স্ল্যাভোয় জিজেক একজন দার্শনিক ও সোশ্যাল ক্রিটিক। বর্তমান সময়ের উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিজীবীদের একজন।
বর্তমান কোভিড-১৯ ক্রাইসিসে তিনি একটি বই লিখেছেন, প্যানডেমিক নামে। পত্রিকায় প্রকাশিত তার সাম্প্রতিক লেখাগুলির সংকলণ বলা যায়। কেউ ভাবতে পারেন এই ক্রাইসিস থেকে লাভ তুলে নিতে…না তা নয়। রয়ালটির টাকা পুরোটা যাবে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারে।
বইটি’তে জিজেক যা বলতে চেয়েছেন তার একটি সারাংশ আমি করেছি এই লেখায়।
ভূমিকা- টাচ মি নট
ভূমিকা অংশে জিজেক যিশুর বানী দিয়ে শুরু করেছেন। পুনরুত্থানের পরে যিশু ম্যারি ম্যাগদালিনরে বলছিলেন, টাচ মি নট। যিশুর অবস্থান ছিল, আমি পুনরুত্থিত হয়ে আসছি এখন আর আমি ব্যক্তি হিসাবে স্পর্শের জন্য জন্য নই বরং আমার অনুসারীদের মধ্যেকার ভালোবাসার রূপেই তিনি থাকবো।
এইখানে একটা ফিলোসফিক্যাল টুইস্ট দিয়ে জিজেক বলতে চান, স্পর্শেই তো মানুষ মিলে না, মানুষরে পাইতে হয় ভেতর থেকে। সেই ভেতর থেকে পাওয়া হইতে পারে তার চোখের দিকে তাকাইয়া, তারে ফিল কইরা বা নিজেরে দিয়া তারে বুইঝা। অর্থাৎ, মানুষে মানুষে আমাদের যে কানেকশন স্পর্শে না। কানেকশন হইল বুঝায়।
এরপরে জিজেক বলেন যে এই ভাইরাসের সমস্যা আমাদের “স্বাভাবিক” জিনিসরে বদলাইয়াই দিবে বা দিছে। ফলে আমরা আর আগের “স্বাভাবিক” এ ব্যাক করতে পারব না। ফলে এই বদলানো নতুন স্বাভাবিকেই আমরা সামনের দিনগুলাতে চলব। আর হেগেল যেমন বলেছিলেন ইতিহাস থেকে মানুষ কিছু শিখে না, এখানেও তাই হবে। শিখবে না। তাও আমরা কিছু বেসিক প্রশ্নের সম্মুখীন, যেগুলির সমাধানের পথে আমাদের আগাইতে হবে, যেমন কি এমন সমস্যা আছে আমাদের সিস্টেমে যে, বিজ্ঞানীরা এতো ওয়ার্নিং স্বত্তেও আমরা প্রস্তুতি নিলাম না।
আমরা সবে একই নৌকায়
এখানে জিজেক চীনের বাস্তবতা দেখাইছেন। বলতে চাইছেন যে চীনে ফ্রিডম অব স্পিচ ও মানবাধিকার থাকলে এই গ্লোবাল ক্রাইসিসই হইত না।
কিন্তু আমরা কি এভাবে নিরব থাকতে পারি, অন্য দেশের ফ্রিডম অব স্পিচের সমস্যা ও মানবাধিকার ইস্যুর ব্যাপারে? আমরা বলতে ধরেন, ইউরোপ+আমেরিকা। ট্রাম্প প্রশাসন যেমন আমেরিকা ফার্স্ট বলে নিরব থাকতে চায়।
জিজেক দেখাইলেন এতে সমস্যা আছে। আমরা যেহেতু একই নৌকায়। চীনের ভাইরাস গেলো পুরা বিশ্বে। সুতরাং কোন দেশে ফ্রিডম অব স্পিচ বা মানবাধিকার আছে কি না তা ম্যাটার করে।
বৈশ্বিক ভালো মন্দ মাণদণ্ডের অবসান হইছে বলে আশঙ্কা করছিলেন জিজেক আগের এক লেখায়। যেটারে তিনি খারাপ মনে করেন দুনিয়ার জন্য।
একই সুর এই লেখাতেও রয়েছে। এবার করোনার উদাহরণ সহ।
