অতীত সমাজে সহিংসতাঃ
অতীতে সমাজ আরো বেশী সহিংস ছিল এমন ধারণা প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয় তখন মানুষ ইমোশনাল ডেভলাপমেন্টের এমন একটা পর্যায়ে ছিল যে বেশী অযৌক্তিক ব্যবহার করতো, যার ফলে সৃষ্টি হতো সংঘাত। মধ্যযুগে দূর্ঘটনায় মারা যাবার চাইতে সহিংসতায় প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা ছিল বেশী, এমন ধারণা প্রচলিত হয় ১৯৭০ সালে একটি পেপার প্রকাশিত হবার পর থেকে।
বউ পেটানোঃ
পশ্চিমা ইতিহাসের বেশীরভাগেই বউ স্বামীকে না মানলে স্বামী পেটাতে পারত। এতে কোন বাঁধা ছিল না, বরং তা সামাজিক নিয়মই ছিল। পিটিয়ে মারাত্মক জখম বা খুন না করলে সেসব বিষয় কোর্টেও আসত না।
প্রাচীন গ্রীস ও রোমেও বউকে পেটানো প্রচলিত ছিল। সব শ্রেণীর লোকদের মধ্যেই এই চর্চাটা ছিল। প্রাচীন রোমে যিনি পরিবারের কর্তা থাকতেন তিনি তার বউ, সন্তানাদি এবং দাস দাসীদের জীবন ও মৃত্যুর মালিক ছিলেন। অন্য লোকের সাথে যৌন সম্পর্কের জন্য স্বামীরা এসময় স্ত্রীদের খুনও করতেন, এবং তা কোন অপরাধ ছিল না।
মধ্যযুগের ইউরোপে, সেক্যুলার এবং ধর্মীয় দুই অথরিটিই সংশোধনের জন্য বউ পেটানোকে ন্যায্য মনে করত। কোর্ট রেকর্ড যা আছে তা মতে, মারাত্মক অবস্থায় না পৌছলে বউ পেটানোতে তারা হস্তক্ষেপ করত না। অনেক সময় পাড়া প্রতিবেশীরা অতিরিক্ত প্রহার করতে থাকা স্বামীকে শান্ত করার চেষ্টা করতেন। যেমন আমরা হাজার বছর ধরে উপন্যাসে দেখি, বুড়ো মকবুল আবুলকে বাঁধা দিতে যায়, যখন আবুল হালিমাকে হিংস্রভাবে পেটাচ্ছিল।
মধ্যযুগে স্বামীরা তার বউকে পেটানোর সময়, বউকে ‘সংশোধন’ করার জন্য করা হচ্ছে এমন কারণই তাকে ন্যায্যতা দিত। ক্রোধের কারণে পেটানো আসলে ঠিক ধরা হতো না। আবার বেশী হিংস্র পেটানো, মারাত্মক জখমও ঠিক হিসেবে ধরা হতো না।
তখন সে সমস্যাটা হতো, কোন সহিংসতাটাকে তীব্র আর কোনটাকে গ্রহনযোগ্য ধরা হবে, এই নিয়ে সমস্যা ছিল। এক্ষেত্রে একটা প্রচলিত নিয়ম ছিল এমন, যে বেত দিয়ে বউ পেটাবেন স্বামী তা যেন বুড়ো আঙ্গুলের চেয়ে আকৃতিতে পাতলা হয়।
মধ্যযুগে ও আধুনিক যুগের শুরুতে “সংশোধনের” জন্য একজন অথরিটি ফিগারের শাস্তি দেয়া মূলক সহিংসতার রূপ ব্যাখ্যা করতে ফিলিপ্পা ম্যাডের্ন মরাল হায়ারার্কি অব ভায়োলেন্স ধারণা দেন। যিনি পরিবারের কর্তা থাকতেন তিনি তার অধস্তনদের সহিংস শাস্তি দিতেন নৈতিক সংশোধনের জন্য। যারা অধস্তন ছিলেন তাদের জন্য নিয়ম ছিল এসব সহিংসতা তারা মাথা পেতে নেবেন।
কোন স্বামী যদি ব্যভিচারের জন্য তার বউকে খুন করতো, তাও তার কোন শাস্তি হতো না, কারণ সে নৈতিক কারণে খুনটা করেছে বা ঐশ্বরিক কারণে। সিসিলিতে কোন স্বামী যদি ব্যভিচারে তার স্ত্রী ও স্ত্রীয়ের প্রেমিককে পেত, তাহলে দুজনকেই খুন করতে পারত। অন্য কোন ভাবে সে যদি তার বউয়ের অবিশ্বস্থতার ব্যাপারে জানতে পারত তাহলে আইন অনুযায়ী সে তার বউয়ের নাক কেটে দিতে পারতো।
কোন পুরুষ যদি অতি হিংস্র উপায় অবলম্বণ করতো সহিংসতায়, যার জন্য বড় শারিরীক ক্ষতি বা মৃত্যু হতো, সেক্ষেত্রে পুরুষটি তার সামাজিক স্থান হারাত।
উপরে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে সহিংস শাস্তি উপায় অবলম্বণ করে অধস্থনদের শাস্তি দেয়া ছিল সমাজের চোখে স্বাভাবিক, কিন্তু অধস্থনদের কেউ উপরে থাকা কারো উপর সহিংস হলে তার ব্যাপারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল সম্পূর্ন বিপরীত। স্ত্রীর স্বামীর প্রতি, সন্তানের বাবা মার প্রতি, দাস দাসীর মালিকের প্রতি, বা ধর্মযাজকের বিশপের প্রতি করা কোন সহিংস আচরণকে অপরাধ হিসেবে দেখা হতো এবং এর জন্য মারাত্মক শাস্তি বরাদ্দ ছিল।
ছবিঃ স্বামী হত্যাকারী এক মহিলাকে পুড়ানো হচ্ছে, ক্যাথেরিন হায়েস
স্ত্রী বা দাস দাসী কর্তৃক স্বামীর প্রতি করা সহিংস আচরণ মারাত্মক বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচীত ছিল বিট্রিশ কমন আইন অনুসারে।
সঙ্গী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতার মাত্রা বর্তমান আধুনিক সময়েও অনেক বেশী। অষ্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশে, যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য অংশের চাইতে সঙ্গী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতার হার তুলনামূলক কম, সেখানেও প্রতি সপ্তাহে গৃহ সহিংসতায় এক থেকে দুইজন লোক প্রাণ হারায়। এ থেকে যেসব এলাকায় এ সংস্লিষ্ট সহিংসতার মাত্রা বেশী সেসব স্থানে কতো লোক ক্ষতিগ্রস্থ হন তা আন্দাজ করা যেতে পারে।
সঙ্গী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতার হার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশী, ৩৭.৭ শতাংশ। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ৩৭ শতাংশ, আফ্রিকায় ৩৬.৬ শতাংশ, ইউরোপে ২৫.৪ শতাংশ, পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চলে ২৪.৬ শতাংশ, এবং অন্যান্য তথা অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে ২৩.২ শতাংশ।
রেফারেন্সঃ
Joanne Bailey, Unquiet Lives: Marriage and Marriage Breakdown in England, 1660-1800 (Cambridge: Cambridge University Press, 2003).
Sara M. Butler, The Language of Abuse: Marital Violence in Later Medieval England (Leiden: Brill, 2007).
Isabel Davis, Miriam Müller, and Sarah Rees Jones (eds), Love, Marriage, and Family Ties in the Later Middle Ages (Turnhout: Brepols, 2003).
Elizabeth Foyster, Marital Violence: An English Family History, 1660-1857 (Cambridge: Cambridge University Press, 2005).
Philippa Maddern, Violence and Social Order: East Anglia, 1422-42 (Oxford: Clarendon Press, 1992).
Hannah Skoda, Medieval Violence: Physical Brutality in Northern France, 1270-1330 (Oxford: Oxford University Press, 2013).