোয়া কন্সট্রিকটর বা প্রাচীন জঙ্গল কিংবা তারাদের নিয়ে কোন কথা বলতাম না। আমি নিজেকে তার স্তরে নামিয়ে নিয়ে তার সাথে গলফ, রাজনীতি, নেকটাই, ব্রিজ এসব নিয়ে কথা বলা শুরু করতাম। এবং বড়রা এসব কথা শোনে আমার মত বিচক্ষণ ব্যক্তির দেখা পেয়ে খুশি হত।
অধ্যায়-২
কথক মরুভুমিতে বিমান দূর্ঘটনায় পতিত হলেন। তার সাথে পরিচয় হল ছোট রাজপুত্রের।
তাই মোটামোটি আমি একটি একা জীবন কাটাচ্ছিলাম। ঠিকমত কথা বলার মত আসলে কেউ ছিল না, ছয় বছর আগে সাহারা মরুভুমিতে বিমান দূর্ঘটনায় পতিত হবার আগ পর্যন্ত। আমার বিমানের ইঞ্জিনে কিছু একটা ভেঙে গিয়েছিল। সাথে কোন যাত্রী বা মেকানিকও ছিল না। একা একা যন্ত্র ঠিক করা ছিল অনেক কঠিন কাজ। আমার জন্য প্রশ্ন ছিল একটাইঃ জীবন অথবা মৃত্যু। মাত্র এক সপ্তাহ বেঁচে থাকার মত পানি ছিল সাথে।
প্রথম দিন আমি বালিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। মানব বসতি থেকে সহস্র মাইল দূরে। মাঝ সমুদ্রে বিধ্বস্ত জাহাজের একলা নাবিকের চেয়েও বেশী একা ছিলাম আমি।
পরদিন আমার ঘুম ভাঙল অদ্ভুত ক্ষীণ একটি কন্ঠ শোনে। কন্ঠটি বলছিল,
“দয়া করে আমাকে একটা ভেড়া একে দাও!”
“কী?”
“আমাকে একটা ভেড়া এঁকে দাও!”
বিস্ময়ে হতবাক আমি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। চোখ কচলে নিলাম ভাল করে। চারপাশটা ভাল করে দেখলাম। দেখলাম একজন অদ্ভুত ছোট মানুষ আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। এখানে তার একটি ছবি যা আমি পরে এঁকেছিলাম তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। তবে এই ছবি তার মডেল থেকে অনেক কম আকর্ষনীয় হয়েছে।
এটা আমার দোষ না। বড়রা আমাকে ছবি আঁকার প্রতি নিরুৎসাহিত করেছে সেই ছয় বছর বয়সেই। আমি আর কোন কিছুই আঁকা শিখিনি শুধুমাত্র ভেতর থেকে বোয়া কনস্ট্রিকটর এবং বাইরে থেকে বোয়া কনস্ট্রিকটরের ছবি ছাড়া।
আমি অবাক বিস্ময়ে আমার সামনে হঠাৎ আগত এই চেহারা পর্যবেক্ষণ করলাম। মনে পড়ল বিমান ক্র্যাশ করে আমি জনমানবহীন এই মরুভুমিতে এসে পড়েছি। কিন্তু এই ছোট মানুষকে মনে হচ্ছে না সে পথ ভুল করে এসে পড়েছে। ক্ষুধা, ভয় কিংবা দুশ্চিন্তার কোন চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না তার মধ্যে। তার মাঝে এমন কিছু নেই যাতে বুঝা যায় সে এই মাঝ মরুভুমিতে পথ হারিয়েছে।
আমি যখন কথা বলার মত অবস্থায় পৌছলাম তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু……তুমি এখানে কী করছ?