জিজেক বলেন যে, সরকার ও মানুষের মধ্যেকার বিশ্বাসই এই প্যানডেমিকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা চীনে নাই।
এই প্যানডেমিকে কেবল মার্কেট মেকানিজমের উপর ভরসা করে বসে থাকলে চলবে না, হস্তক্ষেপ জরুরী।
আর, এই প্যানডেমিককে আমরা পরিবেশ ধ্বংস করছি তাই শাস্তি, বা এরকম কোন গভীর অর্থ আছে র পেছনে, এমন ভাবতে মানা করেন জিজেক। এইরকম ভাবলে আমরা প্রি-মডার্ন চিন্তাতেই আবদ্ধ থাকব। আমরা ভেবে নেব আমাদের পৃথিবী আমাদের সাথে কনভারসেশন করছে এমন একজন। যে দুনিয়া আমাদের শাস্তি দিচ্ছে। বা এরকম কেউ আছে শাস্তি দেয়ার, যে মেকানিজমটা করছে। অর্থাৎ আমরা আসলে এতো গুরুত্বপূর্ন। এই ধারার চিন্তা বহু দিন আগের বাতিল চিন্তা, জিজেক বলতে চান, যেটা তিনি আগেও বলেছেন। কারণ বর্তমান ঘটনাটি প্রাকৃতিক ঘটনাবলীরই ধারাবাহিক প্রকাশের একটি। আমরা ডিপার মিনিং খুজি কারণ প্রজাতি হিসাবে নিজেদের স্পেশাল ভাবা আমরা মানতে চাই না আমাদের অগুরুত্বপূর্ণ অবস্থানরে।
“The really difficult thing to accept is the fact that the ongoing epidemic is a result of natural contingency at its purest, that it just happened and hides no deeper meaning. In the larger order of things, we are just a species with no special importance.”
আমরা কেন সব সময় টায়ার্ড
দার্শনিক বা সোশ্যাল ক্রিটিক বিং চুল হানের দি বার্ন আউট সোসাইটির ক্রিটিক এখানে করেছেন জিজেক। বিং চুল হান তার বইতে বলেছিলেন পশ্চিমা সমাজ একটা বার্ন আউট সমাজ। কারণ নিও লিবারাল ক্যাপিটালিজম ক্লাস সিস্টেম রাখে নাই। বরং মানুষরে বানাইছে সেলফ এক্সপ্লয়টিং মেশিন।
নিও-লিবারাল সমাজে মানুষ হইল নিজেই উৎপাদন যন্ত্রের মালিক। আর যন্ত্রটা সে নিজে। ফলে কন্টিউয়াস রেট রেইস, এবং নিজের স্কিল বাড়ানো, নিজেরে উন্নত করার একটা প্রতিযোগিতায় সে ব্যস্ত। ফলে সোসাইটিতে ডিপ্রেশন, এডিএইচডি ইত্যাদি মানসিক সমস্যা বাড়তেছে।
জিজেক এই অবস্থানের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন বিং চুল হানের কথা কেবল একটা সমাজের জন্য ঠিক হইতে পারে। যারা কর্পোরেট রেট রেইসে আছে। কিন্তু আরো অনেক মানুষ আছে, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বে। যারা ওয়ার্কিং ক্লাস। এসেম্বলি ওয়ার্কার। রিপিটেটিভ কাজ তারা করতেছেন। ফলে ক্লাস সিস্টেম বিনাশ হয় নাই।
এছাড়া জিজেক বলেন, অনেক কাজ আছে সমাজে যেগুলা ব্যক্তিরে মিনিং দেয়। যেমন বাচ্চাদের পড়ানো, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এবং শেষপর্যন্ত কাজই দরকার স্বাধীনতার জন্য। ফলে আমরা যেন কাজের প্রতি ডেডিকেশন আর সেলফ ডিসিপ্লিনরে অহেতুক সমালোচনা না করি।
