করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রোপাগান্ডার ভূ-রাজনীতি

করোনা ভাইরাসের মত প্যানডেমিকের সাথে রাজনীতিও জড়িত থাকে বা জড়িত হয়ে পড়ে। বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তেমনি এক চাইনিজ পলিটিক্স হতে করোনা ভাইরাস ইস্যু নিয়ে। চাইনিজ সরকার তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ইতিহাস ভিন্নভাবে নির্মান করে যাচ্ছে।

এটা একটা খুবই রিমার্কেবল ঘটনা। খুবই দ্রুত এবং ঘটতে থাকা বা প্রায় ঘটে যাওয়া ইতিহাসই তারা প্রায় বদলে ফেলেছে। নিজের দেশে এবং দেশের বাইরেও।

চাইনিজ সরকারের দূর্বলতা বা দোষের কারণে উহান শহর থেকে করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। তারা প্রথমে ব্যাপারটি গোপন রেখেছিল। প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষ কোন প্রকার স্ক্রিনিং ছাড়া দেশে বিদেশে গিয়েছেন উহান থেকে, ফলশ্রুতিতে ভাইরাস ছড়িয়েছে।

এখন এমন অবস্থা যে, খুব সম্ভবত বৈশ্বিক রিসেশন হতে যাচ্ছে এর প্রতিক্রিয়ায়, এবং এই দুর্দশার জন্য ইতিহাস দায়ী করবে চীন নামক একটা রাষ্ট্রের দূর্বলতাকে। গ্লোবাল ক্ষমতাধর মোড়ল হতে চাওয়া চীনের জন্য এটি খারাপ হবে।

তাই চীন কিছু পয়েন্ট লক্ষ রেখে তাদের প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে,

১। তারা তাদের দোষ বা দূর্বলতা থেকে ফোকাস সরিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে কিভাবে ভাইরাস মোকাবেলায় তারা সফল হয়েছে সেইদিকে।

২। তারা বলতে চাচ্ছে এই ভাইরাস আসলে চীনে উৎপত্তি হয় নি। একজন বিজ্ঞানী, যিনি সরকারের হয়ে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন, তিনি সরাসরি এ বিবৃতি দিয়েছে। ক্যানবেরায় চীনের অষ্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের এম্বাসেডর বিদেশী সাংবাদিকদের দেয়া ইমেলে বলেছেন যে বিদেশী সাংবাদিকেরা এই ভাইরাস চীনে উৎপত্তি হয়েছে বলে ঘটনাটির সাথে রাজনীতি মেশাচ্ছেন।

৩। তারা বলতে চাচ্ছে চাইনিজ সরকারের পদক্ষেপের কারণেই সমগ্র বিশ্ববাসী এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতির সময় পেয়েছে। মার্চের ৯ তারিখে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি উল্লেখ করে টুইট করে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী জি জিনপিং সরাসরি বলেছেন এই ভাইরাস মোকাবেলায় চীনের পদক্ষেপ এবং এর সফলতাকে লক্ষ করে নিউজ করতে। এরপর থেকে এরকম নিউজ শুরু হয়েছে।

তবে মূলত তারা ব্যবহার করছে ডিজিটাল মাধ্যম। কারণ এটাই বিশ্বের প্রথম গ্লোবাল ক্রাইসিস সোস্যাল মিডিয়ার যুগে।

অক্টোবর ২০১৯ এ প্রায় ডজনখানেক চৈনিক দূতাবাস, এম্বাসেডর এরা টুইটার একাউন্ট খুলেন। যদিও টুইটার নিষিদ্ধ চীনে। খোলার পরেই তাদের অনেকের হাজার হাজার ফলোয়ার তৈরি হয়ে যায়। এসব টুইটারই ব্যবহৃত হচ্ছে উক্ত প্রোপাগান্ডাগুলি প্রচারে।

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ আগে মানব ইতিহাসের অন্য কোথাও হয়েছে এমন দেখা যায় নি। চীনের ওয়েট মার্কেটে নানা প্রজাতির প্রাণীর মাংস কাটা হয়, ফলে নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। উহানের হুনান হোলসেল সী ফুড মার্কেটের সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলা হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখে মার্কেটটি বন্ধ হয়।

আর উহানে কয়েক সপ্তাহ কোন চেক ছাড়া রেখে চীনের যে গাফিলতি তা দায়ী এই ভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণে।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সম্ভবত বাই বর্ন মাস্টার পারসুয়েডর, তিনি (বা তার উপদেষ্টারা) চীনের তৎপরতার রেসপন্স হিসেবেই সম্ভবত আরেকটা প্রোপাগান্ডা অবস্থান নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে ট্রাম্প টুইটে ও বিবৃতিতে করোনা ভাইরাসকে বলছেন সরাসরি “চাইনিজ ভাইরাস”।

গত বুধবারে যখন হোয়াইট হাউজে টাস্ক ফোর্স ঘোষনা করতে যান, তিনি শুরুতেই চাইনিজ ভাইরাস নাম দিয়ে শুরু করেন। লক্ষ করলে দেখবেন তার বলার ধরণ, একটা পজ দিয়ে তিনি বললেন চাইনিজ ভাইরাস।

সাংবাদিকেরা বলে সিডিসি মানা করেছে, বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি না বলতে বলেছে, এবং এটা রেসিস্ট কি না?

ট্রাম্প তখন বলেন, “কারণ এটি চায়না থেকে এসেছে। কোনভাবেই রেসিস্ট নয় এই কথা। কোনভাবেই নয়। এটা চায়না থেকে এসেছে। এজন্য। এটা চায়না থেকে এসেছে।“

এই কয়েক লাইনে তিনবারই “চায়না থেকে এসেছে”! এটি প্রোপাগান্ডার মাস্টার টেকনিক যা ট্রাম্প ব্যবহার করেন প্রচুর।

ট্রাম্পের এই “চায়না ভাইরাস” ব্যবহার থেকে রাজনৈতিক এবং চীনের প্রোপাগান্ডার কাউন্টার, তা ট্রাম্পের আরেকটি উত্তর শুনলে বুঝা যায়। সেখানে তিনি বলেছেন চীন একবার বলতে চেয়েছিল এটা আমেরিকান সেনাদের থেকে এসেছে…

তিনি নিয়মত এটি বলছেন, এবং এখন দ্বিগুণ করে দিয়েছেন বলা।

 

স্পষ্টতই এই ভাইরাসের সংক্রমণ একটা গ্লোবাল ক্রাইসিস। মানুষ মারা যাচ্ছেন। কীভাবে সতর্ক থাকতে হয় এ নিয়ে নানাজন বলছে। আমি পলিটিক্যাল দিক থেকে লেখলাম, কারণ এই টপিক – জিওপলিটিক্স-প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি আমার আগ্রহের বিষয়।