পুরানা পল্টন থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা দৈনিক আনন্দবাজারে অধ্যাপক ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির “বিবিসি ওয়ার্ল্ডের বাংলা ভাষায় ভাঙ্গন ধরানোর সাম্প্রতিক অনভিপ্রেত তৎপরতা” নামে একটি লেখা লিখেছেন, যেখানে তার কথা হলো সিলেটি আলাদা ভাষা না একটি আঞ্চলিক বুলি, এবং ভাষাকেন্দ্রিক যে রাজনৈতিক ঐক্য তা ভাঙ্গার চেষ্টার অংশ হিসেবে সিলেটিকে আলাদা ভাষা বলা হচ্ছে।
উনার এই অভিযোগটি অসত্য। এবং তার লেখাতেও তিনি সিলেটি ভাষাকে আঞ্চলিক বুলি হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন নি।
কিন্তু তার লেখাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখাতে পেরেছে। তিনি বার বার ভাষা এবং রাজনৈতিক একতা নিয়ে কথা বলেছেন। অর্থাৎ, তার লেখার পরোক্ষ অর্থ দাঁড়ায় ভাষা একটি রাজনৈতিক জিনিস, এবং এই ভাষা রাজনীতির কারণেই ক্ষমতার কেন্দ্রের ভাষা অন্য ভাষাদের গ্রাস করে ফেলে। যেভাবে সিলেটি ভাষাকে গ্রাস করতে চাইছে বাংলা, এবং তারই অংশ হিসেবে তিনি লিখেছেন ও প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন যে সিলেটি একটি আঞ্চলিক বুলি।
কিন্তু যে অঞ্চলের মানুষের ভাষা এটি, তারা নিশ্চয়ই এটি হতে দিবে না। তাদের হতে দেয়া উচিত না। কারণ ভাষার সাথে একটা অঞ্চলের মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও চিন্তা জড়িত।
তাছাড়া এক একটা ভাষা, পুরো মানব সভ্যতার অর্জন।
বুদ্ধিজীবী ও বিজ্ঞানী জ্যারেড ডায়মন্ড তার থার্ড শিম্পাঞ্জি বইতে ভাষার গুরুত্ব নিয়ে কিছু লিখেছিলেন। আমি সেগুলি নিচে উল্লেখ করছি, বাংলা অনুবাদে,
“সাংস্কৃতিক বৈচিত্র দেখা যায় ভাষার বৈচিত্রের মধ্যে। কিন্তু প্রচুর প্রচুর ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ইউরোপে এখন আছে প্রায় পঞ্চাশটি ভাষা। এদের বেশীরভাগ ইন্দো ইউরোপিয়ান নামের একটি ভাষা পরিবারেরই সদস্য। অন্যদিকে, নিউ গায়ানার আয়তন ইউরোপের দশ ভাগের একভাগ, জনসংখ্যায় ইউরোপের শতভাগের এক ভাগ, কিন্তু ওখানে ভাষা আছে শত শত। এদের অনেকগুলিই নিউ গায়ানা বা পৃথিবীর অন্য এলাকার ভাষা থেকে সম্পূর্ন আলাদা। নিউ গায়ানার একটি ভাষায় গড়ে প্রায় কয়েক হাজার লোক কথা বলেন, যারা প্রায় দশমাইলের ভেতরে পরস্পরের কাছাকাছি বসবাস করেন।
“পৃথিবী আসলে এরকমই ছিল। প্রতিটি একাকী ট্রাইবের ছিল আলাদা ভাষা। কৃষির উন্নতির সাথে সাথে এ অবস্থা বদলে যেতে শুরু করল, কিছু দল বড় হতে থাকল লাগল শক্তিতে, ক্ষমতায় আর তাদের ভাষা ছড়িয়ে দিতে লাগল বিস্তৃত এলাকায়। মাত্র ছয় হাজার বছর আগে ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবার বিস্তৃত হতে শুরু করে, এবং বাড়তে বাড়তে ইউরোপের প্রায় সব ক’টি প্রধান ভাষার উৎসে পরিণত হয়। একই জিনিস গত কয়েক হাজার বছরে হয়েছে আফ্রিকায়, সেখানে বানতু ভাষা পরিবার বিস্তৃত হয়ে আফ্রিকা, দক্ষিণ সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন অন্য ভাষাগুলিকে গ্রাস করে ফেলেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়, শত শত ইন্ডিয়ান ভাষা গত কয়েক শতাব্দিতে বিলুপ্ত হয়েছে।
এই ভাষা হারানো কি ভালো জিনিস, কারণ কম ভাষা হলে তো যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা? হয়ত, কিন্তু এটা খারাপ জিনিস অন্য আরো অনেক দিক থেকে। ভাষাগুলি গঠনগত ও শব্দ ভান্ডারের দিক থেকে আলাদা হয়। তারা আলাদা হয় অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধের দিক থেকে। একেক ভাষা একেক ভাবে আমাদের চিন্তাকে আকৃতি দেয়, মানস কাঠামো গড়ে তুলে। কোথাও কোন “সবচাইতে সেরা” ভাষা নেই। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য বেশী উপযুক্ত। যখন কোন ভাষা হারিয়ে যায় তখন আমরা আসলে যারা এই ভাষায় কথা বলত তাদের এই পৃথিবীকে দেখার এক ইউনিক জানলা হারিয়ে ফেলি।”
বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক একতা রাষ্ট্র হিসেবে তার মূলে রয়েছে বাংলা ভাষা। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এই ভাষার মাধ্যমে এক হয়েছি, এটা বলা যায়। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের শুরুর দিক থেকে সিলেট যুক্ত ছিল এই আন্দোলনের সাথে। সিলেট মহিলা কলেজ থেকে মিছিল বের হয়েছিল, এবং এরও সৈয়দ মুজতবা আলী ভাষার প্রশ্নে বাংলার সমর্থনে লিখেছিলেন অনেক আগেই, একেবারে প্রথম দিকে।
সিলেটিদের নিজেদের ভাষাকে রক্ষা করা, এর চর্চা কোনভাবেই বাংলাভাষার বিরুদ্ধে নয়।
ভাষা আন্দোলনটা কখনোই “মাতৃভাষা বাংলা চাই” ছিলো না। ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। দুই জিনিসে আকাশ পাতাল তফাত।
আমার মাতৃভাষা সিলেটি, বা চাকমা হতে পারে, কিন্তু আমি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঐ প্রেক্ষাপটে কেবলমাত্র উর্দুর বিরোধীতা করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা চাইতে পারি বা ঐ দাবীর সাথে একাত্ম হতে পারি। কিন্তু তার মানে কখনোই এটা নয় আমার ভাষা আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। এটা যদি করতে বলা হয়, তাহলে চাপিয়ে দেয়া উর্দুর সাথে বাংলার পার্থক্য থাকলো কোথায়?
আমাদের যে আরবান সাংস্কৃতিক শ্রেণী তৈরি হয়েছে এদের একটি আগ্রাসী প্রবণতা রয়েছে প্রমিত বাংলা বলার ও লেখার। প্রমিতের বাইরে অন্য বাংলাকে তারা অশিক্ষিত মনে করেন। যেটি বাংলা ভাষারই মূল স্পিরিটের বিরুদ্ধে।
সদ্য প্রয়াত বড় সাহিত্যিক দেবেশ রায়ের লেখা “প্রমিত বাংলার কথা” থেকে এখানে উল্লেখ করছি।
“উইলিয়াম কেরি মালদা থেকে যেসব চিঠিপত্র লিখেছেন, সেগুলো পড়লে আর সন্দেহের কোনো কারণই থাকে না যে তিনি বাংলা ভাষাকে প্রায় ঘৃণাই করতেন। তাঁর প্রধান নালিশ ছিল- এ ভাষাটির কোনো প্রামাণিক আকার নেই ও নদীর প্রত্যেকটি বাঁকে এ ভাষা আলাদা। বাংলা ভাষার অপ্রমিত স্বাভাবিকতাকে তিনি ভেবেছিলেন ভাষার দুর্বলতা। মালদা থেকে এসে তিনি যখন নদীয়ার দিকে নৌকোয় ঘুরছিলেন ও এক-একটা বিষয় নিয়ে লোকজনের কথাবার্তার উদাহরণ সংগ্রহ করছিলেন, ‘কথোপকথন’, তখন তিনি এই ভাষার স্বাভাবিকতার ওপর একটা শৃঙ্খলা আরোপ করতে লাগলেন। শৃঙ্খলা আরোপের প্রধানতম দুটি উপায় হচ্ছে, ক্রিয়াপদের ও বিশেষ্যের সংখ্যা যদ্দুর সম্ভব কমিয়ে আনা ও মুখের কথার অর্থ-বৈচিত্র্যকে একটিমাত্র অর্থের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া। এই দুই সরলীকরণের ফলে, যাকে আমরা প্রমিত বাংলা বলে পরে চিনে নিয়েছি, তার জন্ম। কেরি ও শ্রীরামপুরের পাদ্রিরা বাংলা ভাষাটা শিখতে চাইছিলেন মুখের ভাষা থেকে- তা ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় ছিল না। যে বিপুল আকারের বাংলা সাহিত্য সারা বাংলায় গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে ছিল সেগুলো তাঁরা পড়তেই পারতেন না। তাঁদের কাজ ছিল- লোকের মুখ থেকে একটা বাংলা ভাষা তৈরি করে সেই ভাষার ওপর বাইব্ল চাপিয়ে দেয়া। কেরি বা শ্রীরামপুরের বাইব্লি গদ্য, বাংলা গদ্য হয়ে ওঠেনি। কেন, সেটা অন্য কথা। কিন্তু তথাকথিত বাংলা প্রমিত গদ্যের জন্ম-ইতিহাস এটাই।
ফলে, উনিশ শতকজুড়ে ক্রম-শিক্ষিত সমাজ যেন কলকাতায় বাংলা চর্চা করতে লাগলেন ও প্রমিত বাংলা ভাষার আকার স্থির করতে লাগলেন- এই ধারণাটিই প্রচলিত। কার্যত এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। উনিশ শতকের শেষ ৬০ বছরে, মানে ১৯৪০ থেকে সংবাদ-সামরিকপত্রে যে বাংলা গদ্য তৈরি হচ্ছিল তা তখনকার প্রচলিত ‘প্রমিত বাংলা’ নয়, ‘প্রমিত’ বলতে যদি বুঝে থাকি মুখের ভাষা ও সেই সুবাদে লেখার ভাষাও। যে গদ্যভাষা বাংলায় উনিশ শতক জুড়ে তৈরি হয়েছে তা সাধুভাষা। মুখের প্রচলিততর ভাষাকে যদি প্রমিত ভাষা হিসেবে ধরে নি ও তার লিখিত রূপে অনিবার্য কিছু পরিবর্তনসহ, যদি সেই ভাষাকেই লেখার-বলার ভাষা বলে মেনে নি, তা হলে সাধুভাষাকেই বাংলার প্রমিত ভাষা বলে মানতে হয়। উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’, সত্তরের দশকে রবীন্দ্রনাথের ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ ও স্বামী বিবেকানন্দ’র কিছু রচনা কথ্যভাষায় লেখা হলেও সেই ভাষা কিন্তু তখনকার আদর্শ অনুযায়ী ‘প্রমিত বাংলা’ হিসেবে গ্রাহ্য হয় নি।
আমার তো মনে হয়, কোনো ভাষার একটা ‘প্রমিত’ রূপের ধারণাটাই ইউরোপীয় দেশগুলোর কলেনি-বিস্তারের সঙ্গে ওতপ্রোত। ‘স্ট্যান্ডার্ড ডায়ালেক্ট’ বা ‘প্রমিত কথ্যভাষা’ ধারণাটি সমস্ত সাম্রাজ্য-বিস্তারী ভাষার পক্ষে খাটে কী না তা আমি জানি না। ইংরেজিই এ ধারণাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে। আমি তো স্ট্যান্ডার্ড জার্মানি, স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেঞ্চ এমন ধারণা ও ধারণা থেকে তৈরি চিহ্ন, কখনো ব্যবহৃত হতে দেখিইনি। কিন্তু ‘স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশ’ ধারণা ও ব্যবহার খুবই চলে। একটু বেশিই চলে।“
এই প্রমিত বা স্ট্যান্ডার্ড বাংলা নিয়ে যে কালচারাল হেজিমনিটা আছে, তার কারণেই আমরা ঐ ভাষাকে “শুদ্ধ” আর অন্যান্য বাংলা ডায়ালেক্ট এবং আলাদা ভাষাগুলি (সিলেটি, চাটগাইয়া ইত্যাদি) এদের “অশুদ্ধ” বলে ধরে নেই। এটা ভুল।
বড় সাহিত্যিক ও সমালোচক আহমদ ছফা তার এক স্বাক্ষাতকারে বলেছিলেন, এখানে যে মুসলিম সোসাইটিটা গ্রো করেছে, কালচারাল এলিটরা – এরা হিন্দু এলিটের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বেরিয়েছে।
ঢাকার শিক্ষিত এলিট ক্লাসের প্রসঙ্গে এটি বলেছেন ছফা, মুসলিম এখানে আইডেন্টিটি ভিত্তিক টার্ম। এই এলিট ক্লাস প্রভাবিত করেছেন ঢাকার তথা বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক বাতাবরণ এবং আর্ট কালচারকে। এতে আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলের (সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্ল, নোয়াখালি ইত্যাদি) কালচার, চিন্তা আসতে পারে নি আমাদের মূল ধারায়। আসলেই সাব হিসেবে থেকেছে, মানে নিচু, অপরিণত ও অশুদ্ধ। যেমন, উপনিবেশবাদীরা নতুন এলাকায় গিয়ে ঐ অঞ্চলের লোকদের অসভ্য আর নিজেদের সুপিরিয়র জ্ঞান কারতো। এটাই ছিল উপনিবেশের প্রধান যুক্তি, যে আমরা ওদের সভ্য করছি।
আপনি দেখবেন সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে, তাদের সমাজের সাথে ঐ এলিট ক্লাসীয় বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা, কালচার ও ভাষার কতো তফাত!