ইউরোপে আসন্ন মহা ঝড়
জিজেক “পারফেক্ট স্টর্ম” ইউরোপে আসছে বলে মনে করেন। পারফেক্ট স্টর্ম হয় যখন কয়েকটি বিপদ একই সাথে আঘাত করে। এইখানে প্রথম দুইটা বিপদ, করোনা ক্রাইসিস (ঘরে মানুষের থাকা, দুর্দশা, অর্থব্যয় ইত্যাদি), দুই, করোনার কারণে ইকোনমিক ক্রাইসিস, যেহেতু ইউরোপ আমদানী-রপ্তানীতে চীনের সাথে খুবই যুক্ত।
জিজেক তৃতীয় বিপদের নাম দিছেন, পুতোগান। সিরিয়া ইস্যুতে এরদোয়ান ও পুতিনের রাজনৈতিক খেলা। যা ইউরোপরে সংকটাপন্ন কইরা তুলতেছে। এরদোয়ান রাশার সমর্থনে আসাদ সরকারের বিরোধীদের সমর্থন দিয়া ক্রাইসিস তৈরি করে যাইতেছেন। এর ফলে যেসব লোক বাস্তুহারা হচ্ছে তাদেরকে ইউরোপে ঠেলে দিতেছেন।
জিজেকের মতে পুতোগান তেল এবং রিফিউজি দ্বারা ইউরোপকে ব্ল্যাকমেইল করে যাবে।
পুতিন ও এরদোয়ানরে ডেভিলিশ ওয়ার ক্রিমিনাল মনে করেন জিজেক, যারা নিজেদের স্বার্থে একটা দেশে ক্রাইসিস তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নিয়া খেলতেছে, এই প্যানডেমিকের সময়েও। এদের বিরুদ্ধে ইউরোপের একতা, বিশেষত ফ্রান্স জার্মানীর একতা জরুরী মনে করেন জিজেক।
ভাইরাল ডেজার্টে স্বাগতম
এই জায়গায় জিজেক একটা গ্লোবাল বিশ্ব ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন বা সম্ভাবনার কথা বলতে চাইছেন, যেখানে পরস্পর বিশ্বাস (ট্রাস্ট) ও বিজ্ঞান হবে মূল।
ইডিওলজিক্যাল ভাইরাসের বিপদ নিয়ে আলোচনার সাথে সাথে, তিনি বলতে চাইছেন আমরা যে প্যানডেমিকে পড়েছি এটাই শেষ না। আরো হবে। ফলে একটি গ্লোবাল স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক জরুরী।
এখানে তার যুক্তিটা হলো, আমরা একই নৌকায়। ইরানের লোকের ভাইরাস আমেরিকায় কানাডায় ছড়াইয়া পড়তে পারে। এইজন্য ইরানের লোকটি যেন স্বাস্থ্য সেবা ভালো ভাবে পায় এইটাও ভাবতে হবে।
না হলে বিপদ।
এজন্যই করোনা ক্রাইসিসে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনে সহায়তা করতে গেছেন। কারণ ফিলিস্তিনে রোগ থাকলে ইজরাইল বাঁচানো যাবে না।
এই যে অবস্থা, এটাকেই জিজেক একটা বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ার সম্ভাবনা হিসাবে দেখেন।
আর কিছু র্যাডিক্যাল চেইঞ্জ তিনি চান গ্লোবাল মার্কেট মেকানিজমে। যেখানে একটি সংস্থা থাকবে মার্কেট রেগুলেশনের। ন্যাশন স্টেইটের ক্ষমতা কম থাকবে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে।
জিজেক কমিউনিজম বলতে পুরান কমিউনিজম বুঝান না। তিনি ঐ নতুন বৈশ্বিক সহযোগিতামূলক অবস্থানের কথাই বলতে চান।
প্যানডেমিকের পাঁচ ধাপ
কুবলার রস তার বই ডেথ এন্ড ডাইং এ কোন গুরুতর রোগ হইলে মানুষ পাঁচ ধাপে বিষয়টা নিয়ে ডিল করে লেখছিলেন। যেটা তিনি পরে লাইফের অন্যান্য ক্রাইসিসে এপ্লাই করেন।
ডীনায়াল – মানতে না চাওয়া।
এংগার – পরের ধাপে রাগান্বিত হয়।
বারগেইনিং – পরের ধাপে দর কষাকষি।
ডিপ্রেশন – পরের ধাপে হতাশা।
গ্রহণ – এরপরে গ্রহণ।
জিজেক এটা এই প্যান্ডেমিকে এপ্লাই করছেন। প্রথমে মানুষ মানতে চায় না, ধুর এগুলা ভুয়া। এরপরে বলে কর্পোরেশন এই করেছে সেই করছে, পরিবেষ দূষণ করছে। এরপরে, ভাবে যে আমরা পরিবেশ এভাবে এভাবে বাঁচাব। এরপর হতাশার স্তর, অনেক দেরী হয়েছে। এ্রপরে গ্রহণ, আমরা একটি ক্রাইসিসে আছি, এখন পুরা লাইফ স্টাইলই বদলাইতে হবে।
একই জিনিস হয় ডিজিটাল কন্ট্রল বা যেকোন সমস্যা নিয়ে। এমনকী ইতিহাসের ক্রাইসিসগুলাতেও মানুষ এইভাবে অগ্রসর হইত ডিল করতে।
ইডিওলজির ভাইরাস
এই চ্যাপ্টারে জিজেক কমিউনিজম বলতে বৈশ্বিক একাত্মতা ও সহযোগীতা বুঝিয়েছেন। এবং এই সংকটের ফলে মানুষ সেই দিকে অগ্রসর হবে এমন আশা করেছেন।
কাম ডাউন এন্ড প্যানিক
এখানে জিজেক বলতে চাইছেন যেসব প্যানিকে টয়লেট পেপারের ক্রাইসিস তৈরি করে এগুলা ভুয়া প্যানিক, এবং এইসব প্যানিক থেকে দূরে থাকুন। আসল প্যানিকের বিষয় হইল, অথরিটি প্যানিক ভয় পায়। আর তখন অথরিটির যেসব মানুষেরা যুক্ত থাকে কাজে, তারা তার উপরের মহলরে ভুল ডেটা দেখায়। যকারণ কেউই খারাপ খবর দিতে চায় না, বসরে, বা উপরের মহলরে খুশি করতে চায়। এই জায়গাতেই আমাদের প্যানিকের দরকার আছে যে, যে ডেটা ঐখানে ডেটা কতটুকু আর কতোটুকু ইডিওলজি? বিশেষত এই চীন ও আমেরিকার ট্রাম্প যখন মানুষরে আবার কাজে পাঠাইতে চাইতেছে, তখন।
মনিটির এন্ড পানিশ? ইয়েস প্লিজ
করোনা ক্রাইসিসের কালে যখন বিভিন্ন ভাবে ট্রাকিং করা হচ্ছে তখন লিবারেল ও বাম বুদ্ধিজীবীরা আলাপ তুলেছেন এই সার্ভিলেন্স বা নজরদারী ভালো না। কিন্তু এর প্রয়োজন তো আছে ভাইরাল এই ক্রাইসিসে। জিজেক মনে করেন এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের উপায় নাই। যদিও ফিউচারে এগুলির মিস ইউজ যাতে না হয় এজন্য আরো স্নোডেন, ম্যানিং বা এসাঞ্জ দরকার।
ইজ বারবারিজম উইথ হিউমেন ফেইস আওয়ার ফেইট
কম্যুনিজম ও বারবারিজম, এজ সিম্পল এজ দ্যাট
এই দুই চ্যাপ্টারে জিজেক তার মূল থিসিসই ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই ক্রাইসিস পরবর্তীকালে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগীতা ও একতামূলক অবস্থানে যেতে হবে। এবং সেটাই তার মতে কম্যুনিজম।
যেইটা ওই তিন মেজর সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবে বলে জিজেক মনে করেন, যেইটা তিনি টাইয়াল কোয়েনের সাথে হলবার্গ বিতর্কে তুলে ধরছিলেন,
১। ম্যাস মাইগ্রেশন – প্রচুর পরিমাণে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া।
২। পরিবেশগত বিপর্জয় – পরিবেশ দূষণ বা নানা কারণে সম্ভাব্য বিপর্জয়।
৩। ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ – আধুনিক প্রযুক্তিগত ইনোভেশনের কারণে মানুষেড় জীবন নিয়ন্ত্রণ।
আলোচনা
জিজেকের এই বইতে তার পূর্বের চিন্তাধারার প্রকাশই হইছে ফলে বলা যায় না তিনি নতুন কিছু বলছেন। মূল থিসিস তার যেইটা, করোনা সংকট কাটাইয়া বিশ্ব একটা সহযোগীতামূলক অবস্থানে যাবে, এর সম্ভাবনাও কতটুকু তা ভাবা যাইতে পারে।
যেমন সরকারগুলা বর্ডার আরো শক্ত করতে পারে। যেই ওয়ালের কথা ট্রাম্প বলছিলেন, সেই ওয়াল আসলে একটা মতাদর্শিক অবস্থান যে, আমাদের এইখানে আমরা অন্যদের আসতে দিব না। যেমন ইন্ডিয়া বাংলাদেশের বর্ডারে কাঁটাতারের বেড়া দেয় বা ফেলানিরে মাইরা ঝুলাইয়া রাখে।
এই ওয়ালের মতাদর্শিক অবস্থানের ফুয়েল উগ্র নেশনালিজম। করোনা সংকট সেই ওয়ালের পেছনে আরো ন্যায্যতা দিল। যে বাইরের লোক মেক্সিকো থেকে ড্রাগ নিয়া বা বাংলাদেশ থেকে গরু চুরি করতেই আসবে না, বরং আরো ভয়ংকর জিনিস ভাইরাস নিয়া আসতে পারে। ফলে, বর্ডার শক্ত করো। বিশেষত অনুন্নত দেশগুলা থেকে থেকে ভাইরাসের বাহকেরা না আসতে পারে।
এইসব সম্ভাবনার কথা জিজেকের লেখাতেও কিছু কিছু আছে, কিন্তু তার মূল থিসিস যেহেতু বৈশ্বিক ঐক্য আনবে এই সংকট এমন আশাবাদ, তাই এগুলি আলোচিত হবার দাবী রাখে। চীনের যে অবস্থা, সরকারের উপর মানুষের বিশ্বাস নাই, মানুষের উপর সরকারের বিশ্বাস নাই। এমন সরকারের উপর জনগণের বিশ্বাস কমতেছে আমেরিকাতেও। কারণ মানুষ তো ভাবে নাই যে এভাবে সরকার হেলাফেলা করবে এত বড় ক্রাইসিসরে। বলা হইতেছে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে যে, ট্রাম্প প্রশাসন সতর্ক হইলে, আগে ভাগে ব্যবস্থা নিলে অনেক লোকেরই প্রাণ বাঁচানো যাইত। ফলে এই সংকটের প্রভাব হিসাবে মানুষ সরকাররে কম বিশ্বাস করবে।
এরপরে মতাদর্শিক যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দিয়ে জিজেক শুরু করেছিলেন, এক দেশে যদি ফ্রিডম অব স্পিচ বা বেসিক মানবাধিকার না থাকে তাহলে আমেরিকা ইউরোপ কি বইসা থাকবে, দেখেও না দেখার ভাণ করবে, বা বলবে যে এটা তাদের বিষয়? জিজেক এর সমস্যা দেখাইতে করোনারে সামনে আনেন, ও বলতে চান যে কোন দেশে মানবাধিকার লংঘণ বা ফ্রিডম অব স্পিচের অভাব হইলে তা সবার জন্যই সমস্যার, ফলে গ্লোবাল পুলিশিং নামে যার সমালোচনা করা হইত, সেটা চলুক।
তথাকথিত গ্লোবাল পুলিশিং এর সমালোচনা করতে বলা হইত এটা উপনিবেশবাদী আগ্রাসন আমেরিকার। ফলে, জিজেকের এই অবস্থান উপনিবেশবাদী ভাবতে পারেন তারা, যারা ঐ হস্তক্ষেপরে উপনিবেশবাদী হিসেবে দেখতেন।