যেন সে খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে কথা বলছে এমন শান্তভাবে বলল, “দয়া করে আমাকে একটি ভেড়া এঁকে দাও।”
যখন কোন রহস্যজনক বিষয় মহাশক্তিধর রুপে আবির্ভুত হয় তখন তাকে এড়ানো যায় না। শুনতে হয়ত অদ্ভুত ঠেকাবে, মানব বসতি থেকে অনেক অনেক দূরে, বিশাল মরুভুমিতে যখন আমি হয়ত মৃত্যুর কাছাকাছি, তখন পকেট থেকে কাগজ এবং ফাউন্টেন পেন বের করলাম। তারপরই আমার মনে হল আমি কীভাবে শুধু ভূগোল, গণিত, ইতিহাস বা ব্যাকরনে মনোযোগ দিয়েছি এসেছি এতদিন ধরে। আমি ছোট বালকটিকে বললাম, “আমি ছবি আঁকতে জানি না”।
সে উত্তর দিল, “তাতে কিছু আসে যায় না। আমাকে একটি ভেড়া এঁকে দাও।”
আমি কখনো ভেড়া আঁকি নি। তাই যে দুটি ছবি আমি এঁকেছিলাম তার মধ্য থেকে একটি আমি তাকে এঁকে দিলাম। এটা ছিল বাইরে থেকে একটা বোয়া কন্সট্রিকটরের ছবি। আমি অবাক হয়ে শুনতে পেলাম আমার ছোট্ট বন্ধু বলছে…
“না না…আমি বোয়া কন্সট্রিকটরের ভিতরে একটি হাতির ছবি চাই না। বোয়া কন্সট্রিকটর একটি বিপদজনক প্রাণী। আর হাতি অনেক বড়। যেখানে আমি থাকি সেখানে সব কিছুই ছোট ছোট। আমি একটি ভেড়া চাই। আমাকে একটি ভেড়া এঁকে দাও।”
তারপর আমি একটি ছবি আঁকলাম।
সে সতর্কভাবে ছবিটির দিকে তাকাল । তারপর বলল, “এটি একটি অসুস্থ ভেড়া। আরেকটি এঁকে দাও।”
তাই আমি আরেকটি আঁকলাম।
আমার বন্ধু ছবিটি দেখে শান্তভাবে হাসল।
বলল, “দেখো, এর দুটি শিং আছে। এটি পুরুষ ভেড়া। এটি হয় নি।”
সুতরাং আমাকে আরেকটি ছবি আঁকতে হল।
কিন্তু অন্যগুলোর মত এটিও প্রত্যাখ্যাত হল।
সে বলল, “এটি একটি বুড়ো ভেড়া। আমি একটা ভেড়া চাই যে অনেকদিন বাঁচবে।”
ততক্ষনে আমার বিরক্তি এসে গেছে। আমার ইঞ্জিন নিয়েও কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি ছবি আঁকা শেষ করতে চাইলাম এই ছবি এঁকে
আমি ছবির একটা ব্যাখ্যাও দিয়ে দিলাম, “এটা একটা বাক্স। তুমি যে ভেড়াটা চাচ্ছ তা এই বাক্সের ভিতরে আছে।”
আমি আমার ছোট্ট বিচারকের মুখভঙ্গি দেখে অবাক হলাম। সে বলল, “আমি এটাই চেয়েছিলাম। আচ্ছা, তুমি কি মনে কর ভেড়াটি ভেতরে পর্যাপ্ত ঘাস পাবে?”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”
সে উত্তরে বলল, “কারণ আমি যেখানে থাকি সেখানে সবকিছু খুব ছোট ছোট…”
আমি বললাম, “অবশ্যই তার জন্য পর্যাপ্ত ঘাস থাকবে। আমি তোমাকে যে ভেড়াটি দিয়েছি সেটি অনেক ছোট একটি ভেড়া।”
সে এবার ছবিটি মাথা নিচু করে দেখল এবং বলল, “খুব একটা ছোট না – দেখো! সে ঘুমিয়ে পড়েছে!”
