মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » হার্ড, টেরিবল এন্ড আনফেয়ার ব্লো’দের মুখে আপনার কি রিয়েকশন হবে?

হার্ড, টেরিবল এন্ড আনফেয়ার ব্লো’দের মুখে আপনার কি রিয়েকশন হবে?

চার্লি মাঙ্গারের লাইফ থেকে আমরা যে সলিড শিক্ষা পাই, সেটা হইল একজন সারভাইভর হওয়া। মাঙ্গার বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ভাইস চেয়ারম্যান, ওয়ারেন বাফেটের বিজ্ঞ বন্ধু, বিলিনিয়ার এবং দুনিয়ার হিসাবে আমরা তারে সফল ধরতে পারি। কিন্তু এই সফলতার হিসাবরে আলাদা করলে, আমরা যদি তার লাইফ দেখি, দেখব অনেক স্ট্রাগলের ভিতর দিয়া গেছেন তিনি।


২৯ বছর বয়েসে আট বছর বিয়াতে থাকার পর তার ডিভোর্স হয়। এই ডিভোর্সে তার সাবেক স্ত্রীর কাছে তিনি তার বাড়ি এবং বলা যায় সকল সম্পদ হারান।


এই ডিভোর্সের পরই তার ৮ বছরের ছেলে টেডির লিউকোমিয়া হয়। হেলথ ইনসুরেন্স না থাকায় এর চিকিৎসার জন্য মাঙ্গারকে বাকি থাকা প্রায় সব টাকাই ব্যয় করতে হয়।

ঐ সময়ে মাঙ্গারের অবস্থা বুঝাইতে তার বন্ধু রিক গুয়েরিন বলেন, ঐ সময় সে হাসপাতালে গিয়া তার অসুস্থ ছেলের হাত ধইরা বইসা থাকত। তার ছেলেটা মারা যাইতেছে। এরপর পাসডিনা শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কানতো সে।

এর এক বছর পরে তার ছেলে মারা যায়।

এরপরে, অনেক বছর পরে একটা ভয়ানক দূর্ঘটনা ঘটে তার লাইফে। চোখের একটা সার্জারিতে সমস্যা হয়ে তার চোখে এতোই ব্যথা হয় যে, চোখ সরাতে বাধ্য হন তিনি। সাম্প্রতিক কালে ডাক্তাররা তারে জানাইছেন, অন্য চোখের দেখার শক্তিও তিনি হারাতে যাইতেছেন।

মাঙ্গার এই কারণে বলেন, আপনে যেই হোন না কেন, যত ভালো বা জ্ঞানী, লাইফে টেরিবল ব্লো আসতে পারে, আনফেয়ার ব্লো আসতে পারে।

সেইগুলা মাইনা নিয়াই আমাদের আগাইতে হয়।

আপনে একটা চূড়ান্ত খারাপ ও সাইকোপ্যাথ লোকরে পাইতে পারেন পার্টনার হিসাবে। অন্য কোন ধরণের দূর্যোগ আসতে পারে।

মাঙ্গার বলেন,

“আপনে যখন ভাবেন কোন অবস্থা বা কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা আপনার লাইফ রুইন করতেছে, এটা আসলে আপনেই আপনার লাইফ রুইন করেছেন। এটা সিম্পল আইডিয়া। একজন ভিক্টিম ভাবা নিজেরে হইল একটা দুর্দশাময় জীবনের দিকে যাওয়া। আপনে যদি মনে করেন ও এই এটিচিউড ধারণ করেন যে যাই হইতেছে তা কোনভাবে আপনার দোষে, আর সেইটা সর্বোচ্চ ভাবে ফিক্স করার চেষ্টা করেন, সেইটা কাজ করে বলে আমি মনে করি।”

সেলফ পিটি যে জিনিসটা আছে, নিজের দূর্ভাগ্যের জন্য হা হুতাশ করা, এটা বলে বেড়ানো, এবং কেবলমাত্র এর মধ্যেই আবদ্ধ থাকা, এটা দুনিয়াজুড়েই মানুষের একটা মেজর সমস্যা। প্রচুর মানুষ এর মধ্যে আটকাইয়া আছে।

দুঃখিত হবার যৌক্তিক কারণ থাকে অবশ্যই। আপনি ভালো হলেও খারাপ একটা জিনিসের মুখে পড়তে পারেন। এবং আলটিমেটলি এক সময় আপনে মারাও যাবেন।

কিন্তু সেলফ পিটিতে আটকে থাকলে আপনার কোন লাভ নাই। লাইফের ক্ষতি। একটা গুড লাইভ, একটা নোবল লাইফ আপনে লিড করতে পারবেন না তখন।

