ইনসিকিওরিটি ও ইনফিরিওরিটি কম্পলেক্স নিয়ে লেখা

১/ ইনসিকিওরিটি ও ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স রিলেটেড। মানুষ নিরাপত্তাহীন ভাবতে থাকে যখন সে মনে করে নিজেকে অসুন্দর, দেখতে খারাপ, প্রতিভাহীন ইত্যাদি। এই থেকে তার নিজেকে ইনফিরিওর ফিল হয়, ও ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। ফলে সেল্ফ ফুলফিলিং প্রফেসীর মত, তার পারফরমেন্স খারাপ হতে থাকে। লাইফ খারাপ হতে থাকে।

২/ এক লোকের হটডগ উৎপাদনের ব্যবসা ছিল ছোট এক শহরে। তার ব্যবসা ভালো চলত। তার শিক্ষিত ছেলে বড় শহর থেকে এসে একদিন বাপকে বলল, পিতাশ্রী, অর্থনৈতিক মন্দা হবে সামনে, ভয়াবহ রিসেশন। আপনার ব্যবসা তো টিকবে না।

বাপ চিন্তা করলেন, ছেলে তো আমার অনেক জ্ঞানী। অনেক পড়ালেখা করেছে। তার কথা অবশ্যই ঠিক।

ছেলের কথা বিশ্বাস করে তিনি তার হটডগ উৎপাদন কমিয়ে দিলেন। ফলে ক্রেতাও কমে গেলো আস্তে আস্তে। এবং তিনি লক্ষ করলেন এক পর্যায়ে যে, কম উৎপাদনেই ঐসব কম ক্রেতাদের সার্ভ করা যাচ্ছে। তিনি ভাবলেন, এখন বেশি উৎপাদন করে গেলে আমার কী ক্ষতিটাই না হতো। ছেলেকে তিনি ধন্যবাদ দিলেন।

সেলফ ফুলফিলিং প্রফেসীর ব্যাপারটা ১০০ ভাগ এটাই। যা বিশ্বাস করে, সে অনুযায়ী কাজ করে, ফল ঐ বিশ্বাসের মত হয়, আর পরে বলে এটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম।

৩/ অনেকে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সের ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে নিজেকে সুপিরিয়র ঘোষণা করতে থাকে। একটি থাম্ব রুল হল, এরকম কেউ ঘোষনা করলে দেখা সে কি কি করেছে যার জন্য সে সুপিরিয়র। বা তার নিজের নিজেকেই উচিত প্রশ্ন করা। শক্ত উত্তর না পাওয়া গেলে এই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স তার ইনফিরিয়র ফিলেরই ডিফেন্স মেকানিজম।

৪/ পুরা শো বিজনেস তথা ফিল্ম মিডিয়ার কাজ হলো আপনাকে ইনফিরিয়র ফিল করানো। এটি বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারে না। আপনাকে ইনফিরিয়র ফিল করানো না গেলে আপনার কাছে প্রসাধনী থেকে শুরু করে ফ্যাশনের বস্ত বিক্রি করা যাবে না।

৫/ যারা ফিল্ম ও টিভি শো বেশি দেখে, এরা হয়ত একসময় বুঝতে পারে এগুলি তাদের ম্যানিপুলেট করছে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল, একজন সুন্দর মানুষ দেখলে তার সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করা। কম্পেয়ার করেই সে বুঝতে যায়। টিভিতে ফিল্মে ক্যারেক্টারেরা, বা যাদের সুন্দদের আইডল বানানো হয়, এরা বাস্তব না, এদের মেকাপ করিয়ে, নানা কারিকুরি করে ওই অবস্থায় আনা হয়। কিন্তু উপস্থাপন করা হয় বাস্তব হিসাবে। দর্শকেরা এটাকে বাস্তব মেনে নেয়, ও সাবকনশাসলি এর সাথেই নিজেকে কম্পেয়ার করতে থাকে।

৬/ যদি প্রো বডি বিল্ডারদের দেখেন, এরা আপনাকে বলবে তাদের ডেডিকেশনের কথা। কখনো বলবে না তাদের স্টেরয়েড নেয়ার কথা। তারা বিজ্ঞাপন করবে ওয়ে প্রোটিনের। যেন ওয়ে প্রোটিন নিলে এবং নিয়মিত তাদের মত জিমে গেলেই আপনি তাদের মত ইনসেইন বডি বানাতে পারবেন। কিন্তু জুস তথা স্টেরয়েড ছাড়া এটি অসম্ভব। তারাই পার‍ত না। কিন্তু স্টেরয়েডের কথা না বলে তারা আপনাকে ইনফিরিয়র ফিক করাতে যায়। আপনি এভাব এভারেজ বডি বানাতে পারবেন, গ্রিক গড ফিজিক পারবেন, লিন মাসল ম্যাস দিয়ে, কিন্তু রনি কোলম্যান লেভেলে যেতে জুস লাগবে। সুতরাং, তার সাথে কম্পেয়ারের প্রশ্নই আসার কথা না। কিন্তু মিডিয়া অন্যভাবে উপস্থাপন করে।

৭/ ফেইসবুকে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ তার বেটার জিনিসই শেয়ার করে। ব্যর্থতা শেয়ার করলেও এর উদ্দেশ্য থাকে। সুন্দর, ভালো, হাসিখুশি মানুষ দেখে আপনি হয়ত আপনার প্রতিদিনের লাইফ কম্পেয়ার করতে গেলেন, তখন ইনফিরিয়র ফিল করবেন। আপনি হয়ত কল্পনা করে নিচ্ছেন আমি কতো বই পড়ছি বসে বসে আজ, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বৃষ্টিতে ভেজা আধভেজা হয়ে ব্যাগ কিনেছি আজ আমি, সেই কথা তো ফেইসবুকে বলব না, বা বলার মতোও না। ফেইসবুকে মানুষ তার বেস্ট ভার্সন দিতে চায় লাইফের, আপনি তার সাথে নিজের এভারেজ দিনের তুলনা করলে ইনফিরিয়রিটিতেই ভুগবেন নিজের লাইফ নিয়ে।

৮/ ইনসিকিওরিটি ও ইনফিরিয়রিটি সবারই থাকে কোন না কোন বিষয়ে। তাই আপনার আছে মনে করলে হতাশ হয়ে পড়বেন না। এটি ট্যাকল দিতে প্ল্যান করুন ও সে অনুসারে কাজ করুন।

৯/ আপনি আপনার লাইফ ম্যাসিভলি পরিবর্তন করতে পারেন, এক-দুই বছরের মধ্যেই। যদি পরিকল্পনা মত কাজ করেন। নিজে পরিকল্পনা করে সে অনুসারে কাজ করে যাওয়া।

১০/ ইনফিরিয়রিটিতে ভুগে হতাশ হবার চাইতে একে কাজে লাগান নিজের লাইফ বেটার করতে। টম ক্রুজরে বা রায়ান গসলিংরে দেখে আপনি ইনসিকিওরিটিতে ভুগছেন? জিমে যান। হেলদি খান। পোষাক পরিচ্ছদের রুচি উন্নত করতে কাজ করেন, এ নিয়ে পড়েন, জানেন। স্কিনের যত্ন নেন। আপনার লুক বেটার হবে। যারে দেখে আপনার ইনফিরিওরিটির জন্ম হইছিল, জানেম সে আনরিয়াল, বানানো। বাট, এটা ব্যবহার করে নিজেরে একটা বেটার করতে পারলেন আপনি। এটা কাজে দিবে। লুক, অলয়েজ অলয়েজ মেটার করে।