মিডিয়া তত্ত্বঃ যে কারণে আপনার ওয়েবসাইট দরকার

একটা ইউআরএল বা ওয়েব এড্রেস আপনার দরকার যখন আপনি একজন লেখক, বুদ্ধিজীবী বা দার্শনিক অথবা সোশ্যাল এক্টিভিস্ট।

আমি দেখতে পাচ্ছি মানুষেরা ইন্টারনেট ও প্রিন্ট মিডিয়ার পার্থক্য বুঝতে পারছে না। প্রিন্ট মিডিয়ার মতই আচরণ করছে ইন্টারনেট মিডিয়ায়। আপনাকে ভিন্ন মিডিয়া বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী আলাদা মিডিয়ার আলাদা চরিত্র অনুসারে কাজ করতে হবে।

সমাজ কী চায় আপনি বলেন, নিউজ না নিউজ পেপার? সমাজ নিউজ চায়, সমাজ কন্টেন্ট চায়। কন্টেন্টই তারা গ্রহণ করে, কন্টেন্টই মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন করে, সমাজের কাজে লাগে। আলাদা ভাবে নিউজ পেপার বা পত্রিকা ভ্যালুলেস।

আগে প্রিন্টে সাহিত্য পত্রিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল, কারণ ওখানে লেখা ছাপা হত। যেগুলির প্রভাব ছিল সাহিত্য সমাজে। অন্যভাবে লেখা প্রকাশের সুযোগ ছিল না। প্রিন্ট মাধ্যমে সাহিত্য পত্রিকার দরকার আছে কারণ লেখা সেখানে ছাপা হবে।

কিন্তু অনলাইন বা ইন্টারনেট মাধ্যমে সাহিত্য পত্রিকার দরকার নেই।

কারণ এখানে একজন লেখক তার নিজের ওয়েবসাইট তৈরী করে লিখতে পারেন। অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা যে কাজ করবে, যেভাবে ইউ আর এলের মাধ্যমে একজন পাঠককে নিয়ে আসতে পারে পেইজে ঠিক একই ভাবে করতে পারে যে কারো সাইট। টেকনিক্যালি এই দুই ধরনের সাইটের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

এই সহজ কথাটা বুঝতে হবে।

একাডেমিক জার্নালদের ইন্টারনেট সাইটের আলাদা গুরুত্ব আছে, এবং তা একাডেমিশিয়ানদের জন্যই। তারা গুরুত্বপূর্ন গবেষণা পেপার ফ্রিতে ব্লগস্পট সাইটে দিবে না, কারণ একাডেমিক কেরিয়ারের জন্যই বড় জার্নালে প্রকাশ করতে হয় আর্টিকেল। কিন্তু দেখা গেছে এসব প্রকাশিত পেপারের প্রায় পঞ্চাশ ভাগ রিভিউয়ার এবং যারা লেখছেন তারা ছাড়া আর কেউ পড়েই না।

কিন্তু যিনি সাধারণ ক্রিয়েটিভ লেখক, যিনি বুদ্ধিজীবী, একটিভিস্ট তার ক্ষেত্রে এমন হবে না। তিনি তার লেখা প্রকাশ করতেই চান। কারণ লেখা পাঠক পড়বে, পাঠকের চিন্তায় প্রভাব ফেলবে, এগুলিই তিনি চান। ফলে, তার ক্ষেত্রে একাডেমিক জার্নালদের মত পত্রিকা অনাবশ্যক।

একজন আলাদা লেখক যখন তার সাইটে সাবস্ক্রিপশন ফি রাখে বা টাকা চায় তখন তা তার নিজের ক্রিয়েটিভ কাজের অর্থমূল্যের জন্যই, যেমনটা বইয়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন করে থাকে ব্রেইন পিকিংস বা গার্ডিয়ানের মত পত্রিকা।

নিজের সাইটে লিখুন।

পরের কথা, কেন ফেইসবুক এর বাইরে লেখক হিসেবে আপনার আলাদা ওয়েবসাইট দরকার?

ফেইসবুক সোশ্যাল মিডিয়া। আর ওয়েবসাইট হবে আপনার মিডিয়া।

আপনার ইন্টেলেকচুয়াল কম্যুনিটি।

পাঠকেরা আর্কাইভে বিভিন্ন মাসের হিসাবে আপনার লেখা পড়তে পারবেন।

সাইটের বিভিন্ন লেখা পড়ে আপনার চিন্তার সাথে আরো ভালোভাবে পরিচিত হবেন। যা অনলাইন বা প্রিন্ট সাহিত্য পত্রিকায় একটা লেখা পড়ে সম্ভব নয়। পাঠক আপনার সাইটে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাবেন।

যেন আপনি একটি বই লিখে যাচ্ছেন, ইন্টারনেট মাধ্যমে।

এটা বইই।

তবে এর আরো সুবিধা হলো, বইটি আপনি আপনার চিন্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলাতে পারছেন।

পাঠক তাই বেশী স্পষ্ট ধারণা নিতে পারবেন।

আরেকটা সমস্যা হচ্ছে গতানুগতিক প্রিন্ট চিন্তার লোকদের নিয়ে, যারা ইন্টারনেট মাধ্যমের চরিত্রকে প্রিন্ট মাধ্যম চরিত্র মনে করে টেক্সট আর হাইপার টেক্সট এর পার্থক্য বুঝে না। ইন্টারনেটে যে টেক্সট তা হাইপার টেক্সট। কাগজে লেখার পরের স্তর এই হাইপার টেক্সট। কারণ এখানে আপনি টেক্সটের ভেতরে আরো টেক্সট জুড়ে দিতে পারবেন। যেমন এখানে আমি দিলাম। এই যে এখানে শব্দটিতে লিংক যুক্ত করে দিলাম তা আপনাকে অন্য একটি লেখার সাথে যুক্ত করল, এটাই হাইপার টেক্সট এর সুবিধা।

গার্ডিয়ান পত্রিকায় হাইপার টেক্সট ও নিজেদের বিজ্ঞাপন।

ইন্টারনেট মিডিয়ার চরিত্র না বুঝা লোকেরা ইন্টারনেটে যে লেখালেখি করে তা টেক্সট হিসেবেই করে, ফলে হাইপার টেক্সট এর সুবিধা তারা নিতে পারে না।

এছাড়া আপনি অনেক কপিরাইট বিযুক্ত ইমেজ ব্যবহার করতে পারেন লেখায়, যা লেখাকে ভিন্ন মাত্রা দেয়। লেখা বোল্ড, ইটালিক, নানা ফন্টে পরিবর্তন একই লেখায়, লিস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন, আপনি ভিডিও এম্বেড করে ব্যবহার করতে পারেন। তখন অন্য আরো একটি চরিত্র এসে হাজির হয়। ভিডিও’র মিডিয়া লেখার মিডিয়া থেকে ভিন্ন, ভিডিও বেশী সরাসরি।

একই মেসেজ প্রিন্ট লেখায়, ইন্টারনেট লেখায় ও ভিডিও এই তিন মাধ্যমে দিলে পাঠক বা দর্শকের উপর এর প্রভাব ভিন্ন হবে। যেমন, রেডিওর শ্রোতার উপর কোন বক্তব্যের প্রভাব এবং টিভির দর্শকের উপর একই বক্তব্যের প্রভাব ভিন্ন হয়ে থাকে।

এই সমস্ত মিডিয়ার আলাদা চরিত্র বুঝা দরকার।

এবং ইন্টারনেট লেখালেখির জন্য আপনার আলাদা ওয়েবসাইট দরকার। তা ব্লগস্পট বা ওয়ার্ডপ্রেসে করা সহজ ও বিনামূল্যে।

ব্র্যান্ডিং এর জন্য কাস্টম ডোমেইন ভালো, এটা ঠিক আছে। কিন্তু খুব বড় পার্থক্য নেই ব্লগস্পট বা ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের থেকে। কম্যুনিটি ব্লগিং বা অন্য সাইটে লেখার থেকে নিজের সাইটে লেখাই আপনার ব্র্যান্ডিং বা নিজস্বতার শুরু। কাস্টম ডোমেইন এক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়।