মাঙ্গার তার একটা লেকচারে বলছিলেন, আপনার লাইফে হরিবল ব্লো আসবে, টেরিবল ব্লো আসবে, আনফেয়ার ব্লো আসবে। কিছু লোক এগুলা স্বত্তেও রিকভার করে। কিছু লোক করে না। এইখানে এপিকটেটাসের এটিচিউড হইল সেরা। তিনি বলছিলেন লাইফে সব মিসড চান্স বা খারাপ সময় হইল, একটা সুযোগ, শেখার সুযোগ ও আরো ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ। তাই কারো উচিত না নিজেরে হা হুতাশে আবদ্ধ রাখা। বরং যেই ব্লো আসছে আপনার, খারাপ সময় ঐটারে কনস্ট্রাকটিভ ভাবে কাজে লাগান।“

উইথ অল ইওর পেইন।

কারণ যাদের আপনে দেখেন সো কলড সফল ও হাসিখুশি, আপনে জানেন না তারা কতো খারাপ অবস্থায় পড়ছিল। হয়ত অনেক খারাপ অবস্থাও পইড়াও তারা রিকভার করতে পারছে।

বার্কশেয়ারের একজন বিশ্বস্থ ম্যানেজার একবার বিজনেস এথিকসের বাইরে গিয়ে কিছু  করে ফেলেছিলেন। ডেভিল সকোল, তারে বলা হইত বাফেটের মিস্টার ফিক্স ইট এবং ধরা হইত ইনি ওয়ারেন বাফেটের স্থলে যাবেন তার কার্য মেয়াদ শেষ হইলে। বাফেট ও মাঙ্গার তারে বিশ্বাস করতেন। ঐ কাজের পরে তিনি রিজাইন করেন। এক সাংবাদিক চার্লি মাঙ্গাররে জিজ্ঞেস করলেন, আপনে কি প্রতারিত ফিল করতেছেন?

মাঙ্গার বললেন, না, ঐ জিনিস আমার প্রকৃতিতে নাই। মানুষের আচরণে যদি আমি আশ্চর্য হই, তখন আমার তরিকা হইল মাথা নিচু কইরা মানাইয়া নেয়া আবেগের সাথে, প্রতারিত ফিলের মত জিনিসে আমি অধিক সময় ব্যয় করি না। যদি মাঝে মাঝে এইটা আইসাও যায়, আমি দ্রুত এর থেকে বের হইয়া যাই। নিজেরে ভিকটিম ভাবতে আমার ভালো লাগে না, কারণ এইটা কাউন্টার-প্রোডাক্টিভ ব্যাপার। আমি হইলাম একজন সারভাইভর, ভিক্টিম না।

একজন মানুষের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেয়া যায়, কেবল একটা জিনিস ছাড়া। সেটা হলো তার শেষ স্বাধীনতা, যে কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে তার আচরণ কেমন হবে এটা পছন্দ করার, তার নিজের পথ পছন্দ করার স্বাধীনতা। এটা এক আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা যা কেড়ে নেয়া যায় না, এবং এটাই জীবনকে করে অর্থপূর্ন।

– ভিক্টর ফ্রাঙ্কল। ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং।

ভিক্টর ফিঙ্কেল একজন সাইকোলজিস্ট হাসপাতালে চাকরি করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারে ধরে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। চারটি ক্যাম্পে তিনি ছিলেন।

আলেকজান্দার সোলঝেনিৎসীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশার সম্মানীত আর্মি অফিসার ছিলেন। স্ট্যালিনের আমলে আরেকজনকে দেয়া এক চিঠিতে স্ট্যালিনের সমালোচনা করায় তাকে গুলাগে ভরা হলো। ল্যাবর ক্যাম্পে।

এলিস্টার উরুকুহার্ট, ব্রিটিশ আর্মিতে তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে নেয়া হয়।। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সিংগাপুর আউটপোস্টে ছিলেন, সেখানে তিনি জাপানি আর্মিদের দ্বারা ধৃত হন। জাপানিজ ওয়ার ক্যাম্পে চালান হন।

এই তিন লোকই ল্যাবর ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অকল্পনীয় কষ্টভোগ করেছেন। কিন্তু এর জন্য তাদের কোন অপরাধ ছিল না। তারা সাধারণ ভালো মানুষই ছিলেন। তবুও দূর্ভাগ্যের স্বীকার হয়েছিলেন।

শুরুর প্রশ্নে যাই। হার্ড, টেরিবল এন্ড আনফেয়ার ব্লো’দের মুখে আপনার কি রিয়েকশন হবে?

এটি আপনার চয়েজ। এই জায়গায় আপনার স্বাধীনতা। মেন্টাল টাফনেস ও ক্ষমতার পরীক্ষা।

আপনে কি সেলফ-পিটিতে আবদ্ধ থাকবেন, নিয়ত হা হুতাশে, একজন ভিক্টিমের ফিল নিয়া লাইফ অতিবাহীত করবেন?

নাকি হবেন একজন সারভাইভর?

1 thought on “হার্ড, টেরিবল এন্ড আনফেয়ার ব্লো’দের মুখে আপনার কি রিয়েকশন হবে?”

  1. আসসালামু আলাইকুম,ভাই।আপনার স্টোয়িক এবং মাঙ্গারিজম নিয়ে লেখাগুলো অনেক ভালো ছিল।এই রকম বিষয় নিয়ে আরো লিখবেন আশা করি। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং