আওয়ামীলীগের বর্তমান সাইকোলজি

“সেলফ” বিষয়ক সাইকোলজিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া আমার মনে হয় জুলিয়ান রটারের লোকাস অব কন্ট্রোল। একজন মানুষের লোকাস অব কন্ট্রোল দুইরকম হইতে পারে, এক্সটার্নাল এবং ইন্টার্নাল। ধরা যাক, দুই ব্যক্তি পরীক্ষায় ফেইল করলেন। একজন ভাবলেন, দোষ তারই, তিনি ঠিকমত পড়েন নাই। আরেকজন ভাবলেন, শিক্ষক খারাপ, প্রশ্ন কঠিন হইছে, ভাগ্য খারাপ ছিল। এই দুইজনের মধ্যে প্রথমজনের লোকাস অব কন্ট্রোল ইন্টার্নাল। দ্বিতীয়জনের এক্সটার্নাল।

এই উদাহরণ থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, যার লোকাস অব কন্ট্রোল এক্সটার্নাল, তারে দিয়া কিছু হবে না। কারণ সে নিজেরে ইম্প্রুভ করতে পারবে না। সে একটা লুজার হইতে বাধ্য।

আওয়ামীলীগ সরকারের ঐতিহাসিক লজ্জাজনক পতন হইছে, এর একমাত্র কারণ তারা নিজে। তারা দুর্নীতি করছে, মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে নাই, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিছে, সর্বশেষ ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও তাদের হ্যামলেট বাহিনী দ্বারা গুলি চালাইয়া মানুষ মারছে। কোন স্বাধীন দেশে এমন ঘটনা অকল্পনীয়।

ভিডিওগুলা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছিল। আমরা সবাই দেখছি কীভাবে মানুষরে মাইরা ট্যাংক থেকে রাস্তায় ফেলে দিতেছে। একটা লোক বিল্ডিং থেকে ঝুলতেছিল, তারে গিয়া ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করতেছে। এইসব কাজের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এমন অবস্থায় বাস্তবতারে নিয়া গেছিল যে, দেশের মানুষ মনে করছে বাঁচতে হইলে এদের তাড়াইতে হবে। সেইটাই হইছে।

পুরাটাই আওয়ামীলীগের নিজের দোষে তারা আজ পতিত ও ঘৃণিত।

কিন্তু তাদের বয়ান হইল, জামাত শিবির স্বাধীনতা বিরোধী ও আমেরিকা মিলে তাদের পতন ঘটাইছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নাই করে দিতে চায়। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। এরা দেশরে মৌলবাদী বানাইতে চায়। এটা আমেরিকার এক বড় পরিকল্পনার অংশ ছিল। তারা নতুন নতুন কন্সপিরেসি বানাইতেছে।

আর তারা নিজেরা যে এতো কিছু করলো, এই ব্যাপারে কোন বয়ান নাই। এইটা তারা দেখতেছেই না।


সাইকোএনালিসিসের ফাদার মিস্টার ফ্রয়েড বলছিলেন উটপাখি সিন্ড্রোমের কথা। উটপাখি নাকি খারাপ বাস্তবতা না দেখতে বালিতে মাথা গুঁজে রাখে। এই রূপক ধরে তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানুষের এই প্রবণতা আছে। খারাপ বাস্তবতায় সেও উটপাখির মত আচরণ করে।

আওয়ামীলীগের ক্ষেত্রে এটা হইতেছে, সত্যরে না দেখা, কেবল তাদের পক্ষের তথ্য দেখা, দরকার হইলে তথ্য ডিস্টর্ট করা। তাও তারা নিজেদের দোষ দেখবে না। এবং কাল্পনিক রিয়ালিটি বানাইয়া হইলেও মরাল সুপিরিয়রিটিতে থাকতে চাইবে।

এভারেজ ট্যালেন্টেড হইলে একজন নার্সিসিস্ট ভালো করতে পারবে না তার ক্যারিয়ারে। কারণ, সে নিজের ইগোরে বাড়াইয়া দেখতে চায়, ফলে নিজের ভুল দেখবে না, ইম্প্রুভ করতে পারবে না নিজেরে। সে একটা নিজের বানানো রিয়ালিটিতেই বাস করে। আওয়ামীলীগের হইছে এই ডেলুলু অবস্থা।

তাদের গ্র্যান্ডিওসিটির উৎস শেখ মুজিবের ফিগার ও মুক্তিযুদ্ধ। এইজন্যই এত বড় বড় মূর্তি বানাইছিল শেখ মুজিবের, এগুলা নার্সিসিস্টিক গ্র্যান্ডিওসিটির প্রকাশ। গরীব দেশে কেন চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এমন মূর্তিগুলা বানানোর দরকার পড়ল? এইটা আওয়ামীলীগের ভেতরকার নার্সিসিস্টিক ডিল্যুশনের ফল, যেটার ভোক্তভোগী আম পাবলিকেরা, টাকা গেছে তাদেরই। আয়রনিক্যালী, শেখ মুজিবের ভুট্টোরে বলা কথা ভাইরাল, রিয়েলিটি মাইন্যা নেও। যেইটা আওয়ামীলীগের জন্যই এখন খাটে। কিন্তু মানা সহজ না কারণ সাইকোসিসে থাকা ব্যক্তি রিয়ালিটি মানতে পারে না, তার কাছে রিয়ালিটি ভিন্ন, ডিস্টর্টেড, সেলফ সার্ভিং, যেটা সে নিজেই তৈরি করছে।