হেলভিদিয়াস প্রিসকাস একজন রোমান স্টেইটসম্যান। নীরো থেকে শুরু করে গালবা, অথো, ভিটেলিয়াস এবং ভেসপাসিয়ানের সময় তিনি কাজ করতে পেরেছিলেন। রিপাবলিকানিজমের সমর্থক এই স্টেইটসম্যানের সাথে ভেসপাসিয়ানের ভালো সম্পর্ক ছিল না। প্রিসকাস তখন বৃদ্ধ।
ভেসপাসিয়ান লোক পাঠিয়ে বললেন, আপনি সিনেটে যাবেন না।
প্রিসকাস উত্তর দিলেন, এটা আপনার ক্ষমতায় আমাকে সিনেটর বানানো কিংবা না বানানো, কিন্তু যতক্ষণ আমি সিনেটর আছি, আমাকে অবশ্যই সিনেটে যেতে হবে।
ভেসপাসিয়ান বললেন, ঠিক আছে, যান। কিন্তু কথা বলবেন না।
প্রিসকাস বললেন, আমার মতামত চাইবেন না, আমি কোন কথা বলব না।
ভেসপাসিয়ান বললেন, কিন্তু আপনার মতামত আমাকে চাইতে হবে নিয়ম অনুযায়ী।
প্রিসকাস বললেন, তাহলে আমি যা ঠিক মনে করি তাই আমাকে বলতে হবে।
ভেসপাসিয়ান বললেন, আপনি যদি তা করেন তাহলে আমি আপনাকে হত্যা করব।
প্রিসকাস বললেন, কখন আপনাকে বললাম আমি অমর? আপনি আপনার কাজ করবেন, আমি আমার কাজ; আপনার কাজ আমাকে হত্যা করা, আমার কাজ মরা কিন্তু ভয়হীন চিত্তেঃ আপনার কাজ আমাকে নিশ্চিহ্ন করা, আমার কাজ দুঃখহীন ভাবে সরে যাওয়া।
এই কাহিনীটি স্টোয়িক দার্শনিক এপিকটেটাসের খুব প্রিয় ছিল। স্টোয়িকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন হল ভার্চ্যু। এই ভার্চ্যু শিক্ষা দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি হেলভিদিয়াস প্রিসকাসের উদাহরণটি দিতেন। প্রিসকাসের স্টোয়িক ভার্চ্যুর কারণে তিনি নিজেও একজন স্টোয়িক দার্শনিক হিসেবে পরিগণিত হন।
ভেসপাসিয়ানের আদেশ মানেন নি সৎ ও নির্ভীক হেলভিদিয়াস প্রিসকাস। তাকে রোম থেকে নির্বাসন দেন সম্রাট ভেসপাসিয়ান। কিছুদিন পর লোক পাঠিয়ে তাকে খুন করান।
প্রিসকাসের স্ত্রী ফ্যানিয়া হেরেনিয়াস সেনেসিওকে অনুরোধ করেন প্রিসকাসের জীবন নিয়ে প্যানেজিরিক লেখার জন্য। প্যানেজিরিক হচ্ছে কোন ব্যক্তির জীবন নিয়ে প্রশংসামূলক এক ধরনের রচনা। এই প্যানেজিরিক লেখার জন্য হেরেনিয়াস সেনেসিওকে ভেসপাসিয়াসের পুত্র সম্রাট ডোমিটিয়ানের নির্দেশে প্রাণ হারাতে হয়।
এপিকটেটাস যখন প্রিসকাসের কথা বলতেন তখন উল্লেখ করতেন যে, প্রিসকাস অন্য সব মানুষের জন্য হিউম্যান কারেজ (সৎ সাহস) এবং অনারের (সম্মান) দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন।
স্টোয়িকরা সক্রেটিস দ্বারা প্রভাবিত, এবং সক্রেটিস মনে করতেন সব ভার্চ্যুই হলো এক জিনিসের ভিন্ন রূপ, সেই জিনিসটাঃ উইজডম বা প্রজ্ঞা। এর মাধ্যমেই জীবনের বিভিন্ন জটিল অবস্থায় একজন ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
স্টোয়িকদের চার কার্ডিনাল ভার্চ্যু মূলত সক্রেটিসের এই উইজডমেরই বর্ধিত রূপ, তারা একে চার ভাগ করেছেনঃ
১। উইজডম বা প্রজ্ঞা (ব্যবহারিক / প্র্যাক্টিক্যাল)
২। কারেজ বা সৎসাহস
৩। জাস্টিস বা ন্যায়বিচার
৪। টেম্পারেন্স বা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ
স্টোয়িসিজম হচ্ছে প্র্যাক্টিক্যাল ফিলোসফি। আমাদের এখানে বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদের যেমন গ্রুপাগ্রুপি আছে, তেমনি দর্শন নিয়েও আছে। একজন নীৎসে নিয়ে বলছে দেখে আরেকজন ভাবছে, না আমি যাবো ফুকোর দলে। তখন রিয়াল সমর্থক আর বার্সা সমর্থকদের মধ্যেকার তর্কাতর্কিও দেখা যায়, আমার গ্রুপ এই ব্যাখ্যা করে এইভাবে, ওই গ্রুপ পারে না। ইত্যাদি গ্রুপাগ্রুপি আসলে একই ধরনের প্রবণতা যা আদিমকাল থেকে মানুষের মধ্যে চলে আসছে, মানুষের জিনের মধ্যে রয়েছে এই তাড়না। গ্রুপে থাকলে মানুষ নিরাপদ বোধ করে।
কিন্তু স্টোয়িকদের মধ্যে এমন কোন ব্যাপার নেই (মানুষ হিসেবে জিনে তাড়না থাকলেও তারা এই প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করেন) কারণ স্টোয়িসিজম প্র্যাক্টিক্যাল ফিলসফি। একজন মানুষের নিজের লাইফে তা প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে একটি ভালো জীবন যাপনের জন্য। এই ভালো জীবন নৈতিক গুড লাইফ বা ইউদাইমোনিয়ার জন্য মানুষের দরকার প্র্যাক্টিক্যাল প্রজ্ঞা।
কারেজ বা সৎসাহস এর যে নিদর্শন প্রিসকাসের কাহিনীতে পাওয়া যায় তা হলো, নৈতিক জটিল পরিস্থিতিতে, চ্যালেঞ্জিং সিচুয়েশনে ঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা। এই সৎ সাহস এর ক্ষমতা অর্জনের জন্য একজন ব্যক্তির থাকতে হবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। অন্যথায় সে নিজের লোভ বা আকাঙ্খার কাছে পরাজিত হবে, এবং সেক্ষেত্রে সে হবে নৈতিকভাবে দূর্বল। সক্রেটিক এবং স্টোয়িক দৃষ্টিতে জাস্টিস বা ন্যায়বিচার কেবল সমাজের ন্যায়বিচার নয়, একজন ব্যক্তি অন্যদের সাথে ন্যায়ভাবে ব্যবহার করবেন, তাও বুঝায়।
ফলে, স্টোয়িকদের চার কার্ডিনাল ভার্চ্যুর চারটি এমনভাবে যুক্ত যে, চর্চা করতে হলে চারটাই একসাথে করতে হবে। একটা বাদ দিলে অন্যটা হবে না।
আরো পাঠঃ
আরো পাঠের জন্য মাসিমো পিগলিউইচ্চির হাউ টু বি এ স্টোয়িক। এই লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি যে চ্যাপ্টারে আলোচনা করেছেন, চ্যাপ্টার৭- ইটস অল এবাউট ক্যারেক্টার (এন্ড ভার্চ্যু)।