এবং এভাবেই ছোট রাজপুত্রের সাথে আমার পরিচয় হল।
অধ্যায়- তিন
কথক ছোট রাজপুত্র কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে আরো কিছু জানলেন।
আমার অনেক সময় লেগেছিল জানতে সে কোথা থেকে এসেছে। সে নিজে আমাকে অনেক প্রশ্ন করে কিন্তু আমি কোন প্রশ্ন করলে পাত্তা দেয় না। কিন্তু আস্তে আস্তে তার মুখ থেকে একটু একটু করে শুনে সব কিছু আমার কাছে পরিস্কার হল।
প্রথম যখন সে আমার এরোপ্লেনটা দেখল (অবশ্যই আমি এটা তাকে এঁকে দেখাই নি। এরোপ্লেন আঁকা অনেক কঠিন।) সে জিজ্ঞেস করল, “এই বস্তুটি কী?”
“এটা বস্তু না। এটি উড়তে পারে। এর নাম এরোপ্লেন। এটা আমার এরোপ্লেন।”
আমি উড়তেও পারি এটা তাকে বলতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছিলাম।
সে প্রায় চিৎকারের মত করে জিজ্ঞেস করল, “কী! তুমি আকাশ থেকে পড়েছ?”
আমি শান্তভাবে উত্তরে বললাম, “হ্যা।”
“অহ! খুব মজার ব্যাপার!”
ছোট রাজপুত্র শব্দ করে হেসে উঠল। আমি এই হাসিতে বিরক্ত হলাম। কেউ দূর্ভাগ্য নিয়ে হাসাহাসি করুক এটা আমার পছন্দ না।
ছোট রাজপুত্র আরো যোগ করল, “তাহলে তুমিও আকাশ থেকে এসেছ। তোমার গ্রহ কোনটি?”
ঠিক সেই মুহুর্তে আমি প্রথম তার এই রহস্যঘেরা উপস্থিতি সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারণা পেলাম।
আমি দ্রুত জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি অন্য গ্রহ থেকে এসেছ?”
সে কোন উত্তর দিল না। আমার প্লেনের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই মাথা দোলালো। বলল, “এটা সত্যি তুমি খুব বেশি দূর থেকে আসো নি…”
এরপর সে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। অনেকক্ষণ কাটল এভাবে। তারপর সে পকেট থেকে আমার আঁকা ভেড়াটি বের করে তাতে মনোনিবেশ করল।
আপনি ভাবতেও পারবেন না, এই আংশিক জানা গ্রহ সম্পর্কে আমার কী পরিমাণ জানার আগ্রহ তৈরী হয়েছিল তখন। আমি এ সম্পর্কে আরো জানতে অনেক চেষ্টা করলাম, “ছোট্ট মানুষ, তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি যে কথায় কথায় “আমি যেখানে থাকি” বলো সেটা আসলে কী? তুমি কোথায় আমার ভেড়াটিকে নিয়ে যেতে চাও?”
অনেকক্ষণ চিন্তাযুক্ত নিরবতার পর সে জবাব দিল, “তুমি যে আমাকে বাক্সটি দিয়েছ এর একটি ভালো দিক হচ্ছে রাতে ভেড়াটি একে ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।”
“হ্যা। আমি তোমাকে একটি দড়িও দিতে পারি। তাতে দিনের বেলা তুমি তাকে বেঁধে রাখতে পারবে।
কিন্তু মনে হল ছোট রাজপুত্র এই কথায় আহত হল।
সে বলল, “বেধে রাখব! কী নিষ্ঠুর কথা!”
আমি বললাম, “কিন্তু তুমি যদি বেধে না রাখো তাহলে এটি যেকোন দিকে চড়তে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারে।”
আমার বন্ধু আবার শব্দ করে হেসে উঠল, বলল “তুমি মনে করছো এটি কোথায় যাবে?”
“তার সামনে…যেকোনখানে
ছোট রাজপুত্র আন্তরিকভাবে জানাল, “তাতে কোন সমস্যা নেই। আমি যেখানে থাকি সেখানে সব কিছুই ছোট ছোট।”
এবং সম্ভবত তার দুঃখের ইঙ্গিত দিয়েই বলল, “নিজের ঠিক সোজাসোজি সামনের দিকে, কেউই খুব বেশিদূর যেতে পারে না…।”
———————————————————————————————————
অধ্যায়- চার
কোন গ্রহাণু থেকে ছোট রাজপুত্র এসেছিল, কথক সে সম্পর্কে বললেন।
আমি এভাবে দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাপার জানলাম যে ছোট রাজপুত্র যে গ্রহাণু থেকে এসেছে তা একটি বাড়ি থেকে কোনভাবেই বড় না।
কিন্তু এই ব্যাপারটি আমাকে আশ্চর্য করল না। আমার ভালোভাবেই জানা ছিল যে বড় গ্রহ যেমন আছে, উদাহরনস্বরুপ বলা যায়, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি – যেগুলোর নাম আমরা দিয়েছি, তেমনি আরো অনেক অনেক গ্রহাণু রয়েছে যেগুলি এতই ছোট যে টেলিস্কোপ দিয়েও অনেক কষ্টে দেখতে হয়। যখন কোন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এরকম কোন গ্রহাণু আবিষ্কার করেন তিনি এর কোন নাম দেন না, নাম্বার দেন। যেমন তিনি তাকে বলবেন গ্রহাণু ৩২৫।
আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন কারণ ছিল বিশ্বাস করার ছোট রাজপুত্র যে গ্রহাণু থেকে এসেছে সেটি বি-৬১২।
এই গ্রহাণুটি মাত্র একবারই দেখা গিয়েছিল টেলিস্কোপের সাহায্যে। একজন তুর্কিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ১৯০৯ সালে এটিকে দেখতে পান।
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সভায় এই তুর্কি জ্যোতির্বিজ্ঞানী তার এই নতুন আবিষ্কার উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন তুর্কী কাপড় চোপড় পরা অবস্থায়। তাই তার কথা কেউ বিশ্বাস করলেন না।
বড়রা এরকমই হয়।
সৌভাগ্যজনকভাবে এরপর তুর্কী একজন একনায়ক আইন করে দেশে ইউরোপীয় পোষাক পরিচ্ছদ চালু করেন। তাই ১৯২০ সালে সেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবার দারুন সব ইউরোপীয় পোষাক পরে তার আবিষ্কার উপস্থাপন করেন। সেই সময়ে সবাই তার রিপোর্টকে গ্রহণ করেছিলেন।
আপনি যদি বড়দের বলেন, আমি একটি বাড়ি দেখেছি গোলাপী ইটের তৈরী, তার জানালায় জেরানিয়াম ফুল, ছাদে সুদৃশ্য পায়রার দল তাহলে তারা সেই বাড়ি সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারবে না। আপনাকে বলতে হবে আমি একটি বাড়ি দেখেছি যার মূল্য বিশ হাজার ডলার। তাহলে তারা অবাক হয়ে বলবে, আহ! কি দারুণ বাড়ি!
এরকমই, আপনি যদি তাদের বলেন, ছোট রাজপুত্র যে আছে তার প্রমাণ হল সে আকর্ষনীয়, সে সুন্দর করে হাসে, এবং সে একটি ভেড়া খুঁজছিল। কেউ যদি একটা ভেড়া খুঁজে তাহলে অবশ্যই তার অস্তিত্ব আছে।
বড়দের এভাবে বললে কী হবে? তারা কাঁধ ঝাকাবে এবং আপনাকে বাচ্চাদের মত মনে করবে। কিন্তু আপনি যদি তাদের বলেন, “ছোট রাজপুত্র যে গ্রহাণু থেকে এসেছে তার নাম বি ৬১২ তাহলে তারা বুঝে যাবে এবং তাদের প্রশ্নবান থেকে আপনি বেঁচে শান্তিতে থাকতে পারবেন।”
তারা এরকমই। এর বিরুদ্ধে কিছু করা উচিত না। শিশুদের উচিত সবসময় ধৈর্য ধরে থাকা বড়দের এসব ব্যাপারে।
কিন্তু আমরা যারা জীবন সম্পর্কে বুঝি তারা জানি সংখ্যা আসলে গতানুগতিক একটা ব্যাপার। আমার উচিত ছিল এই গল্পটাকে রুপকথার মত শুরু করা। আমি এরকম শুরু করতে পারতাম, অনেকদিন আগের কথা। ছোট রাজপুত্র একটা গ্রহে থাকত যা ছিল তার থেকে সামান্য বড়। সে একটি ভেড়া খুঁজছিল……
যারা জীবন বুঝতে পারেন তাদের জন্য তাহলে আমার গল্পে অনেক সত্য সুবাতাসের ব্যবস্থা হত।
আমি চাই না আমার গল্প কেউ অগোছালোভাবে পড়ুক। আমার অনেক কষ্ট হয়েছে এই স্মৃতিগুলোকে একত্র করতে। ছয় বছর হয়ে গেছে আমার ছোট্ট বন্ধু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তার ভেড়াকে নিয়ে। আমি যদি এখানে তার সম্পর্কে বর্ননা করতে চাই তাহলে তার কথা ভুললে আমার চলবে না। একজন বন্ধুকে ভুলে যাওয়া দুঃখজনক। সবার বন্ধু হয় না। আমি যদি আমার বন্ধুকে ভুলে যাই তাহলে আমি বড়দের মত হয়ে যাবো যারা কোন কিছু বুঝে না, শুধু সংখ্যা বুঝে।
এই কারণেই আসলে, আবার আমি এক বাক্স রঙ এবং কিছু পেনসিল কিনেছি। এই বয়সে ছবি আঁকা শুরু করা আমার জন্য সহজ না। যেহেতু ছয় বছর বয়সের পর থেকে আমি বোয়া কনস্ট্রিকটর ভেতর থেকে এবং বোয়া কন্সট্রিকটর বাইরে থেকে ছাড়া আর কোন ছবিই তেমন আঁকি নি। কিন্তু আমি চেষ্টা করবে সত্যের যতটুকু কাছে যাওয়া যায়, গিয়ে আমার ছবি আকতে। সফলতার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না। কোন ছবি সঠিক ভাবে হয় আবার কোনটিতে কিছুই মিল থাকে না। আমি কিছু ভুলও করেছি। যেমন এক জায়গায় ছোট রাজপুত্রকে খুব লম্বা এঁকেছি আরেক জায়গায় খুব খাটো। এবং তার পোষাক পরিচ্ছদের রঙ নিয়েও আমি সন্দিহান। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, কখনো ভালো, কখনো খারাপ কিন্তু শেষপর্যন্ত মাঝামাঝি কিছু একটা।
অবশ্যই বর্ননার ক্ষেত্রে আমি কিছু ভুল করতে পারি। এটা আমার দোষ না। আমার বন্ধু আমাকে ঠিকমত সব কিছু ব্যাখ্যা করে নি। সে হয়ত ভেবেছিল আমি তার মত। কিন্তু দূর্ভাগ্য! আমি তার মত বাক্সের ছিদ্র দিয়ে ভেড়া দেখতে পেতাম না। হয়ত আমি কিছুটা বড়দের মত। আমাকে বড় হতে হয়েছে, বয়সের দিক দিয়ে।
অধ্যায়-৫
আমাদের বাওবাব বিষয়ে সতর্ক করা হল।
দিন যাচ্ছিল। কথাবার্তায় প্রতিদিনই আমি ছোট রাজপুত্রের গ্রহ, সেই গ্রহ থেকে তার এখানে আসা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু কিছু জানা শুরু করেছিলাম। তথ্যগুলি খুব ধীরে ধীরে আসছিল। হঠাৎ তার চিন্তা থেকে ঝরে পড়ছে এমন। এরকম করেই তৃতীয় দিনে আমি বাওবাবের দূর্যোগের কথা জানতে পারলাম।
এক্ষেত্রেও আমার আঁকা সেই ভেড়াকে ধন্যবাদ দিতে হয়। ছোট রাজপুত্র গভীর চিন্তায় কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ভেড়া ছোট ঝোঁপ বা গুল্ম জাতীয় গাছ খেতে পারে তো?”
আমি বললাম, “হ্যা পারে।”
লিটল প্রিন্স বলল, “আহ! ঠিক আছে।”
আমি বুঝতে পারলাম না ভেড়াদের ছোট ঝোঁপ বা গুল্ম খাওয়া এত চিন্তার বিষয় কেন। ছোট রাজপুত্র জিজ্ঞেস করল, “তাহলে তারা নিশ্চয়ই বাওবাবও খেতে পারবে?”
আমি লিটল প্রিন্সকে বোঝালাম বাওবাব ছোট ঝোঁপ জাতীয় গাছ না। বিরাট গাছ। সে যদি এক পাল হাতি নিয়ে যায় তাহলে তারা সবাই মিলেও একটা বাওবাব খেয়ে শেষ করতে পারবে না।
হাতির পালের কথায় ছোট রাজপুত্র মজা পেল এবং শব্দ করে হাসল। সে বলল, “তাহলে আমাদের একটা হাতির উপরে আরেকটা বসাতে হবে।”
তারপর সে প্রজ্ঞাবানদের মত একটি কথা বলে ফেলল, “তারা বড় হয় ঠিকই কিন্তু যখন জন্মে তখন ছোটই থাকে।”
“সেটা ঠিক বলেছ’’, আমি বললাম। “কিন্তু তুমি কেন চাচ্ছ ভেড়া ছোট বাওবাব খেয়ে ফেলুক?”
লিটল প্রিন্স এর উত্তরে এমনভাবে শব্দ করল যেন মনে হল এর কারণ তো সবাই জানার কথা। আমি তার সাহায্য ছাড়াই এই সমস্যার সমাধান করলাম।
আমি জেনেছিলাম লিটল প্রিন্স যে গ্রহে থাকে সেখানে গাছ আছে। সব ধরনের গাছ। ভালো গাছ, খারাপ গাছ। সুতরাং ভালো গাছ থেকে ভালো বীজ, খারাপ গাছের খারাপ বীজ ছিল। কিন্তু এই বীজেরা ছিল অদৃশ্য। তারা মাটির নিচে গভীর অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকত। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের মধ্যে কেউ একজন জেগে উঠার পরিবেশ ও প্রেরণা পায়। তারপর সে নিজেকে প্রসারিত করতে শুরু করে, ধীরে ধীরে আকর্ষনীয় পল্লব বিকশিত করতে থাকে উপরের দিকে সূর্যকে লক্ষ্য করে। এটি যদি মূলো কিংবা গোলাপের শিশু বৃক্ষ হয় তাহলে যে কেউ তাকে বাড়তে দিবে তার ইচ্ছামত। কিন্তু যদি সে কোন খারাপ গাছ হয় তাহলে তাকে চেনা মাত্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপরে ফেলবে।
এখন, ছোট রাজপুত্র যে গ্রহে থাকত সে গ্রহেও এরকম ভয়ংকর কিছু খারাপ বীজ ছিল। সে বীজগুলি হল বাওবাব গাছের বীজ। ঐ গ্রহের মাটি এই বীজে ভরা ছিল। বাওবাব এমন গাছ, যার থেকে আপনি পরিত্রান পাবেন না কখনোই যদি দেরী করে ফেলেন। এটি সারা গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তার শক্ত মূল দিয়ে গ্রহের মাটি ছিদ্র করে। এবং গ্রহটি যদি খুব ছোট হয় আর প্রচুর সংখ্যক বাওবাব যদি থাকে তাহলে তারা গ্রহটিকে ঠুকরো ঠুকরো করে ফেলে…
ছোট রাজপুত্র পরে আমাকে বলেছিল, “এটা শৃঙ্খলার বিষয়। প্রতিদিন সকালে নিজে টয়লেট শেষ করার পর তোমার গ্রহের টয়লেটের প্রতি তোমাকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নজর দিতে হবে। তোমাকে বাওবাব উপরে ফেলতে হবে প্রতিদিন। যখন তুমি গোলাপের ঝোঁপ থেকে তাদের আলাদা করতে পারো, দেখামাত্রই উপরে ফেলতে হবে, যখন তারা খুব ছোট থাকে। এটি একটি বিরক্তিকর কাজ, কিন্তু খুব সহজ।”
এবং একদিন সে আমাকে বলল, “তোমার উচিত কিছু সুন্দর ছবি এঁকে রাখা যাতে তুমি যেখানে থাকো সেখানকার শিশুরা এই জায়গা কীরকম তা দেখতে পারে। তারা যদি কোনদিন এই এলাকায় ভ্রমণে বের হয় তাহলে ছবিগুলি থেকে উপকৃত হবে।”
সে আরো যোগ করল, “কোন কাজ অন্যদিন পর্যন্ত ফেলে রাখায় তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু বাওবাবের বেলায় আলাদা। বাওবাব মানেই দূর্যোগ। আমি একটা গ্রহের কথা জানি যাতে এক অলস লোক বাস করত। সে তিনটা ঝোঁপ অবহেলা করে ফেলে রেখেছিল……”
লিটল প্রিন্স যেভাবে বলল আমি ঠিক সেভাবে সেই গ্রহের ছবিটা আঁকলাম। আমি নীতিবিদ দের মত উপদেশ দিতে চাই না। কিন্তু বাওবাবের ব্যাপারটা সহজে বোঝা যায়, এবং কেউ যদি কোন গ্রহাণুতে হারিয়ে যায় তার জন্য এটি হবে ঝুকিপূর্ন। তাই আমি সহজ করেই বলছি, “শিশুরা! বাওবাবের ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকবে।”
আমার বন্ধুরা, আমার মতই। অনেক সময় ধরে এই গভীর বিপদের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি ব্যাপারটাকে ঠিকমত না জেনেই। তাদের জন্যই ছবিটা আমি সুন্দর করে আঁকলাম। এই ছবির মাধ্যমে আমি যে বার্তা পৌছে দিলাম তার মূল্য এর জন্য করা আমার সব কষ্টের সমতুল্য।
ছোট রাজপুত্র যেভাবে বলল আমি ঠিক সেভাবে সেই গ্রহের ছবিটা আঁকলাম। আমি নীতিবিদের মত উপদেশ দিতে চাই না। কিন্তু বাওবাবের ব্যাপারটা সহজে বোঝা যায়, এবং কেউ যদি কোন গ্রহাণুতে হারিয়ে যায় তার জন্য এটি হবে ঝুকিপূর্ন। তাই আমি সহজ করেই বলছি, “শিশুরা! বাওবাবের ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকবে।”
আমার বন্ধুরা, আমার মতই, দীর্ঘ সময় ধরে এই গভীর বিপদের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটাকে ঠিকমত না জেনেই। তাদের জন্যই ছবিটা আমি এত কষ্ট করে আঁকলাম। এই ছবির মাধ্যমে আমি যে বার্তা পৌছে দিলাম তার মূল্য এর জন্য করা আমার সব কষ্টের সমতুল্য।
হয়ত আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই বইয়ে আর কোন ছবি কেন এই বাওবাবের ছবির মত আকর্ষনীয় ও সুন্দর না? উত্তরটা সহজ। অন্যগুলির ক্ষেত্রে আমি সফল হতে পারি নি। যখন আমি বাওবাবের ছবি আঁকছিলাম তখন আমি আমার নিজের ইচ্ছার চেয়ে বেশি গভীর প্রয়োজনীতাবোধের উৎসাহে চলেছি।
পরবর্তী অধ্যায়সমূহঃ অধ্যায় ৫ – অধ্যায়- ১০
আমার নোটঃ লেখক এখানে বাওবাব বলতে নাজী পার্টিকে বুঝিয়েছেন। নাজীদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছেন এবং নিখোঁজ হন। উগ্র জাতীয়তাবাদ বা ফ্যাসিবাদ (বা যেকোন উগ্র মত) প্রথমে খুব ছোট হিসেবেই শুরু হয়। তখন অনেক ক্ষেত্রে সচেতন বা অচেতনভাবে লোকে একে সমর্থন দিয়ে থাকে। কিন্তু এর ফল হয় ভয়ংকর। হিটলারকেও তার সময়ে জার্মান জনগণ সমর্থন দিয়েছিল।