একদা বুদ্ধ বসিয়া আছেন। তাহার মাথার উপরে শরতের মেঘমুক্ত নীল আকাশ। বুদ্ধ সে উজ্জ্বল নীল আসমানের নীচে বসিয়া প্রকৃতির শোভা দেখিতেছেন। এমন সময় কিছু ভিক্ষু আসিয়া বলিলেন, মৃত আত্মীয় স্বজনকে স্মরণ করে পশু জবাই করিয়া খানাপিনার আয়োজন করা যাবে কি?
বুদ্ধ গম্ভীর কন্ঠে বলিলেন, অবশ্যই যাবে না। জীবন নেয়ার মধ্যে ভালো কিছু থাকিতে পারে না। তোমাদের একটা গল্প বলি শোন…
ভিক্ষুরা বসিয়া পড়িলেন। বুদ্ধ গল্প শুরু করিলেন।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখন একজন ব্রাহ্মণ তার মৃত আত্মীয় স্বজনের স্মরণে এক ছাগল জবাই করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তার ছাত্রদের বললেন, ছাগলটিকে গোসল করাইয়া নিয়া আসো।
ছাত্ররা ছাগলটিকে নদীতে নিয়া গেল। গোসল করাইবার সময় দেখা গেল ছাগলটি একবার হাসে, একবার কাদে। ছাত্ররা বিভ্রান্ত হইয়া জিজ্ঞেস করিল, তুমি একবার হাসো আর একবার কাদো কেন? এর বিত্তান্ত কি?
ছাগল বলিল, এই প্রশ্নটি তোমাদের শিক্ষকের সামনে আমাকে যখন নিয়া যাইবে তখন আবার করিও। উত্তর দিব।
ছাত্ররা ত্বরা করিয়া ছাগলটিকে ব্রাক্ষণের কাছে লইয়া গেল। তারা ব্রাক্ষণ কে সব খুলিয়া বলিল।
ব্রাক্ষণ তখন নিজেই ছাগলকে জিজ্ঞেস করিলেন, কি বিষয় ছাগু? তুমি হাসো আর কাদো কেন?
ছাগল গম্ভীর কন্ঠে বলিল, অনেকদিন আগে আমি তোমার মতই এক ব্রাক্ষণ ছিলাম। বেদ শিক্ষা দিতাম। নিজের আত্মীয় স্বজনদের স্মরণে একটা ছাগলকে জবাই করিয়াছিলাম আমি। এরপর আমাকে ৪৯৯ জন্ম এইরকম ছাগল হইয়া জন্মাইতে হইয়াছে। ৪৯৯ বার আমাকে অনেকে তাহাদের আত্মীয়দের স্মরণে জবাই করিয়াছে। আমি হাসিতেছিলাম কারণ এটাই আমার শেষ পশুজন্ম। এইবার জবাই হইবার পর আমার পাপ শেষ হইবে। কিন্তু কাদিতেছিলাম তোমার কথা মনে করিয়া। আমাকে জবাই করার কারনে তোমাকেও পাঁচশ জন্মে জবাই হইতে হইবে।
ব্রাক্ষণ শুনিয়া কহিলেন, ঠিক আছে। আমি তোমাকে জবাই করিব না। তোমাকে পাহা্রা দিয়া রাখিব।
ছাগল বলিল, তোমার পাহারা বড় দূর্বল হে ব্রাক্ষণ। তাহা আমার শক্তিশালী পাপের কাছে কিছুই না। আমার পাপের জন্য আমার আজ মৃত্যু হইবেই।
ব্রাক্ষণ ছাগলটিকে ছাড়িয়া দিলেন। তার ছাত্রদের নিযুক্ত করিলেন পাহারায়। ছাগলটি মাঠে ঘাস খাইতেছিল একটা পাথরের ধারে। এক সময় হঠাৎ করিয়া পাথরে বর্জ্রপাত হইল। পাথর ভাগ হইয়া এক ধারালো অংশ ছুটিয়া আসিয়া ছাগলটির মাথা কাটিয়া ফেলিল। ছাগলটি মারা গেল।
*কর্ম নিয়ে এটি একটি বুদ্ধের গল্প। আপনি যা করবেন তাই আসলে ফিরে আসবে আপনার কাছে বা এর ফল আপনাকে ভোগ করতে হবে। এটাই কর্ম কথা।
গল্পটি অনুবাদ। জেন গল্প বা বুদ্ধের গল্প নামে এরকম অনেক গল্প প্রচলিত আছে। কর্মের ধারণা বেশ ইন্টারেস্টিং হলেও এটি আসলে একটা “জাস্ট ওয়ার্ল্ড ফ্যালাসি” ছাড়া আর কিছু নয়।