আমাদের সামগ্রিক আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের মূলেও এটা।
এইজন্য নোয়াখালির লোক বা অন্য অঞ্চলের লোক তার টোনে বাংলা বললে, হাসাহাসি করা হয়। তাকে অশিক্ষিত মনে করা হয়। তাকে শিক্ষিত রুচিশীলদের দলে ভীড়তে হলে ঐ তথাকথিত “শুদ্ধ” আবৃত্তি বাংলা শিখতে হবে!
কবি জসিম উদ্দিনের একটা বই আছে, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়। সেখানে তিনি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার তাকে একটি নাটকের প্লট দিয়েছিলেন। একটি মুসলমান চাষা পরিবারের ছেলে কলকাতায় গিয়ে পড়ালেখা করেছে। এম এ পড়া শেষ করে, অনেকদিন পরে সে বাড়ি যায়। তার বাপ মা তাকে বরণ করে নেন গ্রামীন পন্থায়। কিন্তু শিক্ষিত ছেলের এটি পছন্দ হয় না। সে মনে করে এগুলি অশিক্ষিত লোকের কাজ। সে বলে তোমরা এগুলি করে আমাকে অপমান করছো।
আমাদের শিক্ষিত যে এলিট ক্লাস, কলকাতাকেন্দ্রিক এলিটদের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি, তারা এই ধরণের মানসিকতা লালন করে গেছেন। এবং এই মানসিকতাই পরে শিক্ষিত সমাজের ভেতর সঞ্চারিত হয়েছে, সঞ্চারিত হয়েছে আর্ট কালচার মিডিয়ায়।
দেশে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সময় এসেছে এখন, এগুলিকে ডিনাই করার। এগুলি কলোনিয়াল মানসিকতা। দুইশ বছরের ইংরাজ কলোনি শাসিত জনপরিমণ্ডলের ভেতর ঐ শাসনের কু প্রভাব।
ডি কলোনিয়ালাইজেশনের প্রথম ধাপই হবে নিজের আত্মপরিচয় নিয়ে শরমিন্দা হবার কিছু নেই। যে এলাকায় আপনার জন্ম, এটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চল হলে তার হাজার হাজার বছরের ইতিহাস আছে। আপনি তার অংশ। যে ভাষায় আপনি কথা বলেন সেটা ঐ বৃহৎ ইতিহাসের অংশ। এতে গর্বিত হতে পারেন, লজ্জ্বার কিছু নেই।
যখন আপনি আপনার টোন নিয়ে, ভাষা নিয়ে এবং কালচার নিয়ে এই তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের সামনে অসংকীর্ণ হয়ে দাঁড়াবেন, তখনই একটা ভিন্ন অবস্থা তৈরির সূচনা হবে। আমাদের সমগ্র বাঙালী জাতিস্বত্তা তথা পূর্ব বাংলার মানুষের আত্মপরিচয়ের পুনরাবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠার জন্য, এটি খুবই দরকারী।
ফলে, এই যে সিলেটি ভাষার চর্চা, এগুলি কোন ভাবেই বাংলাদেশী পরিচয়, বাংলাদেশ বা বাংলার বিরুদ্ধে নয়। বরং এটি একটি কালচারাল আন্দোলন পূর্ব বাংলার মানুষের প্রকৃত স্বত্তাকে বের করার, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষাধরণের সংমিশ্রণে যে অপূর্ব একটা সমাজ বিদ্যমান এখানে, তাকে বের করে আনার পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহীকতায় অন্যান্য অঞ্চলের ও ভাষাভাষী মানুষেরাও যেন নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে দৃঢ় ভাবে এগিয়ে আসতে পারেন, একটা ফেইক কলোনিয়াল সাংস্কৃতিক হেজিমনির নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে।